Breaking News

যৌবন ধরে রাখে যেসকল খাবার



শৈশব যতই মধুর হোক। কিংবা কিশোর বয়সের দুরন্তপনা যতই আনন্দদায়ক হোক। যৌবনের জৌলুসই কিন্তু সকলের কাছে আকর্ষণীয়। যৌবন এমনি এক জিনিস, যা ধরে রাখতে চান সবাই। যদিও আমাদের বয়স বাড়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই। কিন্তু সত্যটা এই যে- কেউই আসলে তা মন থেকে মেনে নিতে পারেন না। তাইতো, নিজেকে চির তরুণ রাখতে এবং নিজের যৌবন অনন্তকাল ধরে রাখতে আমাদের চেষ্টার অন্ত নেই! তারুণ্য বা যৌবন ধরে রাখতে অনেকেই কসমেটিক সার্জারি, ওষুধ, বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান গ্রহণ করে থাকেন, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অথচ নিজের যৌবন দীর্ঘদিন ধরে রাখার জন্য এতো ঝামেলা করার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ, খুব সহজেই কিছু বিশেষ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে নিজের যৌবন ধরে রাখতে পারবেন আপনি। 

যৌবন, তারুন্য ধরে রাখতে কে না চায় তবে সবাই কি ধরে রাখতে পারে? পারে না তবে আপনি যদি ইচ্ছা করেন এবং কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন তবে আপনিও যৌবন ধরে রাখতে পারবেন।পৃথিবীর সব মানুষই চান যৌবন ধরে রাখতে। আর এ জন্য কোনো চেষ্টা তদবীরের কমতি রাখেন না। কিন্তু যৌবনকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তবে সাধারণ কিছু খাবারের মধ্যেই আছে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার দারুণ সম্ভাবণা। কিন্তু রোজকার ব্যস্ত জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস যেন বিপরীত দিকেই টেনে নিয়ে যায় আমাদের। অল্প বয়সেই আজকাল বুড়িয়ে যান অনেকে। অথচ একটু সচেতনতাই কিন্তু আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। কিছুই না রোজ পাতে রাখুন কিছু খাবার যা আপনাকে যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজের একটি গান আছে, ‘যৌবন একটি গোল্ডলিপ সিগারেট।’ এই গানের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, সিগারেট টানলে যেমন ধীরে ধীরে তা শেষ হয়ে যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যৌবনেও তেমনি ভাটা পড়ে।

বয়স শুধুই একটি সংখ্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা তো বাড়বেই! তবে পরিবর্তিত জলবায়ু, অতিরিক্ত দূষণ ত্বকে ইতিমধ্যেই বেশ প্রভাব ফেলেছে। শুধু বাজার থেকে অ্যান্টি এজিং ক্রিম কিনে নয়, ত্বকে বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রাখতে শরীর ভিতর থেকেও সুস্থ রাখতে হবে বইকি। রোজকার ডায়েটে কী রাখলে যৌবন ধরে রাখতে পারবেন,

সুস্থ, সুন্দরভাবে কে না বাঁচতে চায়! তারুণ্য ধরে রাখতে চাওয়া মানুষের আদিম আকাঙ্ক্ষা। তাই কোন খাবারে বার্ধক্যরোধী উপাদান আছে, এগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে ‘প্রোফাইলিং’ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নালে।

হেলথলাইন অনুসারে জেনে নেওয়া যাক এমন খাবারের কথা, যেগুলো তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে আর বাংলাদেশে সহজেই পাওয়া যায়।

কলা: যৌবন ধরে রাখতে কলার জুড়ি নেই। এতে আছে ব্রোমেলিয়ান, যা শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়িয়ে যৌবনকে সজীব করে। এছাড়া কলায় আছে ভিটামিন এ, বি, সি ও পটাশিয়াম। পটাশিয়ামের অভাবে ত্বক রুক্ষ হয়। কলা সেই অভাব পূরণ করে। ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম মানবদেহের যৌনরস উৎপাদন বাড়ায়।

গ্রিন টি: গ্রিন টিকে অ্যান্টি-এজিং ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কারণ এতে পলিফেনল রয়েছে। পলিফেনল বার্ধক্যের গতি কমিয়ে দেয়। তাই সকালে এবং সন্ধ্যায় গ্রিন টি খান। এছাড়াও গ্রিন টি একটি ফেস মাস্কও কার্যকর। গ্রিন টি-র সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন।

মেথি: মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা, ডায়াবেটিস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক।   মেথি পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে তারুণ্যকে ধরে রাখতে সহায়তা করে।

অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল একটি উপকারী তেল। খাবার রান্নার সময় অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমান কম থাকে এবং সহজে মেদ জমে না। এছাড়াও প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বকে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে ঘুমালে ত্বকে বলিরেখা পরে না সহজে। ফলে দীর্ঘ দিন যৌবন ধরে রাখা যায়। 

রঙিন ফলমূল ও শাক-সবজি: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বককে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ থেকে রক্ষা করে সজীব ও সতেজ রাখে।  পাকা পেঁপে, কলা, গাজর, সবুজ শাক, ব্রকোলি ইত্যাদি ছাড়াও ভিটামিন-সি জাতীয় খাদ্য (লেবু, আমলকী, কমলা) শরীরকে সতেজ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডার্ক চকলেট: অনেকেই চকলেট ভালোবাসেন। যারা চকলেট ভালোবাসেন তাদের জন্য ভালো খবর হলো ডার্ক চকলেট বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে। ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তাই যারা নিয়মিত প্রতিদিন ছোট এক টুকরা ডার্ক চকলেট খান তারা দীর্ঘদিন যৌবন ধরে রাখতে পারেন।

অ্যালোভেরা: ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান দেহের ওজন কমায়।   এ ছাড়া অ্যালোভেরার জুস টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

আঙ্গুর: বয়স ধরে রাখতে আঙ্গুরের জুড়ি নেই। আঙ্গুরে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। ফলে নিয়মিত আঙ্গুর খেলে ত্বক ও দেহ সুন্দর ও সুস্থ থাকে।

দই: দই আমাদের অনেকের কাছে খুব প্রিয় একটি খাবার। দই মেদ ও কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।  যারা যৌবন ধরে রাখতে চান তাদের জন্য আশার কথা হচ্ছে নিয়মিত দই খান। দইয়ে প্রচুর প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম আছে যা শরীরের গঠন ভালো রাখে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। দই বয়সজনিত কারণে হওয়া রোগগুলো প্রতিরোধ করে। এছাড়াও দই ত্বককে রাখে বলিরেখা মুক্ত।  তাই যৌবন ধরে রাখতে চাইলে প্রতিদিন দই খান।

পালং শাক: পালং শাকে প্রচুর পরিমানে লুটেইন আছে যা শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে এবং যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত পালং শাক খেলে ত্বক চোখের বয়সজনিত সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন আছে বলে পালং শাক শরীরের নানা অসুবিধা দূর করে এবং শরীরে পুষ্টি ও শক্তির যোগান দেয়।

অ্যাভোকাডো: ত্বকের কোষকে সুন্দর ও তরতাজা দেখাতে শরীরে প্রয়োজন লিনোলেনিক অ্যাসিড ও আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড। অ্যাভোকাডোর মধ্যে এই দু’টি ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। তাই নিয়মিত অ্যাভকাডো খেলে বলিরেখা দূর হয়। সেইসঙ্গে ত্বক থাকে সতেজ ও সুন্দর। 

সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছ যৌবন ধরে রাখতে সহায়ক। দীর্ঘ দিন যৌবন ধরে রাখতে চাইলে নিয়মিত খাবার তালিকায় লাল মাংস বাদ দিয়ে সামুদ্রিক মাছ রাখুন। তাতে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে এবং যৌবন ধরে রাখা যাবে বহুদিন।

ডালিম: ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে ডালিম অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। ডালিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের নমনীয়তা বজায় রেখে তাকে টানটান রাখতে সাহায্য করে। তাই দিন শুরু করুন ১ গ্লাস ডালিমের রস খেয়ে।

মিষ্টিকুমড়ার বিচি: এতে আছ প্রচুর সাইটোস্টেরোল। এটি পুরুষের দেহে টেসটোস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি এসিড পুরুষের শক্তি বাড়ায়। পুরুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

টমেটো: লাইকোপিন হল রক্ত ​​এবং টিস্যুতে পাওয়া একটি পদার্থ যা ত্বককে সূর্যের রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। টমেটো এবং তরমুজে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন পাওয়া যায়।

পেঁপে: বলিরেখা পড়বে না এমন ত্বক চাইলে পেঁপে খেতেই হবে। পেঁপে-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। মৃত ত্বকের কোষগুলোকে ঝরিয়ে উজ্জ্বল করে তোলে।

সজনে ডাঁটা: আমেরিকান জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স জানাচ্ছে পুরুষদের লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা বা উদ্দীপনার ঘাটতিতে খুব ভাল কাজ করে সজনে ডাঁটা। প্রতিদিনের ডায়েট রাখতে পারেন সজনে ডাঁটা। অথবা এক গ্লাস দুধে সজনে ফুল, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে প্রতিদিন খেলেও উপকার পাবেন।

পানি: পরিমাণমত পানি পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা তো আর বলে শেষ করা যাবে না। তবে বয়স ঠেকিয়ে রাখতেও কিন্তু পানি পান খুবই কার্যকর। ত্বকে বয়েসের ছাপ ঠেকিয়ে রাখে পানি। ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান তে পারে দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পানের অভ্যাসে। শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়লেই ব্রণ, র‍্যাশের সমস্যা বাড়ে, ত্বকের চামড়া ঝুলে যায়। পরিমাণ মতো পানি পানে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়, ফলে সুস্থ থাকে ত্বক ও শরীর।

কাঠবাদাম: ত্বকের বলিরেখা দূর করে বয়সকে ঠেকিয়ে রাখতে কাঠবাদামের জুড়ি নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

মিষ্টি আলু:  বিটা ক্যারোটিন, যেটা ভিটামিন এ–তে রূপান্তরিত হয়, সেটার সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি মিষ্টি আলু। বয়স বাড়তে থাকলে চোখ, ত্বক ও মস্তিষ্কের অনেক সমস্যা বাড়ে, যা কমাতে সাহায্য করে মিষ্টি আলু।

লেবু জাতীয় ফল: লেবু, কমলা, মাল্টা—এসবই এর অন্তর্ভুক্ত। তবে এই শ্রেণির ফলগুলোর ভেতর জাম্বুরা সবচেয়ে ভালো। জাম্বুরার ম্যাগনেশিয়াম উত্তেজনা কমিয়ে শান্ত থাকতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আঁশ খাবার হজমে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ক্ষতিকর ফ্যাট আর কোলেস্টেরল পোড়ায়।

বাদাম: প্রায় সব ধরনের বাদামেই কম-বেশি একই উপাদান থাকে। বিশেষ করে ভিটামিন ই-এর বিশ্বস্ত উৎস বাদাম। সব ধরনের বাদামের অ্যান্টি-এজিং ক্ষমতা আছে। ত্বকের টিস্যু সারিয়ে তোলা, নতুন টিস্যু উৎপাদন ও ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য বাদামের জুড়ি নেই। অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয় বাদাম।

বিঃদ্রঃ উপরের সকল খাবারই যৌবন ধরে রাখতে সাহায্যে করে তবে যৌবন যেমন ধীরে ধীরে কমতে থাকে ঠিক এই সকল খবার খাওয়ার ফলে আপনার যৌবন ধীরে ধীরে রিকোভারী হবে সব খাবারই পরিমান মত খাবেন। তবে দ্রুত যৌবন ফিরে পাবার আশায় খাবারগুলো বেশি করে খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন- ওজন বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্ত চাপ সহ আরো অনেক কিছু।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com