ডিভোর্স বা তালাক দেয়ার সঠিক নিয়ম
তালাকের অধিকার: তালাকের অধিকার কনটেন্টটিতে স্বামী-স্ত্রী কীভাবে তালাক দিতে পারেন, স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক, স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক, হিল্লা বিয়ে, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব, কাজীর দায়িত্ব মুসলিম পারিবারিক আইনে তালাক সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে ।
মুসলিম আইনে তালাকের অধিকার: সাইদ ও লোপার বিয়ের দুই বছর পর সাইদ লোপাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। লোপা তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। বিয়ের পর থেকেই সাইদ ও তার বাবা-মা লোপাকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। কারণ বিয়ের সময় লোপার বাবা যে যৌতুক দিতে চেয়েছিল টাকার অভাবে তার সব দিতে পারে নাই। বিয়ের সময় লোপার বাবা সাইদকে বলেছিল যে, আমন মৌসুমের পর সাইদকে তাদের দাবী মত টাকা ও মটর সাইকেল কিনে দিবে। কিন্তু গত দুই বছর আমনের ফলন কম হওয়ায় লোপার বাবা সাইদকে শুধু টাকা দিতে পারেন। মটর সাইকেল কিনে দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। লোপার বাবার বাড়িতে ফিরে আসায় তার বাবা-মা চিন্তায় পড়েন। এর কয়েক দিন পরেই সাইদ লোপাকে তালাকের নোটিশ পাঠায়। লোপা কি করবে বুঝতে পারে না। প্রচন্ড অসহায়বোধ করে। বিয়ের আগে সে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল, তাই আইন সম্পর্কে তার কিছু ধারণা আছে। একদিন সে তার বাবার সাথে উকিলের কাছে যায় পরামর্শের জন্য।
উকিল তাকে তালাকের অধিকার সম্পর্কে তথ্য জানান।
লোপা : তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর অধিকার কি সমান ?
উকিল : বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সমান নয়। এক্ষেত্রে স্বামীর ক্ষমতা বা অধিকারই বেশি।
লোপা : স্বামী বা স্ত্রী কিভাবে তালাক দিতে পারে ?
উকিল : স্বামী-স্ত্রী নিম্নলিখিত উপায়ে তালাক দিতে পারেন:
স্বামী কর্তৃক তালাক (স্বামী আইনের নিয়ম মেনে যে কোন সময় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন।)
স্ত্রী কর্তৃক তালাক (স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন অর্থাৎ তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে স্ত্রী কর্তৃক তালাক)
পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তালাক (খুলা বা মুবারত পদ্ধতিতে তালাক)
আদালতের মাধ্যমে তালাক।
ক. স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে
খ. তালাক-ই-তৌফিজ-এর মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে
গ. খুলা’র মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে, এছাড়া
ঘ. স্বামী-স্ত্রী দুজনই মুবারতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। ব্যাখ্যা: ২
লোপা : হিল্লা বিয়ে কি ?
উকিল : প্রাচীন সমাজে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে গেলে তারা আবার বিয়ে করতে চাইলে মধ্যবর্তীসময়ে স্ত্রীকে আরেকটি বিয়ে করতে হত। এই দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাক্তি (স্বামী) স্ত্রীকে তালাক দিলে বা মারা গেলে স্ত্রী পুনরায় প্রথম স্বামীকে বিয়ে করতে পারত। এই মধ্যবর্তীকালীন বিয়েকে ‘হিল্লা’ বিয়ে বলে। তবে বর্তমানে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যাখ্যা: ৩
লোপা : বিয়ে-বিচ্ছেদ বা তালাকের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কি কোন দায়িত্ব আছে ?
উকিল : বিয়ে-বিচ্ছেদ বা তালাকের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশের ব্যবস্থা করতে পারেন। ব্যাখ্যা: ৪
লোপা : এক্ষেত্রে কাজী কি দায়িত্ব পালন করতে পারেন ?
উকিল : কাজীর দায়িত্বগুলো হলো :
জন্ম ও বিবাহের মতো তালাকও রেজিষ্ট্রি করতে হয়।
নিকাহ নিবন্ধক কাজী তার এখতিয়ারভূক্ত এলাকার মধ্যে আবেদনপত্রের ভিত্তিতে তালাক রেজিষ্ট্রি করবেন।
তালাক রেজিস্ট্রির জন্য নিকাহ নিবন্ধক ২০০ টাকা ফি নিবেন (এই ফি সময়ে সময়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিবর্তন করা হয়)।
যে ব্যক্তি তালাক কার্যকর করেছে সে রেজিস্ট্রির জন্য আবেদন করবে এবং ফি দেবে।
উক্ত দুই পক্ষের মধ্যে সত্যি তালাক কার্যকর হয়েছিল কিনা তা নিকাহ নিবন্ধক পরীক্ষা করে দেখবেন।
লোপা : মুসলিম পারিবারিক আইনে তালাক সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
উকিল : মুসলিম আইনে বিয়ে একটি চুক্তি, তাই এ চুক্তি নানা কারণে সমাপ্ত বা ভংগ করা যায়। মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের চুক্তি ভেঙ্গে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটানো সম্ভব। ব্যাখ্যা: ৫
উকিল : তোমার বিয়ে কি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল ?
লোপা : হ্যাঁ।
উকিল : তাহলে তুমি বুদ্ধিমানের কাজ করেছ। তালাক হলে তুমি তোমার দেনমোহর পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।
সাইদ তালাক বহাল রাখার কারণে লোপা ও সাইদের বিয়েটা টেকে না। তবে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রিশন হওয়ার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের পর লোপা সাইদের কাছ থেকে দেনমোহর ও ভরণপোষণ পান।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
1. মুখে মুখে তালাক দিলে তালাক কার্যকর হবে কি ?
উত্তর. না, ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টেশন আইন অনুযায়ী কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনকে পাঠাতে হবে।
2. স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে নোটিশ প্রদান ছাড়া তালাক দিলে তালাক কি কার্যকর হবে ?
উত্তর. হ্যাঁ, তালাক কার্যকর হবে, তবে নোটিশ প্রদান না করায় স্বামীর ১ বছরের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ড হবে।
3. স্ত্রী কি স্বামীকে কোন কারণ ছাড়া তালাক দিতে পারেন ?
উত্তর. না, আইনে উল্লেখিত কারণ ছাড়া স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন না।
4. বিচ্ছেদপ্রাপ্ত/ তালাকপ্রাপ্ত স্বামী- স্ত্রী কি পুনরায় ঘর সংসার করতে পারেন?
উত্তর. ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ (৬) ধারা অনুসারে তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, বিচ্ছেদপ্রাপ্ত/ তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে ঘর- সংসার করতে চাইলে নতুন করে নিয়ম অনুসারে বিয়ে করতে হবে; তবে পুনর্বিবাহ করে ঘর-সংসার করায় আইনতঃ কোন বাধা নেই।@@
কি কি উপায়ে তালাক দেওয়া যায়, কখন তালাক কার্যকর হয়, তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে করনীয় ইত্যাদি।
১। স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক
স্বামী নিজের ইচ্ছায় যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্ন বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলিম ব্যক্তি যে কোন সময় কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। আইনের কাছে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না এবং স্ত্রী,তাকে কেন তালাক দেওয়া হল তা জানতে চাইতে পারেনা। কিন্তু সে তালাক মৌখিক বা লিখিত যে ভাবেই দিক না কেন তখনই তা কার্যকর হবে না। তবে এক্ষেত্রে এখনও অনেকে মনে করেন "এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক" বা বায়েন তালাক উচ্চারণ করা মাত্র তালাক হয়ে যায়। এ কারণে আমাদের দেশে এখনও এ ধরনের মুখে মুখে তালাক বহুল প্রচলিত। কিন্তু এ ধারণা ভুল৷ স্বামী যেকোন সময় তালাক দিতে পারলেও তাকে আইনগতভাবে নিয়ম মেনেই তালাক দিতে হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝানো হলো -
উদাহরণ- কাশেমের স্ত্রী হালিমা একদিন সংসারের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় রান্না করতে দেরী হয়ে যায়। কাশেম কাজের ফাঁকে দুপুরে ভাত খেতে বাড়ীতে আসলে হালিমা জানায় ভাত দিতে একটু দেরী হবে,কাশেম এতে রাগ করে তার বাড়ীর লোক ও পাড়া-পড়শীর সামনে তিনবার হালিমাকে "তালাক' উচ্চারন করে শোনায়৷ এখন প্রশ্ন এটা কি তালাক হবে?
না হবে না৷ কারণ রাগের মাথায় তালাক হয় না৷ তালাক দেবার নির্ধারিত আইনগত পদ্ধতি রয়েছে।
২। স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক:
স্ত্রী নিম্নেবর্ণিত পদ্ধতিতে তালাক দিতে পারেন
(ক) আদালতের মাধ্যমে
(খ) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে
(গ) খুলার মাধ্যমে
৩। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুই জনই মুবারতের মাধ্যমে তালাক দিতে পারেন।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী
ধারা-৭:
(১) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বা কোন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে ইচ্ছা করলে যে কোন প্রকারেই হোক তালাক উচ্চারণ করবার পরেই সে তালাক দিয়েছে বলে চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিসের মাধ্যমে জানাবে ও স্ত্রীকেও/স্বামীকেও এর এক কপি পাঠাবে।
(২) কোন ব্যক্তি ১ নং উপধারার বিধান লঙ্ঘন করলে সে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হবে।
(৩) ৫ নং উপধারার বিধান অনুযায়ী অন্য কোনভাবে প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে কোন তালাক পূর্বাহ্নে প্রত্যাহার না করা হলে ১ নং উপধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিসের তারিখ হতে ঌ০ দিন অতিরিক্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত তালাক কার্যকরী হবে না।
(৪) ১নং উপধারা অনুযায়ী নোটিস প্রাপ্তির ৩০ দিনের ভিতর চেয়ারম্যান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুর্নমিলন স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি সালিশী কাউন্সিল গঠন করবেন ও এই কাউন্সিল পুর্নমিলন ঘটাবার নিমিত্ত সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
(৫) তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে ৩ উপধারায় বর্ণিত মেয়াদ বা গর্ভকাল- এই দুই-এর মধ্যে যা পরে হবে তা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না।
(৬) এই ধারা অনুসারে কার্যকরী তালাক মাধ্যমে যে স্ত্রীর বিবাহ ভঙ্গ হয়েছে ,ঐ বিবাহ ভঙ্গ তৃতীয়বারের মতো কার্যকরী না হয়ে থাকলে তৃতীয় ব্যক্তির সাথে মধ্যবর্তীকালীন কোন বিবাহ ব্যতীতই তার আগের স্বামীর সাথে পূনর্বিবাহে কোন প্রকার বাধা থাকবে না।
ধারা-৮:
তালাক ব্যতীত অন্যভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ: যেক্ষেত্রে তালাক দেওয়ার অধিকার যথাযথভাবে স্ত্রীর নিকট অর্পণ করা হয় ও সে উক্ত অধিকার প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক হয় বা যেক্ষেত্রে একটি বিবাহের পক্ষদ্বয়ের যে কোন একপক্ষ তালাক ব্যতীত অন্যভাবে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে ইচ্ছুক হয় সেইক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে প্রয়োজন অনুযায়ী ৭ ধারার বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।
অন্যান্য
তালাক কখন কার্যকরী হয় না?
গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না৷ এক্ষেত্রে ৯০ দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার মধ্যে যেদিনটি পরে হবে সেদিন থেকে তালাক কার্যকরী হবে৷ অর্থাত্ স্ত্রী গর্ভবতী হলে, সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না৷ মনে রাখতে হবে এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রী পূর্ণ ভরণপোষণ পেতে আইনত হকদার৷
তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী কি পুনরায় বিয়ে করতে পারবে ?
হাঁ পারে৷ ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৬)ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।
উদাহরণ: কাশেম তার স্ত্রী হালিমাকে তালাক দিল। তিনমাস পর কাশেম বুঝতে পারল যে, তালাক দেয়াটা তার ভূল হয়েছে এবং সে এখনো হালিমাকে ভালবাসে৷ খবর নিয়ে জানা গেল হালিমাও তার কাছে ফিরে আসতে চায়। এখন তারা যদি আবার একসাথে বসবাস করতে চায় তবে তাদেরকে পুনরায় বিয়ে করতে হবে৷ এখানে বলে রাখা দরকার যে, এক্ষেত্রে হিল্লা বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।১ঌ৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং তালাক হওয়া দম্পতি হিল্লা বিয়ে ছাড়াই পুনরায় বিয়ে করে একসাথে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু পরপর তিনবার তালাক হলে তৃতীয়বার স্ত্রীকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দিয়ে তারপর বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রথম স্বামী বিয়ে করতে পারবে।
তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে ?
তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। এক্ষেত্রে ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসদ্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে৷ তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে৷ যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন।
তালাক কখন প্রত্যাহার করা যায় ?
৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগেই তালাক প্রত্যাহার করা যায়৷ ঌ০ দিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এটা মাথায় রেখে যাতে এ সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষ ঠান্ডা মাথায় সব কিছূ ভেবে চিন্তে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারে। একটা বিষয় পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, তালাক দেওয়ার নব্বই দিন পর তালাক কার্যকরী হয় কিন্তু এই ঌ০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে যে কোন দিন তালাক প্রত্যাহার করা যাবে।
তালাক রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কি না ?
মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে তালাক রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
উদাহরণ:জসিম তার স্ত্রী সাবিনাকে তালাক প্রদানের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত করে৷ চেয়ারম্যান সালিস ডেকে আলাপ- আলোচনা করে তালাক কার্যকরী করলে জসিম রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে তালাকটি অবশ্যই রেজিস্ট্রী করবেন।
মুসলিম বিয়ে ও তালাক ( রেজিস্ট্রেশন ) আইন ১৯৭৪ এর বিধান অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে তালাক রেজিস্ট্রি করতে পারেন ৷পর্দানশীন মহিলার ক্ষেত্রে তার কর্তৃত্ব প্রাপ্ত কোন ব্যাক্তি তালাকের আবেদন পেশ করতে পারেন৷ স্বামী স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন সে মর্মে কোন দলিল বা দলিলের সত্যায়িত প্রতিলিপি ছাড়া নিকাহ রেজিস্ট্রার তালাক-ই-তৌফিজ হিসেবে পরিচিত কোন তালাক রেজিস্ট্রি করবেন না ৷ নিকাহ রেজিস্ট্রার তালাক রেজিস্ট্রি করতে অস্বীকার করলে উক্ত অস্বীকৃতির ত্রিশ দিনের মধ্যে আবেদনকারী জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট আপীল দায়ের করতে পারেন এবং সে ক্ষেত্রে জেলা রেজিস্ট্রারের আদেশ চূড়ান্ত বলে গন্য হবে (ধারা-৬)।
কোন বিয়ে বা তালাক রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হবার পর নিকাহ রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নিকাহনামা বা তালাকনামার সত্যায়িত প্রতিলিপি প্রদান করবেন এবং ঐরূপ সত্যায়িত প্রতিলিপির জন্য কোন ফি আদায় করা যাবে না (ধারা-৯)৷
তালাক রোধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব:
অনেক সময় দেখা যায়,মানুষ রাগের মাথায় অথবা আবেগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ পরে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু তখন কি করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। এক্ষেত্রে যদি চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে উভয় পক্ষকে ডেকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার দ্বারা তাদের মধ্যে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করে দেন তবে দু'পক্ষেরই ভালো হয়। এজন্য বলা হয় তালাক রোধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও গুরুত্ব অপরিসীম।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com