রঙিলা বউ । পর্ব - ১১
মায়া,বাবু কান্না করছে।দুধ খাইয়ে এসো।
জ্বি,আপনার জন্য খাবারটা রেডি করেই দুধ খাওয়াচ্ছি।
মায়া অপরিচিত লোকটার জন্য খাবার রেডি করে বাবুর কাছে যায়,ওকে দুধ খাওয়ানোর জন্য।
সে গিয়েই দেখতে পায়,তার বাবু নেই।তার বাবুর জায়গায় আকাশ শুয়ে আছে!
মায়া আকাশকে দেখেই চমকে উঠে!
আকাশ তুমি এখানে কি করে এলে?
মায়ার গলার আওয়াজ শুনে,পাশের রুম থেকে অপরিচিত লোকটা মায়ার কাছে আসে।
মায়া তুমি কার সাথে কথা বলছো?
আকাশ এখানে মানি?এখানে তো কেউ এই নেই।
আর আকাশ এখানে আসবে কি করে?তুমি কোথায় রয়েছো থাইল্যান্ড।
আর আকাশ হয়েছে বাংলাদেশে।সে এখানে আসার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
লোকটার কথা শুনে মায়ার হুঁশ ফিরে আসে।সে দেখতে পায় তার বাবু শুয়ে আছে।
এখানে তার বাবু ছাড়া আর কেউ নেই।সে এতটা সময় কল্পনায় হারিয়ে গিয়েছিলো।
মায়া দুকড়ে কান্না করে দেয়।
মায়া প্লিজ কান্না করো না।তোমার কান্না দেখলে আমারো খুব খারাপ লাগে।
কান্না করবো না তো কি করবো?মানুষটা যে এখনো আমার মনে গেঁথে আছে।
মানুষটার সৃতি যে আমাকে ঘুমাতে দেয় না।
প্লিজ সব ভুলে যাও।উপর ওয়ালার যেমন হুকুম ছিলো,তেমনটাই হয়েছে।
আর তাছাড়া তো আমি রয়েছিই।তুমি কান্না করলে আমাদের বাবুটাকে কে সামলাবে?
জানি না আমি কিছু!তবে শুধু এটুকু জানি,মানুষটাকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না।
আচ্ছা,তোমার ভুলতে হবে না।শুধু নিজেকে সামাল দিতে শিখো।আমি চললাম।
আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ওকেহ যান আপনি।আর খাবার গুলা সময় মতন খেয়ে নিবেন।
অপরিচিত লোকটা অফিসে চলে গেলো।
ভাগ্যের লিখন ছিলো এক জনের সাথে।
কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসলাম আরেক জনের কপালে!নিয়তির কি নির্মম পরিহাস।
মানুষটা যদিও অনেক ভালো।শুধু ভালোই না,আকাশ থেকেও কয়েকহাজার গুন বেশি ভালো।
কিন্তু তাও আকাশ আমার মনে মধ্যে গেঁথে আছে।মানুষটা আমায় বলেছে।
সে আমার সারা জীবন দেখভাল করবে।
কিন্তু তার পরেও ভালোবাসার মানুষের জন্য তো একটা টান কাজ করে।
বাচ্চাটাকে দুধ খাইয়ে শান্ত করলাম।
তারপর রান্নার কাজে মন দিলাম।
অন্যদিকে...
আকাশের পাগলামো যেনো আরো বেড়েই চলেছে।
আকাশের মা,বাবা আর থাকতে না পেরে ছেলেকে জোর করে ঘরের বাহিরে নিয়ে যায়।
বাহিরে গেলে হয়তো ছেলে কিছুটা স্বাভাবিক হবে।
আকাশ দুনিয়ার আলো দেখতে পেয়েই চমকে উঠে!
তার যেনো বিষাক্ত লাগছে দুনিয়ার এই রংঢং পরিবেশ।
আজ দুই বছর চারমাস পর সে ঘর থেকে বের হয়েছে।
দুনিয়াটা কত রঙিন।অথচ,তার জীবনটা ঘোলাটে শীতের সকালের মতন।
কুয়াশা দিয়ে ভরা তার জীবন।
আমি বাসায় যাবো।আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না।
না,তোমার বাসায় যাওয়া চলবে না।আকাশের মা,তুনি গাড়িতে গিয়ে বসো।
আমি ওকে নিয়ে আসছি।পুরো শহর আজ ওকে ঘুরে ঘুরে দেখাবো।
আকাশকে জোর করে ওর বাবা গাড়িতে বসায়।
তারপর গাড়ি করেই পুরো শহর আকাশকে দেখাতে থাকে।
এই শহরের এমন কোনো জায়গা নেই,যা আকাশ চিনে না।
তার বাবা সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে।
স্কুলের সামনে দিয়ে গাড়ি যেতেই তার মনে হয়,
এই জায়গাটা আকাশের খুব চেনা!
নিস্তেজ মস্তিষ্ক হালকা হালকা কাজ করতে শুরু করে!
এই জায়গায় তিশান আর মায়া দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলো।
সব কিছু ধীরে ধীরে মনে পড়তে থাকে।
মনে পড়তে থাকে স্কুলের সমস্ত ঘটনা।এই স্কুলে তো আমি পড়িয়েছিলাম?
হা,তুমি এখানে পড়িয়েছিলে।এখানেই মায়া পড়তো।
আকাশের বাবার কথা শুনে আকাশ কান্না করে দেয়।
পরক্ষনেই তার সমস্ত অতীত মনে পড়ে যায়।
আজ বহু মাস পর চোখ থেকে পানি পড়ছে।
মায়ার জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি যেনো শুখিয়ে গিয়েছিলো।
একটা সময় কান্না আর হাসি,দু'টোই যেনো আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো।
এখন বুঝে আসছে।কি রকম নড়ক বানিয়ে ফেলেছিলাম জীবন টাকে।
নাহ,এই নড়ক থেকে মুক্তি দরকার আমার।নিজের ইচ্ছায় মস্তিষ্ক ঘোলাটে করেছি।
এখন নিজের ইচ্ছায় সেটা সতেজ করবো।
বাবা আমি আগের মত স্বাভাবিক হতে চাই।
আকাশের মুখে বাবা ডাক শুনে,আকাশের মা,বাবা দুজনেই কেঁদে উঠে।
আকাশ,তুই আমাদের চিনতে পেরেছিস?
হা বাবা।
আকাশের মা,আকাশের সারা গালে চুমু খেতে থাকে।
সেলুন থেকে ক্লিন হয়ে বাড়িতে ফিরলাম।
তবে মায়ার সৃতি গুলো মন থেকে মুছতে পারলাম না।
একদম স্বাভাবিক হয়ে গেলাম আগের মতন।
কিন্তু যেখানেই যাই,সেখানেই মায়াকে ফিল করতে থাকি।
মনে হয় যেনো এখানেই মায়া বসে ছিলো।
বিশেষ করে স্কুলের সামনে দিয়ে গেলেই ভিতরটা কষ্টে ফেটে যায়।
নিজেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে একমাস সময় নিলাম।
বাবা,আমি তোমার ব্যবসার হাল ধরবো!
কিহহহহ,সত্যি বলছিস তুই?
হা বাবা,কিন্তু দেশে না।বাহিরের কান্ট্রিতে তোমার যেই ব্যবসা আছে।
সেসব আমি সামলাবো।
কারন দেশে থাকলে মায়ার সৃতি গুলো আমাকে আবার আগের মতন বানিয়ে দেবে।
আচ্ছা ঠিক আছে।তোর যেমন ইচ্ছে হয় কর।
কিন্তু কোন কান্ট্রিতে যাবি?আমার তো বাহিরের চার দেশে ব্যবসা আছে।ফিনল্যান্ড,সুইজারল্যান্ড,থাইল্যান্ড,সৌদি-আরব।
যে কোনো এক দেশে গেলেই হলো।তবে আমার মতে ফিনল্যান্ড যাবো।দেশটা নাকি খুব সুন্দর।
আচ্ছা ঠিক আছে।আমি সব ব্যবস্থা করছি।
বাবা সব ব্যবস্থা করে দিলো।
ছেড়ে দিলাম দেশের মাটি।খুব কষ্ট হচ্ছিলো প্রাণ প্রিয় শহরটা ছাড়তে।
যেই শহরে মায়া নামক কেউ আমার দুনিয়া ছিলো।
যার সাথে হাজারো সৃতির সৃষ্টি হয়েছে এই বাংলার মাটিতে।
সে বেঁচে আছে কিনা জানি না।
কিন্তু তার সৃতি গুলো তো এখনো চোখে কাটা হয়ে বিঁধে আমার।
ফিনল্যান্ডে এসে নিজের বাসস্থানে উঠে গেলাম।
নিজেকে কিছুদিন সময় নিয়ে রিলাক্স করলাম।
রিলাক্স বলতে প্রস্তুতি নিলাম ব্যবসার কাজে নামার জন্য।
তারপর লেগে গেলাম কাজে।আমাদের এখানের যত প্রজেক্ট আছে।
সব বাহিরের দেশের সাথে।
দেখতে দেখতে দুইমাস পার হয়ে গেলো।পুরোপুরি বাবার ব্যবসার হাল ধরে ফেললাম।
নিজেকেও অনেকটা সামলে নিয়েছি।কিন্তু মায়ার সৃতি গুলো কখনোই ভুলবার মতন নয়।
প্রেমিকরা সেটা ভালো করেই জানেন।
সব কিছুর ভিরে মায়া এখনো আমার মনে জায়গা করে আছে।
যখনি মায়ার কথা মনে পড়ে,তখনি ভিতর থেকে বুক ফাটা কান্না আসে।
তবে অতিরিক্ত উইক হইনা এখন আর আগের মতন।
আগেই তো বললাম,যে নিজেকে সামলে নিতে শিখেছি অনেকটা।
ব্যবসার খাতিরে এক লোকের সাথে পরিচয় হলো।নাম আসাদুজ্জামান।
দুই দেশে তার ব্যবসা রেয়েছে।ফিনল্যান্ড,আর থাইল্যান্ড।
তবে সে থাইল্যান্ড এর বাসিন্দা।ব্যবসার কাজে দুই দেশে আসা যাওয়ায় থাকে।
তার কোম্পানির সাথে আমাদের একটা প্রজেক্টের কন্টাক্ট হয়েছে।
এ থেকেই তার সাথে আমার ভালো খাতির।লোকটাও বেশ ভালো।
হটাৎ এই থাইল্যান্ডে আমাদের ব্যবসায়ীক কাজে কিছু গন্ডগোল হয়।
ইমারজেন্সি সেখানে আমার যেতে হবে।
কারন বাবার শরীর নাকি বেশি একটা ভালো না।
বাবা এখন সেখানে যেতে পারবে না।তাই আমার এই যেতে হবে।
ফ্লাইটের টিকিট কনফার্ম করে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।
সেখানের মাটিতে পাড়া দিতেই মনে হলো,এই মাটিতে আমার অতি আপন কেউ আছে।
পরক্ষণেই মনে পড়লো।এটা আমার শহর না।এখানে আপন কেউ থাকবে বলে আশা করা বোকামি।ব্যবসার ঝামেলা মিটিয়ে আসাদুজ্জামান সাহেবকে ফোন দিলাম।
যে আমি আপনার শহরে এসেছি।আপনার যদি সময় হয়,তাহলে দুজনে দেখা করতে পারি।
উনি তো মহাখুশি।কারন উনাকে ফিনল্যান্ডে যথাযথ আপ্যায়ন করেছি আমি।
আকাশ সাহেব।আপনি কিছু মনে না করেলে,রাতে আমার বাসায় ডিনারে চলে আসেন।
জমিয়ে আড্ডা দিব।
কোনো কিছু না ভেবেই হা করে দিলাম।
রাতে আসাদুজ্জামান সাহেবের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
উনি আমার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
গাড়ি থেকে নামতেই এগিয়ে আসলেন আমাকে রিসিভ করার জন্য।
তারপর উনার বাসায় নিয়ে গেলেন।দুজনে বসে অনেকটা সময় কথা বললাম।
আকাশ সাহেব খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।খাবার লাগাতে বলছি।
আচ্ছা।
মায়া,টেবিলে খাবার লাগাও মেহমানের জন্য।
আসাদুজ্জামান সাহেবের মুখে মায়া নামটা শুনতেই চমকে উঠলাম!
আবার কষ্ট ও হতে লাগলো।কারন নামটা যে আমার খুব কাছের মানুষের ছিলো।
আমার প্রিয় মানুষটার নাম ও মায়া।উনার প্রিয় মানুষটার নাম ও মায়া।
বাহ কি মিল।কৌতূহল হলো উনার রক্ষিতাকে দেখার জন্য।কিন্তু উনাকে কিছুই বললাম না।
তখনি চোখে পড়লো,অল্প বয়সি একটা মেয়ে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।
পিছন থেকে দেখে কেমন যেনো পরিচিত মনে হচ্ছে।
কোনো কিছু না ভেবেই ডাক দিয়ে বসলাম।এই যে মিসেস আসাদুজ্জামান।
একটু এদিকে ফিরুন তো...
আমার ডাক শুনে মেয়েটা এদিকে ফিরতেই আমার চোখ জোড়া কপালে উঠে গেলো!
আল্লাহ,এ তো আমার কলিজার টুকরো মায়া!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com