Breaking News

শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রোযা

শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রোযা

শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এ দিন অনেকে রোযা রেখে থাকেন। এ সম্পর্কে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। প্রতি চান্দ্র মাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন, সাহাবীগণকেও মাসে তিন দিন রোযা রাখতে বলতেন। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬০; ৭৬৩)

সে হিসেবে মাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নাত। এই তিন দিন মাসের শুরুতেও হতে পারে, মাঝেও হতে পারে, আবার শেষেও হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু হাদীসে স্পষ্ট আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিশেষভাবে মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (যাকে আইয়ামে বীয বলা হয়) রোযা রাখতে বলেছেন। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৪৯; ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদীসের আলোচনা)

এই হাদীসগুলোর ওপর ভিত্তি করে হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, যে তিন দিনের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, সেই তিন দিন রোযা রাখাই সর্বোত্তম। ( দ্র. ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদীসের আলোচনা )

সে হিসেবে প্রতি মাসের আইয়ামে বীযে রোযা রাখা সুন্নত। শাবান মাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শাবান মাসের আইয়ামে বীযে (১৩, ১৪, ১৫) রোযা রাখাও সুন্নত। ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ১৫ তারিখ রোযা রাখাও সুন্নত।

বাকি থাকল একটি বর্ণনায় বিশেষভাবে ও পৃথকভাবে ১৫ শাবান রোযা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সুনানে ইবনে মাজাহ, বর্ণনা ১৩৮৪) কিন্তু বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল হওয়ার কারণে কেবল এই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ১৫ শাবানের রোযাকে পৃথকভাবে সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব মনে করা সঠিক নয় বলে মতামত দিয়েছেন মুহাক্কিক আলেমগণ।

তবে, যেমনটি পূর্বে বলা হল, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত―এ হিসেবে এই দিনের রোযাকে (১৩ ও ১৪ তারিখের রোযাসহ) নিঃসন্দেহে সুন্নত মনে করা যাবে।

মোটকথা, সর্বাবস্থায় শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোযা রাখা যাবে। পূর্বের দুই দিন তথা ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে তিন দিন রোযা রাখা যেমন যাবে, তেমনি পৃথকভাবে কেবল ১৫ তারিখও রোযা রাখা যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিন দিন রাখাই উত্তম।

এমনিভাবে ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের একটি দিন হিসেবে ১৫ তারিখের রোযাকে সুন্নতও মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ একটি দিন, সে হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোযা রাখা সুন্নত―এমন ধারণা রাখা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে, শবে বরাত-পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনেরো তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসূলের বিশাল ভাণ্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, ‘শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ’। সনদ ও বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতেই অনুচিত। তবে হাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, ‘রমযানের দু-একদিন পূর্বে রোযা রেখো না।’ যাতে রমযানের জন্য পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃর্স্ফূভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, শাবানের এই ১৫ তারিখ তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি এই দুই বিষয়কে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে সওয়াব পাবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও ইয়াওমে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যেকোনো দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে, ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোযা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।’ ―ইসলাহী খুতুবাত ৪/২৬৭-২৬৮

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com