Breaking News

EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম । পর্ব - ০৫



আজকে পরিক্ষা শেষ হলো। আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবেই পরিক্ষা দিলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে সাফিয়া আর সামিয়া কে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। কারণ পরিক্ষার জন্য বেশ কয়েকদিন থেকে সামিয়া কে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাওয়া হয় নি।
ঘোরাফেরা করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। এইভাবে কেটে গেল প্রায় এক মাস।
বিকেলে রুমে বসে আছি আম্মু এসে বললোঃ বাবা তিশা ( মামাতো বোন) আমাদের এখানে আসতেছে তুই বাস স্ট্যান্ডে যায়ে তিশাকে একটু নিয়ে আয়।

আমিঃ তিশা কখন বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছবে?
আম্মুঃ আমাকে একটু আগে ফোন দিয়ে বললো আর আধাঘণ্টা পর এসে পৌঁছবে।
আমিঃ ঠিক আছে আম্মু যাচ্ছি।
বাইক নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। আমাদের বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ডে বাইক নিয়ে আসতে সাত থেকে আট মিনিট সময় লাগে।
বাস স্ট্যান্ডে এসে বাইক থেকে নামতেই ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করে দেখি সামিয়া ফোন দিয়েছে,,। রিসিভ করতেই সামিয়া বললঃ এই কোথায় আছো তুমি?
আমিঃ আমি তো একটু বাস স্ট্যান্ডে এসেছি।
সামিয়াঃ ওহহ কখন আসবে?
আমিঃ প্রায় আধঘন্টা পর।

সামিয়াঃ ঠিক আছে এসো।
সামিয়ার সাথে কথা বলে ফোনটা পকেটে রাখতেই তিশা যে বাসে আসার কথা ছিল সেটা চলে আসলো। আধা ঘন্টা পরে আসার কথা কিন্তু এখনই আসলো কেনো? যাজ্ঞে এসব ভেবে লাভ নেই।
তিশা বাস থেকে নেমে আমাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললোঃ ভাইয়া কেমন আছিস?
আমিঃ ভালো আছি আপু। তুই কেমন আছিস?
তিশাঃ আমিও ভালো আছি।

এরপরে তিশাকে বাইকে উঠে নিয়ে বাসায় আসার জন্য রওনা দিলাম। 
মাঝ রাস্তায় এসে তিশা একটা ফুচকার দোকান দেখতে পেয়ে আমার কাছে বায়না ধরলো ফুচকা খাবে। আমিও আর না করলাম না। কারণ আমিও তিশাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসি।
বাইক থেকে নেমে দুজনে ফুচকার দোকানে গিয়ে বসলাম। তিশা
আর আমি পাশাপাশি বসলাম। 

ফুচকার দোকানটা রাস্তার পাশে হওয়ায় যে কেউ আমাদেরকে রাস্তা থেকে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাবে। একটু পর ফুচকাওয়ালা মামা এসে এক প্লেট ফুচকা দিয়ে গেলেন।
তবে এক প্লেটেই ডবল প্লেটের ফুচকা ছিলো। আমি তিশাকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছি আর তিশা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর হ্যাঁ ছোট বেলায় যখন তিশা আমাদের বাসায় থাকতো তখন থেকেই তিশা আমার হাতে খাবার তুলে খাইতো। বলতে পারেন আমার হাতে খাবার খাওয়া ছাড়া তিশার পেট ভরে তো না। এই অভ্যাস টা এখনো আছে।
 
হঠাৎ করে কে যেন এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরলো। তাকিয়ে দেখি সামিয়া। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে সামিয়া ঠাসস ঠাসস করে দুইটা চড় মেরে
বললঃ এইটাই তোর বাস স্ট্যান্ড। বাস স্ট্যান্ডের নাম করে তুই এখানে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতেছিস।
আমিঃ সামিয়া আমার কথা টা শুনো?

সামিয়াঃ ঠাসস ঠাসস ,,,,, কি শুনবো হ্যাঁ আমাকে ছেড়ে তুই অন্য মেয়ের সাথে নষ্টিফষ্টি করে বেড়াচ্ছিস। কেন তুই আমার ভালোবাসাকে নিয়ে খেললি,,,,( কান্না করতে করতে)
আমি সামিয়ার হাত ধরে বললামঃ সামিয়া প্লিজ তুমি আমার কথা শুনো।
সামিয়া ওর পা থেকে জুতা খুলে আমার গালে দুইটা মেরে বললোঃ তুই আর কখনো আমার নাম মুখে নিবি না। তোকে ভালোবাসা টাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তোকে ভালো মনে করে তোর সাথে সম্পর্ক করেছিলাম। কিন্তু কি করলি এটা? তুই একটা প্রতারক। তুই কখনো আমার সামনে আসবি না। তোকে দেখে এখন আমার ঘৃণা হয় জাস্ট ঘৃণা।

এই কথা গুলো বলে সামিয়া চলে গেল। তিশা ওকে থামিয়ে কিছু বলতে চাইলে আমি তিশাকে থামিয়ে দিলাম। কারণ এতো দিনে সে আমার ভালোবাসা টাকে বুঝতে পারলো না।
এতোক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়েছে। সবাই আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতেছে। আমি তাদের কাছে হয়ে গেলাম প্লে বয়। কিন্তু কেউ আমার কাছে এসে সত্যিটা জানতে চাইলো না। আমি আর কিছু না বলে দোকানের বিল মিটিয়ে তিশাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে থেকে ভাবতে লাগলাম, কি হয়ে গেলো। সামিয়া একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে এইরকম বিহেভ করবে তা ভাবতেও পারিনি। সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু সে তো বিষয় টা আগে ভালো ভাবে জানবে ।
হঠাৎ তিশা আমার রুমে এসে আমার পাশে বসে বললোঃ ভাইয়া আমার জন্য আজ তোর এমন হলো। প্লিজ তুই আমাকে মাফ করে দে।

আমি তিশাকে বললামঃ আরে পাগলি এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। চল নিচে যাই।
তিশাঃ হুমম চলো।
আর হ্যাঁ তিশা আমার আর সামিয়ার সম্পর্কে সব কিছু জানে। তিশাকে আমি সামিয়ার একটা ছবি দেখিয়েছিলাম। কিন্তু সামিয়া তিশাকে চিনতে না। আর তিশা ছাড়া আমার আর সামিয়ার ব্যপারে আমার পরিবারে কেউ জানে না।
নিচে যায়ে সোফায় বসে সামিয়ার বলা কথা গুলো ভাবতেই আমার ভিতর টা মুচড় দিয়ে উঠলো। আমি আর বসে না থেকে আমার রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে বেডে আধশোয়া হয়ে সামিয়া কে ফোন দিলাম। কি করবো বড্ড ভালোবাসি যে মেয়ে টাকে।
 
একবার ঢুকলো। ঢুকার পর আমার ফোন কেটে দিল।আবার দিলাম। এখন আর ফোন ঢুকতেছে না সুইচ অফ করে রেখেছে। আরো কয়েকবার দিলাম কিন্তু ফলাফল একই। কোনো ভাবে রাত টা কাটিয়ে দিলাম। সকালে ঘুম থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করে দেখলাম সামিয়া ফোন দিয়েছে নাকি। না দেয়নি। সামিয়া কে ফোন দিলাম কিন্তু আবার গতরাতের মতো সুইচ করে রেখেছে।

এর আগেও সামিয়া আমার সাথে কথা না বলে ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিল। তাই আমি আজকে বেশ গুরুত্ব দিলাম না। তারপরেও মনের ভিতর অজানা ভয় বাসা বাঁধতেছে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রুমে এসে আবার শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা বলতেই পারবোনা। সাফিয়ার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সামিয়ার কোনো কল আমার ফোনে আসে নি। আমি আবার সামিয়া কে ফোন দিলাম । কিন্তু আবার সুইচ অফ। আমার মনে সামিয়া কে হারানোর ভয় টা আরো বেড়ে গেল।

আমি ফ্রেশ হয়ে আর দেরি না করে বাইক নিয়ে সামিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সামিয়ার বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই সামিয়ার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন।
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম। আন্টি কেমন আছেন?
আন্টিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ।
আন্টিঃ ভেতরে এসে বাবা।

আন্টির সাথে বাসার ভিতরে ঢুকলাম। আন্টি আমাকে সোফায় বসতে বললেন। আমি সোফায় বসে আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আন্টি সামিয়া কোথায় গিয়েছে?
আন্টিঃ সামিয়া তো ওর কোনো এক ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছে। কেন তোমাকে বলে যায়নি? ( অবাক হয়ে। আর আন্টি জানে আমি আর সামিয়া বেস্ট ফ্রেন্ড।)
আন্টির কথা শুনে আমার দুনিয়া উলোটপালোট হয়ে গেল। এবার বুঝি সত্যিই আমি সামিয়া কে হারিয়ে ফেললাম। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আন্টিকে বললামঃ না আন্টি বলে নি তো। আপনাকে কী বলেছে কোন ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছে?

আন্টিঃ আমাকে তো বলে নি বাবা।
আমিঃ কখন গিয়েছে?
আন্টিঃ আজকে সকালে গিয়েছে।
আমিঃ ওওওও।
আন্টিঃ তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে নাকি? মেয়েটা কালকে তোমার সাথে দেখা করতে যাওয়ার পরে বাসায় এসে কান্না করতে শুরু করেছিলো।
আমিঃ না আন্টি আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি।( সত্যিটা বললাম না)
আন্টিঃ ওও আচ্ছা বাবা লাঞ্চ করো চলো।

আমিঃ না আন্টি বাসায় যায়ে লাঞ্চ করবো।থাকেন।
আন্টিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সামিয়ার বাসা থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম। 
আমার বাসায় এসে কারো সাথে কথা না বলে আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
এইভাবে দুই মাস পার হয়ে গেল। এই কয়দিনে সামিয়ার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। 
এই কয়দিনে আমি কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলিনি।
বন্ধুদের সাথেও তেমন কথা হয়নি। 
প্রতিদিন বিকেল বেলা সেই পার্কে যাই যেখানে প্রথম সামিয়া আমাকে ওয়াদা দিয়েছিলে যে, 
কখনো সে আমাকে ছেড়ে যাবে না। 
বিকাল বেলা শুধু ঐ পার্কেই যাই।
যদি পার্কে যায়ে একবার সামিয়া কে দেখতে পেতাম। 
পার্কে যাওয়া ছাড়া সব সময় নিজেকে নিজের রুমের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখি। 
খাওয়া দাওয়ার প্রতিও একটা অনিহা ভাব চলে এসেছে । 
শরীরের প্রতিও তেমন যত্ন নাই। চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে। 
দাড়ি গোঁফ গুলোই বেশ বড় বড় হয়ে গেছে। 
দাঁড়ি আর গোঁফ গুলো আর কয়েকদিন এভাবে রাখলে হয়তো রবীঠাকুর উপাধি পেতে দেরি হবে না।
 
আজকে বিকালে পার্কে গেলাম। একটা গাছের নিচে বসে আছি। 
হঠাৎ করেই নজর পড়লো পার্কের গেটের দিকে, একটা ছেলে আর মেয়ের উপর। 
হেসে হেসে কথা বলে দুজনে পার্কে ঢুকতেছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হলো সামিয়া। 
আমি দৌড়ে মেয়েটার কাছে গেলাম। যায়ে দেখি হ্যাঁ এটাই আমার সামিয়া। 
আমি সামিয়ার হাত ধরে বললামঃ সামিয়া কোথায় ছিলে এতদিন তুমি। 
জানো তোমাকে ছাড়া আমি কতো কষ্ট পেয়েছি।
সামিয়া আমার হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললোঃ কে আপনি? 
আমি কোথায় ছিলাম না ছিলাম তা আপনি জেনে কি করবেন?
আমি আবার সামিয়ার হাত ধরে বললামঃ প্লিজ সামিয়া আমার কথা শুনো আর ফিরিয়ে এসো।
আমার কথা শুনে সামিয়ার সাথে থাকা ছেলে আমাকে বললোঃ এই ছেলে কে তুমি আর আমার স্ত্রীকে এসব কী বলতেছো?
ছেলেটার কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। 
আমি ছেলেটার শার্টের কলার ধরে বললামঃ সামিয়া শুধু আমার বুঝে,,,
আমাকে আর বলতে না দিয়ে সামিয়া আমার গালে দুইটা চড় মেরে বললোঃ ছোটলোক নর্দমার কীট তোকে আমি বলেছিলাম না যে তুই আমার সামনে আসবি না। 
তারপরেও কেন এসেছিস? লুইচ্চা কোথাকার।
বলেই আবার দুইটা চড় মারলো। সামিয়ার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা ছেলে সামিয়ার কাছে এসে বললোঃ কী হয়েছে আপু?
সামিয়াঃ দেখুন না ভাইয়া এই ছোটলোক লুচ্চা আমার সাথে লুচ্চামি করতে এসেছে। আমার বয়ফ্রেন্ড তাকে বাঁধা দেওয়ায় সে আমার বয়ফ্রেন্ডকে মেরেছে।
আমি চোখের পানি ফেলতেছি আর সামিয়ার কথা গুলো শুনতেছি। হা হা হায় যে সামিয়া এটাই তোর ভালোবাসা আর এটাই তোর ওয়াদা।

ছেলে গুলোর একজনঃ আচ্ছা আপু আপনি যান আমরা একে দেখতেছি।
সামিয়া ওর সাথে থাকা ছেলেকে বললোঃ চলো জানু এসব লুচ্চা, ছোটলোকের কথাই কিছু মনে করো না। আর ভাইয়ারা আপনারা ওর এমন অবস্থা করবেন যাতে সে কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারে না।
এই কথা বলেই সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর সাথে থাকা ছেলে কার হাত ধরে হাঁটা ধরলো।

এদিকে সামিয়ার কথা গুলো শুনে ছেলেগুলো আমাকে ইচ্ছা মতো মারতে লাগলো। সেই দিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ আমি অপলক দৃষ্টিতে সামিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আর আমার ঠোঁটের কোণে ফুটে রয়েছে একটা মুচকি হাসির রেখা।

ছেলেগুলো আমাকে কতক্ষন ধরে পিটিয়েছে তা বলতে পারবো না। কারণ সামিয়ার দেওয়া আঘাতের কাছে এই ছেলেগুলোর দেওয়া আমার কাছে কিছুই নয়।

চোখ খুলে দেখি আমি একটা গাছের নিচে পড়ে আছি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি এই গাছটা এই পার্কের এক পাশে আছে যেখানে সচরাচর কেউ যায় না। আর সন্ধ্যা হওয়ায় তেমন কেউ নেই।
আমি কোনো রকম ভাবে উঠলাম। হাঁটার মতো আর অবস্থা নেই আমার। পকেট থেকে ফোন বের করে রিয়াদ কে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বললাম। মোবাইলের স্ক্রীনটাও ভেঙে গেছে। আর হ্যাঁ রিয়াদের বাসা পার্কের কাছেই।

রিয়াদ আমার কাছে এসে আমার এই অবস্থা দেখে নানান প্রশ্ন করতে লাগলো। 
আমি তাকে একটা কথাই বললাম যে, সময় হলে সবই জানতে পারবি।
রিয়াদের সাথে একটা ক্লিনিকে যায়ে কাটা জায়গায় গুলো ড্রেসিং করলাম। এরপরে কিছু মেডিসিন নিয়ে রিয়াদ কে নিয়ে বাসায় আসলাম। রিয়াদ আমাকে বাসায় নেমে দিয়ে ওর বাসায় চলে গেল।
কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল। আম্মু ড্রেসিং করা অবস্থায় দেখে কান্না শুরু করে দিলো। আম্মু কি করে হয়েছে তা জানতে চাইলে আমি শুধু বললাম এক্সিডেন্ট হয়েছে।
এসে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলাম। 
কান্না করতে করতে কি হয়েছিলো তা আমার আর মনে নেই।

চোখ খুলে দেখি আমার মাথার কাছে আম্মু বসে আছে। সাফিয়া আর তিশা দুইজন আমার দুই পাশে । ডাক্তার আমার চেকআপ করতেছে আর আব্বু ডাক্তারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। 
ভালো ভাবে রুমটা পর্যবেক্ষণ করে দেখি এটা হাসপাতালের রুম।
আমাকে চোখ খুলতে দেখে আম্মু আমার কপালে চুমু দিয়ে বললোঃ তোর জ্ঞান ফিরেছে বাবা।
আমি আস্তে আস্তে বললামঃ হ্যাঁ আম্মু। কিন্তু কি হয়েছিলো আমার?
আমার কথা শুনে ডাক্তার বললোঃ তোমার কি হয়েছে তা আমি বলতেছি,, আজ থেকে তিন দিন যাবৎ তুমি জ্ঞান হারিয়ে ছিলো।

ডাক্তারের কথা শুনে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করলামঃ কি হয়েছিলো আমার?
ডাক্তারঃ অতিরিক্ত চিন্তা এবং না খেয়ে থাকার জন্য তোমার শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সেদিন এক্সিডেন্ট হওয়ার ফলে তোমার শরীরটা আরো দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলো। আর আজকে জ্ঞান ফিরে।

আমিঃ ওহহ।
কয়েক দিন পর আমাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।
রুমে বসে থাকতেই তিশা আমার রুমে এসে আমার পাশে বসলো। বসে আমাকে। 
জিজ্ঞাসা করলোঃ ভাইয়া তোর কি হয়েছিলো সত্যি করে বলবি।
এরপরে আমি তিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে সেদিন পার্কে সামিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু বললাম।
তিশা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ ভাইয়া সে যদি তোকে ছাড়া ভালো থাকে তাহলে তুই কেনো তাকে ছেড়ে ভালোভাবে থাকতে পারবি না।

আমিঃ বড্ড বেশিই ভালোবাসি যে তাকে।
তিশাঃ তাহলে। আমি তাকে সব সত্যিটা বলে দেয়।
আমিঃ সে যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভালো থাকে তাহলে অযথা আমি কেন তার পথের কাঁটা হতে যাবো।
তিশাঃ তাহলে তার কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো কেন?
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললামঃ কি আমি কষ্ট পাচ্ছি? আমিতো ঠিক আছি।
তিশাঃ হুঁ,,,,চলো ডিনার করবে?
আমিঃ চল।

ডিনার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
সামিয়ার কথা মনে পড়তেছে। সে কি করে পারলো এমনটা করতে। সে যদি আমাকে একটা বার জিজ্ঞাসা করতো বা জানতে চাইতো মেয়েটাকে তাহলেই তো আমি বলে দিতাম। কিন্তু না সে তা করলো। সে আমাকে ছাড়া অন্য জনকে বেছে নিলো।এটাই ছিলো তার ওয়াদা।এটাই ছিল তার বিশ্বাস। বেশ আমাকে ছাড়া যদি সে অন্যকে নিয়ে ভালো থাকতে পারে তাহলে আমি কেন তাদের মধ্যে শুধু শুধু দেয়াল হতে যাবো। হয়তোবা তাকে ভুলতে আমার কষ্ট হবে। কিন্তু ভুলতে তো হবে আমায়। এই শহরে থাকলে হয়তো তার মায়ায় আরো বেশি জড়িয়ে পড়বো। চলে যাবো এই শহর ছেড়ে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার সময় আমি আব্বু বললামঃ আব্বু আমি এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছি।

আমার কথা শুনে আব্বু কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ কেন?
আমিঃ আসলে আব্বু আমি বাইরে থেকে লেখাপড়া করতে চাচ্ছি। আর এখন থেকেই তো ভর্তির প্রিপারেশন নিয়ে হবে।
আব্বুঃ ঠিক আছে। কিন্তু কোথায় যাবে?
তিশা আমার কথার মর্ম বুঝতে পারে আব্বুকে বললোঃ আংকেল ভাইয়া যখন বাইরে থেকেই লেখাপড়া করতে চাচ্ছে তাহলে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে ভার্সিটিতে ক্লাস করবে আর আমাদের বাসায় থাকবে।

আব্বুঃ ঠিক আছে।
আম্মুঃ আমার ছেলেকে আমি কোথায় যাইতে দিবো না।
আমিঃ আম্মু বোঝার চেষ্টা করো।
এরপরে আমি আর তিশা অনেক বুঝানোর পরে আম্মু আমাকে মামার বাসায় পাঠাতে রাজি হয়। 
এর কয়েক দিন পর আমি চলে আসলাম আমার চিরচেনা শহর ছেড়ে রাজশাহী ব্যস্ত নগরীতে। 
আসার সময় আম্মু আব্বু আর সাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কেঁদেছিলাম। 
কেননা, কোনো দিন তাদেরকে ছেড়ে কোথায় থাকি না। 
আর আজ রাজশাহীতে যাচ্ছি জানি না কত দিন পর আবার নিজের শহরে যাবো।
রাজশাহী আসার কিছুদিন পরেই ভার্সিটিতে এডমিশন দিলাম। 
আল্লাহর রহমতে টিকেও গেলাম।এরপর শুরু হলো আমার জীবনের নতুন অধ্যায়। 
যেখানে নেই মা, বাবা, বোনের সেই আদর স্নেহ ভালবাসা আর যেখানে নেই আমার ভালোবাসার মানুষটির কোনো অস্তিত্ব। দেখতে দেখতে কাটিয়ে গেল তিন বছর। 
এই তিন বছরে একবারও আমি নওগাঁয় যাইনি। 
মা বাবা আর সাফিয়া রাজশাহীতে এসে আমাকে দেখে যাতেন। 
বন্ধুদের সাথেও মাঝে মাঝে কথা হতো। ওদের কাছ থেকে সামিয়ার খবর নিতাম। 
কী করবো মনটা যে বড্ড বেইমান। সামিয়ার এখনো বিয়ে হয়নি। 
কোথায় যেন জব করে।
হঠাৎ কারো ডাকে বর্তমানে ফিরে আসলাম।

বর্তমান
পিছনে তাকিয়ে দেখি তিশা দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললামঃ কীরে কিছু বলবি।
তিশা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ আমাকে মাফ করে দিস ভাইয়া। সেদিন যদি আমি তোর হাতে ফুচকা না খেতাম। তাহলে আজকে তোকে তোর ভালোবাসার মানুষ ভুল বুঝতো না।
তিশা কথা গুলো বলতে বলতে আমার চোখের পানি মুছে দিলো। অতীত ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোণায় পানি এসেছে বলতেই পারবো না।

তিশাও কান্না করতেছে আমিও তিশার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ আরে পাগলি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমার প্রতি তার ভালোবাসার চেয়ে সন্দেহ টাই বেশি ছিলো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সে আমার ভাগ্যে ছিলো না। এসব বাদ দে। নিচে চল।
তিশাকে ওর রুমে দিয়ে আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি রাত একটা বাজে। কখন যে এত রাত হয়েছে বলতেই পারবো না।

সকালে মামির ডাকে ঘুম ভাঙলো। 
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে মামিকে বলে কলেজে গেলাম। 
কলেজে যায়ে দেখি একটা ছেলে একটা মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেছে। 
ছেলেটাকে আমি চিনি অবশ্য। অন্য ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাম সিহাব। 
বাবা প্রভাবশালী হওয়ায় সে একটু ক্ষমতার বড়াই দেখায়। আর মেয়েটা হলো ফার্স্ট ইয়ারে। 
মেয়েটাকে অশ্লীল কথাবার্তা বলায় মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড সিহাবকে 
চড় মারতেই সিহাবের বন্ধুরা এসে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে মারতে লাগলো। 
সিহাবের একটা বন্ধু মেয়েটির বয়ফ্রেন্ডকে এমনভাবে মেরেছে যে তার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।

এটা দেখে আমার শরীরের ভিতরের অন্যায়ের প্রতিবাদকারি রক্ত গুলো গরম হতে লাগলো। 
আমি রাফি আর সিফাত কে নিয়ে ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। 
আর আমাদের একটা সংগঠন আছে যারা অন্যায়ের মোকাবেলা করতে সর্বদা নিয়োজিত। 
আর এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমি এবং আমার বন্ধুরা । বন্ধুরাও ওদেরকে মারতেছে।
একটু পরেও কলেজে পুলিশের গাড়ি ঢুকলো। গাড়িটা আমাদের কাছে এসে থামলো। 
আর গাড়ি থেকে কিছু পুলিশ বের হয়ে এসে আমাকে 
আর আর বন্ধুদের মানে যারা মারা মারি করেছে তাদেরকে গাড়িতে তুললো। 
আমিও কিছু বললাম না। কারণ, এদেরকে কিছু বলে কোনো লাভ নেই। 
এরা অর্ডার প্রাপ্ত। আমি বন্ধুদের কে চুপ থাকতে বললাম ‌।

একটু পরে আমাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।
গাড়ি থেকে নামিয়ে আমাদেরকে একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
কিছুক্ষণ পরে সামিয়া রুমে প্রবেশ করলো আর হাতে একটা লাঠি।
সোজা আমার কাছে এসে বলতে লাগলোঃ মাস্তান হয়ে গেছিস না।
দাঁড়া আজ তোর মাস্তানি বের করতেছি।
বলেই যেমনি লাঠি দিয়ে আমাকে মারতে যাবে।
তাখনই আমি সামিয়ার লাঠি এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে
সামিয়ার গালে ঠাসস ঠাসস করে চড় দিয়ে বলতে লাগলাম...


চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com