Breaking News

১৬ বছরের মেয়ে বিয়ে দেওয়ার বিশেষ বিধান



১৬ বছরের মেয়ে বিয়ে দেওয়ার বিশেষ বিধানের A to Z:The Child Marriage Restraint Act 2017 এর ১৯ ধারার বিশেষ বিধান টি পর্যালোচনায়। বিশেষ বিধানের আওতায় বিয়ের অনুমতি দিতে ১৯ ধারায় অনেকগুলো শর্ত আরোপ করা হয়েছেঃ
১. আদালতের নির্দেশ (court’s order) থাকতে হবে।
২. বাবা মা অথবা অভিভাবকের সম্মতি (consent of parents or guardians) থাকতে হবে।
৩. অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে (for the highest interest of the minor) হতে হবে।
বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা এর ১৭ বিধি অনুযায়ী বিশেষ বিধান প্রয়োগে কোর্টে দুইপক্ষকে যৌথভাবে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে পারবেন উভয়পক্ষের 
ক. পিতামাতা, 
খ. আইনগত অভিভাবক, 
গ. অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাত্রপাত্রী সহ উভয়পক্ষ।
এমন আবেদন পাওয়ার পর কোর্ট আবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যাচাই কমিটির কাছে প্রেরণ করবেন। ইউএনও এর সভাপতিত্বে ৭ সদস্যের যাচাই কমিটি আবেদিত বিয়ের বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তবে আবেদন যাচাইয়ে কমিটিকে ২ টি মানদন্ড বিবেচনায় নিতে হবে।

১. বিয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে হবে।
২. বিয়েটা হবে সর্বশেষ বিকল্প অর্থাৎ আর কোন বিকল্প (Option) হাতে নেই।
এছাড়া এই কমিটি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিয়ে না হওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবে। সেগুলো হলো- বিয়েটি ক. জোরপূর্বক হলে, খ. ধর্ষণ, অপহরণ বা জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কারনে হলে, ৩. এ সংক্রান্তে মামলা বিচারাধীন থাকলে। কোর্ট কমিটির সুপারিশ পেয়ে সন্তুষ্ট হলে বিয়ের অনুমতি দিবেন, বা নামঞ্জুর করবেন অথবা পুনরায় তদন্ত করাবেন, এমনকি কমিটিকে আদালতে উপস্থিত করিয়ে বক্তব্য শুনবেন।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই বিশেষ বিধানের আওতায় বিয়ের অনুমতি পাওয়া সহজ নয়। কোর্ট অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করবে। দুইপক্ষের যৌথ আবেদন হতে হবে, কোর্ট সাথে সাথে অনুমতি দিবে না, একটা কমিটি সত্যতা যাচাই করে সুপারিশ করবে, তারপর কোর্ট আইন ও বিধির শর্ত পূরণ হলেই এই বিশেষ বিধান প্রয়োগ করে অপ্রাপ্তের বিয়ের অনুমতি দিবে।

একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিত। এই ২০১৭ সনের আইন এবং পরের ২০১৮ সনের বিধিতে কোথাও কোন আদালত এমন অনুমতি দিবে তা বলা হয়নি। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও বিধি একত্রে পড়লে বিষয়টি পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে যথাপোযুক্ত ফোরাম হলো জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী। কেননা বিধিতে কয়েকটি ফরম সংযুক্ত আছে যেখানে ‘বিচারিক আদালত’ ও মোবাইল কোর্ট পৃথক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ২৯ ধারা ও ২য় তপসীলের ৮ম কলাম মতে, offense under other laws নীতিতে ২ বছর পর্যন্ত শাস্তিযোগ্য হওয়ায় এ আইনের অধীন অপরাধের বিচার ও তদন্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট করবেন। এ আইনের অপরাধগুলো আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং অ-আপোষযোগ্য। আইনের ৪, ৫ ধারা ও ১৫ বিধি মতে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। অভিযোগ দায়েরের সময়সীমা ঘটনা হতে ২ বছর।

মজার বিষয় হলো, আদালত (জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রসী) বাল্যবিবাহ ঠেকাতে প্রয়োজনে বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারবে। মামলার নিষ্পত্তি হবে ২ ভাবে- ১. বিচারে খালাস বা শাস্তি, ২. মুচলেকা সম্পাদন। মুচলেকার ক্ষেত্রে শর্ত হলো, বিয়েটি সম্পাদন হয়নি এবং বলতে হবে, ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহ নিরোধে তৎপর থাকবে। অত্র আইনের কোন অপরাধ সংগঠিত হলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর পাশাপাশি মোবাইল কোর্টও তাৎক্ষণিকভাবে ও স্বীকারোক্তি ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর ৬ ও ৭ ধারার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে শাস্তি দিতে পারবে, তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষের ক্ষেত্রে পারবে না, সেক্ষেত্রে বিচার ও শাস্তি হবে শিশু আদালতে।

আগে বিয়ের ক্ষেত্রে এভিডেভিড করে বয়স কম দেখিয়ে কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ককে বিয়ে দেওয়া হতো। এখন বয়স প্রমাণে এমন এভিডেভিড এর সুযোগ নেই। বৈধ কাগজপত্র হিসেবে ক. জন্ম নিবন্ধন সনদ, খ. জাতীয় পরিচয় পত্র, গ. এসএসসি সার্টিফিকেট, ঘ. জেএসসি সার্টিফিকেট, ঙ. পিইসি সার্টিফিকেট এবং চ. পাসপোর্ট বিবেচনায় নেওয়া যাবে। বয়স প্রমাণে এই কাগজপত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করায় এখন প্রতারণার সুযোগ কমে এসেছে।

সমাজ ও বাস্তবতায় বিশেষ বিধান এর প্রয়োজনীয়তা ছিল। আর, এর অপব্যবহার যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে আইন প্রণেতাগণ অনেকগুলো নিরাপত্তা স্তর রেখেছেন।

(লেখা - হাবীবুল্লাহ হাবীব,এডভোকেট,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com