আমার পুতুল বউ । পর্ব - ০৫
বিনা দাওয়াতে বিয়ে বাড়িতে এসেছি তো ঠিকই কিন্তু কপালে যে কি আছে তা একমাত্র আল্লাহই জানে৷
- কিরে বিয়ে বাড়িতে তো চলে আসলাম এবার কোন পরিচয়ে ঢুকবি? বরপক্ষ নাকি,,,,
আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই পিচ্চিটা বলে উঠলো,,,
- না না ভুলেও বরপক্ষের কথা বলা যাবে না। কারণ বরপক্ষ তো এখনো আসেনি। যদি বরপক্ষের কথা বলি তাহলে তো পাবলিক আমাদেরকে ধোলাই দেবে৷
এইটুকু মেয়ের মাথায় কি বুদ্ধি!
আমাদের দুজনের কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ একজন লোক আসলো৷
- তোমাদেরকে তো আগে কখনো দেখিনি কে তোমরা আর কোন পক্ষ থেকে এসেছো?
আমার গুরু যেহেতু আমার পুতুল বউ সে সব সময় আমার আগে আগে যায় তাই এবারেও সে নিজেই উত্তর দিল,,,
- আমাদের চিনবেন কিভাবে আগে কখনো দেখেননি তো তাই। আর আমরা কনেপক্ষের লোক।
- কিন্তু তোমাদের দাওয়াত করেছি বলে তো আমার মনে হয় না!
- আঙ্কেল মনে হবে কিভাবে আপনি? যখন আমাদের বাড়িতে দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন তখন তো আমরা নানু বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই আমাদেরকে দেখেননি।
- কিন্তু তোমাদের মা-বাবা কই?
- মা-বাবা আমাদের জন্য ভিতরে অপেক্ষা করছে। এই ভাইয়া চলো দেরি করলে আবার মা বকবে।
এই বলে টানতে টানতে পিচ্চিটা আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়। তারপর একটা টেবিলে বসলাম। কিছুক্ষণ পর খাবার পরিবেশন করা হলো! দুজনে পেট ভরে খেলাম। তারপর স্থান ত্যাগ করি আমরা৷
গ্রামের পিচঢালা রাস্তায় হেঁটে চলেছি আমরা। রাস্তার দুই ধারে সবুজ ফসলে ভরা। যতদূর চোখ যায় শুধু ফসল আর ফসল। গ্রামের মেঠোপথ গুলো মানুষের মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা লম্বা ডাব গাছ। বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। কোকিল তার নিজ কন্ঠে গান গেয়ে বেড়াচ্ছে মনের সুখে। সৃষ্টির এমন মনোরম দৃশ্য বড়োই মনমুগ্ধকর। ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই এই সুন্দর প্রকৃতিতে, বিলিয়ে দেই নিজেকে। মেঠোপথ ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটছিলাম হঠাৎ পিচ্চিটা বলে ওঠে,,,
- জোর বাঁচা বেঁচে গেছি। ধরা পড়লে কি যে হতো।
- কি আর হতো মানসম্মান প্লাস্টিক হয়ে যেত।
- সম্মান আবার প্লাস্টিক, সিলভারের হয় নাকি?
পিচ্চিটার এমন পাকনামি কথা শুনে ওর কান টা টেনে ধরলাম৷
- উফফ ভাইয়া লাগছে! ছাড়।
- লাগার জন্যই তো ধরেছি! এত পাকা পাকা কথা বলিস কেন?
- পাকা পাকা কথা কখন বললাম? আমি তো ঠিকই বলেছি। তুমি কখনো দেখেছো মানসম্মান প্লাস্টিকের হয় বা সিলভারের হয়। দেখো নি তাই তো! তাহলে বলো আমার ভুলটা কোথায়?
পিচ্চির এমন অকাট্য যুক্তি শুনে আমি স্তব্ধ। তবুও কান ছাড়লাম না তার। এবার একটু জোরেই টেনে ধরেছি৷
- ভাইয়া ছাড় খুব ব্যথা করছে। আমি কি তোমার ঘরের বউ নাকি যখন খুশি আমাকে মারবে?
আমি পিচ্চিটা কান ছেড়ে দিয়ে বললাম
- তুই আমার ঘরের বউ হতে যাবি কেন তুই তো আমার ঘরের কাজের বুয়া।
- কি বললে তুমি আমি কাজের বুয়া? দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে মজা।
এই বলে পিচ্চিটা আমাকে ধাওয়া করতে লাগল আর আমি দৌড়াতে লাগলাম। বেশ খেপিয়ে দিয়েছি আমার পুতুল বউটাকে। এখন কোনভাবেই তার হাতে নিজেকে ধরা দেওয়া যাবেনা ধরা দিলেই বিপদ। কারণ! না জানি কতটা রেগে আছে আর ধরতে পেলে ধোলাই তো অবশ্যই দেবে।
দুজনেই প্রাণপনে ছুটছি। বিয়ে বাড়িতে যেটুকু খাবার খেয়েছি দৌড়াতে দৌড়াতে সব হজম হয়ে গেছে৷ (তাহলে লাভ টা কি হলো?)
আজ আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। ঘরে মন খারাপ করে বসে আছি আমি। এমন সময় পিচ্চিটা আসলে আমার ঘরে। এসে বলে,,,
- ভাইয়া তোমার তো আজকে রেজাল্ট দিয়েছে। কিন্তু তুমি মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
- পুতুল আমার মন খারাপ আছে আমাকে একটু একা থাকতে দে। তুই যা।
পুতুল কিছু না বলেই চলে গেল। ড্রয়িংরুমে মা এবং ছোট মা বসে গল্প করছিল। সেখানে গিয়ে মাকে বলল,,,
- বড়মা তোমার ছেলে পরীক্ষায় ফেল করেছে।
দুজনে গল্প করছিল পুতুলের এমন কথায় দুজনেই চমকে ওঠে। সবাই ভাবছে এতো ভালো একটা স্টুডেন্ট কিভাবে ফেল করতে পারে? যে কিনা প্রতিবার প্রথম হয় এবার সে ফেল করলো।
- মুগ্ধ ফেল করেছে তোমাকে কে বললো?
মা প্রশ্নটি করে।
- কেউ বলেনি। কিন্তু তোমার ছেলে তো মন খারাপ করে বসে আছে। আমি গেলাম! আমাকে বলে, আমার মন খারাপ আছে তুই যা আমাকে একা থাকতে দে।
মা আর কোন কথা না বলে সোজা আমার ঘরে চলে আসে। এসেই আমাকে একটা থাপ্পড় মারে৷
মায়ের এমন আচরণে প্রচন্ড অবাক হয়ে যাই আমি। মা তো কখনো আমাকে অকারণে মারে না। তাহলে আজ কেন মারল বুঝতে পারলাম না আমি! আমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে শান্ত কণ্ঠে মাকে প্রশ্ন করি,,,
- মা, তুমি আমাকে মেরেছ তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কেন মেরেছ সেই কারণটা বলো।
মা কপট রেগে গিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,,
- তুই এত বড় একটা সত্যি আমাদের কাছে লুকিয়েছিস আবার সাধু সাজে প্রশ্ন করিস কেন মারলাম!
আমি যত মায়ের ব্যবহার দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। আগে কখনো মায়ের আচরণ এমন হয়নি কিন্তু আজ হঠাৎ মায়ের কি হলো যার কারণে এতটা বাজে ব্যবহার করছে আমার সাথে। তবে মায়ের এমন অকারণে বাজে ব্যবহার আমাকে খুব আঘাত করছে।
- কোন সত্যিটা লুকিয়েছি আমি তোমার কাছ থেকে যার কারণে এতটা বাজে ব্যবহার করছ আমার সাথে?
- তুই যে ফেল করেছিস তা আমাদেরকে বলেছিস?
এই কথাটি শুনে সপ্তম আসমান থেকে পড়লাম। আমি কখন ফেল করলাম আর মাকেই বা এই কথাটি কে বলল?
- তোমাকে এসব কথা কে বলেছে।
- পুতুল বলেছে আজ পুতুল না বললে তো আমার জানতে পারতাম না তোর তোর এই ঘটনা।
তারপর মা আরো কিছু বকা দিয়ে চলে গেল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষন পর পুতুলকে ডাক দিলাম। পুতুল ও লক্ষি মেয়ের মতো আমার ঘরে আসে। আমি পুতুলের হাত ধরে বিছানায় বসালাম।
- তুই নাকি আমাকে বলেছিস যে আমি ফেল করেছি?
- তুমি মন খারাপ করে বসেছিলে, ভেবেছিলাম তুমি ফেল করেছ। তাই বলেছি। কিন্তু আমিতো ভাবি নি যে বড়মা তোমাকে মারবে। স্যরি ভাইয়া।
পিচ্চিটার এমন অসহায় মুখ দেখে আমি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না। তবুও বললাম,,,
- জানিস তো পুতুল, বেশি বাড়াবাড়ি কোন কিছুতেই ভালো না সেটা হোক ভালো কিংবা খারাপ। মজা করার একটা সীমা থাকে। শোন তোকে একটা গল্প বলি। একটা রাখাল বনে ছাগল চড়াতে যেত। সে গ্রামের লোকেদের সাথে মজা করার জন্য বাঘ এসেছে বলে চিৎকার করতে লাগল। রাখালের চিৎকার শুনে গ্রামের সবাই ছুটে আসলো তাকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু এসে দেখে সেখানে কোনো বাঘ নেই উল্টো রাখাল হাসছে। এরপর আরো একবার রাখাল এভাবেই মজা করলো। গ্রামের লোকেরা ছুটে আসলো রাখালকে বাঁচাতে কিন্তু রাখাল আবারও হাসতে লাগলো। এমনিভাবে তৃতীয় দিন সত্যি সত্যিই বাঘ চলে আসে এবং রাখাল প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করে সাহায্য চাইতে লাগলো। কিন্তু এবার গ্রামের লোকেরা মজা ভেবেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। বাঘ রাখালকে খেয়ে নেয়।
এই গল্পটি শুনে তুই কি বুঝলি?
- অকারণে মজা কর আর আমাদের ঠিক না। অকারণে মজা করলে নিজেকেই বিপদে পড়তে হয়।
- এইতো ভালো মেয়ে।
- ভাইয়া তোমার খুব লেগেছে তাই না?
- না রে পাগলি লাগেনি। ওটা তো মায়ের ভালোবাসার পরশ ছিল লাগবে কেন? এখন তুই যা।
মা আমার যেই গালে থাপ্পড় মেরেছিল পুতুল ঠাস করে সেই গালে একটা চুমু খেয়ে চলে যায়। আমি বুঝিনা এই মেয়েটির কান্ডগুলো। কখন কি করে বোঝা মুশকিল। এত বড় হয়েছে এখন তবুও দুষ্টুমি গেল না। বিশেষ করে ওর এমন পাগলামি গুলোর জন্যই ওর উপর বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারিনা৷
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com