Breaking News

Darjeeling - দার্জিলিং ভ্রমনের পরিপূর্ণ গাইড লাইন


শৈল শহরের রানী নামে পরিচিত দার্জিলিং (Darjeeling) ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। দার্জিলিং তার ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা ও দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ের জন্য বিখ্যাত। দার্জিলিং এর জনপ্রিয়তা ব্রিটিশ রাজের সময় থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে এটি যখন তাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসাবে গড়ে উঠেছিল। পূর্বে দার্জিলিং ছিল প্রাচীন গোর্খা রাজধানী। পরে সিকিমের মহারাজা ব্রিটিশদের দার্জিলিং উপহার করেন। দার্জিলিং তার অনাবিল সৌন্দর্য এবং মনোরম জলবায়ুর কারণে ভারতের একটি জনপ্রিয় ছুটির গন্তব্য হয়ে আসছে। পর্যটন ছাড়াও, দার্জিলিং তার বিভিন্ন ব্রিটিশ শৈলীযুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয় গুলির জন্য জনপ্রিয়, যা ভারত জুড়ে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশগুলি থেকেও ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ করে।

দার্জিলিং এর স্থানীয় মানুষেরা গোমাংস এবং মসুর দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করেন। অন্যান্য জনপ্রিয় স্থানীয় খাবার হল মম (মাংস বা সবজি দিয়ে পিঠার মত খাবার), থুপকা (মাংস এবং নুডলস দিয়ে তৈরি একটি ঘন স্যুপ), গানড্রাক (গাঁজানো সরিষা পাতা) এবং চ্যাং (স্থানীযবিয়ার)।

দার্জিলিং ভ্রমণ, যা ভারতীয় হিমালয়ের কোলে অবস্থিত, প্রকৃতির মাঝে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই শহরটি সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়, বিশেষ করে তার চা বাগান, দর্শনীয় স্থান এবং স্থানীয় সংস্কৃতির জন্য। দার্জিলিংয়ের মসৃণ পাহাড়ি পথ, ঝর্ণা, এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য একটি স্বপ্নের মতো। এখানে ভ্রমণ করে আপনার কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকবে, যা সারাজীবন মনে রাখার মতো। চলুন, দার্জিলিং ভ্রমণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।

দার্জিলিং, পাহাড়ের রাণী, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য এক আশ্চর্য রূপে প্রস্ফুটিত হয়। এই ব্লগে আমরা ৩ দিনের দার্জিলিং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব, যেখানে থাকবে স্থানীয় আকর্ষণ, থাকার ব্যবস্থা এবং খরচের বিস্তারিত বিবরণ।

দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থান

  • প্রথমত, ফটকটসিং পর্বত যা দার্জিলিংয়ের একটি অন্যতম আকর্ষণ। এখানে থেকে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • ব্রিটিশ আমলের সরকারি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কাউন্সিল হাউস ‘লাল কুঠির’ অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন খ্যাত ‘আভা আর্ট গ্যালারি’।
  • শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির ‘দিরদাহাম টেম্পল’।
  • পাথর কেটে তৈরি ‘রক গার্ডেন’ এবং গঙ্গামায়া পার্ক।
  • পাহাড়ে অভিযান শিক্ষাকেন্দ্র হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। 
  • সর্বপ্রথম এভারেস্ট বিজয়ী তেনজিং-রক- এর স্মৃতিস্তম্ভ। 
  • কেবল কারে করে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণ। 
  • হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেনে বসে তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীখ্যাত ব্ল্যাক টি পানের অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থী কেন্দ্র তিব্বতিয়ান সেলফ হেলপ্ সেন্টার।
  • মহান সৃষ্টিকর্তার বিশাল উপহার হিমালয় কন্যা কাঞ্চনজংঘা।
  • বিশুদ্ধ পানির অবিরাম বয়ে যাওয়া ভিক্টোরিয়া ফলস।
  • পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি।
  • সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮,০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত মনোরম খেলাধুলার স্থান দার্জিলিং গোরখা স্টেডিয়াম।
  • নেপালি জাতির স্বাক্ষর বহনকারী দার্জিলিং মিউজিয়াম।
  • পৃথিবীর বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার জাপানিজ টেম্পল।
  • মেঘের দেশে বসবাসরত এক সুসভ্য জাতির সংস্কৃতি। দ্যা মল
  • অন্যদিকে, বাতাসিয়া লুপ এবং হিমালয়ান রেলওয়ে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। 
  • পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন ঘুম।
  • আছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয় দেখা।
  • ছবির মতো অপূর্ব সুন্দর স্মৃতিসৌধ বাতাসিয়া লুপ বিলুপ্ত প্রায় পাহাড়ি বাঘ Snow Lupard খ্যাত দার্জিলিং চিড়িয়াখানা।

ভ্রমণের শুরু

আমরা কলকাতার সিয়ালদহ স্টেশন থেকে রাত ১০:০৫ এ দার্জিলিং মেইল ট্রেনে চড়ে যাত্রা শুরু করি। ট্রেনের টিকেটের দাম ছিল ১৩০০ টাকার কিছু বেশি। রাতের ট্রেনে ১০ ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছাই সকাল ৮ টায়।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল ঐতিহাসিক দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলওয়ে। এটি ১০ টায় ছেড়ে যাবে এবং ৯ ঘণ্টায় দার্জিলিং পৌঁছাবে। ট্রেনের টিকেটের দাম ছিল ১৫০০ টাকা।

টয় ট্রেনের যাত্রা

টয় ট্রেনে চড়ার সময় আমরা দার্জিলিংয়ের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাই। এই ট্রেনটি ১৮৮০ সালে চালু হয় এবং এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য। আমরা বিভিন্ন স্টেশনে থামি এবং স্থানীয় খাবার খাই।

গুম স্টেশন

গুম স্টেশন, যা পৃথিবীর উচ্চতম রেলওয়ে স্টেশন, সেখানে আমাদের যাত্রা সাময়িকভাবে থামে। এখানে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই এবং এরপর দার্জিলিংয়ের মূল শহরে পৌঁছাই।

হোটেল চেক-ইন

হোটেলে চেক-ইন করার সময়, আমরা একটি ৪ তারকা হোটেলে উঠি, যার নাম স্যান্ডারলিং রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। হোটেলটির রুম ভাড়া ছিল ১৩,০০০ টাকা তিন রাতের জন্য।

প্রথম দিনের রাতের খাবার

প্রথম রাতের খাবারের জন্য আমরা শোলো আনা বাংলালি রেস্তোরাঁতে যাই। সেখানে আমরা মাছের মাথা, ডাল এবং চিজের বিভিন্ন পদ উপভোগ করি।

দ্বিতীয় দিনের সূচনা

দ্বিতীয় দিনটি শুরু হয় দার্জিলিংয়ের রোপওয়ে ভ্রমণের মাধ্যমে। রোপওয়ে থেকে আমরা দার্জিলিংয়ের চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করি, যা আমাদের মনকে আনন্দিত করে।

চা বাগান এবং স্থানীয় আকর্ষণ

রোপওয়ে শেষে আমরা টুকভার চা বাগানে যাই। সেখানে আমাদের চা পান করার সুযোগ হয় এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করি। এরপর আমরা সেন্ট জোসেফ স্কুল এবং রেঞ্জেট ভ্যালি চা বাগান পরিদর্শন করি।

দ্বিতীয় দিনের রাতের খাবার

দ্বিতীয় রাতে আমরা লাজিজ অ্যাফেয়ারে রাতের খাবার খাই, যেখানে আমরা বিভিন্ন সবজি এবং মাশরুমের পদ উপভোগ করি।

তৃতীয় দিনের অভিযান

তৃতীয় দিন সকালে আমরা দার্জিলিং পিস প্যাগোডা পরিদর্শন করি। এখানে আমাদের সময় কাটানোর পর আমরা আবার টয় ট্রেনে চড়ে আনন্দিত হই। 

রক গার্ডেন এবং গঙ্গামায়া পার্ক

রক গার্ডেনের পর আমরা গঙ্গামায়া পার্কে যাই, যেখানে আবারও দার্জিলিংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অরেঞ্জ ভ্যালি চা বাগান

আমাদের শেষ গন্তব্য অরেঞ্জ ভ্যালি চা বাগান। এখানে আমরা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাই এবং দার্জিলিংয়ের দুর্দান্ত দৃশ্য উপভোগ করি।

দার্জিলিং ভ্রমনের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। সাশ্রয়ী খরচ, যা অনেকের জন্য আকর্ষণীয়। 

অসুবিধা: মৌসুমি পর্যটকদের জন্য ভিড় হতে পারে। এত ভালো মত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না বিধায় কিছু অঞ্চলে পর্যটকদের সুবিধার অভাব থাকতে পারে। যেমন, থাকার হোটেলের ভাড়া বেশি হবে, খবারের দাম বেশি পড়বে, যাতয়াত ভাড়া বেশি হবে ইত্যাদি।

FAQ - প্রশ্ন উত্তর

  • ঢাকা টু দার্জিলিং ট্রেনের ভাড়া কত? 
  • প্রত্যেক রবিবার এবং বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ট্রেনটি ছাড়ে। রাত ৯টা ৫০মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে পরদিন সকাল ৭টা ১৫মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছায়। ঢাকা–নিউ জলপাইগুড়ি মিতালি এক্সপ্রেসের এসি স্লিপার ক্লাসের ভাড়া ৬৭২০ টাকা এবং এসি চেয়ার কারের ভাড়া ৪২৯০ টাকা।
  • দার্জিলিং কিসের জন্য বিখ্যাত? 
  • শিল্প। চা আর দার্জিলিং সমার্থক। দার্জিলিং চা তার গন্ধের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত , যা শুধুমাত্র ভারত নয়, বিশ্বের অন্যান্য চা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলির দ্বারা অতুলনীয়। দার্জিলিং এখনও মূল পদ্ধতিতে চা তৈরি করে যা 'অর্থোডক্স' পদ্ধতি নামে পরিচিত।
  • বাংলাদেশ থেকে ট্রেনে কিভাবে দার্জিলিং যাওয়া যায়?
  • বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং এর সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। যাইহোক, আপনি গুয়াহাটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (GAU) বিমানবন্দরে ড্রাইভ করতে পারেন, বাগডোগরা বিমানবন্দরে (IXB) যেতে পারেন, তারপর ট্যাক্সি নিয়ে দার্জিলিং যেতে পারেন। বিকল্পভাবে, আপনি ঢাকায় ট্যাক্সি নিতে পারেন, ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি যেতে পারেন, তারপর ট্যাক্সি নিয়ে দার্জিলিং যেতে পারেন ।
  • দার্জিলিং এর প্রধান খাবার কি?
  • দার্জিলিং-এ বিখ্যাত তিব্বতি খাবার হল থুকপা। এটি একধরনের নুডল যা সবজি বা মাংসের সাথে স্যুপে পরিবেশন করা হয়। দার্জিলিং এর স্থানীয়দের প্রধান খাবার হল থুকপা । এটি প্রায় প্রতিটি স্থানীয় রেস্টুরেন্ট এবং রাস্তার পাশের স্টলে পাওয়া যায়।

এই তিন দিনের অভিজ্ঞতা দার্জিলিংয়ের সৌন্দর্যকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করায়। আমরা আশা করি, এই ব্লগটি আপনাদের দার্জিলিং ভ্রমণের পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com