Breaking News

তারুণ্য ধরে রাখে পেপে


পেঁপে (বৈজ্ঞানিক নাম: Carica papaya) একটি উদ্ভিদ যা Caricaceae পরিবারের সদস্য। একটি ফল যা মানুষ কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকে। এর অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। এর ইউনানী নাম পাপিতা, আরানড খরবূযা। এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী। এটি একটি ছোট আকৃতির অশাখ বৃক্ষবিশেষ। লম্বা বো‍টাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। কাঁচা ফল সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। কাঁচা, পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়; তবে কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকলে ফল। কাঁচা ফল বাইরের দিক গাঢ় কালচে সবুজ এবং পাকলে খোসা সহ কমলা রং ধারণ করে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এটি "হঁইয়া" নামে পরিচিত।

রক্তকাশিতে, রক্তার্শে, মূত্রনালীর ক্ষতে, দাদ ও সোরিয়াসিসে, কোষ্ঠকাঠিন্যে এবং কৃমিতে পেঁপে হিতকর। পাকা পেঁপে অর্শরোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে হিতকর। পেঁপেতে প্রচুর পেপেন এনজাইম আছে যা মানুষের পাকস্থলীতে আমিষ হজমে সাহায্য করে।

পরিচিত ফল পেঁপে। কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও পাকলে এটি হয়ে যায় ফল। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনই পুষ্টিকরও। তবে বেশিরভাগ মানুষই পেঁপের উপকারিতা সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। যে কারণে অনেকে এটি খাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কেও বুঝতে পারেন না। পুষ্টিবিদদের মতে, পাকা পেঁপে পুষ্টির ভাণ্ডার।

১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে যা থাকে তা নিম্নরূপ:

  • উপাদান - পরিমাণ
  • আমিষ- ০.৬ গ্রাম
  • স্নেহ- ০.১ গ্রাম
  • খনিজ- পদার্থ - ০.৫ গ্রাম
  • ফাইবার- ০.৮ গ্রাম
  • শর্করা- ৭.২ গ্রাম
  • ভিটামিন- সি ৫৭ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম- ৬.০ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম- ৬৯ মিলিগ্রাম
  • আয়রন- ০.৫ মিলিগ্রাম
  • খাদ্যশক্তি- ৩২ কিলোক্যালরি

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। হাড়ের যে কোনও সমস্যা দূর করতেও পাকা পেঁপে ওস্তাদ। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে ক্যালসিয়াম শোষণ করে হাড় ভালো এবং মজবুত রাখতে সাহায্য করে। অস্টিওপোরেসিসের মতো হাড়ের সমস্যায় ভুগলে নিয়মিত পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস থাকা ভালো।

ক্যান্সার দূর করে: পাকা পেঁপেতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার।

ভিটামিন বি এর অভাব পূরন করে: পেঁপেতে আছে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-৬, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফলেট নামের একটি উপকারি ভিটামিন আছে। তাই ভিটামিন বি এর অভাব পূরণ করার জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।

শরীরের ব্যথা দূর করে: পাকা পেঁপেতে থাকে ভিটামিন ‘কে’, যা শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, ফলে শরীরের ব্যথা কমায়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে: চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে।

হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে: হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এ যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হলো পাকা পেঁপে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা ও বয়স নিয়ন্ত্রণ: পাকো পেঁপে নিয়মিত খেলে এতে থাকা ভিটামিন এ ত্বকে পুষ্টি যোগায়। পেঁপের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের বয়স বাড়ার প্রবণতাকে রুখে দিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখে।

হাড় ভালো রাখে: হাড়ের যেকোনো সমস্যা দূরে রাখতে কাজ করে পাকা পেঁপে। এতে থাকা ভিটামিন কে হাড় ভালো রাখতে কাজ করে। পাকা পেঁপেতে উপস্থিত ভিটামিন কে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণের কাজে সাহায্য করে। যে কারণে হাড় মজবুত হয়। অস্টিওপোরেসিসের মতো হাড়ের সমস্যায় ভুগলে নিয়মিত পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

হাঁপানি সমস্যা কমায়: শীতকালে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে হাঁপানির সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা দূর করতে ছোটো থেকেই পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করানো ভালো। এতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন অ্যাজ়মার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যাঁদের অ্যাজ়মা আছে, তাঁরাও নিয়মিত এই পাকা পেঁপে খেলে উপকার পাবেন।

চোখ ভালো রাখে: অল্প বয়সেই চোখের সমস্যার শিকার হচ্ছে অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেলে চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পেঁপের মধ্যে ভিটামিন এ থাকে যা চোখের জন্য উপকারী।

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়: পেঁপেতে কোনও ক্যালোরি নেই। আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। তাই যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। এতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অন্যান্য রোগের আশঙ্কাও কমে যেতে পারে।

ওজন কমায়: প্রাকৃতিকভাবে আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে পেঁপে। পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে এবং উপকারী ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে বলে যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা পেপে খেতে পারেন নিয়মিত।

চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়: চুলের জন্যও পেঁপে খুব উপকারী। যে কারণে পেঁপে মেশানো শ্যাম্পুর প্রচলন বেশি। টক দইয়ের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে চুলে মাখলে গোড়া শক্ত হয়। মাথায় উঁকুনের সমস্যা দুর করেতেও পেঁপে ভালো কাজ করে।

রূপচর্চায় কাজে আসে: পেঁপের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই তো প্রতিদিন মুখে পেঁপে লাগালে ত্বকের লাবণ্য বজায় থাকে। এছাড়াও পাকা পেঁপে, মধু, টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে।

পেঁপের পুষ্টিগুণ মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারি। কারণ এটি নারীদের যে কোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পেঁপের পাতা, তেঁতুল ও লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে পানি দিয়ে খেলে ব্যথা একেবারে ভালো হয়ে যায়। পেঁপেতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ই ও এ। এগুলো ১০০ গ্রামে মাত্র ৩৯ ক্যালোরি দেয়। এছাড়া এতে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অতিরিক্ত ক্যালরি ও চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষা করে। পাশাপাশি, বিপাক হারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভালো পাকা পেঁপে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com