Breaking News

ফৌজদারী/ক্রিমিনাল মামলার ধারাবাহিক ধাপসমূহ

ফৌজদারী/ক্রিমিনাল মামলার ধারাবাহিক ধাপসমূহঃ

ফৌজদারী মামলা দায়েরঃ
ফৌজদারী মামলা দুই ভাবে দায়ের করা যায়ঃ- 
(১) ম্যাজিস্ট্রিটের নিকট অভিযোগ( Complaint) দায়ের করার মাধ্যমে।
(২) পুলিশের নিকট প্রাথমিক তথ্য বিবরণী/এজাহার ( First Information Report (FIR) এর মাধ্যমে । Complaint) হলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রিটের নিকট অভিযোগ( Complaint) দায়ের/মামলা দায়ের করাকে বুঝায়।

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় পুলিশ প্রাথমিক তথ্য বিবরণী লিপিবদ্ধ করেন।আমোলযোগ্য মামলার অপরাধ সমুহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট দিতে হয়।

জি আর( GR Case)/ পুলিশ মামলার ধাপসমূহঃ

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারা অনুসারে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট First Information Report ( F.I.R) দাখিল করতে হয়। ১৫৬ ধারা অনুসারে পুলিশ তদন্ত করবে এবং ১৬১ ধারা অনুসারে পুলিশ অফিসার সাক্ষীদেরকে পরীক্ষা করবে।অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করতে চাইলে ১৬৪ ধারানুসারে ম্যাজিস্ট্রেট তা লিপিবদ্ধ করবেন।১৭৩ ধারানুসারে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগপত্র/চার্জশীট দিবেন অথবা অভিযোগ প্রমাণিত না হলে Final Report ( চুড়ান্ত রিপোর্ট ) দিবেন।
পুলিশ অফিসার চুড়ান্ত রিপোর্ট দিলে ম্যাজিস্ট্রেট আসামীকে অব্যাহতি দিবেন অথবা ম্যাজিস্ট্রেট পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিবেন।তবে মনে রাখতে হবে অব্যাহতি আর খালাস এক জিনিস নয় নিম্নে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো্ঃ
অব্যাহতি ও খালাস এর মধ্যে পার্থক্যঃ
ক্রিমিনাল মামলার ধারাবাহিক ধাপগুলো
অব্যাহতি ও খালাস এর মধ্যে পার্থক্য

(Discharge) অব্যাহতিঃ

আদালত মামলার নথি, দাখিলকৃত দলিলাদি এবং তৎসম্পর্কে আসামী ও অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালাবার যথেষ্ট কোনো কারণ নাই, তাহলে আদালত ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ২৬৫(গ) ধারানুসারে আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিবেন এবং তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।

(Acquittal) খালাসঃ

আদালত অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর জবানবন্দি গ্রহণ এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামী পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে বলে কোন সাক্ষ্য প্রমান নাই, তাহলে আদালত ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ২৬৫(জ) ধারানুসারে আসামীকে খালাস করে দেবেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।

তাহলে মনে রাখতে হবে অব্যাহতির ক্ষেত্রে শুধু অনুসন্ধান করা হয়, বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয় না। যদি অব্যাহতির পর নতুন সাক্ষ্য প্রমান উদঘাঁটিত হয়, তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ ঘটন করা যায়।কিন্তু অন্যদিকে কোন আসামীকে বিচারে খালাস প্রদান করা হলে, পুনরায় তার বিরুদ্ধে একি অপরাধের অভিযোগ গঠন করা যায় না। অব্যাহতির আদেশ আদালতের কোন রায় নয়। কিন্তু খালাসের আদেশ আদালতের একটি পূর্নাঙ্গ রায়।

(Bail) জামিন বা মুক্তিঃ

জামিন বা মুক্তি আপনি যে কোন সময় পেতে পারেন । আসামী যদি আদালতকে বিশ্বাস যোগ্য কারণ দেখাতে পারেন এবং আদালত যদি মনে করেন আসামী কে জামিন দেয়া যায় তাহলে মামলা চলাকালীন অবস্থায় আসামী কে কারাগারে না রেখে জামিন বা মুক্তি দিতে পারে । অনেক সময় আদালত আসামী কে শর্ত বা লিখিত বন্ডের মাধ্যমে জামিন বা মুক্তি দিয়ে থাকে যা ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ৪৯৬-৪৯৮) আলোচনা করা হয়েছে।

ফরিয়াদী যদি মনে করেন পুলিশ অফিসার তদন্ত রিপোর্টের মধ্যে ভুল তথ্য দিয়েছে অথবা তদন্ত যথাযথভাবে হয় নাই তাইলে ফরিয়াদী উক্ত চুড়ান্ত রিপোর্ট (Final Report) এর বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নারাজি দরখাস্ত/ নারাজি পিটিশন দাখিল করবেন এতে ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট হলে পুলিশ অফিসারকে মামলার তদন্তভার আরো ভালো ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিবেন।

আদালত চাইলে ফরিয়াদীর নারাজি পিটিশন বা নারাজি দরখাস্ত ছাড়াও যদি আদালতের কাছে মনে হয় মামালা পুনরায় তদন্ত করা প্রযোজন / ( Further Investigation) করা প্রয়োজন তাহলে মাজিস্ট্রেট পুনরায় পুলিশ অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দিবেন এমনকি আসামী রিমান্ড শেষ হবার পরেও আদালত আসামীকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে পুনরায় মামলার তদন্ত চলামান রাখতে পারবে।

১৯০ ধারানুসারে ম্যাজিস্ট্রেট মামলা আমলে নেবেন এবং যদি মামলাটি নিয়ে অগ্রসর হবার পযাপ্ত কারণ থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ২০৪ ধারানুসারে অভিযুক্তকে আদালতে হাজির হবার জন্য সমন বা পরোয়ানা দেবেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তি হাজির হবার পর আদালত মামলার নথি ও দলিয়াদি বিবেচনা করে ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধটি করতে পারে তাহলে ২৪২ ধারা অনুসারে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন করবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন সে অপরাধটি স্বীকার করবেন কি না?

যদি ম্যাজিস্ট্রেট নথি ও দলিয়াদি বিবেচনা করে মনে করেন যে, অভিযোগটি ভিত্তিহীন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে ২৪১(ক) ধারা অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ স্বীকারের কথা জিজ্ঞাসা করার পর যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধটি স্বীকার করে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ২৪৩ ধারানুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিবেন।

আর যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধটি স্বীকার না করেন তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার পরবর্তি ধাপ/পর্যায়ে অগ্রসর হবেন।

সি আর (CR Case)/ নালিশি মামলার ধাপসমূহঃ

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯০ ধারানুসারে নালিশি মামলা/CR Case দাযের করতে হয়।এরপর ম্যাজিস্ট্রেট মামলার শুরুর প্রথম ধাপেই ২০০ ধারানুসারে ফরিয়াদী/বাদীর উপস্থিতিতে সকল সাক্ষীর মধ্যে কয়েকজনকে উপযুক্ত মনে করে শপথ বাক্য পাঠ পূর্বক জবানবন্দী গ্রহণ ও লিপিবদ্ধ করবেন। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট আসামীকে তলব দিতে পারেন বা ২০২ ধারা অনুসারে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।

অথবা ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন নালিশ/মামলা/ অভিযোগটি ২০৩ ধারানুসারে খারিজ করে দিতে পারেন।তবে নালিশ/মামলা/অভিযোগটি খারিজ করার আগে ফরিয়াদী/বাদী বা তার আইনজীবী/বিজ্ঞ কৌশুলীকে শুনানীর সুযোগ দিতে হবে।

ম্যাজিস্ট্রেট নালিশ/মামলা/অভিযোগটি খারিজ না করলে ২৪১ ধারা হতে ২৪৯ ধারার বিধান মতে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com