Breaking News

ফেসবুকে প্রেমের পরিণতি - শিক্ষানীয় গল্প


প্রথম যখন আমি ফেসবুকে লগইন করি, তখন আমি আসলে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। কলেজে পড়ার সময়, আমার কিছু বন্ধু আমাকে ফেসবুকে যোগ দিতে বলেছিল, যেন আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। মনের মধ্যে তখন কোনো বিশেষ আশা ছিল না। কারণ, আমার জীবনে সেই সময় প্রেমের কোনো জায়গা ছিল না, বা আমি ভাবতাম যে প্রেম মানে শুধু এক ধরনের আবেগ আর অনুভূতি, যা জীবনের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। তবে ফেসবুকে আসার পর, আমি শিখলাম—অনেক কিছুই অসম্ভব হতে পারে, অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে।

এভাবেই আমার পরিচয় হলো সুরমার সাথে। সুরমার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকের একটি সাধারণ মেসেজের মাধ্যমে। তখন আমাদের দুইজনের মধ্যে শুধু কয়েকটা সাধারণ কথাবার্তা হতো, কিন্তু একসময় আমরা বন্ধুত্বের দিক থেকে একটু এগিয়ে গেলাম। সুরমা ছিল খুবই মিষ্টি, হাসিখুশি, এবং তার কথার মধ্যে এক ধরনের শান্ত ভাব ছিল, যা আমাকে এক অদ্ভুতভাবে আকর্ষণ করেছিল। আমি খুব সাধারণভাবেই তাকে কিছু মেসেজ পাঠাতে শুরু করি, আর সে সেগুলো উত্তরও দিত। মাঝে মাঝে আমরা একে অপরের পোস্টে কমেন্ট করতাম, কখনো বা লাইক দিতাম, যেন একে অপরের সাথে একটি অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হচ্ছিল।

অবশ্য, প্রথম দিকে আমার কাছে বিষয়টা খুবই সাধারণ ছিল। আমি ভাবতাম, এটা শুধু একটা অনলাইন বন্ধুত্ব, যা কোনোদিন বাস্তবে চলে আসবে না। কিন্তু একদিন, সুরমা আমাকে মেসেজে লিখেছিল, “তুমি কেমন আছো? তোমার জীবন কেমন চলছে?” আমি তখন একটু ভাবলাম, হয়তো এটা খুব সাধারণ প্রশ্ন, কিন্তু এর ভেতরে যেন এক ধরনের অনুভূতি ছিল, যা আমি আগেও কখনো বুঝতে পারিনি। সুরমার প্রতি আমার আগ্রহ একটু একটু করে বাড়ছিল, কিন্তু আমি জানতাম না, এই আগ্রহের পরিণতি কী হতে পারে।

আমরা নিয়মিত মেসেজিং করতে শুরু করলাম। সুরমার সাথে কথা বলার সময় আমি কখনোই তার কাছ থেকে কোনো অদ্ভুত বা খারাপ কিছু আশা করতাম না, কারণ আমি জানতাম না যে, ফেসবুকের এই সম্পর্কটা কখনো সত্যিকার প্রেমে পরিণত হতে পারে। তবুও, একদিন সুরমা আমাকে বলল, “তুমি জানো, আমি যখন তোমার মেসেজ পড়ি, মনে হয় তুমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।” এর পরই আমি অনুভব করলাম, হয়তো আমি ওকে সত্যিই একটু ভালোবেসে ফেলেছি।

তবে, ফেসবুকের সম্পর্ক সবসময় সরল বা স্বচ্ছ হতে পারে না। একটা সময় এসে আমাদের সম্পর্কও কিছুটা জটিল হয়ে পড়ল। সুরমা খুবই আকর্ষণীয় ছিল, এবং তার অনেক বন্ধু ছিল যারা তাকে প্রায়ই বিভিন্নভাবে মেসেজ করত। একদিন আমি দেখতে পেলাম, সুরমা একটি ছবিতে একজন অন্য ছেলের সাথে হাসছে। ছবির ক্যাপশনে লিখেছিল, “এই মানুষটিই আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।” প্রথমে আমি কিছু বলিনি, কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, সে হয়তো আমার সম্পর্কে আগের মতো ভাবছে না, অথবা সে আমার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

অবশ্য, আমি বুঝতে পারছিলাম না, ফেসবুকে এসব সম্পর্কের গতি কেমন হতে পারে। যখনই আমি সুরমার কাছে বিষয়টা নিয়ে কিছু জানতে চাইতাম, সে বলত, “ওটা কিছু না, শুধু বন্ধুত্ব।” কিন্তু, আমি জানতাম না কেন, কিছু একটা অদ্ভুত অস্বস্তি তৈরি হচ্ছিল। তখন, ফেসবুকে প্রেম বা বন্ধুত্বের জগতে, আমি আরও এক ধরনের অন্ধকার অনুভব করছিলাম। মেসেজের মাধ্যমে মানুষ যেভাবে একে অপরকে বুঝতে চায়, আসলে সেটা অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে। সুরমার কাছ থেকে উত্তর না পাওয়াও আমাকে ভীষণভাবে আহত করছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, কেন এই ক্ষোভ বাড়ছিল, যদিও সুরমা আমার কিছু করার প্রতি সাধারণ মনোভাব পোষণ করছিল।

একদিন, আমি তার পোস্টে দেখতে পেলাম, সে কিছু ছবি শেয়ার করেছে। সেখানে সে আর তার এক বন্ধুর সাথে মিষ্টি মুহূর্ত কাটাচ্ছিল। ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “বেস্ট ফ্রেন্ডস ফর লাইফ।” আবারও আমি মনে মনে কিছু ভাবলাম। এই "বেস্ট ফ্রেন্ড" কথাটা কি শুধু একটা শব্দ, নাকি কিছু গভীরতা ছিল? আমি নিজেকে বললাম, “এটা শুধু বন্ধুত্ব।” কিন্তু ভেতরে ভেতরে কিছু একটা ঘুরছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না, এই ফেসবুক সম্পর্ক কি আমাকে আরো এক ধরনের আবেগের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

এভাবে কিছুদিন চলে গেল। আমি আর সুরমা একে অপরকে নিয়ে নানা ধরনের আড্ডা দিতাম, কিন্তু কিছু একটা বদলে গিয়েছিল। একসময়, সুরমা আমার কাছে খুব একটা আসে না, আর আমি তার পোস্টগুলো দেখে মনে করতাম, তার জীবন আর কিছুটা আলাদা হয়ে গেছে। আমি যখন তাকে বলেছিলাম, “আমরা কি আবার আগে মতো কথা বলতে পারব?” তখন সুরমা বলেছিল, “আমাদের মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। আমি আর তুমি আগে মতো একে অপরকে বুঝতে পারি না।”

তখন আমি প্রথম বুঝতে পারলাম, ফেসবুকে প্রেম বা বন্ধুত্বের মাঝে এমন অনেক বিষয় থাকে যা বাইরে থেকে দেখা যায় না। এই ধরনের সম্পর্কের মাঝে অনেক কিছু চাপা থাকে, যা কখনোই প্রকট হয়ে ওঠে না। সুরমা আমার জন্য যে অনুভূতি ছিল, সেটা হয়তো তার কাছে শুধুই একটি মেসেজিং সম্পর্ক ছিল, কিন্তু আমার কাছে সেটা জীবনের অমূল্য সময় হয়ে উঠেছিল। তাই, যখন সে বলল, “আমরা আর কথা বলব না,” তখন আমি ভীষণভাবে ব্যথিত হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, সে আমার জন্য কখনো ছিল না, এবং আমি নিজেই তার কাছে কিছুই ছিলাম না।

এই ঘটনার পর, আমি বুঝতে পারলাম, ফেসবুকের সম্পর্ক অনেকসময় আবেগের বাইরেও কিছু হতে পারে। অনেক সময় মেসেজিংয়ের মধ্যে আমরা এমন কিছু অনুভব করি যা আসলে বাস্তবে হয় না। আমি অনুভব করলাম, আমাদের সম্পর্কের শেষ ছিল শুধুই একটি ইমেজ—অনলাইনে, যেটি বাস্তবে কোনো ভিত্তি পায়নি। সুরমার সাথে আমার সম্পর্কের খারাপ পরিণতি এটাই ছিল—এক ধরনের অভ্যস্ততার মাঝে হারিয়ে যাওয়া, যেখানে অনুভূতি ছিল না, শুধু ডিজিটাল কথাবার্তা ছিল।

এখন, আমি যখন সেই সময়গুলো স্মরণ করি, বুঝতে পারি, ফেসবুকের প্রেম এক ধরনের ঝুঁকি। এখানে যেমন সম্পর্ক তৈরি হয়, তেমনি তা খুব দ্রুত ভেঙেও যায়। একদিকে আমাদের মধ্যে যোগাযোগের প্রাচুর্য ছিল, কিন্তু আরেকদিকে, আমাদের বাস্তব জীবনে একে অপরকে বুঝে ওঠা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। সুরমার সাথে আমার সম্পর্কের পরিণতি ছিল একটি শিক্ষা—যে সম্পর্ক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা বাস্তব জীবনে খুব সহজে টিকে থাকতে পারে না।

ফেসবুকের প্রেম অনেক সময় এক ধরনের অজানা পথ হতে পারে, যেখানে অনেক কিছুই থাকে অদৃশ্য। কিন্তু সেই প্রেমের খারাপ পরিণতির শিকার হলে, তুমি শিখতে পারো যে, বাস্তবতা আর ভার্চুয়াল পৃথিবীর মধ্যে বিশাল এক পার্থক্য রয়েছে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com