Breaking News

খাগড়াছড়ি জেলার দশটি দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমন গাইড

খাগড়াছড়ি জেলার দশটি দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমন গাইড

বাংলাদেশের সুন্দর জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম পাবত্য জেলা খাগড়াছড়ি, এই অঞ্চল পাহাড়, নদী, ঝড়া, ঝিড়ি ও সমতল ভুমি মিলে অপূর্ব প্রাকৃতিক রুপ বৈচিত্রে ভরপুর। খাড়াছড়িতে অবস্থিত বিভিন্ন দর্শনীয়স্থানের মধ্যে আছে। রিছাং ঝর্ণা, আলুটিলাগুহা, আলুটিলা তারেং, অপরাজিতা বোদ্ধ বিহার, মাতাই পুখিরি, হর্টিকালচার হেরিটেজ পার্ক, মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি, তৈদুছড়া ঝর্ণা, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটির, হাতিমাথা, নিউজিল্যান্ড পাড়া, মায়াবিনী লেক প্রভুতি।

ঘুরতে যাওয়ার ভালো সময়ঃ যেহেতু টুরে যাবেন সেহেতু শীতের শুরুতে বা অল্প শীতে অথবা শীতের শেষ ঘুরতে যাওয়াই সবচে ভালা। ঘুরতে গেলে ভালো কোন স্থানের ফটো তুলতে হয় ভালো কাপড় পড়ে যেতে হয় বেশি গরমে টুরে গেলে আপনার কাপড়-চোপড় ঘামে ভিজে গন্ধ বের হবে তাই টুরের মাজাটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি শীতের আগে বা পড়ে টুর প্ল্যান করতে পারেন। বিশেষ করে বেশিরভাগ মানুষই শীতকালে টুর প্ল্যান করে থাকে।

যেভাবে যাবেনঃ রাজধানী ঢাকার গাবতলী, কমলাপুর, কলাবাগান, ছায়দাবাগ থেকে খাগড়াছড়িগামী সৌদিয়া, শ্যামলী, এস আলম , সনিয়া, ইকোন সার্ভিস, ইমপেরিয়াল, শান্তি, সেন্টমার্টিন ও ঈগল পরিবহন চলাচল করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে খাগড়াছড়ি রুটে গাড়ি সব সময় পাওয়া যায় না শুধু মাত্র সকালে বাসপাওয়া যায় এবং রাতের বাসগুলো সন্ধা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে প্রায় সবগুলো বাসই ছেড়ে যায়। এবং পরদিন সকাল ৬টার মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে শাপলা চত্তরে এসে পৌছায়।

জনপ্রতি ভাড়া:  জনপ্রতি নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০- ১০০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ১০০০ - ১৬০০ টাকা।

যেসব গাড়ি ভাড়া করবেন: সিএনজি, চাঁদের গাড়ী, মোটর সাইকেল ভাড়া করতে পারবেন সারা দিনের জন্য। বাইকে যেতে পারবেন (০২) দুইজন, সিএনজিতে (০৫) পাঁচজন এবং চাঁদের গাড়িতে সর্বোচ্চ (১৪) চৌদ্দ জন বসতে পারবেন। সরাদিনের জন্য বাইকের ভাড়া লাগবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা । সিএনজির ভাড়া লাগবে ২০০০ টাকা - ৩০০০ টাকা। এবং চাঁদের গাড়ির ভাড়া লাগবে ৩০০০ - ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। গাড়ি ভাড়ার সময় কোন কোন স্থান ঘুরে দেখবেন তা আগে থেকে বলে ঠিক করে নিবেন তা নাহলে বিড়ম্বনায় পরতে হতে পারে। সিজন ও সময়ভেদে ভাড়ার পরিমান কম বেশি হতে পারে।

খাগড়াছড়ি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পূর্ব রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান একসাথে একটি জেলা ছিল। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভেঙে তিনটি জেলা গঠন করা হয়। তার আগে ১৮৬০ সালের আগে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম জেলার অংশ ছিল। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রামকে ভেঙে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠন করে ব্রিষ্টিশ সরকার। খাগড়াছড়ি একটি পার্বত্য জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।

খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও প্রাকৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় এলাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের এই পার্বত্য জেলা দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মনোমুগ্ধকর পাহাড়, ঝরনা, নদী ও সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানকার মূল আকর্ষণ। এখানে বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস, তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য এখানকার পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। খাগড়াছড়ি জেলার দশটি দর্শনীয় স্থানের বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।


১. সাজেক ভ্যালি

খাগড়াছড়ির সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালি অন্যতম। এটি বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেকের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মুগ্ধকর দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে। সাজেকের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার মেঘ, যা পাহাড়ের চূড়ায় এসে মিশে যায়, যেন মেঘের ওপরেই বসবাস করা হচ্ছে। রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাড়া সাজেকের প্রধান দুটি গ্রাম যেখানে স্থানীয় চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করে।


২. আলুটিলা গুহা

আলুটিলা গুহা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক গুহা। এটি প্রায় ৩৩৩ ফুট দীর্ঘ এবং প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত। আলুটিলা গুহায় প্রায়শই অন্ধকারে ঢুকে যেতে হয় বলে পর্যটকরা মশাল বা টর্চলাইট সাথে নিয়ে যান। গুহার ভিতরে প্রবেশ করলে ঠান্ডা এবং আর্দ্র পরিবেশ অনুভব করা যায়। গুহাটি প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে এবং পাহাড়ের নিচের দিকে এক প্রবাহমান ঝরনা দ্বারা জল সরবরাহ পায়। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।


৩. রিছাং ঝরনা

খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম সুন্দর ঝরনা হলো রিছাং ঝরনা। এটি জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঝরনাটির পরিবেশ খুবই প্রাকৃতিক এবং এখানে প্রায়শই পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। রিছাং ঝরনার পাশে মনোরম সবুজ গাছপালা আর পাহাড়ি পথে হাঁটার সুযোগ পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। এটি খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান যা প্রকৃতির মাঝে অবকাশ কাটানোর জন্য উপযুক্ত।


৪. দেবতার পুকুর

দেবতার পুকুর একটি প্রাকৃতিক জলাশয় যা খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি দেবতাদের দ্বারা সৃষ্ট এবং তাদের উপাসনার জন্য ব্যবহৃত একটি স্থান। এই পুকুরের জল অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং সেখানকার পরিবেশ অত্যন্ত নির্মল। দেবতার পুকুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, স্থানীয়দের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়।


৫. হাজাছড়া ঝরনা

হাজাছড়া ঝরনা খাগড়াছড়ির আরেকটি সুন্দর ঝরনা যা মহালছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এটি মূলত গভীর অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত এবং ঝরনার পানি অত্যন্ত ঠান্ডা ও স্বচ্ছ। প্রাকৃতিক শীতল পরিবেশ, জলপ্রপাতের শব্দ ও সবুজ পরিবেশ একে একটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিণত করেছে। এখানে যেতে কিছুটা হাঁটতে হয়, তবে ঝরনার সৌন্দর্য দেখে সকল কষ্ট ভুলে যাবেন।


৬. পানছড়ি পাহাড়

পানছড়ি খাগড়াছড়ি জেলার একটি ছোট শহর, যা উচ্চ পাহাড় ও মনোরম পরিবেশের জন্য পরিচিত। এখানকার প্রধান আকর্ষণ পানছড়ি পাহাড়। এখানে থেকে চারপাশের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে, বর্ষাকালে পানছড়ি পাহাড়ে ঘন মেঘের কারণে চারপাশ অসাধারণ এক পরিবেশ সৃষ্টি করে। পাহাড়ের চূড়া থেকে আপনি সমগ্র খাগড়াছড়ি জেলার সৌন্দর্য দেখতে পাবেন।


৭. মাটিরাঙা পাহাড়

মাটিরাঙা একটি সুন্দর পর্যটন এলাকা, যা তার সবুজ চা-বাগান এবং মনোরম পাহাড়ি পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। মাটিরাঙা পাহাড়ে চা-বাগানের সবুজ শোভা ও মেঘের খেলায় পর্যটকেরা সহজেই মুগ্ধ হন। এটি খাগড়াছড়ি ভ্রমণের একটি অন্যতম স্থান যা প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।


৮. লংগদু বাজার

লংগদু বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার যেখানে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব হস্তশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাওয়া যায় তাছাড়া বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিক্রি করে থাকে। এটি শুধু একটি বাজার নয়, বরং এটি আদিবাসী সংস্কৃতি, পোশাক ও খাদ্য সম্পর্কে জানার জন্যও একটি আকর্ষণীয় স্থান। পর্যটকেরা এখান থেকে স্থানীয় হস্তশিল্প ও  এখানকার পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে নিয়ে যায়।


৯. শাপলা বিল

শাপলা বিল খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় অবস্থিত একটি মনোরম স্থান, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার ফুল ফোটে। এটি বিশেষ করে বর্ষাকালে লাল শাপলার কারণে খুবই সুন্দর দেখায়। বিলটি পর্যটকদের মুগ্ধ করে এবং ছবি তোলার জন্য আদর্শ।


১০. দিঘিনালা পাহাড় ও ঝরনা

দিঘিনালা উপজেলায় কিছু সুন্দর পাহাড় ও ঝরনা রয়েছে, যা প্রকৃতির ভক্তদের জন্য উপযুক্ত স্থান। এই অঞ্চলে পাহাড়ি পথে হাইকিং করতে পারেন এবং দিঘিনালা ঝরনার স্রোতধারায় মনকে সতেজ করতে পারবেন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com