রঙিলা বউ । পর্ব - ০৪
মায়ার চোখ গুলো জ্বলজ্বল করছিলো।
সে আমাকে রুমে নিয়ে গিয়েই গালের মধ্যে ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়!অবাক চোখে তাকিয়ে আছি মায়ার দিকে!
--এই তোকে কোন সাহসে ঐ মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে?
--সে তো আমি জানি না।তুমি গিয়ে তোমার কাজিনকে জিগ্যেস করো।
--ওকে কেনো জিগ্যেস করবো।তোর দোষ সব।তোর দোষেই এমনটা হয়েছে।
--মায়ার মুখের কথা শুনে নজর নামিয়ে ফেলেছি।
--কিরে কথা বলছিস না কেনো?
না ভালো লেগেছে তোর?
--মায়া মুখের ব্যবহার ঠিক করো।মনে রেখো,আমি তোমার স্যার।আর আমাকে এভাবে দোষারোপ করার কোনো মানেই হয় না।তার উপরে তুই তুকারি করছো।
--ওহ হা,এখন তো দোষ করে স্যারের দোহাই দেওয়া হচ্ছে।
স্যারকে তো কিছু বলা যায় না।
--মায়া তুমি নিজ চোখে দেখেছো সেখানে কি হয়েছে।তাও তুমি আমাকে দোষ দিচ্ছো এসবের জন্য?
--দোষ দিব না তো কি করবো?
আপনার কারনেই সব হইছে।কে বলছে আপনাকে এই বাড়িতে আসতে?
সুন্দর চেহারাটা দেখিয়ে মানুষের মনকে কাবু করেন।তারপর আবার বলেন কিছু করেন নাই।
--কিছু বলার নেই তোমাকে আমার আর।
--আপনার বলার না থাকলেও আমার আছে।
আপনার মতন চরিত্রহীনের চেহারাও আমি দেখতে চাই না।কথা বলা তো দূরের কথা।
আজকের পর আর কোনো দিন আমার সামনে আসবেন না।
যদি কোনো প্রয়োজনে আসেন ও,তাহলেও কথা বলার প্রয়োজন নেই।
আপনার সাথে কথা বললে আমিও অপবিত্র হয়ে যাবো।
--আচ্ছা!
যাও তোমার সামনে আর আসবো না।যতটুকু পারি নিজেকে সংযত রাখবো।
মায়া রেগে মেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
অন্যদিকে আমার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরছে!জানিনা কোন পাপের ফল আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে!কোনো কারন ছাড়াই হাজার রকমের অপমান করে গেলো মায়া।
অন্য কোনো মেয়ে হলেও মেনে নিতাম।কিন্তু যখন নিজের ছাত্রীই কলঙ্ক লাগিয়ে দেয়।
তখন বুকটা চিড়ে যায়।ইচ্ছুক হয় দমটা বের করে ফেলি।
চোখের পানি গুলো মুছে নিলাম।
কারন এটা শশুর বাড়ি।হাজার রকমের মানুষজন আছে।
আমার এমন আচরণ দেখলে হয়তো ভাববে,যে কোনো সমস্যা হয়েছে।
চুপচাপ নজরটা মাটির দিকে নামিয়ে বসে আছি।একটু পর মায়ার আম্মু রুমে আসলো।
--বাবা চলো খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে।গিয়ে খাবার খাবে।
--কোনো কথা বললাম না।উনার সাথে নিচে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি এক রাজকীয় কারবার।হাজার রকমের খাবার রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে।
--আকাশ তোমার জন্যই আজ রান্নার করেছি এসব।
শাশুড়ীর হাতের রান্না কেমন,সেটা খেয়ে দেখো।
--চুপচাপ বসে আছি।কোনো কথাই বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।
তাই শাশুড়ী আম্মা জোর করেই প্লেটে খাবার তুলে দিলো।
--আরে বাবা খাও,শরম কিসের।নিজের বাড়িই তো।
--আমার তো শরম লাগছে না।
আমার লাগছে অন্যকিছু।ভিতর থেকে বুক ফেটে কান্না আসছে!
কেউ হাজার পদের রান্না করে মেয়ের জামাইয়ের খাতির যত্ন করছে।
আর কেউ জামাইকে কলঙ্ক দিয়ে অপমানিত করছে।
মায়ার এত কথা শোনার পর কি ভাবে গলার নিচে খাবার নামবে।
তাও কষ্টবিষ্ট করে অল্প করে খেলাম।
শাশুড়ী আম্মা এটা দেখে মন খারাপ করে ফেলেছে।
বাবা রান্না কি ভালো হয়নি?
নাহ তেমন কিছুই না।আসলে আমার পেট ভরা।তাই বেশি একটা খেতে পারছি না।
আচ্ছা তাহলে সমস্যা নেই।রাতে খেও ভালো করে।
রাতে খাবো মানে বুঝলাম না।
আরেহ রাতে তো এখানেই থাকবে তোমরা।তোমার আম্মুকে তো ফোন করে বলে দিয়েছি।
রাতে এখানে থাকবো ভালো কথা।কিন্তু সকালে তো আমার স্কুলে যেতে হবে!
আরেহ গাড়ি তো আছেই।এখান থেকেই সোজা স্কুলে চলে যাবে।
স্কুল তো আর বেশি দূর না।
আচ্ছা।
সারাদিন মায়ার রুমেই শুয়ে বসে কাটিয়েছি।
মায়া সারাদিনে একবারো রুমে আসেনি।যাক এক দিকে ভালোই হয়েছে।
আমার আর ওর সামনে পড়তে হবে না।রাতের বেলায় খেয়ে দেয়ে খাটে শুয়ে আছি।
তখনি মায়া রুমে আসে।আমি খাটে শুয়ে আছি দেখতে পেয়ে,সে বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুতে যায়।
সাথে সাথে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম।
--কি হচ্ছে টা কি?অন্যদিকে মুখ করে।নতুন জামাই শশুর বাড়িতে এসে ফ্লোরে শুবে।
এর থেকে খারাপ কাজ আর কিছুই হতে পারে না।
--আরেহ খারাপ আর ভালো।মানুষটাই তো কলঙ্কিত।
আর কলঙ্কিত মানুষরা উপরের স্থানে কোনো সময় ঠায় পায় না।
তারা সব সময় মানুষের পায়ে নিচেই থাকে।সো সমস্যা নেই।
আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।আপনি উপরে ঘুমান।
বলে একটা কাঁথা আর একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা.....
ঘুম থেকে উঠে স্কুলে চলে গেলাম।মায়া ঘুমেই ছিলো।
আর মনে মনে ঠিক করে নিলাম,
যে আজকের পর মায়ার চোখের দিকে কোনোদিন ও তাকাবো না।
ওর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাও বলবো না।
যদি একান্তই কথা বলতে হয়।তাহলে অন্যভাবে বলবো।
তবুও সামনা সামনি কথা হবে না আর।
ক্লাস করাচ্ছি স্কুলের বাচ্চাদের।কিন্তু মন নেই
সেদিকে।কোনো রকমে স্কুলের সময়টা পার করলাম।
ক্লাস শেষ করে স্কুল থেকে বের হবো,তখনি দেখি মায়া স্কুলের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ওকে স্কুলের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম,
যে এই গেইট দিয়ে যাবো না।অন্য গেইট দিয়ে ঘুরে বের হলাম।
গাড়ি স্টার্ট করবো,তখনি মায়া আমার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়!
অবাক করা বিষয় সে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বসে!
কোনো কথা বললাম না।গাড়ি ড্রাইভ করলাম নিজ গতিতে।ওর দিকে একবারো তাকাইনি।
মায়া বারবার ঘুরে ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছিলো।
সেটা আমার চোখ এড়ায়নি।কিন্তু নাহ,আমি তো তাকাবো না।ড্রাইভ করে বাড়িতে চলে আসলাম।
সকাল বেলায় শাশুড়ীকে বলে এসেছি,স্কুল থেকে সোজা বাসায় যাবো।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বের হয়ে পাড়লাম।
সারাদিন বাহিরে ঘোরাফেরা করেছি।রাত করে বাসায় ঢুকেছি।আম্মু-আব্বু এসব নিয়ে কখনো আমায় বলেনি।কারন জানে,উনাদের ছেলের কোনো খারাপ অভ্যাস নাই।এসে দেখি মায়া ঘুমিয়ে পড়েছে।যাক ভালোই হয়েছে।কাল থেকে এমন এই করবো।সে ঘুমিয়ে গেলে বাড়ি আসবো।আর সে ঘুম থেকে উঠার আগে বাড়ি ছাড়বো।বালিশ বিয়ে সোফায় শুয়ে গেলাম।
ভোর পাঁচটা।ফজরের আজান হচ্ছে।উঠে নামাজ পড়বো ভাবছি,তখনি কিছু একটা অনুভব করলাম।
চোখ মেলে তাকিয়ে যা দেখলাম,তাতে তো মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।মায়া আমাকে জড়িয়ে ধরে সোফার মধ্যে শুয়ে আছে!এটা দেখে চোখ সরাসরি কপালে উঠে যায়!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com