Breaking News

পাকা পেঁপেতে যেসব পুষ্টিগুণ থাকে তার উপকারিতা ও অপকারিতা


শরীরের জন্য ফলের চেয়ে বেশি উপকারী আর কোনো খাবার নেই। ফলেই সারে বিভিন্ন অসুখ। ওষুধ ছাড়াই বিভিন্ন রোগ সেরে যায় শুধু ফল থেকেই। এমনকি ক্যানসারও।  পেঁপেতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে।  জানলে অবাক হবেন পেঁপে খেলে শরীরের মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই ফলকে ‘মহৌষধ’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

পেপে আমাদের সকলের পরিচিত ফল আর যদি পাকা পেঁপে হয় তাহলে তো সবাই পছন্দ করে। পাকা পেঁপে আমাদের গ্রামেগঞ্জে, মাঠে ঘাটে সব জায়গায়ই পাওয়া যায়। যদিও এখন এর কদর বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক গুন। পরিচিত ফল পেঁপে। কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও পাকলে এটি হয়ে যায় ফল। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনই পুষ্টিকরও। তবে বেশিরভাগ মানুষই পেঁপের উপকারিতা সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। যে কারণে অনেকে এটি খাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কেও বুঝতে পারেন না। পুষ্টিবিদদের মতে, পাকা পেঁপে পুষ্টির ভাণ্ডার। পেঁপেতে থাকে ফোলেট, ভিটামিন এ, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ফাইবার এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডের মতো উপকারী উপাদান। আপনি যদি নিয়মিত পাকা পেঁপে খেতে পারেন তবে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ক্যালশিয়াম ও কিছু উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও মিলবে। আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে এই ফল।

পাকা পেঁপে অনেক রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির প্রতিরোধক। এ ছাড়াও পেঁপেতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি পেঁপে। স্বাদ ও গুনাগুণের কারণেই মানুষের কাছে এর এতো কদর। এতে প্রাকৃতিক ফাইবার হিসাবে পুষ্টি এবং ভিটামিন এ, সি, এবং কে, যেমন নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, প্রোটিন রয়েছে।

গরমে পেট ঠাণ্ডা রাখতে পাকা পেঁপের জুড়ি নেই

পাকা পেঁপে প্রতি ১০০ গ্রামে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ৩২ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ০.৮ গ্রাম আঁশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৬.০ মি.গ্রা. সোডিয়াম, ৬৯ মি.গ্রা. পটাসিয়াম ও ০.৫ মি.গ্রাম আয়রন থাকে।

চলুন জেনে নিই পাকা পেঁপের অসাধারণ কিছু উপকারিতা সম্বন্ধে:-

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: পেঁপেতে আছে প্যাপাইন নামক উপাদান, যা হজমে সহায়ক। গরমের এই সময় আমাদের অনেকেরই হজমে বেশ সমস্যা হয়।  তাই এ সময় পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ উপকারী।

ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে: ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ পাকা পেঁপে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। তাই বেশি করে পাকা পেঁপে খেলে শরীরে সহজে কোনো রোগ বাসা বাঁধতে পারবে না।

হজমশক্তি বাড়ায়: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পানি ও দ্রবণীয় ফাইবার আছে। যারা হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাঁরা নিয়মিত পাকা বা কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে পেঁপে খুব উপকারি।

কোলেস্টেরল কমায়: অন্যান্য ফলের মতই পেঁপেতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। আর পেঁপেতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই কোলেস্টেরলের সমস্যায় যারা দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পেঁপে রাখুন। অন্যান্য কোলেস্টেরল যুক্ত খাবারের বদলে পেঁপে খান। তাহলে আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করে: পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষা করে। পাশাপাশি, বিপাক হারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভালো পাকা পেঁপে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী।

দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে: অপথ্যালমোলজি আর্কাইভস প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন তিনবার পেপে খেলে চোখের বয়সজনিত ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বয়স্কদের মধ্যে দৃষ্টি ক্ষতি প্রাথমিক কারণ, প্রতিদিনের খাবারে তলনামূলক ভাবে কম পুস্টি গ্রহণ করা।  পেঁপে আপনার চোখের জন্য ভাল এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ, সি, ও ই এর উপস্থিতির কারণে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন আছে। এছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ক্যারোটিন ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

চুলের যত্নে:  চুলের যত্নে পেপে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। টক দইয়ের সাথে পেপে মিশিয়ে চুলে মাখলে চুলের গোরা শক্ত হয় ও চুল ঝলমলে হয়। ১ চামচ পেপের আঠা ৭/৮ চামচ পানি দিয়ে ফেটে চুলের গোড়ায় কিছুক্ষন রেখে ধুয়ে ফেললে উকুন মরে যায়।

ভিটামিন বি এর অভাব পূরন করেঃ পেঁপেতে আছে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-৬, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফলেট নামের একটি উপকারি ভিটামিন আছে। তাই ভিটামিন বি এর অভাব পূরণ করার জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।

ওজন কমায়: ওজন ঝরানোর কাজেও পেঁপে বেশ সহায়ক। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা পেট অনেকক্ষণ ভরা রাখতে সক্ষম।

হাড় মজবুত করেঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে। তাছাড়া আর্থারাইটিস, অস্টিও আর্থারাইটিস দূর করতে সাহায্য করে পেঁপে।

ব্রণের দাগ কমিয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ায়: ব্রণের সমস্যা প্রায় সবারই থাকে। এসব ব্রণের কারণে মুখে খুব বাে ধরনের দাগ তৈরি হয়। এই বাজে দাগগুলো নিরাময় করতে পারে সুমিষ্ট এই ফলটি। মুখের অন্যান্য যেকোনো দাগ যেমন মেছতা, ফুস্কুরির দাগও খুব সহজেই দূর করে দিতে পারে।মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করার পাশাপাশি পেঁপে ফলটি মুখের উজ্জ্বলতাও ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

ব্রণ সারায় পেঁপে: বয়োঃসন্ধিকালে বা মুখমণ্ডলে ময়লা জমার কারণে যে ব্রণ সৃষ্টি হয়, তা দূর করতে নিয়মিত পেঁপে খেলে আপনার ত্বক পরিষ্কার হবে। এছাড়া পেঁপের ভেতরের অংশসহ মাস্ক হিসেবে এটি মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়।

নারীদের রজঃস্রাব সমস্যায়: যেসব নারীর অনিয়মিত রজঃস্রাব হয়, তাদের জন্য পেঁপের জুস উপকারি। এক্ষেত্রে কাঁচা বা পাকা পেঁপে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। যেহেতু এই ফল শরীর উত্তপ্ত করে, তাই এটি ‘হট ফুড’ হিসেবেও স্বীকৃত।

অ্যাজমার সমস্যা কমবে: অনেকেই অ্যাজমার সমস্যায় ভুগে থাকেন। এ ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য ছোটবেলা থেকেই পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে থাকে বিটা ক্যারোটিন যা অ্যাজমার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। যাদের অ্যাজমা আছে তারাও নিয়মিত এই পাকা পেঁপে খাবেন। এতে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

উচ্চরক্তচাপ কমায়: পেঁপে আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। আমাদের দেহে জমা থাকা সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে যা হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য দায়ী। উচ্চরক্তচাপ আক্রান্তরা কাঁচা বা পাঁকা পেঁপে খেতে পারেন। দুটোই উপকারী।

শরীরের যন্ত্রণা সারায়: পেঁপেতে থাকা কাইমোপ্যাপিন ও প্যাপিন এনজাইম শরীরের যন্ত্রণা সারাতে সাহায্য করে। শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে পেঁপের নির্যাস ব্যবহার করে স্বস্তি পাবেন।

হার্ট ভালো রাখে: পটাশিয়াম, ফাইবার এবং ভিটামিনে ভরপুর থাকে পাকা পেঁপে। এসব উপাদান হার্টের রক্তনালীতে প্লাক বা ময়লা জমতে দেয় না। যে কারণে সহজেই দূরে রাখা যায় হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যাকেও। কমে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

তাছাড়া শ্বাস- প্রশ্বাসের আরোগ্য ক্ষেত্রে পেঁপের ভূমিকা অনেক। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়। দাঁতের যন্ত্রণার অব্যর্থ ওষুধ হল পেঁপে। অন্ত্রের কৃমি রোধ করে পেঁপে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা পাকা পেঁপের বদলে কাঁচা পেঁপে খান। কারণ পাকা পেঁপে খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।

পাকা পেঁপে খাওয়ার অপকারিতা:

পেঁপের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কম বেশি জানা আছে। কাচা হোক বা পাকা হোক পেঁপে হলো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটা ফল। ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে পেঁপেতে। এখন সারা বছরই পেঁপে পাওয়া যায়। কাচা বা পাকা যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পেঁপে।   সকালে বা সকাল আর ‍দুপুরের খাবারের বিরতিতে পেঁপে খেতে পারেন। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, নিম্ন রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে পেঁপে সেই সাথে ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখে। পেঁপে শরীরের জন্য অনেক বেশি ভালো হলেও  কয়েকজনের ক্ষেত্রে পেঁপে ক্ষতিকর হতে পারে।

ক্যারোটেনেমিয়া: অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁপে খেলে রক্তে বিটা-ক্যারোটিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে ত্বকের রঙে পরিবর্তন আসতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ক্যারোটেনেমিয়া’।

পেটের সমস্যা: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দারুণ কাজ করে পেঁপে। তবে বেশি পরিমাণে পেঁপে খেলে কিন্তু ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

কিডনিতে পাথর: পেঁপেতে ভিটামিন সি-র পরিমাণ বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা-ও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। না হলে অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁপে খেলে কিডনিতে পাথর জমার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর: গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে পেঁপে ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় নারীদের পেঁপে খাওয়া এড়ানোর পরামর্শ দেন। পেঁপের বীজ, শিকড় এবং পাতা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর। কাঁচা পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন দেহের ঝিল্লি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়াও পেঁপে ল্যাটেক্সসমৃদ্ধ, যা জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত এবং এমনকি গর্ভপাত ঘটাতে পারে।

ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর: ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও পেঁপে ক্ষতিকর হতে পারে। এতে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। তবে বেশি পরিমাণে পেঁপে খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিপজ্জনক। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পেঁপে খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বুক ধড়ফড় করা: পেঁপে খাওয়া হার্ট সংক্রান্ত অসুখের ঝুঁকি কমাতে পারে, তবে আপনি যদি এরইমধ্যেই অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে পেঁপে এড়িয়ে যাওয়া ভালো। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে পেঁপেতে অল্প পরিমাণে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড, অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা মানুষের পাচনতন্ত্রে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করতে পারে।   যদিও উৎপাদিত যৌগের পরিমাণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে এর অতিরিক্ত মাত্রায়  হৃদস্পন্দনের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের উপসর্গ আরও খারাপ করে দিতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপরও এটি একই প্রভাব ফেলতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া আক্রান্ত: ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য পেঁপে একটি উপযুক্ত ফল মনে করা হয় কারণ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু যারা এরইমধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।কারণ মিষ্টি জাতীয় ফলে অ্যান্টি-হাইপোগ্লাইসেমিক বা গ্লুকোজ-হ্রাসকারী প্রভাব রয়েছে। এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে বিপজ্জনক স্তরে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা, এবং দ্রুত হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

পেঁপের বিচি: পেঁপের কালো বিচিগুলোও শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এগুলোতে টক্সিক এনজাইম কারপাইন থাকে, যা মস্তিষ্কে অসাড়তা তৈরি করে কার্ডিয়াক ডিপ্রেশন বা প্যারালাইসিস তৈরি করতে পারে।

কাঁচা পেঁপের রস: কাঁচা পেঁপের রস বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। কাঁচা পেঁপের নির্যাস শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এটি পান করলে বদহজম, বিষক্রিয়া ও অ্যাবডোমিনালে ব্যথা হতে পারে।

পেঁপের সঙ্গে যেসব খাবার ভুলেও খাওয়া যাবে না

চর্বিযুক্ত খাবার:  পেঁপে ও চর্বিযুক্ত খাবার মিশিয়ে খেলে পেট ফুলে যাওয়া বা বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস কিংবা ক্রিমযুক্ত সসের মতো খাবারগুলো হলো উচ্চ চর্বিযুক্ত। এর সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে খাওয়া মোটেই উচিত হবে না।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য:  পেঁপেতে পাপেইন ও কাইমোপাপেইন নামক এনজাইম বিদ্যমান, যা দুধকে দই করে ফেলতে পারে। ফলে পেঁপের সঙ্গে দুধ বা দুগ্ধজাত কিছু খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফোলা ভাব কিংবা পেটে অস্বস্তি দেখা দেয়।

আচারজাতীয় খাবার:  আচারের মতো খাবারে বিদ্যমান প্রোবায়োটিক ও এনজাইমকে পেঁপেতে বিদ্যমান এনজাইম ভেঙে দেয়। তাই এ ধরনের খাবার পেঁপের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো।

কাঁচা ও পাকা পেঁপে: পাকা পেঁপে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হলেও কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্সের পরিমাণ বেশি থাকে। কাঁচা পেঁপেতে বিদ্যমান ল্যাটেক্স গলা ও মুখে জ্বালাপোড়া ভাব তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে। পেঁপেতে এমন এনজাইম আছে, যা প্রোটিনকে ভেঙে দিতে পারে। তাই এর সঙ্গে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার না মেশানোই ভালো। যেমন মাংস, মাছ কিংবা তোফু।

দই: গরমের সময়ে দই তো খাওয়া হবেই। তবে ভুলেও দইয়ের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে খাবেন না। শুধু দই-ই নয়, দুগ্ধজাত কোনো খাবারের সঙ্গেই দই মেশাবেন না। এই দুই খাবার আলাদা আলাদা উপকারী হলেও একসঙ্গে খেলে দেখা দিতে পারে সমস্যা। তাই এদিকে খেয়াল রাখুন।

উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার: ক্রিম, চিজের মতো উচ্চমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত খাবারের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে খেলে হতে পারে নানা সমস্যা। খেলেই বিপদ! এ ধরনের খাবার একসঙ্গে খেলে পেটে গোলমাল বাঁধতে সময় লাগবে না। গরমে স্বস্তির জন্য পেঁপে খাচ্ছেন তাই স্বস্তির দিকেই আগে নজর দিতে হবে। এমন কিছুর সঙ্গে এই ফল খাওয়া যাবে না যা একসঙ্গে খেলে ক্ষতিকর। তাই নিজের সুস্থতার জন্য এদিকে নজর দিন।

টমেটো ও কাঁচা পেঁপে: কাঁচা পেঁপেও কম উপকারী নয়। আমাদের দেশে কাঁচা পেঁপের তরকারি কিংবা সালাদ অহরহ খাওয়া হয়। অনেক সময় সালাদের বাটিতে কাঁচা পেঁপের সঙ্গে দেখা যায় টমেটোও। এই সালাদ খেতে সুস্বাদু তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু উপকারীও কি? মোটেই নয়। বরং এই দুই খাবার একসঙ্গে খেলেই বাঁধবে বিপত্তি। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে কাঁচা পেঁপের সঙ্গে কখনোই টমেটো মিশিয়ে খাবেন না।

কমলা লেবু: কমলা লেবু ও পাকা পেঁপে ভুলেও এক সঙ্গে খাবেন না। শরীরের জন্য এক সঙ্গে এই দুই ফল বিষ। ভয়ানক ক্ষতি হবে। এমনকি কিউই কিন্তু পেঁপের সঙ্গে খাবেন না। না হলে এই সব খাবারের বিষক্রিয়ার ফল মারাত্মক হতে পারে।

ঠান্ডা জল: পেঁপে খাওয়ার পরপরই ঠান্ডা জল পান করলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে । এটি মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয় এবং হজমের সমস্যাও হতে পারে । পেঁপে খাওয়ার পর হালকা গরম জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয় । যার কারণে হজমশক্তি ঠিক থাকে ।

ডিম: পেঁপে খাওয়ার পর ভুল করে ডিম খাবেন না । উভয়ই একসঙ্গে খেলে বদহজম, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হজমের সমস্যা হতে পারে ।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com