চুল পড়া ঠেকাতে আমলকী-অ্যালোভেরার সঠিক ব্যবহার
পৃথিবীতে নাকি দুই ধরনের মানুষ আছেন। এক দল চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন, অন্য দল চুল নিয়ে সন্তুষ্ট। অনেকে মনে করেন, দ্বিতীয় দল সংখ্যালঘু। অর্থাৎ চুল নিয়ে ভুগছেন, এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। তবে আশার কথা হলো, চুল পড়া রোধে ও চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি প্যাক দারুণ কাজ করে। আর এসবের মধ্যে আমলকী ও অ্যালোভেরার মাস্ক চুলের জন্য এককথায় সেরা।
শুধু তেল-শ্যাম্পু মাখলেই যে চুল ভালো থাকবে, নতুন চুল গজাবে, এই ধারণা একেবারে ভুল। চুলের যত্নে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে আমলকী ও অ্যালোভেরা। এই দুই উপাদানের তৈরি তেল বানিয়েও হয়তো মাথায় মাখেন। কিন্তু এতেও কাজ হয় না। এ বার সময় এসেছে আমলকী ও অ্যালোভেরার শট বানিয়ে খাওয়ার। আমলকী ও অ্যালোভেরার রস একসঙ্গে মিশিয়ে শট বানিয়ে খেলে হু হু করে চুল বাড়বে।
চুল পড়ার কারণ সমূহ:
- স্থবির জীবনধারা: সারাক্ষণ বসে কাজ করা এবং শারীরিক কার্যকলাপ করা না হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং চুল পড়া শুরু হয়।
- দীর্ঘমেয়াদি চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত চাপ কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের ফলিকল দুর্বল করে এবং চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
- অপর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চুলের ফলিকল পুনরুজ্জীবিত হতে পারে না, ফলে চুল পড়া শুরু হয়।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: পুষ্টিহীন ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের হরমোন ভারসাম্য হারায়। এতে চুল বাড়তে পারে না।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ডিএইচটি (ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন) বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের ফলিকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং টাক পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চুল রক্ষাকরার উপায় সমূহ:
চুলের যে উপকার করে আমলকী
এটি ভিটামিন সি’তে পরিপূর্ণ। কোলাজেন প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া রোধ করে। চুলকে পুষ্টি জোগায়। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। আমলকীর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাগুণ খুশকি দূর করে। মাথার ত্বকের তালুতে যেকোনো ধরনের সংক্রমণ রোধ করে। অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করে। প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টি জোগায়। তাই চুলের স্বাভাবিক রং থাকে অক্ষুণ্ন।
অ্যালোভেরা ও গ্রিন টি: গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ক্যাল্পের ক্ষতি কমানোর পাশাপাশি চুল লম্বা করতেও সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে গ্রিন টি মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগালে উপকার মিলবে।
আমলকী ও অ্যালোভেরার কী ভাবে বানাবেন: তাজা অ্যালোভেরার জেল নিন। অরগ্যানিক হলে সবচেয়ে ভালো। বাজার থেকে অ্যালোভেরার জুসও কিনতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, তাতে যেন কোনও রাসায়নিক মেশানো না থাকে। পাশাপাশি বাজার থেকে কিনে আনুন আমলকীর পাউডার। কাঁচা আমলকী নিয়ে তার রসও বের করে নিতে পারেন। কাঁচা আমলকীর রস আরও বেশি উপকারী।
প্যাক তৈরির উপকরণ: আমলকীর পাউডার বা ব্লেন্ড করা আমলকীর রস (২ টেবিল চামচ), টাটকা অ্যালোভেরা জেল (৩ টেবিল চামচ), নারকেল তেল (১ টেবিল চামচ) এবং লেবুর রস (১ টেবিল চামচ)।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: পরিষ্কার ভেজা বা শুকনা চুলে প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। চুলে প্যাকটি লাগানোর আগে পুরোনো টি-শার্ট পরে নিতে পারেন। চুলগুলো দুই ভাগে ভাগ করে নিন। হাত দিয়ে একগোছা চুলে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত প্যাকটি ভালোভাবে লাগান। পুরো চুলে প্যাকটি লাগানোর পর আঙুল দিয়ে ত্বকের তালুতে চেপে চেপে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। মাথায় একটা শাওয়ার ক্যাপ পরে রাখুন, যাতে সহজেই শুকিয়ে না যায়। এভাবে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর চুলে শ্যাম্পু করে ফেলুন। চাইলে বাড়তি কন্ডিশনারও ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে ১ দিন চুলে এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
কী ভাবে তৈরি করবেন এই অ্যালো হেয়ার সিরাম?
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার শাঁস বা জেল
- ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল
- ১ টেবিল চামচ কাঠবাদামের তেল
- কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল
একটি কাচের পাত্রে এই সমস্ত উপকরণ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। কাচের শিশিতে রাখতে পারলে ভালো হয়। যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে পরিষ্কার শিশিতে ওই মিশ্রণ ঢেলে রাখতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে ওই সিরাম মেখে নিলেই চুল হবে রেশমের মতো।
অ্যালোভেরার আরো গুন-
- চুলের যত্নে: চুলের শুষ্ক ভাব এবং ত্বকে চুলকানি দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারবেন। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। তাই অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে এতে চুলের উজ্জ্বলতাও বেড়ে যাবে।
- ওজন কমাতে: ওজন কমাতে অ্যালোভেরার জুস অনেক বেশ কার্যকরী। অ্যালোভেরা জুসের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরের জমে থাকা মেদ দূর করে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস: যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা রস খেলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
- ত্বকের যত্নে: বহু বছর ধরে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্বকে র্যাশ, চুলকানি, রোদে পড়া দাগ দূর করতে অ্যালোভেরার তুলনা হয় না। যেকোনো উপটান বা প্যাক অথবা সরাসরি এই জেল লাগালে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে এবং বয়সের ছাপ মুছে যায়।
- হার্ট ও দাঁতের যত্নে: অ্যালোভেরার জুস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। এটি দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে দেয় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরা জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা ও ইনফেকশন নিবারণে সহায়তা করে।
- হজম প্রক্রিয়া: হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরার তুলনা হয় না। এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি বা গুড়ের শরবতের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com