পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, এক কাপ পালং শাক শরীরের দৈনিক ফাইবার চাহিদার ২০% পূরণ করে। পাশাপাশি, ভিটামিন ‘এ ’ও ‘কে’-তে ভরপুর পালং শাক। পালং শাকে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘ই’, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফলিক অ্যাসিড ও সেলেনিয়াম। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এই উপাদানগুলো খুবই জরুরি। পালং শাকে রয়েছে খুব কম পরিমাণ ক্যালরি। কাজেই যত ইচ্ছা খান, ওজন বাড়ার চিন্তা নেই। পালং শাকের ম্যাগনেসিয়াম যা ব্লাড প্রেশার কমায়। পালং শাক রক্তের শ্বেত কণিকার মাত্রা বজায় রাখে। ফলে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পালং শাক ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।
পালং শাকের উপকারিতা:
শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের জরুরি উপাদান পালং শাকে রয়েছে। এর নিউট্রেন ভ্যালু (পুষ্টি গুণাগুন) হলো- ২৩ ক্যালরি, ৯১ শতাংশ পানি, ২ দশমিক ৯ গ্রাম প্রোটিন, ৩ দশমিক ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৩ দশমিক ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২ দশমিক ২ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও এই শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে১, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম রয়েছে।
দেহের ওজন কমাতে- যদি কম ক্যালরি যুক্ত খাবার বাছাই করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি পালং শাককে বেছে নিতে পারেন। কারণ প্রতি ১০০গ্রাম পালং শাকে ক্যালোরি রয়েছে মাত্র ৭ কিলোক্যালরি যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
পালং শাকে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। এ কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ভালো।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তাদের ভালোভাবে জীবনযাপন করাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে ভয় পান। যেহেতু পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নির্ভয়ে খেতে পারেন সবজিটি।
পালং শাকে থাকা ক্যারোটিন এবং ক্লোরোফিল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
চোখ ভালো রাখতে- বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক সবজিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা আমাদের দৃষ্টি শক্তির ক্ষতি বাধা দেয়।পালং শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকায় তা আমদের চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ পালং শাক চোখের জন্য খুব ভালো বলে প্রমাণিত।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে- পালং শাকে থাকা ভিটামিন এ ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ, বলিরেখা পড়া ইত্যাদির দূরীকরণেও বেশ কার্যকর। এছাড়া এটা ত্বকের বয়সের ছাপ পড়ার গতিকে ধীর করে এবং ত্বককে নরম ও স্থিতিস্থাপক অবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
পালং শাকে ভালো পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি হজমশক্তির উন্নতি ঘটায় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
দেহের ক্লান্তিভাব দূর করতে- পালং শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার আয়রন যা দেহে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরী।এছাড়া এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ভিটামিন সি ও ই কে তরান্বিত করে আমদের পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এতে আ্মাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। এছাড়া এই সবজি আমাদের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
পালং শাকে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ক্যারোটিন, আয়রন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস এবং প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
প্রদাহ জনিত সমস্যা রোধ করতে- পালং শাকে রয়েছে নিওজেন্থিন নামক ইয়পাদান যা প্রদাহ নিরাময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের জয়েন্টে ব্যাথার সমস্যা আছে তারা অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটি রাখতে পারেন এবং উপকৃত হতে পারেন।
পালং শাক সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন এ এর সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে- পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনেজা সুস্থ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরী। তাই হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য সবজিটি আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিতভাবে রাখা দরকার।
পালং শাকে ক্যালরি খুব কম এবং এটি পুষ্টি সমৃদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে ওজন কমানোর জন্য পালং শাক ভালো ডায়েট। কারণ কম ক্যালোরির সাথে এই শাক শরীরে প্রচুর শক্তি দেয়।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে- পালং শাকে রয়েছে ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড যা ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই পলিনিউট্রিয়েন্টস গুলো দেহের ফ্রি রেডিকেলকে নিরপেক্ষ করে। ফলে দেহ থাকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে ঝুঁকিমুক্ত।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে- এই সবজিতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ সহ রোগ প্রতিরোধী রক্তের শ্বেত কণিকার সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। ফলে দেহ বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা পায়।
পালং শাকের অপকারিতা (Side Effects Of Palak):
যেহেতু এই শাক শীতেই পাওয়া যায়, তাই অনেকে অতিরিক্ত খেয়ে থাকেন। দেখা যায়, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই শাকের বিভিন্ন পদ পাতে রাখেন।
পালং শাক যেভাবে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়: পালং শাকে থাকে অক্সালেট, যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। প্রস্রাবে অক্সালেটের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে এই পাথরগুলো তৈরি হয়। কিডনিতে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর।
বিষাক্ততা: খুব বেশি পালংশাক খাওয়া শরীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে।
রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে: পালং শাকে থাকে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন কে। যা রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা কমায়। স্ট্রোক প্রতিরোধে রক্ত পাতলাকারী ওষুধ দেওয়া হয়। তাই এমন রোগীদের ক্ষেত্রে পালং শাক খাওয়া কমাতে হবে।
পেটের সমস্যা: পালং শাকে ভালো পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। উচ্চ ফাইবার সামগ্রীর কারণে, পালং শাক পেটে গ্যাস, ফোলাভাব এবং ক্র্যাম্পের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
জয়েন্টের সমস্যা: অক্সালিক অ্যাসিডের পাশাপাশি, পালং শাকে পিউরিনও থাকে, যা এক ধরনের যৌগ। একসঙ্গে এই দুটি যৌগ গাউট ট্রিগার করতে পারে, যারা ইতিমধ্যে জয়েন্টের ব্যথা, প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য বেশি করে পালংশাক খেলে উপসর্গগুলি আরও খারাপ হতে পারে।
খনিজ শোষণে বাঁধা দেয়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সালেট-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ খনিজ শোষণকে বাঁধা দিতে পারে। অক্সালেট একটি অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট। পালং শাকের অক্সালেট ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
অ্যালার্জি হতে পারে: সবুজ শাক-সবজিতে হিস্টামিন থাকে। হিস্টামিন হল একটি রাসায়নিক যা শরীরের কিছু কোষে পাওয়া যায়, যা কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
কিডনিতে পাথরের সমস্যা: যাদের কিডনিতে পাথর আছে তাদের পালং শাক না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আসলে, বেশি করে পালংশাক খেলে শরীরে বেশি অক্সালিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে, আমাদের শরীরের জন্য এটি সিস্টেম থেকে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন জমা হয়, যা কিডনিতে পাথরের সমস্যা বাড়াতে দায়ী।
পালং শাকের উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিন আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ২.৮ গ্রাম, আঁশ আছে ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মি. গ্রাম, অ্যাসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মি. গ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে .০৮ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড থাকে ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, থায়ামিন আছে .০৩ মি. গ্রা।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com