রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ বয়সের প্রেম

একটি নিঃসঙ্গ বিকেল বেলা, শীতের মিষ্টি রোদে গা ভাসিয়ে বসেছিলেন প্রৌঢ় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বয়স তার একটু বেশি হয়ে গেছে, শরীরের প্রতিটি অংশে এক ধরনের অবসন্নতা বিরাজ করছে, কিন্তু মনের মধ্যে এক অদ্ভুত শান্তি। এই শান্তি তার জীবনের সবকিছুর সাথে, বিশেষ করে প্রেমের সাথে জড়িত। তার মনে পড়ছিল তার জীবনের প্রেমের গল্প, কিন্তু আজকের এই বয়সে, এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে তার মনের কোণে ভর করেছিল—এটাই কি সত্যিকারের প্রেম?

একদিন, তিনি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গ্রাম্য পরিবেশের মাঝেও এক ধরনের নিষ্কলুষতা অনুভব করেছিলেন। সেখানে একটি ছোট্ট মেয়ে, শীতল, একটি দোলনা বানাচ্ছিল। ছোট ছোট হাতে খেলা করছিল সেও, অদ্ভুতভাবে রবীন্দ্রনাথের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।

"আপনি কি কবি?" মেয়েটি একদৃষ্টিতে তাকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছিল।

"হ্যাঁ, আমি কবি। তুমি কি জানো কবিতা কী?" রবীন্দ্রনাথ মৃদু হাসি দিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।

মেয়ে জানতো না, কিন্তু তার চোখে এক ধরনের উৎসুকতা ছিল। সেই চোখে কিছু অদ্ভুত আকর্ষণও ছিল, যেন সে এক গভীর অনুভূতির সন্ধান পেতে চায়। রবীন্দ্রনাথের মনে হল, এটা এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি। তার মন যেন একেবারে নতুন করে প্রেমের স্বাদ অনুভব করছিল, যদিও বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে।

"তুমি জানো, প্রেম কি?" রবীন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে প্রশ্ন করেছিলেন, যেন কোনো রহস্যের কথা বলছেন।

মেয়ে সোজা চোখে তাকিয়ে বলেছিল, "প্রেম? জানি না, কিন্তু আমি চাই কেউ আমাকে ভালোবাসুক।"

এই ছোট্ট কথা শুনে, রবীন্দ্রনাথ যেন তার কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন। মনে পড়েছিল তার প্রথম প্রেমের কথা, তার জীবনের সুখ-দুঃখের সব অধ্যায়। তিনি অনুভব করলেন, বয়সের সাথে প্রেমের অর্থ বদলে যায়, কিন্তু প্রেমের সেই শাশ্বত চাহিদা কখনো শেষ হয় না।

"প্রেম আসলে কোনো বয়সের বিষয় নয়, ছোটো কিংবা বড়ো, সবাই একে অনুভব করে। এই দোলনায় যেমন তুমি শান্তি পাচ্ছ, তেমনি প্রেমেও শান্তি পাওয়া যায়, যখন তোমার মন নিখাদভাবে কিছু একজনের প্রতি নিবেদিত থাকে," রবীন্দ্রনাথ বললেন।

মেয়ে একটু থেমে গিয়ে তার দোলনা বানানো কাজে মনোযোগ দিল। কিন্তু তার মুখে একটি মৃদু হাসি ফুটে উঠেছিল, যেন সে কিছু বুঝতে পারছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফিরে এসে জানলেন, প্রেম কখনোই শেষ হয় না, তার প্রমাণ তার নিজের জীবনও। বুড়ো বয়সেও হৃদয় যদি এক মুহূর্তের জন্যও সেই পুরানো অনুভূতি খুঁজে পায়, তবে তা চিরন্তন, শাশ্বত।

শেষ বয়সে, সে বুঝেছিলেন—প্রেম, স্রেফ একটি অনুভূতি নয়, এটি একটি জীবনের সার্বভৌম জিজ্ঞাসা, যা চিরকাল শাশ্বত।

(এটি একটি কাল্পনিক গল্প)