Breaking News

জুয়া আইন ১৮৬৭ সম্পর্কে আলোচনা

জুয়া আইন ১৮৬৭

[১৮৬৭ সালের ২ নং আইন]
(১০ই এপ্রিল, ১৮৬৭)

বাংলার লেঃ গভর্ণরের প্রজাগণ যেই সমস্ত এলাকায় বসবাস করে সেখানে প্রকাশ্যে জুয়ার জন্য শাস্তি প্রদানের এবং সাধারণ ক্রীড়া ভবনের ব্যবস্থা করিবার জন্য একটি আইন ।
প্রারম্ভ
যেহেতু বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের শাসনাধীন এলাকায় প্রকাশ্য জুয়া খেলার জন্য শাস্তি প্রদান এবং সাধারণ ক্রীড়া ভবনের ব্যবস্থা করার জন্য আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে, অতএব নিম্নোক্ত আইনটি প্রণয়ন করা হইলঃ
ধারা-১ (সংজ্ঞা )
'ক্রীড়া' শব্দ দ্বারা জুয়া বা বাজী ধরা বুঝাইবে (কেবল ঘোড়দৌড়ের জন্য উপর ধরা বা জুয়া খেলা ব্যতীত), যখন উক্ত জুয়া বা বাজী অনুষ্ঠিত হয়ঃ
(ক) অনুরূপ ঘোড়দৌড়ের দিনে,
(খ) এমন স্থানে যাহা সরকারী অনুমোদন লইয়া স্টুয়ার্ডরা ঘোড়দৌড়ের জন্য পৃথক করিয়া রাখিয়াছে এবং
(গ) (১) একটি লাইসেন্সযুক্ত বুক মেকারসহ; অথবা (২) ১৯২২ সালের বঙ্গীয় প্রমোদকর আইনের ১৪ ধারার সংজ্ঞানুসারে টোটালাইজটরের দ্বারা, কিন্তু লটারী উহার অন্তর্র্ভুক্ত নহে;
খেলার কাজে ব্যবহৃত যেকোনো হাতিয়ার বা সামগ্রী ''ক্রীড়া সামগ্রী'' শব্দের অন্তগর্ত এবং
''সাধারণ ক্রীড়া ভবন'' অর্থ যেকোনো ঘর, কক্ষ, তাঁবু বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থান, বা প্রাঙ্গণ বা গাড়ি অথবা যেকোন স্থানে যেখানে মালিকের, রক্ষকের বা ব্যবহারকারীর মুনাফা বা উপার্জনের জন্য যেকোনো ক্রীড়াসামগ্রী বা অন্য কিছু ভাড়া বা অর্থের বিনিময়ে রাখা বা ব্যবহৃত হয় ।
ধারা -২ ( আইন ক্ষেত্রে সম্প্রসারণের ক্ষমতা )
সরকার যখন প্রয়োজন মনে করিবেন তখনই সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশের যেকোন বৃহত্ ক্ষুদ্র শহরে বা স্থানে এই আইনের সমন্ত বা যেকোনো ধারা সম্প্রসারিত করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সরকার অনুরূপ শহরের বা স্থানের সীমার নির্ধারণ করিতে এবং মাঝে মাঝে উক্ত সীমানা রদবদল করিতে পারিবেন ।
ধারা -৩ ( দণ্ড )
এই আইনের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসাবে অনুরূপ স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত করিতে দিলে; এবং
উপরোক্ত ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসাবে যেকোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে, উক্ত স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত করিতে দিলে; এবং
যে কেহ বর্ণিত স্থানকে উক্ত উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কাজে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করিলে অথবা যেকোনভাবে সাহায্য করিলে; এবং
অনরূপ গৃহের, তাঁবুতে, কক্ষে, প্রাঙ্গণে বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে যে কেহ জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে অর্থ প্রদান বা নিয়োজিত করিলে অভিযুক্ত হইয়া যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বিচারে সোপর্দ হইবে এবং অনূর্ধ্ব দুইশত টাকা পর্যন্ত জরিমানায় এবং পেনাল কোডের সংজ্ঞানুসারে অনূর্ধ্ব তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবে ।
ধারা-৪ ( সাধারণ ক্রীড়াভবনে উপস্থিত থাকার শাস্তি )
অনুরূপ ঘরে, কক্ষে, তাঁবুতে, প্রাঙ্গণে বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যেকোনো সরঞ্জামসহ যেকোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখিতে পাওয়া গেলে যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেট কতৃর্ক অনুর্র্ধ্ব এবশত টাকা পর্যন্ত জরিমানায় অথবা পেনাল কোড অনুসারে সর্বোচ্চ এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে এবং বিপরীত প্রমাণিত না হইলে যেকোনো সাধারণ ক্রীড়াভবনে খেলা চলাকালে কোনো লোক উপস্থিত থাকিলে সেও উক্ত উদ্দেশ্যে উপস্থিত ছিল বলিয়া গণ্য হইবে ।
ধারা -৫ ( প্রবেশ করা ও পুলিশ কর্তৃক তল্লাশী চালাইবার ক্ষমতা )
কোনো জেলার কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন যেকোনো অফিসার অথবা জেলা পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেট নির্ভরযোগ্য সংবাদ পাইয়া এবং প্রয়োজন মনে করিলে যথোচিত তল্লাশি চালাইয়া যদি মনে করেন যে, অনুরূপ ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে সাধারণ ক্রীড়া ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হইয়া থাকে, তবে তিনি নিজে অথবা সরকার কতৃর্ক নির্ধারিত শ্রেণীর যেকোনো পুলিশ অফিসারকে দায়িত্ব প্রদান করিলে সেই পুলিশ অফিসার প্রয়োজনীয় সাহায্যকারীসহ অনুরূপ গৃহে, তাঁবুতে, কক্ষে প্রাঙ্গণে অথবা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে দিনে বা রাত্রে যেকোনো সময় (প্রয়োজন হইলে শক্তি প্রয়োগ করে) প্রবেশ করিতে এবং ঐ সময় উক্ত স্থান ক্রীড়ারত ব্যক্তিগণকে নিজে অথবা ভারপ্রাপ্ত অফিসার গ্রেফতার করিতে পারিবেন এবং জুয়া খেলার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী আটক করিতে পারিবেন; এবং
জুয়া খেলার কোনো সামগ্রী লুক্কায়িত রহিয়াছে বলিয়া সন্দেহ হইলে তিনি নিজে অথবা ভারপ্রাপ্ত অফিসার অনুরূপ গৃহের, তাঁবুর, প্রাঙ্গণের বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের যেকোন অংশে এবং আটককৃত যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি চালাইতে পারিবেন; এবং
নিজে অথবা ভারপ্রাপ্ত অফিসার অনুরূপ তল্লাশি দ্বারা প্রাপ্ত জুয়া খেলার যেকোনো সামগ্রী আটক করিতে পারিবেন ।
ধারা -৬ (সন্দেহজনক গৃহে তাস ইত্যাদি পাওয়া গেলে তদ্বারা প্রমাণিত হইবে যে উক্ত গৃহ সাধারণ জুয়ার আখড়া)
যখন তল্লাশিকৃত কোনো গৃহে, তাঁবুতে, কক্ষে, প্রাঙ্গণে বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে কোনো তাস, পাশা, খেলার টেবিল, বোর্ড বা অন্যান্য জুয়ার সামগ্রী পাওয়া যাবে অথবা তল্লাশির সময় আটককৃত ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশি করে অনুরূপ কোনো সামগ্রী পাওয়া যাইবে তখন বিপরীত প্রমাণিত না হইলে উক্ত সামগ্রীই প্রমাণ করবে যে, সংশ্লিষ্ট গৃহ, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থান জুয়ার আখড়া হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং ম্যাজিস্ট্রেট বা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার স্বচক্ষে খেলিতে না দেখিলেও তল্লাশিকালে উক্ত স্থানে যাহারা উপস্থিত ছিল তাহারা সকলেই জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থান করিতেছিল বলিয়া গণ্য হইবে ।
ধারা -৭ ( মিথ্যা নাম বা ঠিকানা প্রদানের দণ্ড )
এই আইনের অধীনে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার কোনো সাধারণ জুয়ার আখড়ায় প্রবেশ করে কোনো ব্যক্তিকে উপস্থিত দেখিতে পাইয়া তাহাকে গ্রেফতার করিলে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি স্বীয় নাম-ঠিকানা জানাইতে অস্বীকার করিলে অথবা মিথ্যা নাম বা ঠিকানা প্রদান করিলে অনূর্ধ্ব পাঁচশত টাকা পর্যন্ত জরিমানায় দণ্ডনীয় হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেট সাব্যস্ত করিলে যেকোনো যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ ক্ষতিপূরণও প্রদান করিবে এবং অনুরূপ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি উক্ত জরিমানা বা ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করিলে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সর্বোচ্চ একমাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে ।
ধারা -৮ ক্রীড়া সামগ্রী বিনষ্টকরণঃ
ম্যাজিস্ট্রেট কোনো ব্যক্তিকে সাধারণ জুয়ার আখড়া রক্ষণাবেক্ষণের দায়ে অথবা জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে তথায় উপস্থিত থাকার জন্য দণ্ড প্রদান করিবার পর উক্ত স্থানে প্রাপ্ত যাবতীয় জুয়ার সামগ্রী সংধ্ব করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবেন এবং উক্ত স্থানে প্রাপ্ত যেকোনো অর্থ বা জামানতের টাকা বা অন্যান্য ক্রীড়াসামগ্রী বাজেয়াফত করিবার বা ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রয় করিয়া অর্থ সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দিতে পারিবেন এবং অনুরূপ সংগৃহীত সমুদয় অর্থ বাজেয়াফত হইবে অথবা নিজ বিবেচনায় যথার্থ মনে করিলে উহার যেকোনো অংশ উহার পাওনাদারকে প্রদানের জন্য নির্দেশ দিতে পারিবেন ।
ধারা -৯ ( প্রমাণ অপ্রয়োজনীয় )
সাধারণ জুয়ার আখড়া রক্ষণাবেক্ষণ অথবা উহার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে দণ্ডিত করিবার জন্য উক্ত স্থানে তাহাকে জুয়া খেলারত অবস্থায় দেখিবার প্রয়োজন নাই ।
ধারা -১০ বাতিল ।
ধারা-১১ ( প্রকাশ্য স্থানে পশু-পক্ষীর লড়াই )
কোনো ব্যক্তি কোনো প্রকাশ্য রাস্তায়, বাজারে, মেলায় বা প্রকাশ্য স্থানে কোনো পশুকে বা পক্ষীকে লড়াইতে নিয়োজিত করিলে উক্ত এলাকায় এখতিয়ার প্রাপ্ত যেকোনো পুলিশ অফিসার বিনা-পরোয়ানায় তাহাকে গ্রেফতার করিতে পারিবেন;
অথবা উক্ত স্থানে অনুরূপ পশু বা পক্ষীর প্রকাশ্য লড়াইতে সাহায্যকারী যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিতে পারিবেন ।
অনুরূপ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর অনতিবিলম্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করিতে হইবে এবং সেই ম্যাজিস্ট্রেট কতৃর্ক অনধিক পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত জরিমানায় অথবা অনধিক এক মাস পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে; এবং
অনুরূপ পুলিশ অফিসার প্রকাশ্যে স্থানে উক্তরূপে নিয়োজিত পক্ষী বা পশু বা সরঞ্জাম অথবা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকট প্রাপ্ত উক্ত পক্ষী বা পশু বা সরঞ্জাম আটক করিতে পারিবেন এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে দণ্ডদানের পর ম্যাজিস্ট্রেট অনুরূপ সরঞ্জাম তত্ক্ষণাত্ ধ্বংস করিবার এবং অনুরূপ পশু বা পক্ষী বিক্রয় করিবার নির্দেশ দিতে পারিবেন ।
ধারা -১১-ক ( দৈহিক কসরতের খেলা দেখান যাইবে )
কেবলমাত্র দৈহিক কসরত দেখাবার জন্য কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো খেলা দেখান হইলে তাহার উপর এই আইন প্রযোজ্য হইবে না ।
ধারা -১২ ( অপরাধের বিচারক )
এই আইনের অধীনে কৃত অপরাধের বিচার সংশ্লিষ্ট স্থানে এখতিয়ার রহিয়াছে এইরূপ যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেট করিতে পারিবেন ।
কিন্তু জরিমানার পরিমাণ বা দণ্ডের মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনুরূপ ম্যাজিস্ট্রেটের উপর ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানের দ্বারা সীমাবদ্ধতা আরোপিত হইবে ।
ধারা -১৩ ( পরবর্তী আপরাধের জন্য দায়ী )
কোনো ব্যক্তি এই আইনে একবার দণ্ডিত হইবার পর পুনরায় এই আইনের অধীনে অপরাধ করিলে তজ্জন্য তাহার দণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ হইবেঃ
শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ব্যক্তি অভিযুক্ত হইয়া ছয়শত টাকার অধিক জরিমানায় অথবা এক বত্সরের অধিককালের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে না ।
ধারা -১৪ ( বাতিল ।)
ধারা-১৫ ( দণ্ডবিধির অনুসার সংজ্ঞায়িত ''অপরাধ'' শব্দের ব্যবহার )
এই আইনের দ্বারা দণ্ডনীয় যেকোনো কাজ দণ্ডবিধির অর্থের অধীনে 'অপরাধ' বলিয়া গণ্য হইবে ।
ধারা-১৬ ( বাতিল )
ধারা-১৭( বাতিল )

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com