কফি খাওয়ার রয়েছে যেসব উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কফি (ইংরেজি: Coffee) বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে "কফি বীজ" নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। সবুজ কফি বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রীত কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি। কফিতে ক্যাফেইন নামক এক প্রকার উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। কফির উপাদান ক্যাফেইনের জন্যে কফি মানুষের উপর উত্তেজক প্রভাব ফেলে ও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে কফি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত গরম পানীয়।
কফি সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়, তবে ঠাণ্ডা বা বরফযুক্ত কফিও সহজলভ্য। কফি বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত এবং পরিবেশন করা যায় (যেমন, এসপ্রেসো , ফ্রেঞ্চ প্রেস , ক্যাফে ল্যাটে অথবা পূর্ব প্রস্তুতকৃত টিনজাত কফি )। কফির তিক্ত স্বাদ কমাতে বা স্বাদ বাড়াতে প্রায়ই চিনি , কৃত্রিম মিষ্টিকারক ,দুধ এবং ক্রিম ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে কফি একটি বৈশ্বিক পণ্য হলেও, লোহিত সাগরের চারপাশের খাদ্য ঐতিহ্যের সাথে এর ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থাকার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । আধুনিক যুগের মতো পানীয় আকারে কফি পানের প্রথম বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আধুনিক ইয়েমেনের সুফি মাজারগুলোতে পাওয়া যায়। সেখানে ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে কফি বীজকে বর্তমান পদ্ধতির মতো ভেজে কফি প্রস্তুত করা হতো।
নিচে কফির যেসব উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তা তুলে ধরা হলোঃ
কফি খাওয়ার উপকারিতাঃএক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি ছাড়া অনেকের দিন শুরুই হয় না। আবার অলস দুপুরে ঘুম তাড়িয়ে চনমনে হয়ে উঠতেও চাই এক মগ কফি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন কফিপ্রেমীরা প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন কাপ কফি খায়। কফির ঘ্রাণ যে কেবল মাদকতা জাগায় সেটাই নয়। কফির দারুণ কিছু গুণও রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ এবং লিভারের রোগের মতো অবস্থার জন্য কফি হতে পারে সহায়ক।
- কফি টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। ২০১৪ সালে ৪৮ হাজার জনের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায় যারা ৪ বছরের মধ্যে প্রতিদিন কমপক্ষে এক কাপ কফি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১১ শতাংশ পর্যন্ত কম।
- বেশ কিছু গবেষণা বলছে, কফি এবং অন্যান্য অনেক পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন পারকিনসন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
- ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, কফি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। এর আগে ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছিল যে, প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ কফি খাওয়ার ফলে অংশগ্রহণকারীদের হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার ডিজিজ (সিএলডি) হওয়ার ঝুঁকি ৩৮ শতাংশ কমে যায়।
- যারা কফি পান করেন তাদের পিত্তথলির রোগের ঝুঁকিও কম থাকে।
- পরিমিত পরিমাণে কফি খেলে রক্তচাপসহ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে, প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি পান করলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে যায়।
- ২০১৯ সালের একটি গবেষণা বলছে, কফি পানের সাথে ওজন হ্রাসের সাথে একটি সম্পর্ক রয়েছে।
- কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা তাড়াতাড়ি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নতুন করে শরীরে মেদ জমার আশঙ্কাও কমায়।
- কফি শরীরের বিপাকীয় হার বাড়ায়। শারীরিক শক্তিও বাড়াতে সহায়তা করে এটি। এতে চট করে খিদে পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়।
- কালো কফি খেলে সারা দিন অনেক বেশি সক্রিয় থাকা যায়। কাজেও অনেক বেশি মন দেওয়া যায়। অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালোরি ঝরাতেও সাহায্য করে এই পানীয়। তাই শরীরচর্চা করার আগে কালো কফি খেতে পারেন।
- শরীরে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে পারে কফি। কফি খাওয়ার পর শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়। এ কারণে কফিকে ‘ওয়াটার ওয়েট’ নিয়ন্ত্রকও বলা হয়।
কফি খাওয়ার অপকারিতাঃ
রোজ সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এই ক্ষতিকারক অ্যাসিড পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে জমলে তার থেকে হজমজনিত কঠিন রোগ হতে পারে। কফির বীজে ক্যাফিন ছাড়াও অন্যান্য অম্ল জাতীয় উপাদান থাকে, যা নিয়মিত বেশি কফি খেলে পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার ও গ্যাসট্রিক রোগ হয়।
উপকারী কফি সঠিকভাবে না খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে শরীর কফির উপকারী গুণতো পায় না বরং কফিই হয়ে ওঠে শরীরে নানা সমস্যার কারণ। যেমন-
রোজ সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এই ক্ষতিকারক অ্যাসিড পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে জমলে তার থেকে হজমজনিত কঠিন রোগ হতে পারে। কফির বীজে ক্যাফিন ছাড়াও অন্যান্য অম্ল জাতীয় উপাদান থাকে, যা নিয়মিত বেশি কফি খেলে পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার ও গ্যাসট্রিক রোগ হয়।
উপকারী কফি সঠিকভাবে না খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে শরীর কফির উপকারী গুণতো পায় না বরং কফিই হয়ে ওঠে শরীরে নানা সমস্যার কারণ। যেমন-
- সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে এই অ্যাসিড জমলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
- কফির বীজে ক্যাফেইন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান থাকে যা পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার, গ্যাসট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষম ব্যহত হতে পারে।
- কফি শরীরে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও এটি স্নায়ুদতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে৷ দীর্ঘদিন ধরে একটানা প্রচুর পরিমাণে কফি পানে আমাদের স্বাভাবিক উদ্দীপনাও নষ্ট হতে পারে৷।
- খালি পেটে কফি খাওয়ার অভ্যাসে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এ এসিড পেটে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময় খালি পেটে কফি খাওয়ার অভ্যাস ডেকে নিয়ে আসতে পারে আলসারের সমস্যাকে।
- প্রতিদিন ২ কাপের বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফি দ্রুত শরীরে চাঙা ভাব ফিরিয়ে আনলেও তা মস্তিষ্কের ওপর চাপ তৈরি করে।
- ঘুম না আসা।
- বাড়তে পারে পেটের সমস্যা।
- হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়।
- ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
কতটুকু কফি খাওয়া যাবে?
প্রতিদিন কফি আপনি খেতে পারেন, তবে বেশি খাওয়া চলবে না। এক্ষেত্রে পরিমাণ জেনে নেওয়া জরুরি। তাতে কফি খাওয়ার কারণে সমস্যায় ভুগতে হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে দুই কাপ কফি খাওয়াই যথেষ্ট অথবা এক কাপও খাওয়া যেতে পারে। তবে দুই কাপের বেশি কফি খাবেন না। সন্ধ্যার পর কফি থেকে দূরে থাকুন। এতে কফির অপকারী রূপ দেখতে হবে না।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com