রঙিলা বউ । পর্ব - ০২
আরে স্যার রাখেন আপনার মানুষ দেখাদেখি।
আপনি আগে আপনার আমাজন জঙ্গলটাকে ঠিক করেন।
মায়ার কথা শুনে নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি,শরীর থেকে টাওয়াল টা খুলে নিচে পড়ে আছে!
চোখ দুইটা গোল আলুর মতন বড় বড় হয়ে গেছে,নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে!
নিজেকে দেখে নিজের এই ভয় করতে শুরু করলো!
আল্লাহ কি সব ধরনের গাছপালা পুষে রেখেছি আমি!
তাড়াতাড়ি করে টাপয়াল টা তুলে নিয়ে আমাজন জঙ্গলটাকে ঢেকে ফেললাম।
অন্যদিকে মায়া দৌড়ে পালিয়ে গেলো ওয়াশরুম থেকে।
লজ্জায় পুরে নাক,চুল কাটা যাবে মতন অবস্থা।
কাপড় চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি,মায়া খাটের উপরে বসে আছে।
ওর চোখের দিকে তাকাবো কি করে,সেটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে!
কিছু না বলে নিচে চলে যেতে ধরলাম।তখনি মায়া পিছন থেকে ডাক দিলো....
--স্যার একটা কথা বলবো?
--হা বলো..
স্যার আপনি কি করতে এতবড় বড় ডালপালা রেখে দিয়েছেন গাছে?
না ডালপালা কাটার মতন টাকা নেই আপনার কাছে?
মায়া কি সব বলছো উল্টা-পাল্টা?
যা বললাম সত্যি বললাম।কোনো উল্টা-পাল্টা বলিনি।ওয়াশরুমে ঢুকে নিজেই ভয় পেয়ে গেছিলাম!
যে আল্লাহ কোন বনে ঢুকে গেলাম ভুল করে আমি।
মায়া প্লিজ স্টপ!
আচ্ছা যান আর কিছু বলবো না।তবে এটুকুই বলবো,
যে আসার সময় বড় দেখে একটা করাত নিয়ে আসিয়েন ডালপালা গুলো কাটার জন্য।
আপনার যে বড় জঙ্গল।ছোটোখাটো জিনিসে ওসব কাটবে না।
তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে আসলাম।কারন
আর কিছু সময় থাকলে হয়তো মায়া আমার ইজ্জৎ খেয়ে দেবে।
নিচে এসে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
আড্ডায় পুরোপুরি মশগুল হয়ে গেছি।
আড্ডার এক পর্যায়ে গিয়ে আমার বিয়ের প্রসঙ্গ আসলো।সবাই মজা করছে আমাকে নিয়ে।
বন্ধু সাজ্জাদ তো মুখ ফসকে বেফাঁস একটা কথা বলে ফেললো...
--বন্ধু,বাসর রাতে বিড়াল মেরেছিস তো?
বিড়াল মারার সময় বিড়ালকে কষ্ট দিসনি তো?
নাকি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতন রক্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো?
--সালা খাইস্টা,তুই আজীবন এই খাইস্টা থাকবি।
এতই যখন অন্যের বিষয়ে জানার শখ,তাহলে নিজে বিয়ে করে নিলেই পারিস।
--আরে আমি তো মজা করছি।
--আরেহ,রাখ তোর মজা।তোর মজা আমার মেজাজ খারাপ করার কারন হচ্ছে।মরার বিড়াল নিয়ে পড়েছিস তোরা!এদিকে আমার লাইফ বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।আর স্টুডেন্টের সাথে ওসব করবো কি।সেটা ভাবতেও তো গা শিউড়ে উঠে।শোন সোজা বাংলায় বলি।কোনো বিড়াল টিড়াল মারি নাই।ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিব ছয়মাস পর।
তারপর অন্য একটা বিয়ে করে বিড়াল মারবো।
--আকাশ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
--তোরা যেটা ভাবিস।কিন্তু আমি আমার ডিসিশনে স্ট্রিক্ট।আর সেও মুক্তি চায় আমার থেকে।
--বুঝিনা তোদের এতসব ব্যাপার।
--তোদের বুঝেও লাভ নাই।এখন টপিকটা বাদ দে।
অন্য কোনো কথা থাকলে বল।
বন্ধুদের সাথে অনেকটা সময় আড্ডা দিলাম।তারপর খেয়ে দেয়ে বাসায় চলে আসলাম।বন্ধুরা একত্রে হলে এমন এই করি।খাওয়া দাওয়া ঘুরাঘুরি করা।এটা আমাদের মধ্যে জন্য ব্যাপার।
রুমে ঢুকতেই মায়া দৌড়ে আসলো।
--স্যার করাত এনেছেন জঙ্গল কাটার?
মায়া তুমি কিন্তু বেশি করে ফেলতেছো।
তখন কিছু বলিনি বলে ভেবোনা,যে এখনো কিছু বলবো না।
আরেকবার উল্টো-পাল্টা বললে,দাঁত একটাও জায়গায় খুঁজে পাবা না।
মায়া আকাশের শক্ত কথা শুনে আর কিছু বললো না।
চুপচাপ গিয়ে খাটের উপরে উঠে পড়লো।
--বালিশ নিয়ে সোফায় এসে শুয়ে আছি।
--স্যার আপনি শুয়ে পড়লেন যে?খাবার খাবেন না?
--আমি বাহির থেকে খেয়ে এসেছি।
আর কিছু না বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে টিপাটিপি শুরু করলাম।
--মানুষটা আসলেই কেমন যেনো।আমাকে তো একবার জিগ্যেস করতে পারতো।
যে খেয়েছি কিনা।কিন্তু না,উনার ইগোতে লাগবে আমাকে জিগ্যেস করলে।
ফর্মালিটিস শিখেনি নাকি উদাসীন কে জানে।হয়তো উদাসীন হবে।
কারন উনার চালচলন দেখে উদাসীন এই মনে হয়।
কত বড় বড় জঙ্গল নিয়ে ঘোরাফেরা করে।আর উনার থেকে কতকিছু আশা করছি আমি।
নিচে চলে গেলাম খাওয়ার জন্য।উনার আম্মুই বলেছিলো স্যার আসলে একসাথে খেতে।
কিন্তু ভাল্লুকটা বাহির থেকে খেয়ে এসেছে।
মায়া হয়তো খাওয়া খায়নি।তাই নিচে গেছে খাওয়ার জন্য।
সোফায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলাম।তখন এই মনে পরে,যে কাল থেকে স্কুল খোলা।
নাহ এখন আর ফোন গুতাগুতি করলে চলবে না।
না হয় সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবো না।ফোন রেখে শুয়ে পড়লাম।
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি মায়া ঘুমাচ্ছে।
আমি উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে নিলাম।
তারপর স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হবো,তখন পিছন থেকে আম্মু ডাক দেয়...
--কিরে একা একা কোথায় যাচ্ছিস?
--স্কুল খোলা আজ থেকে।তাই স্কুলে যাচ্ছি।
--স্কুল আজ থেকে খোলা সেটা তো আমি জানি।কিন্তু তুই একা কেনো?বউমা তো গতকাল রাতে বললো,যে আজ সেও স্কুলে যাবে।দুজন তো একসাথে যেতে পারিস।
--আম্মু তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
মাথা আমার না,তোর খারাপ হয়েছে।মায়া কি একা একা স্কুলে যাবে নাকি।
বিয়ে করেছিস।তোর বউ হয় সে এখন।দু'জন এক সাথেই তো যেতে পারিস।
যা বউমাকে সাথে করে নিয়ে স্কুলে যা।
--আমি পারবো না ঐ মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে।
ও কি ভাবে যাবে,সেটা ও জানে।আমি গেলাম।
গাড়ি নিয়ে স্কুলে চলে আসলাম।মা পিছন থেকে অনেকবার ডাক দিয়ে বলেছে,যে বউমাকে নিয়ে যা।
কিন্তু আমি তো ঐ মেয়েকে নিয়ে একসাথে স্কুলে আসবো না।
ক্লাস শুরুর ঘন্টা বেজে গেছে।আমি ক্লাস করাতে চলে গেলাম।ক্লাস করাচ্ছি।
কিন্তু সবাই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে!
কিন্তু আমি সেই দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ করলাম না।
ক্লাস শেষ করে বের হয়ে আসলাম।
তারপর মায়ার ক্লাসে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম মায়া এসেছে।কিছুই বললাম না।ওর দিকে দেখিওনি পর্যন্ত।
ক্লাস শেষ করে অন্য ক্লাসে চলে গেলাম।
অন্য ক্লাসে ক্লাস করাচ্ছিলাম।একটু পর ছুটির ঘন্টা বেজে গেলো।
স্টুডেন্টদেরকে ছুটি দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
বের হয়ে এসে দখি,স্কুলের গেইটের পাশে একটা গাছের নিচে মায়া আর তিশান বসে আছে।
এটা দেখে মনে মনে খুশি হলাম।যাক ভালোই হয়েছে।
আমার রাস্তা ক্লিয়ার হবে এখন।
ওদেরকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসতে ধরলাম।
তখনি তিশান ডাক দিলো পিছন থেকে...
--স্যার একটা কথা ছিলো?
--হা বলো?
--স্যার আপনি নাকি জঙ্গলধারী হনুমান।
টাকার অভাবে নাকি ওসব কাটতে পারেন না আপনি।মায়া আমাকে ওসব বললো।
--তিশানের মুখে ওসব শুনে"থ মেরে আছি পুরো"!
শরমে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
কিন্তু নাহ আমার শরম পেলে চলবে না।তিশানকে যে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।
এই তিশান এদিকে আয়।
--জ্বি স্যার বলেন?
--কাছে আসতেই ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।তোর কত বড় সাহস হা,যে আমার বউয়ের সাথে বসে বসে টাংকি মারিস?তাও আবার আমার চোখের সামনে?
--স্যার আমরা তো এমনিই বসে ছিলাম।
--এই রাখ তোর বসে থাকা।
তুই জানিস সে আমার বিয়ে করা বউ।তার পরেও তোরা একত্রে গাছের নিচে বসলি কেনো?
পিছন থেকে মায়া মেতে উঠলো।
--এই যে স্যার,আপনি ওকে মারলেন কেনো?
--মায়া তুমি চুপ থাকো।
আপনার মতন কি সে লজ্জাহীন নাকি?
--লজ্জা কেনো করবে।যেভাবেই হোক,তোমার আর আমার বিয়ে তো হয়েছে নাকি?
--কিসের বিয়ে আর কিসের বউ?
কিছুই মানি না আমি।আর আপনি ওকে মারলেন কেনো সেটার উত্তর দেন।
--ওকেহ স্বামী হিসেবে মানো না ভালো কথা।
আর আমি স্বামী দাবী করতেও আসবো না।
--স্যার হয়েছেন বলে অনেক কিছুই বলে ফেললেন।
--মায়ার কথা শুনে আরো রাগ উঠে গেলো।ছেলেটা আমার ইজ্জৎ নিয়ে টান দিলো।
দাঁড়াও তোমার বড় বড় কথা আমি বের করছি।
বাসায় চলো আজকে।
হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসালাম।আমার নামে উল্টা-পাল্টা বলেছিস তো ঐ ছেলেকে।আজ খালি বাসায় চল।হাইস্পিডে গাড়ি ড্রাইব করছি।
--আল্লাহ উনি আমার উপরে যে ভাবে রেগে গেছেন।
আল্লাহ না জানি বাসায় গেলে কি করে!তবে হা,আমাকে মারলে,আমিও উনার আম্মুকে আমাজন জঙ্গলের কথা বলে দিব।যে কয়েক বছর ধরে ওসব জঙ্গল পুষে রেখেছে।
--বাসায় এসে পৌঁছেছি।গাড়ি থেকে নেমে সাইডে দাঁড়িয়ে আছি।
মায়া নামতেই খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেললাম।চল তুই আজকে।
তারপর টেনে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলাম।
--কিরে তুই এমন রেগে মেগে কোথা থেকে আসছিস?
কি হয়েছে তোর?বউমা কি কিছু করেছে?
--কি হয়েছে সেটা তোমাদেরকে বলা যাবে না।
তবে এই মেয়েকে আজ মেরে তক্তা বানাবো।
--আন্টি প্লিজ আমাকে বাঁচান!আমি বলছি উনি কেনো রেগে আছেন।
আমি উনার আমাজন বনের কথা আমার এক ফ্রেন্ডকে বলেছিলাম।
যেটা আমি গতকাল দেখেছি।আমার ফ্রেন্ডকে কেনো বললাম।
সেটা নিয়ে উনি রেগে গেছেন।
--কিসের আমাজন কিসের বন?
কিছুই তো বুঝলাম না।এগুলা কি বউমা?
--মায়া আরো কিছু বলতে যাবে।তার আগেই ওর মুখ চেপে ধরলাম।
আম্মু কিছু না।তোমরা এসব বুঝবে না।
মায়ার মুখ চেপে ধরে ওকে রুমে নিয়ে আসলাম।এনে রুম আটকে দিলাম।
এবার কই যাবা তুমি?আমার ইজ্জৎ নষ্ট করো হা?
দ্বারাও তুমি।তারপর কোমর থেকে বেলটা খুলে ফেললাম।
এটা দিয়ে মেরে আজকে সারা শরীর ফাটিয়ে ফেলবো তোমার।
--স্যার প্লিজ আমায় মারবেন না।আর কোনোদিন ওসব কথা কাউকে বলবো না।
--না হবে না।লাতোকে ভুত বাতোসে নেহি মানতি।তোমাকে না মারলে হবে না।
ভয়ে কান্না করে দিয়েছে মায়া।
--প্লিজ স্যার এবারের মতন মাফ করে দেন।আর কোনোদিন ওমন করবো না।
--মেয়েটার কান্না দেখে মায়া লেগে গেলো।ভয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছে।
আচ্ছা যাও তোমাকে মারবো না।কিন্তু ওসব কাজ আর করবে না।
কোনো সারা শব্দ নাই।কান্না করেই চলেছে।
কান্নার গতিবেগ যেনো ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।
--ও আল্লাহ,মারবো বলেছি,তাতেই এভাবে কাঁদছে।
আল্লাহ না জানি মারলে কি ভাবে কান্না করতো।
এমন সময় দরজার বাহির থেকে আম্মু ডাক দেয়।
--আকাশ দরজা খোল..
--আল্লাহ,এবার তো শেষ আমি।
মায়ার কান্নার আওয়াজ আম্মুর কানে একবার গেলে হাজারটা কথা শুনাবে আমকে।
মায়া প্লিজ স্টপ।এবার কান্না থামাও প্লিজ।
--না আমি কান্না থামাবো না।আম্মুকে বলবো,যে আপনি আমাকে ধমক দিছেন।
বলে আবারো কান্না শুরু।
--ও মহারানী কাউয়া,প্লিজ কান্না বন্ধ করো।
না হয় আম্মু শুনতে পেলে,আমাকে হাজারটা কথা শুনাবে।
--শুনুক,আমি আরো জোরে জোরে কান্না করবো।
আপনি আমাকে কাউয়া বলছেন।এবার আওয়াজ করে কান্না করতে আরম্ভ করলো।
--কি ভাবে মায়ার কান্না থামাবো মাথায় আসতেছে না।
কিছু ভেবে না পেয়ে মায়ার ঠোঁট জোড়ায় চুমু বসিয়ে দিলাম।
মায়া আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে!
ধুর এত কিছু দেখার সময় নাই এখন।আগে আম্মুর হাত থেকে বাঁচি।
আম্মু অনেক ডাকাডাকি করলো।কিন্তু সারা পেলো না।
পরে চলে গেলো।এদিকে মায়ার ঠোঁট জোড়া যে দখল করে রেখেছি।
সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই আমার।
হারিয়ে গেছি কোনো এক নেশার রাজ্যে।কতটা সময় মায়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছি।
তা উপর ওয়ালাই জানেন।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com