শীতে চুলের যত্নে জাদুকরী কয়েকটি ঘরোয়া টিপস
চলে এসেছে শীতকাল। এই ঋতুতে উৎসব অনুষ্ঠানের পালা চলতেই থাকে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ত্বক ও চুলের নানা ধরনের সমস্যা। শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে।
শীতকাল মানেই পার্টি আর পিকনিকের মরসুম। আর পার্টি-পিকনিক মানেই তো ফ্যাশন। কিন্তু খোঁপা হোক কিংবা খোলা চুলের ফ্যাশন, কোনওটাই জমবে না চুলের সঠিক যত্ন না নিলে। এমনিতেই শীতকালে চুল পড়ার সমস্যায় কম বেশি সকলেই ভোগেন। এই সময় শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে হওয়া খুশকি থেকে চুলের গোড়া আলগা হয়। চুল পড়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। এ সময় অনেকেই পার্লারে গিয়ে একটা স্পা করিয়ে আসেন বটে, তবে তার সঙ্গে ঘরেও প্রতিদিন চুলের যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আমরা সবাই কমবেশি বেসিক তেলগুলো ব্যবহার করে থাকি। যেমন- নারকেল তেল কিংবা অলিভ ওয়েল। বেসিক তেল ব্যবহার করা খারাপ নয়, কিন্তু চুলের সমস্যা অনুযায়ী এই নির্দিষ্ট তেলগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী বানানো সম্ভব। তাই এই শীতে চুলের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কিছু তেল নিয়ে চলুন জেনে নিই। সেই সঙ্গে জেনে নিন কীভাবে সহজেই বানিয়ে নিতে পারবেন এই জাদুকরী মিশ্রণগুলো।
ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং শুষ্ক বাতাসের কারণে শীতের সময় চুল খুব দ্রুত হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিক সৌন্দর্য। রুক্ষ চুল যেমন দ্রুত ভেঙে পড়ে, তেমনি বাড়ে মাথার ত্বকের চুলকানির মতো সমস্যাও। শীতের শুষ্কতা যেন চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে, সেজন্য কিছু টিপস জেনে নিন।
শীতে চুলের যত্নে জাদুকরী কয়েকটি ঘরোয়া টিপস
ভালো করে আঁচড়ান: চুল নিয়মিত আঁচড়ালে মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে করে চুল ও চুলের গোড়া সুস্থ থাকে। তাছাড়া শীতকালে চুলের শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় সহজেই চুলে জট বেঁধে যায়। চুল ভালো করে আঁচড়ালে এই সমস্যা থাকবে না।
আগা ফাটা চুল কেটে ফেলুন: শীতকালে অনেকের চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের আগা ফেটে যাওয়া অংশ কেটে ফেলে দেওয়াই ভালো। এতে চুলের বৃদ্ধি হয় দ্রুত।
ভিনেগার দিয়ে চুল ধুয়ে দিন: ভিনেগার চুলের রুক্ষতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। এটি চুলে কন্ডিশনারের মতো কাজ করে। এক মগ পানির সঙ্গে ২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর এই ভিনেগার মেশানো পানি মাথায় ঢালতে হবে। এতে করে চুল হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
কন্ডিশনার ব্যবহার: চুলের জন্য কন্ডিশনার খুব ভালো। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করলে খেয়াল রাখবেন যেন তা মাথার চামড়ার অংশে না লাগে। কন্ডিশনার চুলে শ্যাম্পুর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। চুলের বর্ম হিসেবে কাজ করে। চুল ঝরঝরে ও কোমল থাকে। এমন চুলে সহজে ময়লা বসতে পারে না।
খাবারে পালং শাক রাখুন: সব শাকই কম-বেশি উপকারী। তার মধ্যে একটি হলো পালং শাক। এই শাক নিয়মিত খেলে অনেক উপকার মেলে। কারণ পালং শাকে থাকে প্রচুর ফোলেট, ভিটামিন এ এবং সি। এই উপকারী উপাদানগুলো চুল পড়া রোধ করতে দারুণ কার্যকরী। নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখুন এই শাক। এতে চুল পড়ার পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে।
বাদাম খাবেন নিয়মিত: প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন। বাদামে থাকে প্রচুর ভিটামিন বি, জিঙ্ক এবং ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চুল মজবুত করতে অত্যন্ত সাহায্য করে। যে কারণে অস্বাভাবিক চুল পড়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এই শীতে বাদাম রাখুন আপনার খাবারের তালিকায়।
ডিম খান: প্রতিদিন ডিম খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হলো এই খাবার চুলের জন্যেও অত্যন্ত ভালো। ডিমে থাকা প্রোটিন, জিঙ্কের মতো পুষ্টি উপাদান চুলে পুষ্টি দিতে সাহায্য করে ও চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে। তাই শীতে চুল পড়া রুখতে নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অন্তত একটি ডিম রাখুন। এতে দ্রুতই উপকার পাবেন।
চুল ঢেকে রাখুন: শীতের রুক্ষ আবহাওয়া ও কুয়াশার হাত থেকে চুলকে বাঁচাতে চুল ঢেকে রাখাই ভালো। তাছাড়া শীতকালে বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকে। তাই বাইরে যাওয়ার সময় চুলে পাতলা কাপড় বা মাফলার জড়িয়ে বের হলে চুল ভালো থাকবে।
চুলের জট: শীতে চুলে খুব জট পড়ে। একটি পাত্রে দুটো ডিম ভেঙে তাতে তিন চামচ মধু যোগ করে ফেটিয়ে নিন। এই প্যাকটিও স্নানের আগে চুলে লাগিয়েএক থেকে দুই ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন খুব ভাল করে। শ্যাম্পুর পর ক্ষারবিহীন বা খুব অল্প ক্ষারযুক্ত কোনও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। রুক্ষ ও তেলতেলে উভয় প্রকার জন্যই বিশেষ কার্যকরী এই প্যাক।
মেথি ও তেলের মিশ্রণ: চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে এই তেল বেশ কার্যকরী। ২ ভাবে মেথি তেল বানাতে পারবেন। প্রথমত- তেলের সঙ্গে মেথি গুড়া মিশিয়ে নিতে হবে। অপর পদ্ধতি হলো- আস্ত মেথি দানা নারকেল তেলের সঙ্গে ভিজিয়ে রাখা। দুটির যেকোনো একটি ব্যবহার শুরু করতে পারেন। এই ছোট একটি চেষ্টা আপনার চুলকে অনেক বেশি সিল্কি আর স্মুথ হতে সহায়তা করবে।
গোসলের পানিতে মধু: গোসলের সময় এক মগ জলে মিশিয়ে নিন আধ কাপের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ মধু। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারের পরিবর্তে এই মিশ্রণ ঢেলে দিন চুলে। আঙুল চালিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন চুল। উপকার পাবেন সব ধরনের চুলেই।
একটি উপকারী প্যাক: একটি বাটিতে তিন টেবিল চামচ ঠাণ্ডা টক দই ও এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। চুল ও মাথার তালুতে প্যাকটি ভালো করে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই। এই প্যাক চুলের ময়লা দূর করে চুল পরিষ্কার করে।
বেশি সময় তেল দিয়ে রাখলেই সেটা চুলের জন্য ভালো হবে এমন নয়। বরং এতে চুলে ধুলোবালি আরও বেশি করে আটকে থাকে এবং নানারকমের সমস্যা দেখা দেয়। তার চেয়ে এক থেকে ২ ঘণ্টা চুলে তেল রেখে ধুয়ে ফেলুন। আরও ভালো ফলাফল পেতে চাইলে তেল ব্যবহারের আগে হালকা গরম করে নিন। কম পরিমাণে তেল ব্যবহার করলেই চুলে সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন। কেননা বেশি পরিমাণে তেল ব্যবহার করলে সেই তেল ধোয়ার সময় অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এতে চুল হয়ে যাবে আরও বেশি রুক্ষ। তাই কেবল চুলের গোঁড়ায় তেল ব্যবহার করুন।
আরো কিছু টিপস:-
- শীতের সময় ধুলাবালির প্রকোপ বেড়ে যায়। এসময় চুল রক্ষা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে রাখা। চুলকে ঠান্ডা বাতাস থেকেও রক্ষা করবে এগুলো। শীতের বাতাস দ্রুত চুল থেকে আর্দ্রতা টেনে নেয়।
- খুব ঘন ঘন শ্যাম্পু করবেন না শীতের সময়। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। এতে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। চেষ্টা করুন সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে।
- শীতে বাড়ে খুশকির প্রকোপ। মাথার ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখুন খুশকি এড়াতে। শিয়া মাখন বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন রুক্ষতা এড়াতে। ডিপ কন্ডিশনিং করবেন সপ্তাহে একবার। এতে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ হবে।
- স্ট্রেইটনার বা ব্লো ড্রায়ারের মতো তাপ প্রদানকারী সরঞ্জামের অত্যধিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এগুলো চুল আরও রুক্ষ করে দেয় এবং চুল ভেঙে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- হাইড্রেটিং তেল এবং সিরাম ব্যবহার করুন চুলে। শীতকালে আর্দ্রতা হ্রাসের কারণে চুল নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সপ্তাহে একবার বা দুইবার শিয়া তেলের মতো পুষ্টিকর তেল প্রয়োগ করুন চুলে। এতে চুল হাইড্রেট হবে। অ্যালোভেরা বা আর্গান তেলমিশ্রিত সিরাম প্রতিরক্ষামূলক স্তর যুক্ত করে চুলে যা হাইড্রেশন বজায় রাখে।
- শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমরা। তবে বেশি গরম পানি কিন্তু চুলের জন্য ক্ষতিকর। এতে মাথার ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল কমে যায় এবং চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।
- হাইড্রেটেড থাকার বিকল্প নেই। কারণ চুলের স্বাস্থ্য ভেতর থেকে ভালো রাখতে চাইলে হাইড্রেশন জরুরি। পুরো শীতকালে পর্যাপ্ত পানি পান করলে চুলের গোড়া হাইড্রেট থাকে এবং ভঙ্গুরতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। বায়োটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম খাবারও খান নিয়মিত।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com