লং ড্রাইভের অজানা অভিজ্ঞতা
একদিন, রেদওয়ান ও তানিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন লং ড্রাইভে যাবেন। দুই বন্ধুর মধ্যে বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল, এবং তারা প্রায়ই শহরের বাইরে বেড়াতে যেত। এইবার তারা পছন্দ করল একটি মনোরম স্থান—নীল জলাশয়ের তীরে, যেখানে প্রকৃতি ছিল অপার এবং শান্ত।
রেদওয়ান একটি নতুন গাড়ি কিনেছিল, যা তার বাবা তাকে উপহার দিয়েছিলেন। গাড়িটি ছিল অত্যন্ত দ্রুতগতির এবং নতুন প্রযুক্তির। তানিয়া গাড়ির পেছনে বসে রেদওয়ানের চালানোর প্রতি বিস্মিত হচ্ছিল। তারা গান গাইতে গাইতে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলতে লাগল।
শহরের সীমান্ত পার হয়ে তারা গ্রামীণ রাস্তায় ঢুকে পড়ল। রাস্তার দুই পাশে ছিল সবুজ ক্ষেত এবং মাঝে মাঝে দেখা মিলছিল ছোট ছোট গ্রাম। রেদওয়ান ছিল আনন্দিত এবং তানিয়া তার হাসি দিয়ে সবকিছুকে আরো উজ্জ্বল করে তুলছিল।
তবে, কিছুক্ষণ পর, তারা এক জায়গায় এসে পৌঁছাল যেখানে রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুটা বাঁকা ছিল। রেদওয়ান গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ বুঝতে পারল যে একটি বড় ট্রাক তাদের দিকে আসছে। সে দ্রুততা কমাতে গিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ করে গাড়িটি একপাশে চলে যায় এবং একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়।
গাড়ির মধ্যে সজোরে আঘাত লাগল। তানিয়া চিৎকার করে উঠল, “রেদওয়ান! সাবধান!” কিন্তু এর মধ্যেই সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল।
মাথা ঘুরাতে ঘুরাতে, রেদওয়ান চোখ খুলে দেখে সে গাড়ির আসনের মধ্যে পড়েছিল। তানিয়া পাশে ছিল, কিন্তু সে দেখতে পাচ্ছিল না তার অবস্থা কেমন। রেদওয়ান দ্রুত উঠতে গিয়ে দেখল তার হাতে সামান্য আঘাত লেগেছে, কিন্তু তানিয়ার অবস্থা দেখে তার বুক ফেটে যাচ্ছিল।
“তানিয়া! তানিয়া!” সে চিৎকার করতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে তানিয়া ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেল। “আমি এখানে আছি, রেদওয়ান…” সে বলল, তবে তার কণ্ঠস্বর ছিল দুর্বল।
রেদওয়ান তাড়াহুড়া করে গাড়ির দরজা খুলতে গেল, কিন্তু দরজাটি jam হয়ে গিয়েছিল। সে প্রচণ্ড চেষ্টা করে দরজাটি খোলার চেষ্টা করতে লাগল। শেষে, সে দরজাটি খুলতে সক্ষম হলো এবং তানিয়াকে বাইরে বের করে আনল।
অন্ধকারে চারপাশের পরিবেশ ছিল ভয়াবহ। গাড়িটি বিশাল গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একেবারে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। আশেপাশে কেউ নেই, শুধু নীরবতা। রেদওয়ান তানিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “চল, আমাদের নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক নয়।”
তানিয়া মাথা নাড়াল। তারা দুজন হাতে হাত ধরে সোজা রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করল। কিছু দূর যাওয়ার পর, তারা একটি ছোট গ্রাম দেখতে পেল। সেখানে কিছু বাড়ি ছিল এবং একটি মুদির দোকান। তারা দ্রুত দোকানের দিকে চলে গেল।
গ্রামের লোকজন তাদের দেখেই তৎক্ষণাৎ সাহায্য করতে এল। একজন বৃদ্ধ লোক তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হয়েছে? তোমরা কি ঠিক আছ?” রেদওয়ান তার হাতে আঘাত দেখে চিন্তিত হয়ে বলল, “আমরা গাড়ি এক্সিডেন্টে পড়েছি। সাহায্য দরকার।”
গ্রামের লোকজন ততক্ষণে তাদের দিকে সহানুভূতির চোখে দেখছিল। একজন মহিলা তানিয়াকে কিছু পানি দিলেন। “এই পানি খাও, তুমি ভালো হয়ে যাবে।” তানিয়া ধীরে ধীরে পানি খেয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেলল।
বৃদ্ধ লোকটি বললেন, “এখন তোমাদের উচিত হাসপাতালে যাওয়া। আমি তোমাদের জন্য গাড়ি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।” কিছু সময় পরে, গ্রামের লোকজন একটি পুরনো গাড়ি নিয়ে এল এবং রেদওয়ান ও তানিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর, ডাক্তাররা তাদের চিকিৎসা শুরু করল। রেদওয়ান চিন্তিত ছিল, কারণ তানিয়ার অবস্থা কিছুটা গুরুতর মনে হচ্ছিল। তবে ডাক্তাররা নিশ্চিত করলেন যে তার আঘাত মারাত্মক নয় এবং কিছুদিনের মধ্যে সে সুস্থ হয়ে যাবে।
চিকিৎসার পর, রেদওয়ান তানিয়ার পাশে বসে ছিল। “তুমি কি জানো, আমাদের পরিকল্পনা ছিল নীল জলাশয়ের তীরে যাওয়ার। কিন্তু মনে হয় সেটা এখনও হওয়ার সুযোগ আছে।” তানিয়া ধীরে হাসতে লাগল। “তবে এবার গাড়ি চালাতে হবে খুব সাবধানে।”
কিছুদিন পর, যখন তানিয়া পুরোপুরি সুস্থ হলো, তারা আবার বের হওয়ার পরিকল্পনা করল। তারা নতুন করে একসাথে একটি নতুন যাত্রা শুরু করতে চাইল। এবার তারা সিদ্ধান্ত নিল যে তাদের গাড়ি থেকে একটু দূরে গিয়ে একটি প্রাকৃতিক দৃশ্যে বসে তাদের সময় কাটাবে।
তারা আবার সেই জায়গায় পৌঁছাল যেখানে গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছিল। কিন্তু এবার তারা আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। তারা হেসে বলল, “এটা আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। জীবন কখনো জানায় না কখন কী হবে।”
রেদওয়ান বলল, “তুমি ঠিক বলেছো। তবে এই অভিজ্ঞতা আমাদের আরো কাছাকাছি এনেছে।” তানিয়া হেসে মাথা নেড়ে বলল, “এবং এখন আমরা আরো সতর্ক হব।”
সেই দিন তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পরিণত হলো। তারা বুঝতে পারল যে দুর্ঘটনা জীবনের অংশ, তবে বন্ধুত্ব এবং একে অপরের প্রতি যত্নশীলতা সবসময় তাদের শক্তি দেবে।
এভাবে, একটি লং ড্রাইভ তাদের জীবনকে বদলে দিল। সেই দুর্ঘটনা তাদের জন্য নতুন একটি পথে যাত্রা শুরু করল—যেখানে বন্ধুত্বের গুরুত্ব এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য বুঝতে পারল তারা।
এবং তাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকল, কারণ তারা জানত যে একসাথে সব কিছুই মোকাবেলা করা সম্ভব।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com