Ahsan Manzil Travel Guide 2025 । আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস জানুন ভ্রমণ করুন
আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর। প্রসাদের ঠিক দক্ষিণদিকে রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী। গেট দিয়ে প্রবেশ করে রাস্তার পার্শ্বে দেখবেন ফুলের বাগান। লাল-নীল-বেগুনি রঙের ফুলের সমারোহ দেখে মুগ্ধ হবেন। মঞ্জিলের সামনে বিশাল সবুজ মাঠ। মঞ্জিল থেকে বড় একটা সিড়ি নেমে এসেছে মাঝে।
আহসান মঞ্জিল ভ্রমণ গাইড ২০২৫
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক প্রাসাদ আহসান মঞ্জিল, যা গোলাপি প্রাসাদ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। এই প্রাসাদটি একসময় নবাব পরিবারের আবাস ছিল এবং বর্তমানে এটি একটি চমৎকার মিউজিয়াম। আজকের এই গাইডে আমরা আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, ভ্রমণ পদ্ধতি, টিকেটের তথ্য, এবং এর ভেতরের আকর্ষণীয় দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
আহসান মঞ্জিল ঢাকার প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য। যেখানে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা হয় নবাবদের হাতে। মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের সবসময়ই আকৃষ্ট করত। লর্ড কার্জন ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। বাংলাদেশ সরকার আহসান মনঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে। ১৯৯২ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
কিভাবে আসবেন আহসান মঞ্জিলে
আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত, যা সদরঘাটের খুব কাছেই। এখানে আসা বেশ সহজ। আপনি সদরঘাট বা গুলিস্থানগামী যেকোনো বাসে উঠতে পারেন। সদরঘাট থেকে হেঁটে বা রিক্সা নিয়ে আহসান মঞ্জিলে পৌঁছানো যায়। গুলিস্থান থেকে রিক্সা বা সিএনজিতে আসাও সম্ভব।
অথবা
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে গুলিস্তান এসে নর্থ সাউথ রোড ধরে কিছুদূর গেলেই পড়বে নয়াবাজার মোড়। এখান থেকে বাবুবাজার দিকে যেতে থাকবেন। বাবুবাজার ব্রিজের বামপাশে নিচ দিয়ে গেলে পড়বে আরেকটি মোড়। এর বামপাশে গেলেই ইসলামপুর। এখানে এসে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে আহসান মঞ্জিল যাওয়ার রাস্তা। অথবা আপনাকে প্রথমে পুরান ঢাকার সদরঘাট যেতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে অথবা রিকশায় করে আপনি চলে যেতে পারবেন আহসান মঞ্জিল।
টিকেট এবং সময়সূচী
আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের টিকিট মূল্য জনপ্রতি ৪০ টাকা এবং ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ২০ টাকা। এই প্রাসাদটি সপ্তাহের প্রতিদিন সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে শুক্রবার এটি খোলে তিনটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে বৃহস্পতিবার। এছাড়া প্রতিবন্ধী দর্শকদের জন্য কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না ও পূর্ব থেকে আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে জাদুঘর দেখতে দেয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল খোলা ও বন্ধের সময় সূচী
অক্টোবর থেকে মার্চ
- সাপ্তাহিক বন্ধ (বৃহস্পতিবার)
- শুক্রবার - বিকাল ৩.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০ টা পর্যন্ত
- শনিবার – বুধবার সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৪.৩০ টা পর্যন্ত
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
- সাপ্তাহিক বন্ধ ( বৃহস্পতিবার )
- শুক্রবার - বিকাল ৩.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০ টা পর্যন্ত
- শনিবার – বুধবার সকাল ১০.০০ থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত
বিঃদ্রঃ সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে
প্রাসাদের বাহিরের সৌন্দর্য
প্রাসাদের বাহিরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে গোলাপি রঙের বিশাল ভবন। ইউরোপিয়ান এবং মুঘল স্থাপত্যের মিশ্রণে তৈরি এই প্রাসাদটি সত্যিই অসাধারণ। সামনে বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ এবং সিঁড়ি, যা একসময় নবাব পরিবার এবং অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত হত। এখানে দাঁড়িয়ে প্রাসাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে এক নজরে দেখা যায়।
প্রাসাদের ভেতরে যা আছে
প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করার পর প্রথমেই চোখে পড়বে একটি বর্ম, যা সেই সময়ের সৈনিকদের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হত। এখানে প্রাসাদের শাসকদের পরিচয় ও তাদের শাসন আমলের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও, নবাব আমলের দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন রেহেল, কেটলি, এবং বাটি এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।
অন্দরমহলের ভেতরে
নবাবদের জন্য তৈরি বিশাল ডাইনিং হলটি প্রাসাদের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে রয়েছে লম্বা টেবিল এবং তার চারপাশে সাজানো চেয়ার। এটি ছিল আলোচনার কেন্দ্রস্থল, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হত। এছাড়া, এখানে একটি বিশাল হাতির মাথার খুলির প্রদর্শনী রয়েছে, যা প্রাসাদের রাজকীয় বৈভবের প্রতীক।
স্থাপত্যশৈলী
এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম তোরণ আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে।
১ মিটার উঁচু বেদির ওপর স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদ ভবনটির পরিমাপ ১২৫.৪ মিটার এবং ২৮.৭৫ মিটার। নিচতলায় মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার ও দোতলায় ৫.৮ মিটার। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দা। দক্ষিণ দিকের গাড়ি বারান্দার ওপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা সিঁড়ি সম্মুখের বাগান দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। সিঁড়ির সামনে বাগানে একটি ফোয়ারা ছিল, যা বর্তমানে নেই। প্রাসাদের উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানসহযোগে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলোর মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত।
জাদুঘরের গ্যালারীসমুহ
রংমহলের ৩১ টি কক্ষের ২৩ টিতে প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়েছে। ৯ টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে প্রাপ্ত ও মি. ফ্রিৎজকাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারীজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র ও নওয়াব এস্টেটের পুরোনো অফিস এডওয়ার্ড হাউজ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরী ও সমসাময়িককালের সাদৃশ্যপূর্ণ নিদর্শনাদি ক্রয় ও সংগ্রহ করে গ্যালারীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এ যাবৎ সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট ৪০৭৭ টি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের সময় কিছু নিয়মাবলী মেনে চলা উচিত। বড় ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ, তাই আপনার বড় ব্যাগগুলো লাগেজ কর্নারে রাখতে হবে।
মিউজিয়াম: আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস
আহসান মঞ্জিলের মিউজিয়ামে আপনি নবাবদের জীবনযাপন, রাজনৈতিক ইতিহাস এবং স্থাপত্যের নান্দনিকতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী রয়েছে যা ঢাকার ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
- রাজকীয় হাতির মাথার খুলির প্রদর্শনী
- নবাব আমলের অস্ত্রশস্ত্র
- রাজকীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম
- মুসলিম লীগ কক্ষ
- বংশ তালিকা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল
কিভাবে টিকেট কিনবেন
আপনি আহসান মঞ্জিলের টিকেট অনলাইনে কিনতে পারেন। টিকেট কেনার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকা
আহসান মঞ্জিল ছাড়াও ঢাকায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
- লালবাগ কেল্লা
- জাতীয় জাদুঘর
- সদরঘাট নদী বন্দর
- বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
ভ্রমণের সময়সীমা
আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, যখন আবহাওয়া শীতল থাকে। গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে জুন) এবং বর্ষাকাল (জুন থেকে অক্টোবর) এড়িয়ে চলা ভালো।
নিষ্কর্ষ
আহসান মঞ্জিল, ঢাকার গোলাপি প্রাসাদ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং স্থাপত্যের এক অনন্য মিশ্রণ। যদি আপনি ঢাকায় আসেন, তবে আহসান মঞ্জিল ভ্রমণ করতে ভুলবেন না। এটি আপনাকে বাংলাদেশের রাজকীয় অতীতের একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা দেবে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com