Breaking News

ভ্রমণ করুন চীনের বিখ্যাত ১০টি শহর


সাতশ’ বছরেরও বেশি আগে থেকে মার্কো পোলোর লেখার মাধ্যমে বিশ্বে প্রথম চীন নামক দেশটিকে পরিচিতি লাভ করে। চীন এশিয়ার বৃহৎ বিচিত্র এবং চমকপ্রদ দেশ হিসেবেও জনপ্রিয়। চীনের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এ দেশের খাবারের বৈচিত্র্য এর প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলে। চীনের সংস্কৃতি এবং তা উদযাপনের ধরন এ দেশের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এখানে রয়েছে বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ শহর, প্রাচীন প্রাসাদ, বিখ্যাত দ্যা গ্রেট ওয়াল, হলুদ সাগর যা এশিয়ার ৬,৭০০কিলোমিটার পথ পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়াও এখানে আরও রয়েছে অগণিত প্রাচীন উপাসনালয় যা ধর্ম পরিচালনার জন্য তৈরি হয়েছিল।

চীনে ৫০টি এমন জায়গা আছে যা বিশ্ব তালিকার নিরিখে দ্বিতীয়। চীন ১২ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষা অধিবেশন অনুমোদন করে। এই স্থানগুলি চীনের মূল্যবান এবং সমৃদ্ধ পর্যটন ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির মধ্যে রয়েছে। চিনের ৫০টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে ৩৫টি সাংস্কৃতিক, ১১টি প্রাকৃতিক ও ৪টি মিশ্র তালিকাভূক্ত। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন দেশের নাম চীন। এখানে যেমন রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য, তেমনই রয়েছে আকাশচুম্বি দালান। পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য দেশটির দরজা সবসময় খোলা।

০১। সাংহাই, বিশ্বের ষষ্ঠতম সুউচ্চ দালান ওরিয়েন্টাল পার্ল রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন এই শহরে অবস্থিত। দালানটি হুয়াংপু নদীর তীরে অবস্থিত। সাংহাই শহর বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ শহর। শহরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো সাংহাই ডিজনিল্যান্ড। এছাড়া শহরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে ইয়াংপু ও ন্যানপু সেতুতে। 

০২। দ্যা সামার প্যালেস বেইজিং,  বেইজিং থেকে ১৫ কিলোমিটার গেলেই এই দুর্দান্ত সামার প্যালেস রয়েছে। যা সাতশ’ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে একটি সুন্দর পার্কল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত। এটি চীনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রাসাদটি ১১৫৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। এর বিশাল হ্রদটি ১৪ শতকের ইম্পেরিয়াল গার্ডেনগুলোকে আরও সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করার জন্য বানানো হয়েছিল। এর সুন্দর গ্রেট থিয়েটার এবং তিনতলা কাঠামো বিশিষ্ট হল ১৮৯১ সালে ইম্পেরিয়াল পরিবারের অপেরার শুনার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক থিয়েটার এখনও ঐতিহ্যবাহী চীনা নাটক এবং বাদ্যযন্ত্রের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

০৩। চেংড়ু, চেংড়ু চীনের শিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী। শহরটির আকর্ষণীয় জায়গা হলো জিনশা সাইট মিউজিয়াম। এছাড়া এই শহরে ছোট-বড় অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে। চেংড়ু য়ু হোউ মন্দির শহরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা।

০৪। তুংকুয়ান, শহরটি কুংতুং প্রদেশের আরেকটি শহর। এই শহরের দক্ষিণে রয়েছে শেনচেন নদী ও পশ্চিমে রয়েছে পার্ল নদী। নদীর আশেপাশে ঘুরলে চঞ্চল মন স্থির হয়। এছাড়া কুয়ানাইন পর্বত, হুয়েন সেতু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

০৫। নিষিদ্ধ শহর এবং ইম্পেরিয়াল প্যালেস, বেইজিং  চীনের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি হলো এই নিষিদ্ধ শহর। যা ইম্পেরিয়াল প্যালেস নামেও পরিচিত। এটি বেইজিংয়ের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। ১২৭১-১৩৬৮ সালে ইউয়ান রাজবংশের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। বর্তমানে যে কমপ্লেক্সটি দেখা যায় তার বেশিরভাগই ১৪০৬ এবং ১৪২০ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। প্যালেসটি বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। এই প্যালেস ২৪ মিং এবং কিং সম্রাটদের বাসস্থান ছিল, যাদের উপস্থিতিতে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। শুধুমাত্র সাম্রাজ্যের পরিবার পরিজন এবং তাদের গণিকারা ছাড়া। যদিও সবকিছু দেখতে অনেক সময় লাগবে, কিন্তু হাইলাইটের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি সাদা মার্বেল গোল্ডেন রিভার ব্রিজ, হল অফ সুপ্রীম হারমনি। যেখানে রয়েছে ইম্পেরিয়াল সিংহাসন, সূক্ষ্ম সম্রাটের ব্যাঙ্কোয়েট হল এবং প্রাসাদ যাদুঘর যা মিং এবং কিং রাজবংশের শিল্প ও নিদর্শনগুলোর একটি বিশাল সংগ্রহ স্থান।

০৬। থিয়েনচিন, থিয়েনচিন চীনের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ শহরের অন্যতম। শহরটি দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পৌর সরকারের অধীনে শাসিত হয়। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জিং ওয়াং স্কয়ার, থিয়েনচিন ফাইন্যান্সিয়াল টাওয়ার উল্লেখযোগ্য।

০৭। সুঝো, জিয়াংসু-এর ক্লাসিক্যাল গার্ডেন  বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক গার্ডেনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে সুঝো ক্লাসিক্যাল গার্ডেনগুলো আপনার চীন ভ্রমণের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলবে। জিয়াংসু প্রদেশের ঐতিহাসিক শহর সুঝোতে অবস্থিত, এই ক্লাসিক্যাল গার্ডেনটি ১১ শতকে বানানো হয়েছিল। যখন শহরটি এতোটা উন্নত ছিল না তখন এখানে ২৭০টি বা তার বেশি গাছ রোপণ করা হয়েছিল। আগের টিকে থাকা বা পুনরুদ্ধার করা বাগানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো গার্ডেন অফ লিঞ্জারিং, এটি সাত একর জায়গায় বানানো হয়েছিল। যা ১৮০০ সালে মিং রাজবংশের রাজত্বের সময় তৈরি করা হয়েছিল। চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত বাগানগুলোর মধ্যে একটিতে রয়েছে পুল, বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় ভবন, একটি মানবসৃষ্ট পাহাড়, পীচ গাছের একটি খাঁজ এবং একটি সুন্দর রাস্তা যার দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে তিন শতাধিক পুরনো চীনা অক্ষর।

০৮। কুয়াং চো, কুয়াং চো চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের রাজধানী। শহরটি সমুদ্রবন্দর এবং শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্রের জন্য পরিচিত। উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্য ক্যানটন টাওয়ার, সানইয়াট সেন মেমোরিয়েট হল, জেনহাই টাওয়ার।

০৯। লি নদী, গুইলিন ক্রুজিং  গুয়াংজির উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত গুইলিন শহরটি চীনের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামাগুলোর মধ্যে একটি। লি নদীর জন্য বিখ্যাত এই শহর। নদীটি গুইলিন শহর এবং আশেপাশের কার্স্ট পর্বতমালার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। শত শত বছর ধরে এই অনন্য সুন্দর দৃশ্য কবি এবং শিল্পীদের আকৃষ্ট করেছে এবং অগণিত রূপকথার গল্পের বিষয় হয়ে আছে। এটি বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়। নদীটির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রসারিত জায়গা হলো গুইলিন থেকে শুরু করে ইয়াংশুও পর্যন্ত, যেখানে এটি প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাউন্ট অফ ইউনিক বিউটি, এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক হিল এবং রিড ফ্লুট কেভের মতো রোমান্টিক জায়গাগুলোর মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বয়ে গেছে। এই জায়গাগুলো উপভোগ করার সর্বোত্তম উপায় হলো লি নদীর ধার থেকে একটি ক্রুজ নেওয়া। আপনি ট্যুরিস্ট ক্রুজ জাহাজও নিতে পারেন আবার ছোট বাঁশের পান্টগুলোও নিতে পারেন ভ্রমণের জন্য।

১০। শিয়ান, শহরটি চীনের সানজি প্রদেশের রাজধানী। চীনের প্রাচীন চারটি রাজধানীর মধ্যে অন্যতম। এই শহরে দর্শনীয় স্থান হিসেবে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। এই জাদুঘরে রয়েছে ৫০০ ঘোড়াসহ ১৩০ টি যুদ্ধের ঘোড়ার গাড়ি। উল্লেখ্য, কিন সাম্রাজ্যের সম্রাট কিন শি বিশ্বাস করতেন এগুলো তাকে পরকালে স্বস্তি দেবে!

১১। দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না, চীনের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক বর্ডারে চায়না রাজ্য এবং চায়নার রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মূলত এই প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ইউরেশিয়ান প্রান্ত থেকে শুরু করে যাযাবর গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য তখন এই প্রাচীরটি নির্মিত হয়েছিল। চীনের এই প্রাচীর চীনা ভাষায় ‘চ্যাংচেং’ বা ‘লং ওয়াল’ নামেও পরিচিত। পূর্বে শানহাইগুয়ানের দুর্গ থেকে শুরু করে পশ্চিমে জিয়াউগুয়ান পর্যন্ত ৬,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত এই প্রাচীর। প্রাচীর ভ্রমণের সময় হেবেই, তিয়েনসিন এবং বেইজিং এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীন মঙ্গোলিয়া, নিংজিয়া এবং গানসু জায়গাগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন। দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার গড় উচ্চতা ছয় থেকে আট মিটার। প্রাচীরের প্রাচীনতম দুর্গগুলোর মধ্যে কয়েকটি ৭ম শতাব্দীর, যেখানে সবচেয়ে পরিচিত এলাকাগুলো ২১০ খ্রিস্টপূর্বের কাছাকাছি তৈরি করা হয়েছিল।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com