রঙিলা বউ । পর্ব - ০৮
আরেহ এই ভাবে নিজেকে আঘাত করলে হবে না।মনে থাকার মতন করে আঘাত করতে হবে।
নিচ থেকে জুতা তুলে আকাশের হাতে ধরিয়ে দিলো।
এটা দিয়ে মারলে মনে থাকবে!এরপর আর কাছে আসার ভুত মাথায় চাপবে না।
মায়ার এইরূপ আচরণ দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে!
আরেহ স্যার এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
যেটা বলেছি,সেটা করুন।আপনার মতন মানুষ এটার এই যোগ্য।
জুতা খাওয়া মানুষ কখনো কথায় শুধরায় না!
এত করে বলার পরেও আপনি আমাকে কাবু করে নিয়েছেন হা?
আমি না হয় ছোট,কিন্তু আপনি কি করে আমাকে আপনার দিকে উইক করছেন?
শরম লজ্জা বলতে কি কিছু নেই আপনার?
না সেদিন সরি হওয়ায় সুযোগ টা আরো ভালো করে পেয়ে বসেছেন?
মায়ার মুখে এসব শুনে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে আসলাম।
চোখের পানি যেনো বৃষ্টির ফোটার মতন টুপটুপ করে পড়ছে!
আকাশ থেকে বৃষ্টি নামার আগে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।
আকাশ কালো হয়ে যায়।সূর্য মামা নিজেকে মেঘের আড়ালে ঢেকে ফেলে।
চাঁদ মামা নিজেকে গুছিয়ে নেয়।
কিন্তু চোখের বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই।
না হয় চোখ জোড়া গর্জন করে উঠতো বিকট আওয়াজে!যাতে করে সমস্ত মানুষ জানতে পারতো,
যে কোনো এক অভাগীর চোখ থেকে বৃষ্টি নামছে।সেই অভাগাটাকে গিয়ে শান্তনা দিয়ে আসি।
কিন্তু সমস্ত কিছুই তো ভিন্ন।নিজের কষ্ট নিজের বুকে চাপা দিয়ে বৃষ্টি ঝড়াতে হয়।
সারাটারাত বারান্দায় কাটিয়ে দিলাম।
রুমে যাওয়া তো দূরের কথা,সেদিকে চোখ ফিরেও তাকাইনি।
কারন সেখানে আমাকে অপমান করা মানুষটা রয়েছে।
যার সামনে আমি আর যেতে চাই না।
নিজের কন্ঠনালিতে হাত দিয়ে তৃতীয় বারের মতন প্রতিজ্ঞা করলাম।
আজকের পর সেই মানুষটার জন্য একটা ওয়ার্ড ও মুখ দিয়ে বের করবো না।
আজকের পর সেই মানুষটাকে পুরোপুরি আজাদ করে দিব।
সে তার ইচ্ছায় জীবনযাপন করবে।
আর কোনোদিন তাকে ভালোবাসায় কাবু করার চেষ্টা করবো না।
তাকে বুঝাতেও চাইবো না,যে আমি তাকে ভালোবাসি।
সে নিজ থেকে সেধে দূরত্বটা কমাতে চাইলেও সেটাকে আমি আরো বাড়িয়ে দিব।
মায়ার জন্য মায়াটাই শেষ করে দিব।আজ এখন এই মূহুর্তে সব শেষ!
বারান্দায় বসেই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকাল বেলা..
উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।
পরে না খেয়ে বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে।নতুন কোনো উদ্দেশ্য খুঁজবো আজ থেকে।
অন্যদিকে মায়া ঘুম থেকে উঠে "থ মেরে বিছানার উপরে বসে আছে"!
স্যারের সাথে করা রাতের সেই খারাপ আচরণের কথা মনে পড়তেই'বুকে ধুপধুপানি শুরু হয়ে যায়!হে,আল্লাহ!এটা কি করলাম আমি!
মানুষটার সাথে কি ভাবে এমনধারা খারাপ আচরণ করলাম আমি!
মানুষটা তো কোনো ভুল করেনি।সে তার নিজের ওয়াইফকেই জড়িয়ে ধরেছে।
তার পরেও কেনো মানুষটাকে হেট করলাম আমি!
কোনো কিছুর উত্তর এই যেনো মিলাতে পারছি না।
কেনোই বা রাতের বেলায় এইরূপ করেছি আমি,সেটার উত্তর ও আমার কাছে নেই।
শুধু এটুকু বলতে পারবো,রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে তিশান আমার স্বপ্নে এসেছিলো।
তাকে স্বপ্নে দেখার পর থেকে খালি এটাই মনে হচ্ছিলো,
যে মানুষটাকে ঠকিয়ে আমি অন্যকে নিয়ে ভাবছি।
অন্যের সাথে নিজেকে মানানোর চেষ্টা করছি।
যেখানে তিশানের সাথে আমার কোনো কিছুই হয়নি।
যাস্ট কিছুদিন কথা বলিনি তার সাথে।দূরত্বটা হয়তো একটু বেড়ে গিয়েছে।
তবে বাস্তবতাও আমি ভুলিনি।আমি অন্যের বউ।
একজনকে বিয়ে করে অন্য একজনকে মনে পুষে পাপের বোঝা বাড়াচ্ছি।
মাথাটা পিনপিনিয়ে ব্যথা করতে শুরু করলো।
আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।সব কিছু বাদ দিয়ে রেডি হয়ে স্কুলে চলে গেলাম।
আজ তিশানের সাথে পাকাপোক্ত কথা বলবো আমি।
--বোর্ডে আজকে পড়ার কিছু টপিক তুলে দিয়ে, দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি।
ইচ্ছে করছিলো নিজের ইতিহাস টাই বোর্ডে তুলে দেই।তাতেও যদি কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়!
পরক্ষণেই ঈশিতার কথা মনে পড়লো।তাকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম।
আজ থেকে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করেই ঈশিতাকে নিয়ে ভাববো।
তারপর দেখবো,বেহায়া মন কি করে স্টুডেন্টের দিকে যায়।
টিফিন ব্রেকে ঈশিতাকে নিয়ে কেন্টিনে বসে আছি।
তিশান আর মায়া অন্যপাশে চেয়ার নিয়ে বসে আছে।
তারা আমাদের দেখতে পায়নি।নাহ,
চলে যাওয়া উচিৎ এখান থেকে।কারন মায়ার সামনেও আমি আর পড়তে চাই না।
এই ঈশিতা চলো এখান থেকে।অন্য কোথায় গিয়ে বসবো।
ঈশিতাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে এলাম।
আর ওদের দু'টোকে ছেড়ে দিয়ে আসলাম ওদের হালতে।
তিশান তোমার সাথে আজ আমি পাকাপোক্ত কথা বলবো।
হা বলো?
তোমার সাথে কি আদৌও আমার রিলেশন ছিলো?
আর থাকলেও সেটা কি এখন আছে?
সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো।তবে আমি আমার মতন করে বলতে গেলে ছিলো,তবে সেটা এখন নাই।
--সেটা নিয়েই কনফিউজড ছিলাম।যাক এখন ক্লিয়ার হলাম।কারন যদি এখনো রিলেশন থাকতো,তাহলে তোমাকে ফেলে অন্যজনকে নিয়ে ভাবতাম না।
এই কিছুদিনে তোমার থেকে দূরে গিয়ে অন্যরকম কিছু একটা ফিল করেছি আমি।
যে আমি অন্য একজনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি।
--সেটা আমি জানি।তাই তো তোমায় আঁকড়ে ধরে রাখিনি।
কারন তোমার আর আমার মাঝে যাই ছিলো।
সেটা পুরোটাই আবেগ।এর বেশি কোনো কিছুই না।
আবেগের বসে ভাবনা চিন্তা করা বোকামি ছিলো আমাদের।
তবে আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।তুমিও নিজেকে সরিয়ে নাও।
আর পারফেক্ট কিছু চয়েস করতে শিখো নিজের জন্য।তাতেই মঙ্গল থাকে।
--ধন্যবাদ তিশান।
ক্লাসের সময় হয়ে এসেছে,ক্লাসে যাবো।ভালো থেকো।
--হা,তুমিও...
--ক্লাসে চলে গেলাম।
তবুও মনের মধ্যে কিছুটা দোটানা কাজ করছে!
যে কাকে নিয়ে ভাববো আমি!
তবে হা তিশান আর আমি মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন দুজন দু'জনের থেকে সরে এসেছি।তাহলে তিশানকে পুরোপুরি ভুলে যাবো আমি।
আর অপরিচিত নিজেকে নিজের সাথেই পরিচিত করাবো আগে।
কারন তিশানকে ভুলে যাওয়া মানে স্যার নামক মানুষটাকে ভালোবাসা।
সেটা হয়তো সহজেই এক্সেপ্ট করতে পারবো না আমি।
এসব নিয়ে ভাবছিলাম।তখনি আকাশ স্যার ক্লাসে এলো।
সবাই কেমন আছো?
জ্বি স্যার ভালো।আপনি?
হা আমিও ভালো।আজ তোমাদের মাঝে একটা খুশির সংবাদ এলান করবো।
সবাউ জিজ্ঞেসানু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
আজ থেকে দুইমাস পর আমার আর ঈশিতার বিয়ে।
তোমাদের সবাইকে অগ্রীম দাওয়াত দিলাম।ঈশিতা ভেরতে আসো।
ঈশিতা ভিতরে আসলে,ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সবার।
এই,যে ওর সাথেই আমার বিয়ে।
আকাশের কথা শুনে ছাত্র-ছাত্রীরা কয়েকভাবে কথা টাকে এক্সেপ্ট করলো।
কেউ খুশি হয়েছে।আবার যাদের ক্রাশ আকাশ।তাদের কষ্ট হচ্ছে।
আবার অনেকে মায়া আর আকাশের বিয়ের ব্যাপারে জানে।
তারা প্রশ্ন বোধক চিহ্নে আটকে আছে!সবার থেকে ভিন্ন ভাবে এক্সেপ্ট করলো মায়া।
--নাহ উনি এটা করতে পারে না।মানুষটাকে হয়তো ভালোবাসি না।
কিন্তু মানুষটা আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে না।
মানুষটার সাথে কাউকেই যে আমি সহ্য করতে পারবো না।
মানুষটা যে এককভাবে আমার।ভিতর থেকে যেনো দুকড়ে কান্না আসছে!
মানুষটার কথাটা কোনো ভাবেই যেনো আমি মানতে পারছি না।
যেখানে আমার খুশি হওয়ার কথা।মানুষটাকে ছাড়ার জন্য আমিই বেশি খুশি ছিলাম।
সেখানে আমিই এখন কষ্ট পাচ্ছি।কান্নাটা করেই দিলাম।তবে কাউকে বুঝতে দেইনি।
আড়াল করে মুছে নিয়েছি।তখনি কেউ একটা কাগজ আমার গায়ে ছুড়ে মারলো।
কাগজ নিয়ে ভাজ খুললাম।ভিতরে অনেক কিছুই লিখা।পরতে আরম্ভ করলাম...
--দেখলে এখন কি হলো?নিজের দোষেই মানুষটাকে দূরে সরালে।
তোমায় তো বুহু আগেই আমি ছেড়ে দিয়েছি।
তাও কেনো তুমি মানুষটাকে আপন করতে পারলে না?
কথার ধরনটা দেখেই বুঝে ফেললাম কার লেখা।
তিশানের লেখা এটা।
তার দিকে তাকাতেই সে আমাকে ঈশারা করে পুরো কাগজটা পড়তে বললো।
আবারো পড়তে শুরু করলাম...
এখনো সময় আছে।নিজেকে মানুষটার কাছে শপে দাও।
নিজেকে ধরা দিয়ে মানুষটাকে নিজের মায়ায় আটকে ফেলো।
না হয় সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে।এখন না হয় দোটানায় আছো।
তাই ভাবতে পারছো না মানুষটাকে নিয়ে।
তবে দোটানার কাহিনী ক্ষতম হলে চোখে কিছুই দেখতে পাবে না।
চারদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া দেখতে পাবে শুধু।এখনো সময় আছে।
আমার কথাটা গায়ে নাও।সব কিছু বাদ দিয়ে উনাকে আঁকড়ে ধরে ভাবতে শুরু করো।
দেখবে,দোটানা দূর হয়ে যাবে।
এরপর পরের কিছু অংশ যা আমি লেখিনি।
সেটা তুমি নিজে নিজেই মনের মধ্যে লেখে নাও।আর কিছু লিখা নাই কাগজে।
মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।কি করবো ভাবতে পারছি না আমি।
এত ছোট বয়সে জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত কি করে নিব আমি!
নাহ নিজেকে শান্ত রাখলে হয়তো আমার দ্বারা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
উনাকে মিথ্যে বলে বাসায় চলে আসলাম।যে আমার মেয়েলি সমস্যা হয়েছে।
বাসায় এসে নিজেকে শান্ত করে ভাবতে শুরু করলাম।
মন খালি একটাই কথা বলছে।উনাকে আঁকড়ে ধরতে।
হা আমি সেটাই করবো।ভালোবাসতে পারি আর না পারি।
তবে উনার সাথেই লেগে থাকবো।মানুষটাকে আমি দূরে যেতে দিব না।
উনি আজ আসলে উনার সাথে কথা বলবো আমি।
দুপুরে ক্লাস শেষ করে আকাশ বাসায় আসে।
--স্যার আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।স্যার প্লিজ আপনি আমায় ছাড়বেন না।
যদিও আপনাকে আমি ভালোবাসি না।তবুও আমি আপনার সাথে থাকতে চাই।
--এই মেয়ে,জীবনটা কোনো মুড়ির মোয়া না।
যখনি ইচ্ছে হবে নিংড়ে খাবে।
যখনি ইচ্ছে হবে গোল করে মোয়া বানিয়ে মুখে ঢোকাবে।আর তুমি কি বলেছিলে?
যে জুতা খুলে মুখে মারলে ভালোবাসার ভুত মাথা থেকে নামবে?
আমি সেটাই করবো।তবে এখন না।জুতো জোড়া আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি।
যেদিন তোমায় ডিভোর্স দিয়ে ঘর থেকে বিদায় করবো,সেদিন এই জুতো জোড়া মুখে মারবো।
আর নিজেকে শান্তনা দিব,যে মন থেকে তো দূরে সরিয়েছি।
কাগজে কলমেও দূরে সরিয়েছি।
সেদিন নিজের গালে জুতোর বাড়ি দিয়েও প্রাপ্তির হাসিটা আমি হাসবো।
--আকাশের কথা শুনে মায়া কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
নিচে গিয়ে আকাশের মাকে নালিশ করে...
--আপনার ছেলে নাকি আমায় ছেড়ে দেবে।
আম্মু প্লিজ আপনি উনাকে বুঝান।আমি উনার সাথে থাকতে চাই।
উনাকে ছাড়তে চাইনা আমি।
--আরেহ পাগলি মেয়ে কান্না করিস না।আমি দেখছি দাঁড়া কি হয়েছে।
তিনি আকাশকে ডাক দেয়।
আকাশ একটু নিচে আয় তো...
আম্মুর ডাক শুনে বুঝতে বাকি রইলো না,যে মায়া নালিশ করেছে।
তবে তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।আমার জীবনের সিদ্ধান্ত এবার আমি নিব।
দেখি কে আটকায় তাতে আমাকে...!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com