আমার পুতুল বউ । পর্ব - ০১
ভাইয়া তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
আমি তোমার সব কাজ করে দেব৷ তোমার প্যান্ট ধুয়ে দেব, তোমাকে খাবার বেড়ে দেব,
তোমার মাথা টিপে দেব আর তোমাকে অনেক ভালোবাসবো।
সব কিছু করবো। তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ে বসে নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখছিলাম।
তখনি পিছন দেখে একটা বাচ্চা কণ্ঠের মেয়ে কথাগুলো বলে উঠলো।
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার চাচাতো বোন পুতুল। বয়স সাত। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
এই বয়সেই প্রচন্ড ইঁচড়েপাকা হয়েছে।
সব সময় আমার পিছনে ঘুরঘুর করে এবং ভালোবাসার কথা বলে।
এটা আমাদের পরিবারের সবাই জানে। পুতুলের এমন পাগলামি দেখে কেউ কিছু বলেনা।
কারণ সে আমার ছোট চাচা চাচির একমাত্র মেয়ে অনেক সাধনার পর পুতুলকে পেয়েছে তারা।
এবং পুতুলে আমার মা-বাবারও অনেক আদরের, বলা যায় আমার থেকেও বেশি প্রিয় সে।
আমিও পিচ্চিটাকে কম ভালোবাসি না। যখন যা আবদার করে তখন তাই করি।
সবাই পিচ্চিটার এমন পাগলামি গুলো মজা ভেবে উড়িয়ে দেই ৷
সবাই ভাবি বড় হয়ে গেলে আর এমন পাগলামি করবে না।
তবে ওর এমন পাগলামির পিছনে হয়তোবা দোষী আমি নিজেই৷ কারণ!
আমরা যৌথ পরিবার। আমার বাবা এবং ছোট চাচা। দুই ভাই তারা৷
আর বেঁচে আছে শুধু দাদি।
পুতুলের যখন জন্ম হয় তখন ওকে আমি শখের বশবর্তী হয়ে কোলে নিয়েছিলাম
তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। ছোট বাচ্চাদের সবাই আদর করে এটাই স্বাভাবিক।
আমিও তার বিকল্প নয়।
আমি প্রথমে পুতুলের কপালে একটা চুমু খাই।
সঙ্গে সঙ্গে পিচ্চিটা নড়েচড়ে উঠল।
হয়তোবা ভালবাসার প্রথম পরশ পেয়েছিল আমার তাই কেঁপে উঠেছিল।
তারপর যখন ওর গালে চুমু খেতে যাব তখনই ওর মুখটা ঘুরিয়ে নেয়
এবং তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট লেগে যায় ঠিক সেই সময় থেকেই মেয়েটা আমার পিছনে লেগে আছে।
হয়তো বাঁধনটা সেখানেই বেঁধে দিয়েছে উপর থেকে৷ জন্ম হওয়ার পর থেকেই পিচ্চিটা খুব কাঁদছিল।
কিন্তু যখনই আমার ঠোটের স্পর্শ পেলো ঠিক তখনই কেন জানিনা
একদম কান্না বন্ধ এবং খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
সবাই এটা দেখে অবাক হয়েছিল বটে কিন্তু আমিও সেদিন অনেকটা খুশি হয়েছিলাম।
যেটা একজন মা করতে পারলো না আমি সেটা করে দেখিয়েছি৷
দাঁত ছিল না তবুও তার হাসিটা অনবদ্য।
পিচ্চিটা দেখতে ছোট থেকেই একদম পুতুলের মত তাই আমি পিচ্চিটাকে পুতুল বউ বলে ডাকি।
সবাই ওকে পুতুল বলে আর আমি ডাকি "পুতুল বউ" বলে৷
আমি পুতুলের হাত একটু শক্ত করে ধরে কাছে টেনে বসালাম৷
দুধে আলতা গায়ের রঙ তাই একটু ছোঁয়া পেতেই সাদা জায়গা লাল হয়ে গেছে।
ওর কানটা একটু টেনে দিয়ে বললাম,,, - এই ইঁচড়েপাকা তুই কি কখনো ঠিক হবি না!
সবসময় এত পাকা পাকা কথা বলিস কেন? পড়ালেখা শেষ করে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে বিয়ের কথা বলবি৷ পিচ্চিটা আমার কাছে আরো একটু চেপে বসল। - আমি পড়ালেখা শেষ করলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে? মহা মুশকিলে পড়লাম তো। এ তো দেখি শুধু আমাকেই বিয়ে করতে চায়। - আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোকে বিয়ে করবো তবে আগে তুই বড় হয়ে বিয়ের উপযুক্ত হবি তারপর৷ পিচ্চিটা ইয়াহু বলে চিৎকার করে ঠাস করে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালো।
কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা। ইচ্ছে করছে এখনই ওকে ধরে দু'ঘা লাগিয়ে দিই। পরক্ষনেই ওর তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে দৌড়ানো দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। পিচ্চিটাকে মারামারি নিয়েও যত মুশকিল। কাউকে ওর গায়ে হাত লাগাতে দেই না।
এমনকি পুতুলের মা-বাবাও পুতুলকে মারার সাহস পায়না আমার ভয়। কারণ পুতুলকে শুধু আমি একাই মারি আর কাউকে মারতে দেই না। মনে হয় পুতুল আমার নিজস্ব সম্পত্তি তাই আমি একাই ওর উপর অধিকার খাটাতে পারে আর কেউ পারেনা। আমার এমন কাণ্ড দেখে সবাই শুধু হাসে। পুতুলকে যখন তার মা মারতো তখন প্রচন্ড রেগে যেতাম সেই থেকে আর চাচী পুতুলের গায়ে হাত তোলে না।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরলাম। চাচীকে দেখলাম রান্নাঘরে। হয়তো চা নাস্তা বানাচ্ছে। আমি চাচী'র দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,,, - ছোট মা পুতুল বউ কোথায়? - ওহ মুগ্ধ বাবা তুই এসেছিস! ঘরে গিয়ে দেখ টিভিতে কার্টুন দেখছে। আমি কপট রেগে গেলাম। - এটা কি তার টিভি দেখার সময়! তুমি ওকে পড়তে বসাও নি কেন? - আমার কি সেই সাধ্য আছে যে ওকে পড়তে বসাবো। একমাত্র তুই তো পারিস। - দাঁড়াও ওর কান দুটো আমি মলে দিচ্ছি৷ এই বলে আমি ছোট চাচীর ঘরে গেলাম।
ঘরে গিয়ে তো আমি অবাক। কারণ পুতুল টিভি না দেখে বই নিয়ে পড়তে বসেছে। হয়তো আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে। মেয়েটা আমাকে প্রচুর ভয় পায়৷ পুতুল আমাকে দেখে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,,, - ভাইয়া আমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছো? পিচ্চিটার সব আবদার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা আবদার হলো তার চকলেট চাই। - পড়া শেষ করে রাতের ডিনারের পর চকলেট পাবি। তুই পড়তে থাক আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।
এই বলে আমি আমার রুমে এসে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম তারপর আবার ছোট চাচীর ঘরে গেলাম বই নিয়ে। আমিও পড়ি এবং পিচ্চিটাকেও পড়াই। আমি এবার নবম শ্রেণিতে পড়ি। আমি গিয়ে পড়ার টেবিলে বসলাম পিচ্চিটা ও সুরসুর করে আমার কাছে আসলো৷ - পুতুল বউ তোকে কালকে একটা কবিতা মুখস্থ করতে বলেছিলাম না? মুখস্থ হয়েছে ? পিচ্চিটা মাথা বাঁকিয়ে উত্তর দিল,,, - হ্যাঁ ভাইয়া মুখস্ত হয়েছে। - তাহলে এখন সেটা না দেখে খাতায় লিখে দে আমাকে। - ঠিক আছে ভাইয়া।
পিচ্চিটাকে কবিতা লিখতে দিয়ে আমি অংক কষতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই অংক'টা সমাধান করতে পারছিনা। খানিক্ষন পর মা আর ছোটমা নাস্তা নিয়ে আসলো। ছোটমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বললাম,,, - দেখো না ছোটমা আমি কিছুতেই অংকটা মেলাতে পারছি না একটু বুঝিয়ে দাও না। আমার ছোট চাচী মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে আর আমার মা সামান্য একজন ইন্টার পাশ। কিন্তু আমার ছোট চাচী কখনো আমার মাকে শিক্ষা নিয়ে খোটা দেয় নি। সব সময় বড় বোনের মতোই সম্মান করে।
এতেই বোঝা যায় সে একজন সুশিক্ষিত। আমাদের সমাজে এমন হাজারো মানুষ আছে যারা নিজের থেকে স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের কে অপমান করে। মুখে মুখে অপমান না করলেও ব্যবহারে বুঝিয়ে দেয়৷ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিত করে তোলে কিন্তু অমানুষকে মানুষ করেতে পারে না৷ তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়াটাও জরুরী৷ শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে আপনি একটা মানুষকে মূর্খ বলতে পারেন না।
বরং মূর্খ হচ্ছে তারাই, যারা শিক্ষা এবং শিক্ষিতের মূল্য দিতে জানে না। চাচি আমার কাছে এসে টেবিলে নাস্তা রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,, - বাবা আগে নাস্তাটা করে নাও দু'জন তারপর বুঝিয়ে দিচ্ছি। তারপর আমরা দুজন নাস্তা করলাম আর আমাদের দুই মা বসে গল্প করল। আমাদের কাহিনীগুলো অনেক মজার। ছোট মা আমাকে পড়ায় আর আমি পিচ্চিকে পড়াই। নাস্তা শেষ করার পর ছোটমা আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়ে রান্না করতে চলে গেল।
আমরা পড়াশোনা করতে লাগলাম আর ওদিকে আমাদের দুই মা রান্না করতে লাগলো। পড়া শেষ করে পিচ্চিটাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলাম। সেখানে বাবা এবং চাচ্চু খোশগল্পে মেতে রয়েছে। চাচ্চু একজন ব্যাংকার আর আমার বাবা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আমরা গিয়ে তাদের পাশে বসলাম। বাবা পিচ্চিটাকে কোলে তুলে নিল। - তোমাদের পড়া শেষ হল মামনী? পিচ্চিটা একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে উত্তর দিল,,, - হ্যাঁ বড় বাবা আমার পড়া শেষ হয়েছে। জানো বড় বাবা আজ কি হয়েছে? - কই নাতো মামনী! তুমি বলো কি হয়েছে?
আজকে ভাইয়াকে পড়া ধরেছিলাম ভাইয়া পারেনি, কিন্তু আমি পেরেছি হিহিহি। পিচ্চিটা কথাটা বলেই সে কি হাসি। ওর তালে তালে চাচ্চু এবং বাবাও হেসে দেয়৷ মেয়েটা সব সময় চালাকি করার চিন্তায় থাকে। চাচ্চু আমাকে জিজ্ঞেস করে,,, - তা বাবা মুগ্ধ তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে? আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলি,,, - ভালো। আমিঃ বাবাকে বললাম,,,
বাবা আমার খাতা শেষ হয়ে গেছে কিছু টাকা দাও কাল আমি খাতা এবং ডায়েরি কিনব। বাবা বলল,,, - আচ্ছা কাল সকালে তোমার মায়ের কাছে নিও৷ এভাবে আমরা চারজন মিলে আড্ডা দিলাম খানিক্ষণ। তারপর মায়ের ডাক পড়ল খাওয়ার জন্য। সবাই খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম, খাবার খেতে খেতে পিচ্চিটা হঠাৎ বলে ওঠে মা তুমি জানো ভাইয়া আমাকে আজ কি বলেছে? পুতুলের কথা শুনে আমি বিষম খেলাম কি না কি বলে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয় কে জানে৷ মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন কথা বলে ওর কথা শুনে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হয়৷ এখন না।জানি কি বলে সেই ভয়ে গলায় ভাত আটকে গেল। কোনমতে পানি খেয়ে ভাত টা নামিয়ে নিলাম। আমি চোখ পাকিয়ে পুতুলের দিকে তাকালাম৷ ছোটমা বলল কি বলেছে?
পুতুল খাওয়া বন্ধ করে বলল,,, - ভাইয়া আজ বিকেলে নদীর পাড়ে বসেছিল। আমি সেখানে গিয়ে বললাম ভাইয়া তুমি আমাকে বিয়ে করবে, আমি তোমার প্যান্ট ধুয়ে দেব, তোমার খাবার বেড়ে দেব। তোমার সব কাজ করব। তখন ভাইয়া কি বলে জানো? সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুতুলের দিকে। আমার তো চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম৷ তারপর ও নিজেই বলতে শুরু করল,,, - তখন ভাইয়া বলে আমি পড়ালেখা শেষ করে বড় হব তারপর ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবে। পুতুলের কথা শুনে সবাই হেঁসে দেয়।
মা পুতুলকে কোলে নিয়ে বলে,,, - তোমার ভাইয়া একদম ঠিক বলেছে মামনী। তুমি আগে পড়ালেখা শেষ করে বড় হও তারপর তোমার ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে দেব। কেমন! পুতুল শুধু মাথা নাড়ালো। মেয়েটা এই বয়সেই বিয়ে নিয়ে এত পাকা পাকা কথা বলে। না জানি বড় হলে কি করে৷ এ তো আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। ছোটমা পুতুলের কান টেনে দিয়ে বলল,,, - খুব পেকে গেছ তাই না! এবার পাকা পাকা কথা বন্ধ করে খাবার খেয়ে নাও চুপ করে। তারপর সবাই মিলে খাওয়া শেষ করলাম! খাওয়া শেষ করে আমি পিচ্চিটার হাতে দুটো চকলেট দিয়ে ঘুমোতে গেলাম পিচ্চিটাও ঘুমিয়ে পড়ল।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com