Breaking News

পাকিস্তানের সেরা ১০ টি দর্শনীয় শহর

পাকিস্তান একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রটির ৯৫ শতাংশ মানুষ এই ধর্মের অনুসারী। এই মুসলিমগুলোর ৭৫ থেকে ৯৫ শতাংশ সুন্নী এবং ৫ থেকে ২০ শতাংশ শিয়া।  2023 সালের আদমশুমারির চূড়ান্ত ফলাফল অনুসারে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল 241,495,112 জন। পাকিস্তান, একটি ইতিহাস এবং সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ দেশ, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ক্রীড়া জগতের অবদানের জন্য পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ দেশটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। এই ব্লগে, আমরা পাকিস্তানের দশটি গুরুত্বপূর্ণ শহর সম্পর্কে আলোচনা করব।

পাকিস্তানে কি বাঙালি আছে?

শেখ মুহাম্মাদ ফিরোজ, পাকিস্তানি বাঙালি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান, এর দেয়া তথ্য অনুসারে পাকিস্তানে প্রায় ২০০টি বাঙালি জনবসতি আছে। এর মধ্যে ১৩২টিই করাচিতে। করাচির বাঙালি বসতি অঞ্চলকে "মিনি বাংলাদেশ" বলে আখ্যায়িত করা হয়। এসব অঞ্চলে রঙিন বাংলা সাইনবোর্ড, ভাসানী ক্যাপ, লুঙ্গি এবং কোর্তা ইত্যাদি প্রায়ই দেখা যায়।


১. করাচি: (উর্দু: کراچی‎‎; সিন্ধি: ڪراچي; /kəˈrɑːtʃi) পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি পাকিস্তানের প্রাক্তন রাজধানী ছিল। এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল শহর এবং বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম জনবহুল শহর। বিটা-গ্লোবাল শহর হিসাবে চিহ্নিত এই শহরটি পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র। এটি হল দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, জনহিতকর, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র এবং পাকিস্তানের সর্বাধিক বিশ্বজনীন শহর। আরব সাগরে অবস্থিত, করাচি পাকিস্তানের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এবং জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ পাকিস্তানের দুটি বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর (বন্দর করাচি এবং বন্দর বিন কাসিম) এখানে অবস্থিত। করাচী, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এটি একটি প্রাণবন্ত শহর, যেখানে অসংখ্য সংস্কৃতি এবং জাতিগোষ্ঠী বাস করে। করাচীতে রয়েছে বহু শিল্প, ব্যবসা এবং বিনোদনের সুযোগ। শহরের সমুদ্র সৈকত, শপিং মল এবং রেস্তোরাঁগুলি পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।


২. ইসলামাবাদ: ইসলামাবাদ (উর্দু: اسلام آباد‎‎) পাকিস্তানের রাজধানী, এবং এর অংশ হিসাবে ফেডারেলভাবে পরিচালিত হয় ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল। ইসলামাবাদ হল পাকিস্তানের নবম বৃহত্তম শহর, যদিও এর চেয়ে বড় ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি মহানগর এলাকা প্রায় ০.৪৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার সাথে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ইসলামাবাদ, পাকিস্তানের রাজধানী, যা তার পরিকল্পিত আর্কিটেকচার এবং সবুজ পরিবেশের জন্য পরিচিত। শহরটি দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র হওয়ায়, এখানে অনেক সরকারি ভবন এবং দূতাবাস রয়েছে। ইসলামাবাদের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফয়সাল মসজিদ, ডামান-এ-কোহ এবং মর্গাল্লা পাহাড়। 


৩. লাহোর: লাহোর হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী এবং করাচির পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম শহর। লাহোর হচ্ছে পাকিস্তানের অন্যতম ধনী শহর যার আনুমানিক জিডিপি (পিপিপি) ২০১৯ সালের হিসাবে ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । এটি বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলের বৃহত্তম শহর এবং ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে সামাজিকভাবে উদার প্রগতিশীল এবং মহাজাগতিক শহরগুলির মধ্যে একটি। লাহোর, পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যা ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। শহরটি অমৃতসরের সীমান্তের নিকটে অবস্থিত এবং এখানে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান, যেমন লাহোর দুর্গ, বাদশাহী মসজিদ এবং শালিমার বাগ। লাহোরের খাবারও বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ, বিশেষ করে তার বিরিয়ানি এবং কাবাব।


৪. পেশাওয়ার: পেশাওয়ার পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আফগানিস্তান- পাকিস্তান সীমান্তের নিকটবর্তী ঐতিহাসিক খাইবার পাসের পূর্ব প্রান্তের নিকটবর্তী পেশোয়ারের প্রশস্ত উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত। পেশাওয়ারের রেকর্ড করা ইতিহাসটি খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯-এর পূর্ববর্তী, এটি পাকিস্তানের প্রাচীনতম শহর এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীনতম শহর হিসাবে পরিচিত। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে শহরটি পুরুশাপুরা নামে পরিচিত ছিল এবং কুশন সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে কাজ করত; এটি কনিষ্ক স্তূপের আবাসস্থল ছিল। পেশাওয়ারে মুসলিম সাম্রাজ্যের আগমনের আগে হোয়াইট হুনদের দ্বারা বরখাস্ত করা হয়েছিল। পেশাওয়ার, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী, যা প্রাচীন সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। শহরটি আফগানিস্তানের সীমান্তের নিকটে অবস্থিত এবং এখানে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান, যেমন পেশাওয়ার ফোর্ট এবং কিস্তা বাজার।


৫. মুলতান: মুলতান (উর্দু: مُلتان‎‎; ) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহর। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি পাকিস্তানের ৭ম বৃহত্তম শহর যার আয়তন প্রায় ১৩৩ বর্গ কিলোমিটার। এই শহরটি চেনাব নদীর তীরে অবস্থিত এবং দক্ষিণ পাঞ্জাবের প্রধান সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।  মুলতানের ব্যুৎপত্তি অতিপ্রাচীনকাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। প্রাচীন শহরটি খ্যাতনামা মুলতান সূর্য মন্দিরের এলাকায় ছিল এবং ম্যালিয়ান অভিযানের সময় আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তা অবরোধ করেছিলেন। মুলতান মধ্যযুগীয় ইসলামী ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল, এবং একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে একাধিক সুফি সাধকের আগমন ঘটে এই শহরে, যার ফলে একে সুফিদের শহর, সন্ন্যাসীদের শহর, মাদিনাত-উল-আউলিয়া প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিল। মুলতান, পাকিস্তানের একটি প্রাচীন শহর, যা তার শিল্প এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। শহরটি পাঞ্জাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এখানে রয়েছে অসংখ্য মাজার এবং ঐতিহাসিক স্থান।


৬. হায়দ্রাবাদ: হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান 1911 থেকে 1948 সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেছিলেন। তাকে "ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশ্বস্ত মিত্র" উপাধি দেওয়া হয়েছিল। নিজাম হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাঙ্কও প্রতিষ্ঠা করেন। হায়দ্রাবাদ ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র স্বাধীন রাজ্য ছিল যার মুদ্রা ছিল হায়দ্রাবাদি রুপি। হায়দ্রাবাদ, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের একটি শহর, যা তার ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে অসংখ্য মিউজিয়াম এবং শিল্পকলা গ্যালারি, যা শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। 


৭. গুজরানওয়ালা: গুজরানওয়ালা (উর্দু: گوجرانوالا‎‎‬‎) হল পাঞ্জাব, পাকিস্তানের একটি শহর যা লাহোরের উত্তরে অবস্থিত। এটি ১৮শতকে গঠিত করা হয়, পাঞ্জাবের উত্তরের শহরগুলোর তুলনায় এটি একটি আধুনিক শহর। ১৭৬৩ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত এই শহরকে রাজধানী হিসেবে ধরা হতো। গুজরানওয়ালা, পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্র, যা খাদ্য প্রস্তুতকারক শহর হিসেবে পরিচিত। শহরটি পাঞ্জাবের একটি বড় শহর এবং এখানে রয়েছে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান।


৮. ফয়সালাবাদ: ফয়সালাবাদের পূর্বে লায়লপুর নামে পরিচিত ছিল - পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল শহর, করাচি এবং লাহোরের পরে দ্বিতীয় স্থানে পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের বৃহত্তম। ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে প্রথম পরিকল্পিত শহরগুলির মধ্যে একটি, এটি দীর্ঘকাল আগে একটি মহানগরীতে বিকশিত হয়েছে। ফয়সালাবাদকে শহরের জেলা মর্যাদায় পুনর্গঠন করা হয়েছিল; 2001 স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ (LGO) দ্বারা প্রবর্তিত একটি হস্তান্তর ) ফয়সালাবাদ জেলার মোট এলাকা হল 5,856 km2 (2,261 বর্গ মাইল) যেখানে ফয়সালাবাদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (FDA) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকা হল 1,280 km2 (490 বর্গ মাইল)। ফয়সালাবাদ এই অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অবস্থান এবং সংযোগ সড়ক, রেল এবং বিমান পরিবহনের কারণে একটি প্রধান শিল্প ও বিতরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটিকে "পাকিস্তার ম্যানচেস্টার" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ফয়জলাবাদ, পাকিস্তানের একটি শহর, যা তার কৃষি এবং শিল্পের জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে অসংখ্য কৃষি খামার এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান, যা শহরের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। 

৯. রাজশাহী: রাজশাহী, পাকিস্তানের একটি শহর, যা তার শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে অসংখ্য কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।


১০. সিয়ালকোট: শিয়ালকোট (পাঞ্জাবি এবং উর্দু: سيالكوٹ) পাঞ্জাব, পাকিস্তানের একটি শহর। এটি শিয়ালকোট জেলার রাজধানী শহর। এটি পাকিস্তানের ১৩তম জনবহুল শহর এবং উত্তর-পূর্ব পাঞ্জাবে অবস্থিত—পাকিস্তানের অন্যতম শিল্পোন্নত অঞ্চল। গুজরানওয়ালা এবং গুজরাটের কাছাকাছি শহরগুলির সাথে, শিয়ালকোট "গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল" শিল্প শহরগুলির অংশ গঠন করে যেখানে রপ্তানিমুখী অর্থনীতি রয়েছে। রপ্তানির মাধ্যমে, শিয়ালকোট-ভিত্তিক শিল্পগুলি জাতীয় কোষাগারকে শক্তিশালী করতে বার্ষিক $25 কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। সিয়ালকোট, পাকিস্তানের একটি শহর, যা তার ক্রীড়া সামগ্রী উৎপাদনের জন্য পরিচিত। শহরটি ফুটবল এবং ক্রিকেট বল তৈরির জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে অসংখ্য কারখানা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান।

এই দশটি শহর পাকিস্তানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি শহরের নিজস্ব বিশেষত্ব এবং আকর্ষণ রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com