ছেলেটির স্বপ্ন শেষ করে মেয়েটির নতুন পথ চলা
ছেলেটির নাম ছিল সায়ন। গ্রামের ছোট্ট একটি স্কুলে তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। সায়ন ছিল লেখাপড়ায় ভালো, কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়া। তিনি জানতেন, ডাক্তার হতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে, কিন্তু তার দৃঢ় সংকল্প তাকে সব বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করত।
মেয়েটির নাম ছিল রিয়া। সে ছিল সায়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী। রিয়ার পরিবার খুবই ভালো, এবং তারা তার শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। সায়নের সঙ্গে রিয়ার সম্পর্কটি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করত, হেসে খেলে সময় কাটাত।
একদিন সায়ন রিয়ার কাছে তার স্বপ্নের কথা বলল। “রিয়া, আমি ডাক্তার হতে চাই। আমি চিরকাল মানুষের সেবা করতে চাই।” রিয়া তার স্বপ্ন শুনে খুবই উচ্ছ্বসিত হল। “তুমি পারবে সায়ন! তুমি খুব ভাল পড়াশোনা করো। আমি তোমার পাশে আছি।”
কিন্তু সায়নের পরিবার ছিল দরিদ্র। তার বাবা কৃষক এবং মা গৃহিণী। স্বপ্ন পূরণের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। তাই সায়ন প্রতিদিন পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করতে শুরু করল। কখনও মাঠে কাজ, কখনও বাড়িতে ছোটোখাটো কাজ। এইভাবে সে কঠোর পরিশ্রম করেছিল।
রিয়া কখনও কখনও সায়নের কাজে সাহায্য করত। সে জানত, সায়নের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে সাহায্য করতে হবে। তাই সে রাতের বেলা সায়নের সঙ্গে বসে পড়াশোনা করত। তাদের বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকল।
এক বছর পর, সায়ন মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল। সে খুব খুশি ছিল। কিন্তু তার খুশি দীর্ঘস্থায়ী হল না। ভর্তি ফি দিতে গিয়ে দেখা গেল, তাদের আর্থিক অবস্থার কারণে সায়নের পরিবার তাকে কলেজে পাঠাতে পারবে না।
এদিকে, রিয়া তার পরিবারের সাহায্যে সায়নকে কিছু অর্থ জোগাড় করার চেষ্টা করল। কিন্তু তাও যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত রিয়া তার পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হল যে, সায়নকে সাহায্য করতে হবে। তার বাবা-মা রাজি হলেন। রিয়ার পরিবার সায়নকে কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করল।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর, সায়ন পড়াশোনায় মনোনিবেশ করল। সে রিয়ার জন্য প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখত। তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল প্রতিনিয়ত। রিয়া তার পড়াশোনার ব্যাপারে সায়নকে উৎসাহিত করত।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রিয়ার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করল। কলেজে তার পরিচয় হলো একজন নতুন ছেলের সঙ্গে, নাম ছিল অয়ন। অয়ন ছিল একটি ধনী পরিবারের সন্তান এবং সে ডাক্তারি পড়ত। রিয়া এবং অয়নের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকল।
এদিকে, সায়ন তার পড়াশোনায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল যে, সে রিয়ার পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারল না। সে ভাবত, রিয়া তো সব সময় তার পাশে থাকবে। কিন্তু একদিন রিয়া সায়নকে ফোন করে বলল, “সায়ন, আমি অয়নকে ভালোবাসি। আমি তার সঙ্গে বিয়ে করতে চাই।”
সায়ন হতাশ হল। তার মনে হয়েছিল, তাদের সম্পর্ক সব সময়ের জন্য। কিন্তু বাস্তবতা তাকে কঠোর শিক্ষা দিল। “কিন্তু তুমি তো আমাকে বলেছিলে যে, আমি ডাক্তার হলে তুমি আমার পাশে থাকবা!” সায়ন কাঁদতে কাঁদতে বলল।
রিয়া বলল, “সায়ন, তুমি তো ডাক্তার হতে চাচ্ছ, আমি তোমার পাশে আছি, কিন্তু অয়নও ডাক্তার। আমি তাকে ভালোবাসি। আমি তার সঙ্গে জীবন কাটাতে চাই।”
সায়ন কিছু বলতে পারল না। তার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সে জানত, রিয়ার সিদ্ধান্ত তাকে চিরকাল বেদনায় ভুগাবে। তবে সে রিয়ার সুখের জন্য কিছু বলল না। সে শুধু বলল, “তুমি সুখী হও, রিয়া।”
কিছুদিন পর রিয়া অয়নকে বিয়ে করল। সায়ন কলেজের পড়াশোনায় মন দিল, কিন্তু তার হৃদয়ে রিয়া ছিল। সে রাতের পর রাত রিয়া ও অয়নের সুখী জীবনের কথা ভাবত। কিন্তু তার পথ চলা থেমে গেল না। সে কঠোর পরিশ্রম করে ডাক্তারি পাশ করল।
বছর দশেক পরে সায়ন একটি শহরে ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল। সে অনেক রোগীর সেবা করল, কিন্তু তার হৃদয়ে রিয়ার স্মৃতি চিরকাল বিরাজ করত।
একদিন, এক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কাজে রিয়া এল। সায়ন রিয়াকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। রিয়া ছিল অয়নের সঙ্গে, এবং তাদের একটি সন্তান ছিল।
সায়ন কষ্ট পেয়ে বলল, “রিয়া, তুমি… তুমি এখানে?”
রিয়া হাসতে হাসতে বলল, “হ্যাঁ, সায়ন। এটা আমার স্বামী অয়ন।”
সায়ন ধীরে ধীরে বলল, “বাহ, তুমি তো অনেক বদলে গেছ। তোমার জীবন সুন্দর।”
রিয়া বলল, “হ্যাঁ, সায়ন। তবে তুমি জানো, তুমি যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছিলে, সেটার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ। তুমি আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।”
সায়ন শুধু হাসল। সে জানত, রিয়ার জীবনে অয়ন আছে, কিন্তু সে নিজেকে গর্বিত মনে করল। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
সায়ন নিজের জন্য, নিজের জীবনের জন্য গর্বিত ছিল। সে বুঝতে পারল, জীবনের পথে অনেক পরিবর্তন আসে, কিন্তু কিছু সম্পর্ক চিরকাল মনের মধ্যে বাস করে।
সায়ন জানত, সে যতই কষ্ট পায়, তার জীবন একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সে ডাক্তার হয়েছে, মানুষের সেবা করছে এবং রিয়ার কথা মনে করে এক নতুন জীবনে পদার্পণ করেছে।
এভাবেই সায়ন ও রিয়ার জীবনের গল্প চলতে থাকল। সায়ন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল, এবং রিয়া তার নিজের সুখ খুঁজে পেয়েছিল। জীবনের পথে চলতে চলতে তারা নিজেদের সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করতে শিখল, এবং একে অপরের জন্য শুভকামনা জানাতে কখনো ভুলল না।
<>সমাপ্ত <>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com