Breaking News

বিয়ে বাড়িতে গিয়ে প্রেম


শুনেছি, বিয়ে বাড়ির পরিবেশে অনেক কিছুই ঘটে—খাবার, হাসি, মজা আর কখনো কখনো মনে গোপন এক অনুভূতি জন্ম নেয়। আর এমনই এক বিয়ে বাড়িতে সেও দাওয়াত খেতে গিয়ে মনে প্রেমের ঝড় বয়ে গেলো। তার নাম মেহের, এক সাধারণ মেয়ের জীবন যেটা প্রতিদিনের মতোই চলছিল, হঠাৎ একদিন তার জীবনে এল এক নতুন পরিবর্তন।

মেহের ছিল একটি শান্তশিষ্ট, মিষ্টি মেয়ে, যার জীবনে প্রেম বা সম্পর্কের কোনো জটিলতা ছিল না। সে ভালোবাসত জীবনটাকে সহজভাবে উপভোগ করতে, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, আর বই পড়তে। কিন্তু একটা ছোট্ট ঘটনা, একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে তার জীবন বদলে দিলো—বিয়ের দাওয়াতে।

দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার, আর মেহের তার বেস্টফ্রেন্ড লিলির সাথে রেডি হচ্ছিল। লিলির কাকীর বিয়ের দাওয়াতে যেতে হবে, আর মেহের সেজেগুজে প্রস্তুত হচ্ছিল। সে জানতো বিয়ে বাড়ি মানে এক চমৎকার পরিবেশ, নতুন মুখ, হাসি-আনন্দ এবং সবচেয়ে বড় কথা—খাবার! মেহের ভেবেছিল শুধু খাওয়া দাওয়া আর আড্ডায় মেতে উঠবে, কিন্তু সে জানত না যে, বিয়ে বাড়িতে তার অপেক্ষা করছে এক নতুন গল্প।

লিলি আর মেহের যখন বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো, তখন তারা কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল। নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ—তবে মেহের তার স্নেহপূর্ণ হাসি দিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখছিল। এখানে মজার কিছু ছিল, এমনকি কিছু একটা স্পেশাল অনুভূতি ছিল।

“এইখানে তো বেশ সুন্দর পরিবেশ, না?” লিলি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলল।

“হ্যাঁ, অনেক সুন্দর! তবে খুব পরিচিত লাগছে না।” মেহের একটু ভাবনায় ডুবে বলল।

এর মধ্যে, কিছু দূরে এক যুবক মেহেরের নজর কাড়লো। তার নাম ছিল রাফি। ছোটবেলা থেকে তাকে জানতো মেহের, কারণ তার পরিবারও ছিল লিলির আত্মীয়দের মধ্যে। কিন্তু আজকের সেই রাফি, যাকে সে শুধু এক বন্ধু হিসেবে জানত, আজকের দিনেই তাকে একটু অন্যরকম লাগছিল। তার চোখে কিছু আলাদা একটা আভা ছিল, হয়তো সে জানতো না।

রাফি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলল, “মেহের, তুমিই কি? অনেক দিন পর দেখা হলো। কেমন আছো?”

“রাফি! তুমি? বেশ ভালো আছো? কী খবর?” মেহের চমকে গেলো।

“ভালোই তো, তবে আজকে তোমার মতো সুন্দর একটা মুখ দেখে আমার একটু বেশি ভালো লাগছে।” রাফি মুচকি হেসে বলল।

মেহের একটু হাসি দিয়ে বলল, “তুমি তো এখন অনেক বদলেছো, আগের মতো ছিলে না!”

রাফি হেসে বলল, “আমরা সবাই বদলে যাই, সময়ের সাথে। তবে তুমি তো কিছুই বদলাওনি, সেই আগের মতোই আছো।”

মেহের কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করলো, কারণ সে জানত না রাফি এমনভাবে কথা বলবে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে, তারা একসঙ্গে বসে বিয়ে বাড়ির আনন্দে মেতে উঠলো। খাবারের টেবিলের পাশে, সবাই মজার মজার গল্পে ব্যস্ত, আর মেহের আর রাফি ধীরে ধীরে একে অপরের সাথে আলাপ করতে লাগলো। সময়টা কাটতে না কাটতেই, তাদের মধ্যে এক গভীর সংযোগ তৈরি হলো।

একসময়, রাফি মেহেরকে বললো, “মেহের, তোমার সাথে আবার সময় কাটাতে খুব ভালো লাগছে। আমাদের শৈশবের স্মৃতি তো আজও মনে পড়ে।”

“হ্যাঁ, মনে পড়ে। তবে কত বছর হয়ে গেল! মনে হয় এক যুগ পার হয়ে গেছে। তবে, তোমার এই নতুন রূপটা একটু আলাদা!” মেহের হেসে বলল।

রাফি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর বললো, “আমি জানি না কেন, আজ তোমার সঙ্গে কথা বলে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, যেন বহুদিন পর একটা পুরনো বন্ধুকে আবার পেয়েছি।”

মেহের একটু অভ্যস্ত হয়ে বললো, “তাহলে কি তুমি ভাবছো যে, আজকের পর আমরা আবার যোগাযোগ রাখবো?”

রাফি একটু হাসলো। “হ্যাঁ, কেন নয়? যদি তুমি রাজি হও, তবে আমাদের শৈশবের বন্ধুত্ব আবার শুরু করতে পারি। তবে, এবার কিছুটা নতুনভাবে।”

মেহের বুঝতে পারছিল, রাফি কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তার মনে কিছু প্রশ্ন ছিল, কিন্তু সে তাড়াহুড়ো করতে চাইছিল না।

দাওয়াতের মধ্যাহ্নভোজ শেষ হতে না হতেই, রাফি ও মেহের একে অপরের মধ্যে গভীর সম্পর্কের ইঙ্গিত পাচ্ছিল। তারা একে অপরকে ভালোভাবে জানার জন্য আরো সময় চেয়েছিল।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে, যখন সবাই চলে যাচ্ছিল, রাফি মেহেরকে বললো, “আমি যদি তোমাকে আবার একসঙ্গে কোথাও যেতে বলি, তুমি কি রাজি হবে?”

মেহের একটু দ্বিধান্বিত হল, কিন্তু তারপর সে একটু হেসে বললো, “হ্যা, তবে শুধু বন্ধু হিসেবেই।”

রাফি মুচকি হেসে বললো, “দুঃখিত, আমি আসলে তো আর বন্ধু হিসেবে না, একটু বেশি কিছু ভাবছিলাম।”

মেহের কিছু সময় চুপ থেকে বললো, “তাহলে, আসুন, আমরা অপেক্ষা করি। সময়ের সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

তারা দুজনেই জানতো, এই বিয়ে বাড়িতে এসে তাদের জীবন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে তারা ঠিক কী করবে, সেটা সময়ই বলবে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com