Breaking News

শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে যেসব অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন


শারীরিক ফিটনেস রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। বয়স বাড়লে যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া, হাড়ক্ষয়, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তা ঠেকাতে চাই ফিটনেস। দীর্ঘদিন সচল ও কর্মক্ষম থাকার জন্যও ফিটনেস জরুরি।

১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার। সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হবে পেশিশক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম। অ্যারোবিক ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। পার্কে বা রাস্তায় যেতে না পারলে ট্রেডমিল বা ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান।

শরীরিক ভাবে ফিট থাকতে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করুনঃ

সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমানোর সময়সূচির ব্যাপারে অক্ষয় কুমার খুবই সুশৃঙ্খল। এক সাক্ষাৎকারে এই বলিউড তারকা জানিয়েছেন, তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে রাতের খাবার সেরে ফেলেন, রাত ৯-১০টার মধ্যে ঘুমাতে যান এবং ভোর ৪-৫টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে যান।

শারীরিক ধকল যায়, এমন কাজ করার পর শরীরের পেশীগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যেতে কিছুটা সময় নেয়। এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ঘটে যখন আমরা বিশ্রামে থাকি অথবা ঘুমে থাকি। এজন্যই অক্ষয় কুমার নিয়মিত সঠিক সময়ে ঘুমান এবং আমাদেরও সেটাই করা উচিত।

শরীর ফিট রাখতে প্রথম শর্ত স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এর সঙ্গে সঙ্গে করতে হবে শারীরিক ব্যায়াম। 

নৌকাসন: শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে নৌকাসনও বেশ কার্যকরী। এই আসন করার জন্য প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এর পর শ্বাস নিতে নিতম্ব ও কোমরে ভর দিয়ে দেহের ওপরের অংশ ও পা একইসঙ্গে উপরের দিকে তুলুন। বাহু ও পায়ের পাতা একইদিকে থাকবে।   নৌকাসনেই লুকিয়ে আছে ম্যাজিক। ছবি: সংগৃহীত    এ রকম নৌকা বা ইংরেজি এল আকৃতির মতো অবস্থায় ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন। ধীরে ধীরে দম ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। প্রতিদিন ২-৩ বার এই যোগাসনটি করতে পারেন। শরীরের পেশি শক্তিশালী হবে। ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

ভুজঙ্গাসন: ভুজঙ্গাসন অনুশীলন করতে প্রথমে মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতের তালু মেঝের ওপর ভর দিয়ে পাঁজরের দু-পাশে রাখুন। এরপর কোমর থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে রেখে হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে বাকি শরীর ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলুন। মাথা বেঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান।   প্রতীকী ছবি।    এই আসন অনুশীলনের সময় আপনাকে দেখতে লাগবে সাপের মতো। এই ভঙ্গিতে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। পেটের মেদ ঝরাতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩-৪ বার এই আসনটি করতে পারেন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। এই পরিষ্কার থাকার অভ্যাসই অতিরিক্ত ওজনকে কমিয়ে আনতে পারবে। যেমনঃ ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি।

ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে। এসবে সুরের তালে তালে অ্যারোবিকের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং—সব করা যায়।

জুম্বা করতে পারেন। তবে বয়স কম ও ফিটনেস বেশি থাকলে তবেই। ফিটনেস ভালো থাকলে বেশি বয়সেও এ ব্যায়াম করা যায়। এ ব্যায়ামে শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে।

ইয়োগা করতে পারেন। এটা সব বয়সী মানুষই করতে পারেন।

আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও খুব জরুরি। মেডিটেশনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়।

কাজের ফাঁকে চকলেট নয়, পানি খান:  কাজের ফাঁকে চকলেট, চিপস খাওয়া অভ্যাস ত্যাগ করুন। ড্রাই ফ্রুটস বা লো ফ্যাট কুকিজ সঙ্গে রাখতে পারেন। খিদে পেলে অল্প করে খান সেগুলোই। আর কাজের মাঝে পানি খেতে ভুলবেন না যেন।

অফিস থেকে ফেরার পথে একটু হাঁটা:  অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক বা দুই স্টপেজ আগে বাস বা অফিসের গাড়ি থেকে নেমে পড়তে পারেন। এতে হাঁটার অভ্যাস তৈরি হবে। সপ্তাহে দু-একদিন অফিসের লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে উঠুন।

রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা:  অফিসপাড়ায় সুস্বাদু খাবারের দোকানে নিয়মিত খাওয়ার প্রবণতা না থাকলেই ভালো। অনেক সময় বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাওয়াটা ঝক্কির। তবে মনে রাখবেন, বাড়ির খাবার আপনাকে সুস্থ রাখবে। রাস্তার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো।

বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিতে পারেন বাদাম, আম‌ন্ড, কাজু, ওয়ালনাট, তিসির বীজ, বাড়িতে তৈরি ভ্যানিলা।বাইরে চকলেট, চিপস না খেয়ে খেতে পারেন এগুলো।

টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া যাবে না। যদি এই কাজটি করেন তাহলে খেয়াল থাকবে না আপনি কতটা খাচ্ছেন।

ঝাল খাবার খান কিন্তু ঝালগুলো আসবে দারচিনি, আদা, গোলমরিচ এবং কাঁচামরিচ থেকে। এগুলো রান্নায় ব্যবহার করুন। মসলা মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।

লিফট না ব্যবহার করে মাঝে মাঝে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠুন।

চর্বি-তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার পর বরফ ঠান্ডা পানীয় বা পানি পান করা এড়িয়ে চলুন।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। দিনে ১০ মিনিট এ ধরনের ব্যায়াম করলে দুশ্চিন্তার মাত্রা অনেকটা কমে যাবে। হার্টরেট স্বাভাবিক থাকবে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থেকে শরীরও সুস্থ রাখবে।  

খাবার খাওয়ার ১৫ মিনিট আগে অথবা পরে পানি খান। এতে হজমশক্তি বাড়বে।   

অনেকের খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। আর এ কারণে ক্ষুধা না লাগলেও খেতে থাকেন অনেকে। এই অভ্যাসটি শরীরের জন্য ভালো নয়। ক্ষুধা পেলে তবেই খেতে হবে।   

রান্নাঘরে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন। প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবারের বদলে ফল, সবজি, ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্য রান্নাঘরে রাখুন। এতে কাজ করতে করতে উপকারী খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস তৈরি হবে।

পর্যাপ্ত প্রোটিন: আপনি কী ধরনের জীবনযাত্রা নির্বাহ করেন, তার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে রোজ ঠিক কতটা প্রোটিন আপনার দরকার। যারা হেভিওয়েট নিয়ে ওয়ার্কআউট করেন, তাদের প্রোটিন একটু বেশি লাগে। যারা ওজন কমানোর বা এক জায়গায় ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন, তাদেরও একটু বেশি পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া উচিত। কারণ প্রোটিন বেশিক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। আমিষ প্রোটিনের মধ্যে ডিম, মাছ, চিকেন খেতে পারেন। নিরামিষ প্রোটিনের মধ্যে আদর্শ হচ্ছে— ডাল, ছোলা, রাজমা, সোয়াবিন, দুধ, দই, ছানা। খুব ভালো মানের প্রোটিন খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

ফাইবার আপনাকে ফাইবার জোগাবে শাকসবজি। প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, রাতের খাবার– এসবই কিছু না কিছু সবজি যেন থাকে তা দেখবেন। ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সব মৌসুমি সবজি ও শাকপাতা খাওয়া যায়। এমনকি আলুও বাদ দেওয়ার দরকার নেই। তবে একগাদা তেল-মসলা দিয়ে রান্না করবেন না, তাতে আনাজের পুষ্টিগুণ থাকে না। সিদ্ধ বা ভাপানো সবজি খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। ফাইবার আপনার পেট ভরিয়ে রাখবে বেশিক্ষণ। সেই সঙ্গে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতেও সাহায্য করবে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com