Breaking News

আমার পুতুল বউ । পর্ব - ০২



পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের কাছ টাকা নিয়ে খাতা এবং ডায়েরি কিনতে গেলাম। খাতা কিনতে প্রায় হাফ কিলোমিটার যেতে হয়। সাইকেল নিয়ে তাড়াতাড়ি গেলাম। কিন্তু পিচ্চিটা যে এমন একটা কান্ড করবে ভাবতে পারিনি। খাতা এবং ডায়েরি আমার পড়ার টেবিলে রেখে গিয়েছিলাম গোসল করতে কিন্তু এসে দেখি খাতা আছে ডায়েরি নেই। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন ডায়েরি টা পেলাম না তখন চিৎকার করতে লাগলাম৷ মা এসে বলল,,,
- কি হয়েছে এভাবে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন?
আমি মাকে দেখে চুপসে গেলাম। ভয়ার্ত কণ্ঠে বললাম,,,
- আমার ডায়েরি টা কোথায় দেখেছো?
- আমি কিভাবে জানব তোর ডায়েরি কোথায়? ভালো করে খুঁজে দেখ৷
এই কথা বলে মা চলে গেল। তারপর আর কোথাও খুঁজে পেলাম না ডায়েরি টা।

ব্যাগে বই খাতা গুছিয়ে নাস্তা করতে গেলাম। নাস্তা শেষ করে এসে ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে রওনা দিলাম স্কুলের পথে। আজ সকালে পিচ্চিটাকে দেখলাম না! হয়তো ঘুমচ্ছিল। ওকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক দিয়েছিলাম বেশ কয়েকবার কিন্তু আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। তাই ছেড়ে চলে এসেছি৷ প্রথম পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর স্যার যখন হোমওয়ার্ক দিল আমি হোম ওয়ার্ক নোট করার জন্য খাতা বের করতে গিয়ে দেখি ডায়েরিটা আমার ব্যাগের ভিতর। আশ্চর্য হয়েছিলাম আমি। 

আমিতো আসার সময় ডায়েরি টা ব্যাগে রাখিনি তাহলে কে রাখলো? যাক ভালোই হয়েছে। এটা ভেবে ভালো লাগছে যে আমার সদ্য কেনা নতুন ডায়েরিটা হারায়নি। আমি ডায়েরি খোলার পর সপ্তম আসমানে চলে গেলাম। প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে ত্যাড়া ব্যাকা করে লেখা "ভালোবাসি"। লেখাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি বেকুব বনে চলে গেলাম। এটা কে লিখল এভাবে তাও আবার বাঁকা করে! তবে দেখে মনে হচ্ছে বেশ কাঁচা হাতের লেখা। আমি পরের পৃষ্ঠা উল্টালাম একই অবস্থা! এভাবে প্রতিটি পৃষ্ঠাই শেষ করলাম কিন্তু একটা পৃষ্ঠাও ভালো নেই। সব পৃষ্ঠাতেই বড় বড় করে লেখা ভালোবাসি। আমি ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম লেখাগুলো ঠিক পিচ্চিটার হাতের লেখার মতো। 

আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারলাম এটা পিচ্চিটার কাজ। একবার বাড়ি যাই, ওকে বুঝিয়ে দেব এমন দুষ্টুমি করার ফল কি হয়! কোনরকমে টিফিন পিরিয়ড পর্যন্ত ক্লাস করে পালিয়ে গেলাম। বাড়ি গিয়ে ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে আগে গোসল করে নিলাম তারপর আনমনে খুঁজতে লাগলাম পিচ্চিটাকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ছোট মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ছোটমা বলে জানে না। 

মাকে জিজ্ঞেস করলাম মাও বলে জানে না। তাহলে কি পিচ্চিটা উধাও হয়ে গেল? পুরো বাড়ি খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। তারপর ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম রান্নাঘরে মায়ের শাড়ির আঁচলটা বেশ লম্বা হয়ে আছে আর তার নিচে ফুলে রয়েছে আর কিছু একটা নড়াচড়াও করছে। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আমার জননী পিচ্চিটাকে সেফটি দিচ্ছে। পিচ্ছিটা আমার ভয়েই লুকিয়ে আছে। হয়তো নিজেই তার কুকর্মগুলো মায়ের কাছে স্বীকার করেছে। আর সে যতই দোষ করুক না কেন আমার জননী তো কিছুই বলবে না।

আমি আস্তে ধীরে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। পাশের টেবিল থেকে একটা গাজর নিয়ে খেতে খেতে মাকে বললাম,,,
- মা কি করছো তুমি?
- দেখার পরেও জিজ্ঞেস করিস কি করছি!
- মানে বলতে চাইছি যে কি রান্না করছো?
- আমার পুতুল সোনা গাজরের হালুয়া খেতে চেয়েছে তাই হালুয়া রান্না করছি?
- এমন বজ্জাত মেয়েকে ঘটা করে হালুয়া খাওয়ানোর কি আছে বাজার থেকে একটা লাঠি এনে লাঠির মাইর খাওয়াও।

কথাটি আমি বিড়বিড় করেই বললাম। যেটা পরিষ্কার করে শুনতে পায়নি মা। 
মা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,,,
- কি বললি তুই?
- কিছু বলিনি তো। 
বললাম শুধু তোমার পুতুল সোনার জন্যই রান্না করো আমি তো তোমার কেউ না আমার জন্য রান্না করতে হবে না।
- এমন ভাবে বলছিস যেন তোকে রেখে শুধু একা পুতুলকেই দেই তাই না? তুই-ই তো বেশি খাস তারপরেও হিংসা করিস।
যাহ্, এভাবে আমার মান-সম্মান কে প্লাস্টিক বানিয়ে দিল৷ নাহ, কথার প্রসঙ্গ চেঞ্জ করতে হবে আর যত তাড়াতাড়ি হোক কৌশল করে পিচ্চিটাকে বের করতে হবে। ওকে তো আর জোর করে মায়ের আঁচল থেকে বের করতে পারবো না। বুদ্ধি করতে লাগলাম কি করা যায়। পেয়েছি!
- মা জানো পুতুল বউয়ের জন্য কি নিয়ে এসেছি?
- কি এনেছিস?

- স্কুল থেকে আসার সময় ওর জন্য এক ব্যাগ চকলেট নিয়ে এসেছি কিন্তু ওকে তো খুঁজেই পাচ্ছিনা। যাইহোক চকলেট গুলো ফেরত দিয়ে আসি।
কেল্লাফতে! ব্যাস কাজ হয়ে গেছে। চকলেটের কথা শোনার সাথে সাথেই এক লাফ দিয়ে মায়ের শাড়ির আঁচল থেকে বেরিয়ে আসলো আর বলতে লাগলো,,,
- এইতো ভাইয়া আমি এখানে আমাকে চকলেট দাও।
পুতুল বুঝতে না পারলেও মা আর ছোটো মা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে এটা পুতুলকে ধরার জন্য আমার একটা টোপ ছিল৷
এদিকে হাসতে হাসতে ছোটমার অবস্থা শেষ। ছোটমা হাসতে হাসতে পুতুল কে বলল,,,
- অবশেষে ধরা পড়লে ফাঁদে। এবার ঠেলা সামালও।
আমি পুতুলের হাত ধরে বললাম,,,
- চকলেট খাবি তাই না?
- হ্যাঁ খাব। দাও।

- চল আমার আমার ঘরে। সেখান তোকে অনেক যত্ন করে চকলেট খাওয়াবো।
লাফাতে লাফাতে আমার ঘরে আসলো। তারপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে শুরু হয়ে গেল ধুপধাপ শব্দ। (মাইর হবে কোন আওয়াজ হবে না 😎)
কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিলাম পিচ্চিটা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল ঘরে। এখন ঘরে গিয়ে শুয়ে শুয়ে কান্না শুরু করে দেবে।
মা আমাকে বকলো কিছুটা, একটা থাপ্পড় ও মেরেছে৷
তারপর আমি খাবার না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম পিচ্চিটা নাকি কিছু খায়নি। বেশ খারাপ লাগলো আমারও। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার কারণেই কিছু খাইনি মেয়েটা। এখন নাকি ঘুমোচ্ছে। আমি ওর কাছে গিয়ে বসলাম। ডাকতে লাগলাম আদুরে কণ্ঠে। আমার ডাকে পিচ্চিটার ঘুম ভেঙে গেল। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ দুটো ডলতে ডলতে আমার দিকে তাকায়। আমাকে দেখার সাথেই মুখ ফিরিয়ে নেয় অভিমানে। এটুকু মেয়ে অথচ অভিমানটা তার অনেক বড়।
আমি পিচ্চিটাকে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,,,
- কিরে আমার পুতুল বউ আমার সাথে কথা বলবি না?

আমার পুতুল বউটা পাহাড় সমান অভিমান মুখে জড়ো করে বলল,,,
- আমি তোমার সাথে কোন কথা বলবো না তুমি পঁচা আমাকে শুধু মারো।
কথাটি বলেই আমার পুতুল বউটা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ওর এমন কান্না দেখে আমার মনটা ডুকরে উঠলো। এর আগে এভাবে কখনো কাঁদেনি মেয়েটা হয়তো আজ একটু বেশিই শাস্তি দিয়ে ফেলেছি৷
পিচ্চিটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,
- তোকে কথা দিলাম আর কখনো মারব না। চল আমরা ঘুরতে যাই।
- সত্যিই আমাকে আর কখনো মারবে না? আমাকে সাইকেলে নিয়ে ঘুরবে!
- হ্যাঁ সত্যিই তোকে আর মারবো না। আর হ্যাঁ তোকে সাইকেলে নিয়েই ঘুরবো।
পিচ্চিটা ঠাস করে আমার গালে একটা চুমু খেলো। ওর পাগলামিগুলো আমাকে অনেক স্বস্তি দেয়। মাঝে মাঝে মনে হয় সারা জীবন এভাবে ওর পাগলামি গুলো সহ্য করে যাই। মাঝে মাঝে ভাবি এভাবে যদি কেটে যেত সারাটি জীবন তাহলে কতই না ভালো হতো। মানুষের জীবনের সব চাওয়া পাওয়া গুলো পূর্ণতা পায় না।

তারপর আমরা দুজন ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলাম। আমিই খাইয়ে দিয়েছি পিচ্চিটাকে। খাওয়ার সময় আমার আঙ্গুলে কামড় দিয়েছিল। কামড় দেওয়ার পর সে কি খুশি। খিলখিল করে হাসছিল হাসতে হাসতে গলায় ভাত আটকে গিয়েছে। তারপর হাসা বাদ দিয়ে একাধারে কাশতে লাগল৷ শয়তানদের অবস্থা মনে হয় এমনই হয়। বেশি বাঁদরামি করলে যা হয় আর কি।
তারপর পিচ্চিটাকে সাইকেলে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরতে লাগলাম। সাইকেলের পিছনে বসালে পড়ে যেতে পারে তাই সামনে বসিয়ে নিয়েছি। আমি সাইকেল চালাচ্ছিলাম আর সে ননস্টপ বকবক করে যাচ্ছিল৷

চলার পথে আইসক্রিম, হাওয়াই মিঠাই, চকলেট অনেক কিছুই খেয়েছে আমার পকেটের বারোটা বেজে গিয়েছে অলরেডি। ওর অভিমান ভাঙাতে গেলে আমার পকেটের বারোটা বাজেই সব সময়।
সবশেষে আমার পুতুল বউয়ের আবদার হলো তাকে কাঁচের চুড়ি কিনে দিতে হবে।
আমি ওকে বললাম,,,

- এখন কাঁচের চুড়ি কোথায় পাব? আশেপাশে তো কোন দোকান নেই!
পিচ্চিটা সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,,,
- ওই দেখো ফেরিওয়ালা আমাদের দিকেই আসছে।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ফেরিওয়ালাকে কি এখনি আসতে হলো!
কি আর করা বাধ্য হয়ে কিনে দিলাম কাঁচের চুড়ি। শখ করে যখন চেয়েছে তখন আর না করি কি করে? পিচ্চিটার মুখের হাসিটাই যে আমার সবকিছু। ওর ভুবন ভুলানো হাসি টা দেখলে কেন জানিনা আমার মনটা ঠান্ডা হয়ে যায়! আচ্ছা আমি কি পিচ্চিটাকে ভালোবাসি নাকি বোনের মতোই ভালোবাসি?

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com