Breaking News

চুল পড়ে যাচ্ছে - টাক পড়া রোধে করনীয় উপায় সমূহ


চুল পড়ার সমস্যা(Hair Fall Problem) নিয়ে কম বেশি আমরা সবাই ভুক্তভোগী। দেখুন, দিনে একশোটা পর্যন্ত চুল পড়া কিন্তু স্বাভাবিক। সারাদিনে ৫০-১০০টা চুল পড়তেই পারে। আবার সেই জায়গায় নতুন চুলও গজিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় তখনই, যখন চুল পড়ার পর আর নতুন করে চুল ওঠে না। বা অত্যাধিক চুল পড়তে থাকে। এই চুল পড়া বন্ধ করার জন্য নানা পদ্ধতি আমরা মেনে চলি। কখনও দামি দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। কখনও বা ঘরোয়া উপায়ও কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আসলে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমাদের আগে জানা প্রয়োজন যে, কেন চুল পড়ছে? চুল পড়ার কারণ কী? সেই মতো ঘরোয়া উপায়(Home Remedies) কাজে লাগিয়ে চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন আপনি।

আমাদের মাথায় যত চুল আছে তার সবগুলোরই কিন্তু গ্রোথ হয় না।  প্রায় ৯০% এর মতো চুলের গ্রোথ হয় আর বাকি ১০% এর মতো চুল রেস্টিং ফেজ বা বিশ্রামে থাকে। এই চুলগুলোই সাধারণত ঝরে যায়। তবে এর জায়গায় আবার নতুন চুল গজায়। আর বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, প্রতিদিন ১০০টির মতো চুল পড়াটা স্বাভাবিক। আপনার চুল যদি ১০০টিরও বেশি ঝরতে থাকে তার মানে আপনার ১০% এর বেশি চুল রেস্টিং ফেজে চলে গিয়েছে। এর কারণ হতে পারে  খাদ্য, জীবনধারা, দীর্ঘস্থায়ী অসুখ ইত্যাদির কারণে। এমনটা যদি হয় তাহলে আপনার একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা  ট্রিকলোজিস্ট (Trichologist)-এর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

ঘন কালো চুল সব মেয়েদের পছন্দ। মূলত চুলকে ধরা হয় নারী সৌন্দর্যের অন্যতন একটি অংশ। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্ট্রেস, পল্যুশন, লাইফ স্টাইল বিভিন্ন কারণে চুল পড়া সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কম বেশি সবাইকে। কী করলে চুল পড়া কমবে, কী করলে নতুন চুল গজাবে, এই চিন্তা করতে করতে দিনরাত এক হয়ে যায়। কিন্তু তাও চুল পড়া বন্ধের কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না। চুল পড়তে পড়তে মাথায় টাকও দেখা দিয়েছে।

​কী কী কারণে চুল পড়তে পারে?

  • চুল পড়ার অন্যতম কারণ জিনগত হতে পারে। কোনও মহিলা কিংবা পুরুষের নির্দিষ্ট বয়সের পরেই চুল পড়ার সমস্যা হলে এবং তাঁদের বংশে সেই বিষয়টি আগেও দেখা যায়, তবে সেটিকে বংশগত সমস্যা বলেই ধরা যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত স্ট্রেস
  • শরীরে হরমোনের হঠাৎ পরিবর্তনেও চুল ওঠার সমস্যা হতে পারে। সেই কারণে প্রেগনেন্সি বা প্রেগনেন্সির পরে চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। কারণ, গর্ভাবস্থা, প্রসব বা মেনোপজের পরও হরমোনের তারতম্য কারণে চুল উঠতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • এছাড়াও কোনও শারীরিক সমস্যা বা কঠিন অসুখ করলেও চুল পড়ে যায়। দুশ্চিন্তা থেকেও চুল উঠতে পারে আপনার।
  • অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল
  • ভেজা চুল আঁচড়ানো
  • স্ক্যাল্প অপরিষ্কার রাখলে ও স্ক্যাল্পে কোনও ইনফেকশন হলে, তা থেকেও চুল পড়তে পারে আপনার।
  • অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা
  • গরম পানির ব্যবহার 

অত্যধিক চুল পড়ছে, কীভাবে বুঝবেন?

  • মাথার সামনের দিকে এবং স্ক্যাল্পে চুলের ঘনত্ব কমতে শুরু করেছে।
  • ১০০টা পর্যন্তও চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু চুল পড়ার পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়লেই মুশকিল।
  • ভ্রুর চুল কিংবা চোখের পাতা, সর্বত্রই চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  • মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা বেড়েছে বা স্ক্যাল্প ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে।

টাক পড়া রোধ করে যে তিনটি খাবার

টাক পড়া রোধে গজর: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা থেকে শুরু করে আমাদের চুল ও ত্বকের যত্নে গাজরের তুলনা নেই। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ। ভিটামিন এ চুলের গোঁড়ায় এক ধরণের প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন করে যা চুলকে উজ্জ্বল, চকচকে করে। বেটা ক্যারোটিন চুলের গোড়া মজবুত করে। সুতরাং, প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় গাজর রাখলে চুল পড়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

টাক পড়া রোধে মাছ: মাছ খেতে একদমই পছন্দ করেন না? এটিও হতে পারে আপনার চুল পড়ার কারণ। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ চুল পড়া রোধের সবচেয়ে কার্যকর খাদ্য। যেসব মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেসব মাছ রাখুন খাদ্যতালিকায়। সপ্তাহে মাত্র ৩-৪ দিন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খান। চুল পড়া অনেক কমে যাবে।

টাকপড়া রোধে সবজি: পাতা জাতীয় শাক-সবজি যেমন- পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি যা ভিটামিন, মিনারেলস (খনিজ) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, এগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। এসব সবুজ শাক-সবজি চুলের গোড়া মজবুত করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি রাখুন খাদ্য তালিকায়। এতে করে চুলের গোড়া মজবুত হবে, চুল হবে ঝলমলে। চুল পড়ার মাত্রা নিজে থেকেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

টাক পড়া রোধ ঘরোয়া উপায় সমূহ:

চুলপড়া রোধে কালোজিরা: কপালের সামনের অংশের চুল কমে টাক পড়ে যাচ্ছে? অকালে চুল পড়া রোধ করতে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিত। চুল পড়া রোধ করার পাশাপাশি চুলের গ্রোথ বাড়াতেও কার্যকর কালোজিরা। যে অংশে চুল কমে যাচ্ছে সেই অংশে ঘষে ঘষে লাগান কালোজিরার তেল। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করে অপেক্ষা করুন আরও আধা ঘণ্টা। এরপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন চুল।

মেথি ব্যবহার: নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী একটি উপাদান হলো মেথি। প্রথমে পরিষ্কার পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে উঠে ব্লেন্ড করে নিন। এবার সেই বাটা মেথি সরাসরি চুলে ব্যবহার করুন। চাইলে এর সঙ্গে দই ও মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। মাথার ত্বক ও চুলে ব্যবহার করার পর অপেক্ষা করুন শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

আমলকির রস: আমলকির রসের অন্যতম উপকারিতা হলো এটি চুলের গোড়া শক্ত করতে কার্যকরী। চুলে আমলকির রস ব্যবহার করলে কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। এটি ব্যবহার করার জন্য একটি পাত্রে আমলকির রস নিন। রসটুকু সব চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান। এভাবে রেখে দিন মিনিট পাঁচেক। এরপর আরেকবার মালিশ করে আরও দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা ধরনের কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

নিমপাতা ব্যবহার: ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সারাতে কাজ করে নিমপাতা। তবে শুধু ত্বকই নয়, এটি চুলের যত্নেও সমান কার্যকরী। টাক মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে নিমপাতা। প্রথমে একমুঠো নিমপাতা নিয়ে এক লিটার পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটি নামিয়ে ঠান্ডা করে নেবেন। ঠান্ডা হলে বোতলে সংরক্ষণ করবেন। যখনই চুলে শ্যাম্পু করবেন তারপর নিমের এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নেবেন। সপ্তাহে একদিন এটি ব্যবহার করবেন। এতে মাথার ত্বকের সংক্রমণ ও খুশকির সমস্যা কমবে। চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং নতুন চুলও গজাবে।

আমলকির তেল ব্যবহার: বাজারে আপনি আমলকির তেল কিনতে পাবেন। সেটি কিনে ব্যবহার করতে পারেন। আমলকির তেল ভালোভাবে ‍চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। এর ফলে চুল পড়ার পরিমাণ কমে আসবে। কারণ আমলকির তেল চুলের ফলিকল শক্ত করে। চুলে নিয়মিত মাসাজ করলে  স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। আমলকিতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ সব ধরনের ইনফেকশন থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। যে কারণে আমলকির তেল ব্যবহার করলে খুশকি বা মাথার ত্বকের চুলকানির সমস্যা কমে। এই তেল ব্যবহার করার আগে সামান্য গরম করে নিতে হবে। এরপর ভালোভাবে মাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ব্যবহার করবেন।

পেঁয়াজের রস ব্যবহার: পেঁয়াজের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে শরীরের জন্য উপকার নিয়ে আসে। তবে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করে টাক মাথায় চুল ফিরিয়ে আনতে পারেন, তা কি জানতেন? পেঁয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধ আপনার কাছে ভালো না-ই লাগতে পারে তবে আপনার চুলের জন্য বেশ উপকারী। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে তা চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটি তৈরি করার জন্য পেঁয়াজ ভালোভাবে বেটে নিয়ে পানি মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ মাথায় লাগিয়ে নিন ভালোভাবে। এভাবে আধাঘণ্টার মতো রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলেই সুফল পাবেন।

চুলের যত্নে আমলকী:

  • রুক্ষ-শুষ্ক চুলকে মসৃণ ও ঝরঝরে করতে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে আমলকীচূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন।  
  • আমলকীতে থাকা ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট, ভিটামিন ও খনিজ প্রয়োজনীয় কোলাজেন প্রোটিন তৈরি করে। কোলাজেন চুলের ফলিকলের মৃত কোষকে নতুন কোষে প্রতিস্থাপন করে। 
  • আমলকীর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে। ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং খুশকি দূর করে।
  • আমলকীর রস চুলের ফলিকলগুলো শক্তিশালী করে চুলকে মজবুত করে। দ্রুত চুল বাড়তে সাহায্য করে। এটি মাথার ত্বক ও চুলের টনিক হিসেবেও দারুণ কাজ করে।
  • নিয়মিত আমলকীর রস পান করলে এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সাইড বয়সের আগে চুল পাকা রোধ করবে।
  • সপ্তাহে দু-তিন দিন আমলকীর রস দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে চুলের পাকা ভাব কমে। চুল পড়া কমে যায়।
  • আমলকী মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে ও ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল দেখতে মসৃণ হয়।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com