Breaking News

রঙিলা বউ । পর্ব - ০৭


সুখ,দুঃখ,এই দু'টো জিনিস যে পরিবর্তন করে করে আসে।
আকাশ খানিকক্ষণের জন্য সেটা ভুলেই গেছে।
হয়তো এতো ভালোবাসার পরেও মায়াকে হারাতে হবে।
মায়াকে জড়িয়ে ধরে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি,তা নিজেও বলতে পারবো না।
বিকাল পাঁচটায় ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম থেকে উঠে দেখি,
মায়া আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
কি হয়েছে?এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
স্যার আপনার কি মনে হচ্ছে না,যে আপনি একটু অতিরিক্ত করছেন?
নাহ,আমার তো এমন মনে হচ্ছে না।কিন্তু কেনো বলোতো?
স্যার আমি আপনার স্টুডেন্ট।
আপনার সাথে আমার অনেক কিছু নিয়ে সীমাবদ্ধতা আছে।
তার পরেও কি ভাবে আপনি আমার শরীরকে নিজের বসে করেন?
আপনি হয়তো ভুলে গেছেন,যে আমি আপনার স্টুডেন্ট।কিন্তু আমি ভুলিনি,
যে আপনি আমার শিক্ষক।

আমি যত পারি আপনার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
কিন্তু আপনি আপনার শরীরকে কাবু করতে পারছেন না।
বারবার আমার শরীরে নিজের তৃপ্তি খুঁজে বেড়াচ্ছেন।এটা কিন্তু ঠিক না স্যার!
মায়া তুমি এভাবে বলছো কেনো?
তুমি আমার স্টুডেন্ট ছিলে।আর এখনো আছো।
সেটা আমি মানি।কিন্তু তোমার আর আমার তো বিয়ে হয়েছে।
তুমি তো আমার বউ।তোমাকে একটু আকটু তো আদর করতেই পারি।
তাই বলে এভাবে বলবে?
স্যার আপনার মনের মধ্যে ময়লা জমে গেছে।
এতকিছু বলার পরেও আপনার মুখ থেকে এমনধারা কথা আসে কি করে?
বিয়ে করা বউকে আদর করলে,সেটা দোষের কি?
বিয়ে করেছেন ভালো কথা।কিন্তু আমি তো বলেই দিয়েছি,যে এই বিয়ে মানি না।
আর আপনিও তাতে সম্মতি দিয়েছেন।
আর আমাদের মধ্যে ছয়মাস পর ডিভোর্স দেওয়ার কথাও পাকাপোক্ত হয়েছে।
তারপরেও কি করে আপনি আমাকে কাছে টানেন?
কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না!
মায়া তো আসলেই ঠিক কথা বলেছে।ওর সাথে তো আমার অন্য রকম কথা হয়েছে।
কিন্তু তার পরেও আমি ওর দিকে ঝুঁকে পড়ছি।এটা কথার খেলাফ হচ্ছে।
নাহ,আজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করবো।

মায়া সরি।
স্যার আপনার সরি আপনার কাছেই রাখেন।শুধু নিজেকে গুটিয়ে রাখেন আমার থেকে।
তাতেই আমার হবে।আপনার জন্য মাঝে মাঝে আমার মধ্যেও অনেকটা বদখাসলত চলে এসেছে।
আমি চাইনা আমার মধ্যে পুরোপুরি ভাবে এই বদ অভ্যাস ঢুকে পড়ুক।
আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি যেমন চাও,তেমনটাই হবে।
আচ্ছা স্যার আমি নিচে যাচ্ছি।
মায়া নিচে চলে গেলো।আমি সেখানেই ঠায় বসে আছি।নিজের উপরেই নিজের ঘৃণা হচ্ছে।
একটা স্কুলের টিচার কিভাবে এতটা নির্লজ্জ হতে পারে!
যেখানে স্যার হিসেবে মান থাকার কথা আকাশে।
সেখানে তার স্টুডেন্ট এই স্যারের নামে উল্টো-পাল্টা বলছে।নিজের এই বিশ্বাস হচ্ছে না!
যে মায়াকে নিজের করে পাবার খেয়াল কেমন করে মাথায় আসলো।
মানসম্মান পুরো ধুলোয় মিশিয়ে দিলাম নিজের।নাহ,এখন থেকে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করবো।
হা,হয়তো ভালো লেগে গেছে তাকে।
ভালোলাগা বললে ভুল হবে।ভালোই বেসে ফেলেছি তাকে।
কিন্তু সব কিছুর ভিড়ে তার দিক থেকে নিজেকে বিবেচনা করতে ভুলেই গেছি।
সে কি চায়।তারোও কি আমাকে ভালো লাগে কিনা।

নাহ আজ থেকে ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে আমাকে।
সেদিনের প্রতিজ্ঞাটা আবার করলাম।ওর থেকে একদম নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলবো।
বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।বেশ রাত করে বাড়ি ফিরেছি।
এসে দেখি মায়া বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে ইচ্ছে করছিলো
কয়েকরাশ চুমু একে দিতে কপালে।পরক্ষণেই মনে পড়লো যে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি।
ফিলিংসটা নিজের ভিতরেই জমিয়ে রাখলাম।
ভিতরে বিস্ফোরণ হলে হোক।তাও নিজেকে সংযত করতে হবে আমাকে।
সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা...
উঠে রেডি হয়ে স্কুলে চলে গেলাম।
রাতের কথা গুলোই খালি কানে বাড়ি খাচ্ছিলো।
তাও ক্লাসে মন দিলাম।টিফিন ব্রেক দিয়েছে।
কেন্টিনে গিয়ে মন মরা হয়ে বসে আছি।তিশানকে দেখলাম এদিকেই আসছে।
স্যার কিছু কথা ছিলো!
হা বলো...
স্যার আপনি হয়তো টেনশনে আছেন?
আরে নাহ...
স্যার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে হা কি না।
তবে একটা কথা বলি।আপনাকে স্যার হিসেবে খুব ভালোবাসি।
ততটা ভালো আমি মায়াকেও বাসি না।আপনি একদম টেনশন করবেন না।
আপনার আমানত আপনার কাছেই থাকবে।তার কোনো বরখেলাপ আমি করবো না।
আরেহ কি বলছো তিশান?

সত্যি বলছি স্যার।মায়া ক্লাসে এসে আমার সাথে কথা বলেনি।
আমিও তার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি।
আর আমি বহু আগেই ভেবে নিয়েছি,মায়াকে নিজের থেকে দূরে সরাবো।
সেটা হয়তো এখন সম্ভব হবে।
তিশানের কথা শুনে আসলেই মনে হচ্ছে, সে খুব ভালো একটা ছেলে।
তিশান তোমায় কি বলবো আমি জানি না।তুমিই প্রথম মানুষ।
যে আমার মন পড়ে নিয়েছো।
স্যার,মন পড়ার মানুষকে সেই শিক্ষাটা অর্জন করতে দিন।
তখন সেও আপনার মন পড়তে পারবে।ঐ যে দেখেন মায়া আসছে।
আমি গেলাম।আপনারা কথা বলুন।
তিশান চলে গেলো।সে জানেনা,যে কাল আমাদের মধ্যে কি হয়েছে।
আমি মায়াকে দেখেও না দেখার ভান করে গিয়ে বসে রইলাম।
মায়া আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে আমার সামনে বসলো।
এই যে স্যার।আপনার আর আমার জন্য বাসা থেকে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসেছি।খেয়ে নিন এগুলা।
মায়ার কথা শুনে চমকে গেলাম!এটাই কি সেই মায়া!
যে আমাকে রাতের বেলায় হাজার মাইল দূরে সরিয়ে দিয়েছে ওর থেকে!কোনো কথাই বললাম না।চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
স্যার কালকের কথায় কিছু মনে করবেন না।আসলে মাথা ঠিক ছিলো না।
--মায়ার কথা শুনে পুরাই "থ হয়ে গেলাম"!
এখনকার কথাটা শুনে খালি একটা কথাই মনে হচ্ছে,
যে কালকের সব কথার কি তাহলে কোনো ভিত্তি নাই!
তার মানে কি সেও আমায় ভালোবাসে।না বাসলেও কি আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিবে!
না হয় সে সরি হলো কেনো!
--কি হলো কথা বলছেন না যে?

--ওহ হা বলো?
--কি বললাম আপনাকে?
--আরে নাহ,কালকের কথায় কিছুই মনে করিনি আমি।
--মনে না করলে ভালো।আচ্ছা তিশানের সাথে আপনার কি কথা হলো?
--আসলে কথা হয়েছে বলতে কেমন আছি,তা জিগ্যেস করলো।
--আমার ব্যাপারে কিছু বলেনি?
--নাহ কি বলবে?
আমি তো তাকে বলেই দিয়েছি,যে ছয়মাস পর তার কাছে তোমায় ফিরিয়ে দিব।
--ওহ,
মনটা খারাপ হয়ে গেলো স্যারের কথা শুনে।
কিন্তু কেনো খারাপ হয়েছে,তা নিজেও জানি না।
আমার তো খুশি হওয়া উচিৎ।তা না হয়ে উল্টো মন খারাপ করে আছি আমি।
--চলো ঘন্টা বেজেছে।তোমার ক্লাসে ক্লাস করাতে হবে আমার।
আমার ক্লাসে দেরি করে যাওয়া চলবে না।
--খাটাশ কোথাকার।কোনদিন লাগে যে উনার ক্লাসে দেরি করে গিয়েছি।
--ক্লাস করাচ্ছি।বারবার মায়ার দিকে চোখ যাচ্ছে।
নিজের ভিতরে কেমন যে ফিল হচ্ছে,তা বলে বুঝাতে পারবো না।
বারবার ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছি যে,তার কারনে মায়া আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।
এবার তো খুশিতে লাফ দিয়ে উঠবো মতন অবস্থা।

আমার হাবভাব বুঝতে পেরে মুখে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
ইচ্ছে করছে ওকে সবার সামনে কোলে তুলে নিয়ে শাসন করতে।
যে এভাবে কেনো ভেংচি কাটলো।
ক্লাস শেষ করে গাড়ি স্টার্ট করে বসে আছি।
মায়া কখন আসবে সেটা খেয়াল করছি বারবার ঘুরে ঘুরে।
আমি শিউর মায়া আজকে আমার সাথেই বাসায় যাবে।
ঠিক তাই হলো।সে এসে গাড়িতে বসে পড়লো।
গাড়ি ড্রাইভ করছি।তখনি হুট করে বলে উঠলো...
--স্যার আপনি না লুচুর শেষ সীমানা!
ক্লাসে কেমন ভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে।
সবাই এটা দেখে মুখ চেপে হাসছিলো।
--হাসলে হাসুক।বউয়ের দিকেই তাকিয়েছি।অন্য কারোর দিকে তো তাকাইনি।
--হুহ,কচুর বউ।আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে আবার বউ দাবী করা হচ্ছে।
--মায়ার কথা শুনে মনের মধ্যে শুধু লাড্ডু ফুটছে!
তাহলে কি কাল রাতের ভাবনাটা কিছুটা ঠিক।মায়াও হয়তো আমার উপরে উইক হচ্ছে!খুশিতে গান গাইতে ইচ্ছে করছে!নাহ,বেশি এক্সাইটেড হওয়া যাবে না।
পরে এমন ভাবে আকাশ থেকে ফেলবে,
যে কোমড়ের হাড় আর একটাও জায়গা মতন খুঁজে পাবো না।
বাসায় চলে এলাম।

আসার পথে গাড়ি সাইড করে ওর জন্য আইসক্রিম কিনে নিলাম।
সে দেখেনি।বাসায় এসে এগুলা ওর হাতে দিয়ে বললাম,এই নাও,তোমার ফেভারিট আইসক্রিম।
সে তো খুশিতে আমায় জড়িয়ে ধরলো!
--ভাবতেও পারিনি,যে সে এতটা খুশি হবে।
নাহ,কাল থেকে এই ট্রিকস টাই কাজে লাগাবো।
এভাবেই মায়াকে ইমপ্রেস করতে লাগলাম।
দিন ভালোই যাচ্ছিলো।তার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে উঠেছে আমার।সোফা থেকে খাটে প্রমোশন হয়েছে আমার।ভাবতেও অবাক লাগে,যে স্টুডেন্ট হয়ে স্যারের মনের মধ্যে রাজত্ব করছে।
একদিন রাতের বেলায় মায়া শুয়ে আছে।
সেদিন ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত করে বাড়ি ফিরলাম।রুমে এসে দেখি মায়া শুয়ে আছে।
ভেবেছি সে ঘুমিয়ে গেছে।আমিও হাত-পা ধুয়ে শুয়ে পরলাম।
মায়াকে ডাক দিলাম,কিন্তু কোনো সারা শব্দ নাই।
ঘুমিয়ে গেছে এবার শিউর হলাম।আর কোনো কথা না বলে,ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলাম।
এখন আর জড়িয়ে ধরলে সে মানা করে না।
কারন আমাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে।
ওকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়েছি।রাত তিনটা বাজে।
হটাৎ মায়া চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল!লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরলাম!
মায়া কি হয়েছে তোমার?

--এই লুইচ্চা,বদমাশ,শরীর খেকো।তুই আমাকে জড়িয়েও ধরার সাহস কোথা থেকে পেলি।
--মায়া কি সব বলছো উল্টা-পাল্টা।রোজ এই তো তোমায় জড়িয়ে ধরি।
--রোজ জড়িয়ে ধরিস,কিন্তু আজ ধরলি কেনো?
কোন সাহসে তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি!না শয়তান মাথায় ভর করেছে?
কঁচি শরীর দেখো আর তর সইছে না তাই না?
তাই কাছে টেনে নিয়ে শরীরের স্বাদ নিতে চাস?
--মায়া,তোমার কি হয়েছে বলো তো?
--এই শরীর খেকো,তুই একটাও কথা বলবি না আমার সাথে।
তোর চরিত্র খারাপ।লুইচ্ছা লম্পট কোথাকার।
--নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি মায়ার দিকে।
কি সব উল্টা-পাল্টা বলছে সে...
আমি নাকি শরীর খেকো।আমি নাকি তার কচি শরীরের লোভ সামলাতে পারছি না।
এ কথা শোনার আগে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো।
রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।নিজের গালেই ঠাসসস করে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
--আরেহ এই ভাবে নিজেকে আঘাত করলে হবে না।
মনে থাকার মতন করে আঘাত করতে হবে। 
নিচ থেকে জুতা তুলে আকাশের হাতে ধরিয়ে দিলো।
এটা দিয়ে মারলে মনে থাকবে।এরপর আর কাছে আসার ভুত চাপবে না মাথায়।
--মায়ার আচরণ দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে!

চলবে...?

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com