শীতে শরীরে ব্যাথা বাড়ে কেন? ব্যাথা কমাতে করনীয় বিষয়গুলো
শীতের সময় শরীরের যেসব জায়গায় সাধারণত ব্যথা হয় সেগুলো হলো-ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কটি, গোড়ালি, কাঁধ, কনুই ও কবজি। সাধারণত এ সময়ে জয়েন্ট বা জোড়া এবং বাতের ব্যথা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। এ সময় যারা আর্থরাইটিস, রিওমাটয়েড আর্থরাইটিস ও অস্ট্রিও আর্থরাইটিসের মতো হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছেন তাদের কষ্ট বহুলাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া পেশি, লিগামেন্ট, হাড় ও স্নায়ুর ব্যথাও তীব্র হয় শীতে। সতর্ক না হলে এসব রোগে কষ্ট বাড়ে।
বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই দরজায় কড়া নাড়ছে শীতের আমেজ। ঘাসের ডগায় জমছে শিশির বিন্দু, পায়ের স্পর্শে অনুভূত হচ্ছে ঠাণ্ডা। শীতে বাড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা। যারা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অনেকে শীতকালের শুরুতেই ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যান। কারণ শীতকালে তাদের ব্যথার সমস্যাটি গভীর হয় এবং কষ্ট বেড়ে যায়।
শীতকালে বেশ কয়েকটি কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা বেড়ে যায়। এ সময়ে বিভিন্ন জয়েন্টের ভেতরে থাকা তরল পদার্থ বা সাইনোভিয়াল ফ্লুইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলের চাপ কমে যায়। এ কারণে বিশেষ করে হাঁটুর জয়েন্টে আমাদের শরীরের ওজন বেশি অনুভূত হয়। যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের বেশি সমস্যা হয়।
শীতকালেই কেন ব্যাথা বেশি হয়?
ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন কিছু কিছু বাত বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস রোগীদের হাতের ত্বকের রঙের পরিবর্তন এই ধরনের সমস্যাগুলো বেড়ে যায় শীতকালে। বয়স্ক ব্যক্তিদের পায়ে, হাঁটু, গোড়ালি ব্যথা খুব কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায় শীতকালে। বিভিন্ন কারণে শীতকালে বাতের ব্যথা বাড়ে।
যেমন-
- শীতকালে স্নায়ুর সংবেদনশীলতা অনেক কমে যায়, কম স্টিমুলেশন বা উদ্দীপনায় নার্ভগুলো অতি সংবেদনশীল হয়ে যায়। এটার কারণে বাত ব্যথা বেশি অনুভূত হয়।
- শীতকালে বাতাসে চাপ কমে যাওয়ার কারণে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হতে পারে।
- সায়াটিকা যেটি কোমরের একটি বিশেষ ব্যথা এটিও শীতকালে বেড়ে যায়।
- শরীরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বা পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মাংশপেশিতেও টান ধরতে পারে যে কারণে ব্যথা বাড়ে।
- শীতকালে পানি কম পান করেন অনেকে, শরীরের তরলের ঘাটতি মাংশপেশির আড়ষ্টতা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায়। যার ফলে ব্যথা বাড়ে।
- শীতকালে স্বাভাবিকের তুলনায় হাঁটাচলার পরিমাণ কমে যায় বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের। লেপ, কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে, বসে থাকতে বেশি পছন্দ করেন তারা। এই অচল অবস্থার কারণে অস্থিসন্ধিগুলো আরো বেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, ব্যথা বেড়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।
- শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে অস্থিসন্ধির আড়ষ্টতা বেড়ে যায়, যে কারণে ব্যথা বাড়ে।
- ঠান্ডায় হাতে-পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বাতের ব্যথা বাড়তে পারে।
- শীতে রোদের তীব্রতা কম থাকে, ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে এমন রোগীদের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আরও বেড়ে যা।য় সেটির কারণে বাত ব্যথার লক্ষণগুলো আরও বেশি মাত্রায় প্রকাশ পায়।
- হিট প্যাড: ব্যথা কমাতে শরীরের ব্যথাযুক্ত স্থানে হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন। শীতে ব্যথা কমাতে নিয়মিত হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। এটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে, মাংসপেশির শক্তভাব কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যান এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন। শরীরের সংবেদনশীল স্থানে চাপ কমাতে সহায়ক বালিশ বা কুশন ব্যবহার করতে পারেন।
- বাতের ব্যথা : শীতকালে বাতজাতীয় সমস্যাগুলো বেড়ে যেতে পারে। বাতের সমস্যায় মূলত আমাদের শরীরের ছোট-বড় বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহজনিত সমস্যা বেড়ে যায়।
- বয়সজনিত সমস্যা : শীতকালে বয়স্কদের আড়ষ্টতা এবং শরীরের জয়েন্টগুলোর মুভমেন্ট না হওয়ায় তাদের জয়েন্টগুলো স্টিফ বা শক্ত হয়ে যায়। আর এ কারণে যখনই তারা মুভমেন্ট করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে তখন ব্যথা অনুভব করে।
- যাদের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্য কোনো হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে যদি এসব অবস্থার নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে না থাকে তাহলে ব্যথার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
- শীতে হাত ও পায়ের দিকে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। ফলে জয়েন্টের প্রদাহ বেড়ে ব্যথা, ধীরে ধীরে জয়েন্ট ও মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন জয়েন্টের চারপাশের ত্বক খুব বেশি ঠান্ডা হলে স্নায়ু প্রান্তগুলোর সংবেদনশীলতা বেশি হয়। শীতকালে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত বা স্পর্শ লাগলে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়।
- শীতকালে শরীরের অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন ডির পরিমাণ হ্রাস পায়, যা মুড বা ভাব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা সৃষ্টি করে। বংশগতভাবে শীতকালে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা বা ফোলা দেখা দিতে পারে।
- বাতাসের চাপের সঙ্গে শীতকালে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। আমরা শ্বাসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ অক্সিজেন পাই, যা শরীরে সহজেই ক্লান্তি নিয়ে আসে এবং যেকোনো কাজে আলসেমি এনে দেয়।
শীতে শরীরের ব্যথা মুক্তির উপায়
- মেথি ভেজানো পানি খান: শরীরের যে কোনও ব্যথার উপশম হয় মেথিতে। আগের রাতে এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি খান। তাহলে শরীরও ভালো থাকবে, ব্যথাও কমবে।
- লবণ পানি দিয়ে সেঁক নিন: এককাপ পানিতে সামান্য পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে ভালো করে গরম করে নিন। এবার ওই পানিতে কাপড় ডুবিয়ে সেঁক দিতে থাকুন। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন করলে ভালো উপকার পাবেন।
- শীতে বৃদ্ধদের হাত-পায়ের জয়েন্টগুলো যত্নসহকারে নড়াচড়া করিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে লোশন বা তেল মালিশ করা যেতে পারে, এতে ত্বকের রুক্ষতাও কমবে। একই সঙ্গে তাদের মাংসপেশির রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতেও মালিশ কার্যকর।
- হলুদ-আদার মিশ্রণ: এক গ্লাস পানি নিন। এবার ওই পানিতে হলুদ আর আদা ফুটিয়ে নিন। জল ফুটে আধ কাপ হলে নামিয়ে নিন। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে খান। দিনে দুবার খেলেই কমবে ব্যথা। সাকা শীত খেতে পারলে সুস্থ থাকবেন।
- এক কোয়া রসুন: রসুনের মধ্যে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান সালফার। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং পেশী ও গাঁটের ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে উপকারী। এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া ভালো। এছাড়া আক্রান্ত স্থানে রসুন-তেল গরম করে নিয়মিত মালিশ করতে পারেন।
- ঠান্ডা-গরম সেঁক: হট ওয়াটার ব্যাগ থাকলে ভালো। নইলে একবার ঠান্ডা পানিতে, একবার গরম পানিতে পা ডোবান। এরকম ১৫ মিনিট করুন। হট ওয়াটার ব্যাগ থাকলে ৩০ মিনিট সেঁক দিন। এইভাবে সেঁক দিলে গাঁটের ব্যথার সমস্যা অনেকটাই কমে।
- কফি পান: এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কফি পানে ব্যায়ামজনিত ব্যথা দূর হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পান করলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেইনের ব্যথা অনেক কমে, তবে সেটা দীর্ঘসময়ের জন্যে নয়।
- গাজরের জুস: গাজরের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই গাজরের জুস বানিয়ে ওর মধ্যে পাতিলেবুর রস দিয়ে খান। খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে উপকার পাবেন। তিলের বীজ তিল বীজও ব্যথা সারাতে ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা মাথা ব্যথা ও মাংস পেশীর ব্যথা অনায়াসে দূর করতে সাহায্য করে।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও আদা: অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে খান। প্রয়োজনে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। সারা বছর খেলে ব্যথা কমবেই। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার কিন্তু হালকা গরম পানিই খেতে হয়।
- চিকিৎসকেরা বলছেন, খাওয়া কমালেই ইউরিক অ্যাসিড কমে না। তবে ঘরোয়া উপায় হিসেবে অনেকে ধনিয়া ভিজে পানি খান। তাদের ধারণা, এটি নিয়মিত খেলে ইউরিক অ্যাসিড বশে থাকে।
- হাড়ের উপযোগী খাবার: হাড়ের উপযোগী খাবার এই সময় বেশি করে খেতে হবে। এতে হাড় মজবুত হবে। ফলে কমবে যন্ত্রণা। হাড় মজবুত করতে নিয়মিত পাতে রাখতে হবে দুধ, দই, পনির, কেইল, পালং শাক, ব্রকলি, কমলালেবু ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি প্রচুর পরিমাণে উপলব্ধ। যা একসঙ্গে হাড় মজবুত করতে প্রয়োজন।
- নিয়মিত শরীরচর্চা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ জরুরি। এই ব্যায়াম হাড়ের ক্ষয় হওয়া আটকাবে। পাশাপাশি হাড় মজবুত রাখবে। হাঁটাচলা, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়ামের মতো কাজগুলো করতে পারেন। এতে জয়েন্ট যেমন নমনীয় থাকে, তেমন ব্যথা থেকে অনেকটা রেহাই মেলে।
- অতিরিক্ত শক্ত বিছানায় যেমন ঘুমানো উচিত নয়, তেমনই ফোমের অতিরিক্ত নরম বিছানাও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তুলার তোশকের বিছানা ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। মাথা ও ঘাড়ের রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে শুধু মাথার নিচে বালিশ না দিয়ে ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত বালিশ ব্যবহার করতে হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদি মাথা ও ঘাড় ব্যথার সমস্যা থেকে মিলবে মুক্তি।
- পর্যাপ্ত পানি খান: শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন জয়েন্টের লুব্রিকেটিং পদার্থগুলো শুকিয়ে যায়। এর ফলে দুটি হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ বেশি হয়। যা থেকে তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে। তাই শীতকাল হলেও বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খান ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শীতকালে জয়েন্টের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে স্যালমন, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড ও অ্যাভোকাডোর মতো খাবার খান।
- নিজেকে গরম রাখুন: ঠান্ডায় নিজেকে উষ্ণ রাখুন। আপনি যদি বাড়ির অভ্যন্তরে থাকেন তাহলে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হিটার ব্যবহার করতে পারেন। আর বাইরে গেলে টুপি, গ্লাভস, স্কার্ফসহ গরম পোশাকের স্তরে নিজেকে ভালভাবে ঢেকে রাখুন।
- গরম পানি দিয়ে স্নান করা বা গরম পানি ব্যাগ ব্যবহার করা।
- ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
- হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা করা, বিশেষ করে টানা বসে না থাকা।
- নিজেকে সক্রিয় বা কর্মক্ষম রাখতে হবে। এতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে এবং শরীর হবে ব্যথামুক্ত।
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডজনিত সমস্যা বা হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- গরমজামা: ভালো করে গরমজামা পরুন। শরীরে তাপমাত্রা যেন খুব কমে না যায়। তাহলে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- তাপ দিন: গাঁটে গাঁটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে? ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ ব্যবহার করতে পারেন এই ব্যথা কমাতে। তবে এটি ব্যবহার করা আপনার জন্য ঠিক কি না, চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে আগেই।
- চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপাংচারকে কাজে লাগাতে পারেন। তবে এ পদ্ধতি অনুসরণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
- তাৎক্ষণিক ব্যথা কমাতে খুব ভালো কাজ করে আদার রস, আদা চা। আদা কুচি চিবিয়ে খান, রান্নায় আদা ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
- এক টানা বসে থাকবেন না। অফিসে বসে কাজ করতে হলেও মাঝে মাঝে ব্রেক নিন। হাঁটাহাঁটি করুন। কোমর, পায়ের স্ট্রেচিং করুন। এ অভ্যাস না থাকলেই ধীরে ধরে শীতে আপনার শরীরে ব্যথার পরিমাণ বাড়তে শুরু করবে।
- জুতোর সঙ্গে কোমর-হাঁটুর ব্যাথার সম্পর্ক আছে। যা অনেকেরই অজানা। তাই চেষ্টা করুন সঠিক মাপের ভালো মানের জুতো পরার। জুতো কেনার সময় নজর রাখুন নরম কুশন-যুক্ত সোল-এ র দিকে।
- শীতে খাবারে প্রাধান্য দিন প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফলমূল। ব্রকোলি, গাজর, বিনস্, অঙ্কুরিত ছোলা খান বেশি পরিমাণে। দুধ হজম হলে রোজই তা খেতে পারেন। ডিমও খান নিয়মিত। এতে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম-এর ঘাটতি পূরণ হবে।
- যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে কাজ করেন। তাদের জন্য সকালের রোদে ব্যায়ামের বিকল্প নেই।
- গাজরের জুস: গাজরের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই গাজরের জুস বানিয়ে তার মধ্যে পাতি লেবুর রস দিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে উপকার হবে।
- পুদিনা পাতার রস: পুদিনা পাতায় মেনথল নামে একটি উপাদান আছে, যা ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এর তেল পায়ের কব্জি ও গোড়ালীতে মালিশে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথা ব্যথায় পুদিনা পাতা কপালে ঘষলেও ব্যথা উপশম হয়।
- ব্যথা কমাতে নিজের ইচ্ছা মতো কোনও ওষুধ বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করবেন না। চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খান।
ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ আলোচনা করেন ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ে। তিনি বলেন, কিছু কিছু ফল বা সবজি রয়েছে, যেগুলো খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়বেই। তবে একটু সচেতন হয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ইউরিক অ্যাসিড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যেমন বেশি চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে—গরু, খাসি, ভেড়া মহিষ ইত্যাদি প্রাণীর মাংস। সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। কিছু কিছু শাকসবজি খাওয়া যাবে না। যেমন: পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, ঢ্যাঁড়স, পাকা টমেটো। আমাদের দেশে অনেক রোগী আছেন, যাঁরা একবার ডাক্তার দেখানোর পর অনেক দিন পর্যন্ত একই উপসর্গের একই ওষুধ সেবন করেন। এটি উচিত নয়। ওষুধও আপডেট হয়। তাই সব সময় উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া।
শীতে শরীর ব্যাথা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শীতকালে ব্যথা বেশি লাগে কেন?শীতে রক্ত সঞ্চালন কিছুটা কমে। তার ফলে শরীরে অক্সিজেন প্রবাহের মাত্রাও কমে। তাতে ব্যথা বেড়ে যায়। এই সময়ে শরীর শুকিয়ে যায়, ডিহাইড্রেশন হয়।শীতকালে জয়েন্টে ব্যথা হয় কেন?যখন শীতের আবহাওয়া এবং ব্যথার জয়েন্টগুলির কথা আসে, তখন তত্ত্বটি হল যে যখন এটি বাইরে ঠান্ডা থাকে, তখন বাহু এবং পায়ে স্নায়ু এবং রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ কোর (হৃদপিণ্ড এবং অঙ্গ) উষ্ণ রাখতে রক্ত প্রবাহ এবং সঞ্চালন হ্রাস করে । "এর ফলে আমাদের জয়েন্টগুলি আরও শক্ত এবং বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।জয়েন্টে ব্যথা দ্রুত কমানোর উপায়?জয়েন্টে ব্যথার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে: ঘরে বসে সহজ প্রতিকার: আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য, দিনে কয়েকবার আক্রান্ত স্থানে একটি হিটিং প্যাড বা বরফ প্রয়োগ করার পরামর্শ দিতে পারেন। একটি উষ্ণ বাথটাবে ভিজিয়ে রাখলেও উপশম হতে পারে। ব্যায়াম: ব্যায়াম শক্তি এবং কার্যকারিতা ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে।জয়েন্টের ব্যথা কেন হয়?জয়েন্টে ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। হঠাৎ জয়েন্টে ব্যথা সামান্য পেশী বা লিগামেন্ট মচকে যাওয়া, বারসাইটিস বা স্থানচ্যুতির কারণে হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্টে ব্যথা গুরুতর বা প্রাণঘাতী অবস্থার লক্ষণ হতে পারে, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস, লিউকেমিয়া বা হাড়ের ক্যান্সার।কি খেলে জয়েন্টের ব্যথা কমে?জয়েন্টগুলির জন্য ভাল খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে বীজ, বাদাম, ঠান্ডা জলের মাছ এবং ক্রুসিফেরাস শাকসবজি। এই খাবারগুলি ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ যা জয়েন্টের ব্যথা কমায় এবং তরুণাস্থি স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে।জয়েন্টে ব্যথার সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?ডিক্লোমল ট্যাবলেট (Diclomol Tablet) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সাথে জড়িত জয়েন্টগুলির ফোলাভাব, ব্যথা এবং কঠিনতার মতো লক্ষণগুলিকে দমন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ডিক্লোমল ট্যাবলেট (Diclomol Tablet) অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সাথে যুক্ত কোমল এবং বেদনাদায়ক গাঁটের মতো উপসর্গগুলির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com