Breaking News

আমার পুতুল বউ । পর্ব - ০৩



রাতে ঘুমাচ্ছিলাম একদিন। রাত প্রায় একটা বাজে। হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কিন্তু কে কাঁদছে বুঝে উঠতে পারছিনা। আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। শব্দ টা ছোট মায়ের ঘর থেকে আসছে৷ এত রাতে কে কাঁদছে দরজা খোলা আর বাতি ও চালু আছে। গিয়ে দেখি সেখানে মা-বাবাও আছে পুতুলের পাশে বসে। ছোটমা পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কাঁদছে। আর মা পুতুলের মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে কি পুতুলের কিছু হয়েছে? আমি দৌড়ে পুতুলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। বেশ উত্তেজিত কণ্ঠেই প্রশ্ন ছুড়লাম,,,

ছোটমা কি হয়েছে পুতুলের আর তুমি কাঁদছো কেন?
ছোটমা কিছু বলার আগেই চাচ্চু বলল,,,
তেমন কিছু না একটু জ্বর এসেছে শুধু।
কথাটা শুনে আমার কেমন যেন খারাপ লাগলো। এখনকার জ্বর মোটেও সুবিধার নয়। 
যেই মেয়েটা সারাদিন পুরো বাড়ি ছুটে বেড়ায় 
এখন সেই মেয়েটাই কিনা নিস্তব্ধ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে! এটা কি আদৌও মানানসই?
আমি আমার পুতুল বউয়ের মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর প্রচুর। প্রচন্ড রাগ উঠলো আমার। 
এতোটুকু মেয়েকে কি এত কষ্ট রাখা ঠিক হচ্ছে?
মা পুতুল বউয়ের মাথার পানি মুছে দাও।
- কেন?

- আমি পুতুল বউকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো৷
- এত রাতে ডাক্তার কোথায় পাবি দোকান তো বন্ধ।
- দোকান বন্ধ হয়েছে বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব?
আমি আর কাউকে কিছু না বলে একটা তোয়ালে নিয়ে পুতুলের মাথার পানি মুছে দিয়ে ওকে কোলে নিয়ে ছুটতে লাগলাম। পিছন থেকে সবাই অনেক ডাকাডাকি করলো কিন্তু কারো ডাকে সাড়া দিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে বাবা এবং ছোট চাচ্চু আমার পিছু পিছু আসতে লাগলো। এত রাতে পল্লী চিকিৎসকের দোকান বন্ধ তাই বাধ্য হয়ে ছুটতে হলো হাসপাতালে পথে। হাসপাতাল প্রায় এক কিলোমিটার তবুও আমাকে থামা যাবে না। আমাদের বাড়ির প্রাণ পুতুল যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমাদের বাড়িটা নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে। তখন কার সাথে আমরা খেলাধুলা করব আর কাকেই বা এতটা ভালোবাসব?

পিছন থেকে বাবা এবং চাচ্চু বারবার বলছে পুতুলকে আমাদের কোলে দাও 
আমরা নিয়ে যাচ্ছি তুমি নিয়ে যেতে পারবে না এতদূর। কিন্তু আমি কারো কথা শুনছি না।
একটা সময় আমি হাসপাতলে গিয়ে পৌছালাম 
পুতুলকে নিয়ে সোজা একটা ডাক্তারের কেবিনে ঢুকলাম অনুমতি ছাড়াই।
কেবিনে একজন মহিলা ডাক্তার বসেছিল। আমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বলল,,,
এই কে তুমি আর এভাবে একটা মেয়েকে নিয়ে কোথা থেকে এসেছো?
আমি আন্টি টার কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,
আন্টি আমার পুতুল বউকে সুস্থ করে দিন ওর অনেক জ্বর এসেছে।
আমার পিছু পিছু বাবা এসে বলল,,,
মুগ্ধ এভাবে কারো অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করে!
বাবা অনেকটা রেগেই তেড়ে আসতে লাগল আমার দিকে। 
বাড়াবাড়ি ভালো কিন্তু এতটাও বাড়াবাড়ি করা ভালো না। যেটাতে লোকে আমাদের মন্দ বলে।

ডাক্তার আন্টি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলে
- থাক ছেলেটাকে আর কিছু বলবেন না। আমার মতে সে ভুল করেনি। সে হয়তো তার পুতুল বউকে খুব ভালোবাসে তাই কূলকিনারা হারিয়ে ফেলেছে। এই ভালোবাসা টা মেয়েটির জন্য প্রয়োজন।
তারপর ডাক্তার আন্টি পুতুলকে দেখলো। জ্বর মেপে দেখল ১০১° জ্বর।
তারপর ডাক্তার আন্টি ঔষধ লিখে দিল। 
আমরা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিলাম তারপর বাড়িতে আসলাম।
সেই রাতে পুতুল আমার সাথে ঘুমিয়েছিল। 
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। 
সেই দিন আবারও তার মায়ায় পরে গিয়েছিলাম আমি। মেয়েটা বড্ড মায়াবী। 
ওর দুষ্টুমি সবাইকে মুগ্ধ করে দেয়।
এভাবেই কেটে যেতে লাগলো প্রতিটি প্রহর। 
পিচ্চিটার সাথে খুনসুটিময় দিনগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে। 
এভাবে কেটে গেলো একটি বছর। কিন্তু এখনো পিচ্চিটার দুষ্টুমি কমেনি।

একদিন কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম হঠাৎ আমার পুতুল বউটা দৌড়ে আমার কাছে চলে আসলো। এমন আচমকা ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। স্যার তো রেগে আগুন। আমাকে অনেক বকাঝকা করে ক্লাস থেকে বের করে দিল। আমি মন খারাপ করে পিচ্চিটাকে নিয়ে কোচিং এর বাইরে বের হয়ে আসি। একটা খোলা মাঠে নদীর ধারে পিচ্চিটাকে নিয়ে গেলাম। আজ কেন জানি না পিচ্চিটার উপর রাগ করতে পারলাম না পিচ্চিটাকে মারতে পারলাম না। কারণ ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আর কখনো ওকে মারব না। আমি ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর গালে হাত রেখে বলি,,,

- কিরে পুতুল বউ এভাবে কোচিং এর ভেতর দৌড় এসেছিস কেন?
পিচ্ছিটা আমার প্রতিত্তোর না করে ফিক করে হেসে দেয়।
আমি ওর হাসি রহস্যটা বুঝে উঠতে পারলাম না। বেকুবের মতো প্রশ্ন ছুড়লাম,,,
কি হয়েছে এভাবে হাসছিস কেন?
তুমি এখনো দেখোনি?
আশ্চর্য পিচ্চিটা কি দেখার কথা বলছে?
তুই কি দেখার কথা বলছিস?

এবার পিচ্চিটা দাঁত কেলিয়ে দেখালো ওর দুটো দাঁত নেই। 
তারমানে দাঁত পরেছে৷ ওর ফোকলা দাঁতের হাসি টা অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
"মোহনীয় সৌন্দর্যের হাসি তার, দেখলে ভরে মন!
ভালোবেসে এভাবেই তাকে করতে চাই আপন।
(লেখার মধ্যে হুট করে মাথায় আসলো ছন্দটি )
আমি পিচ্চিটাকে রাগানোর জন্য বললাম,,,
কিরে তোর তো দুটো দাঁত নেই! ইঁদুরে নিয়ে গেছে এখন তো আর তোর দাঁত উঠবে না। 
কি করবি তাহলে?
পিচ্চিটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,,,
কে বলেছে তোমাকে আমার দাঁত ইঁদুর নিয়ে গেছে? আমার দাঁত তো আমার কাছেই আছে।
এই বলে পিচ্চিটা তার হাতের মুঠো খুলে আমাকে দেখালো! কি আশ্চর্য ঘটনা। 
দুটো দাঁত নিয়ে এসেছে সে আমাকে দেখানোর জন্য। কেমন শয়তান মেয়ে। 
মানুষ দাঁত ইঁদুরের গর্তে কিংবা ঝোপঝাড়ে ফেলে দেয় 
কিন্তু এই মেয়েটা দাঁত হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবা যায় এগুলা? 
পিচ্চিটা আবার বলতে লাগলো,,,

- তুমি তো বললে আমার দাঁত ইঁদুর নিয়ে গেছে 
কিন্তু আমি ইঁদুরকে আমার দাঁত দেইনি আমার দাঁত আমি আমার কাছেই রেখে দিয়েছি।
আমার অপমান আমাকেই ফিরিয়ে দিলো। তারপর পিচ্চিটাকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। পিচ্চিটা আবদার করল সে নাকি পার্কে যাবে আমিও নিয়ে গেলাম। সে শুধু আমার সাথে ঘুরছে। কিন্তু কিছু খেতে চায় না।
- কিরে কিছু খাবি?
পিচ্চিটা মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দেয়। 
মুখে না বললেও মন কি চায় সেটা আমার ভালোভাবেই জানা আছে। 
সে হয়তো একটু বুঝতে শিখেছে আমার অবস্থাটা, 
সে হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি ইনকাম করি না। তাইতো এখন আর বেশি আবদার করে না।
আমি ওকে একটা আইসক্রিমের দোকানে নিয়ে গিয়ে আইসক্রিম কিনে দিলাম। 
আমার পুতুল বউটা মহানন্দে আইসক্রিম খেতে লাগলো। 
তারপর পিচ্চিটাকে একটা দোলনায় বসিয়ে দোল খাওয়ালাম।

সন্ধ্যালোকে বাড়ির পথে রওনা দেই। সেই দিনের পর থেকে আর কখনো সেই কোচিং সেন্টারে যায়নি।
যে শিক্ষক একটা ছোট্ট শিশুকে ভালোবাসতে জানেনা, স্নেহ করতে জানেনা! 
সেই শিক্ষকের শিক্ষার আমার কোন প্রয়োজন নেই। 
মানুষ মানুষকে ছোট করে এটা কেমন শিক্ষা? শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে হয়না। 
প্রকৃত শিক্ষিত হওয়ার জন্য একজন ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। 
প্রকৃত অর্থে তারাই শিক্ষিত যারা নিজের বিবেকের কাছে নত হয়ে মানুষকে যাচাই করতে জানে।
যে শিক্ষা মানুষকে অহংকারী করে তোলে সে শিক্ষার আমার কোনো প্রয়োজন নেই। 
আমরা প্রতিবাদী হবো কখনও অন্যায়ের কাছে আপস করব না।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com