Breaking News

জয়া ও আদিত্য এর রোমান্টিক প্রেমের গল্প। পর্ব - ৫০



আদিত্য আর জয়ার কথাগুলো মিসেস মেহরাব শুনে ফেললেন,,,
তাই তিনি জয়াকে একান্তে ডেকে নিয়ে বললেন-তুই ফুড ট্রাকের ব্যবসা কি আমাদের জন্য শুরু করেছিস...???
নাকি তোর মনে অন্যকিছু আছে...???
জয়া-এসব তুমি কি বলছো বড় মামি...???
মিসেস মেহরাব-তাহলে তুই কেনো এই ফুড ট্রাক,,,
আদিত্যর রেস্টুরেন্টের সামনে নিয়ে যেতে চাইছিস...???
জয়া-ইয়ে...মানে...
মিসেস মেহরাব-কি মানে মানে করছিস...???
তুই কি ভুলে গিয়েছিস যে,,,
আদিত্য তোর সাথে ঠিক কি কি করে ছিলো...???
নাকি তুই আবারও আদিত্যর কাছে ফিরে যেতে চাইছিস...???
আর তার জন্যই এসব করছিস তুই...???
জয়া-না বড় মামি,,,
তুমি ভুল ভাবছো,,,
এসব কিছুই নয়...

তুমি তো জানোই,আদিত্য বারবার একেকটা কাহিনী করে,,,
ওর যা মন চায়,ও তাই করে...
মিসেস মেহরাব-আদিত্য যা ইচ্ছে তাই করুক,,,
তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না...
কিন্তু তুই কেনো ওর সামনে এই ফুড ট্রাক নিয়ে যেতে চাইছিস...???
জয়া-আমরা যদি অন্য কোনো জায়গায়ও,,,
এই ফুড ট্রাক নিয়ে যাই...
তবুও আদিত্য সেখানে গিয়েও ঝামেলা শুরু করবে...
এইজন্যই আমি এই ফুড ট্রাক,,,
আদিত্যর রেস্টুরেন্টের সামনে নিয়ে যেতে চাই...
যাতে ও আর নতুন করে,কোনো কিছু না করতে পারে...
মিসেস মেহরাব-দেখ,,,
একবার না বুঝে ভুল করা এক কথা,,,
কিন্তু বারবার জেনে-শুনে একই কাজ করাটা,,,
ভুল নয়,অপরাধ সেটা...
আদিত্যর মতো ছেলেকেও বারবার বিশ্বাস করাটা,,,
তোর ভুল নয়,অপরাধ হবে কিন্তু...
জয়া-তুমি এতো চিন্তা করো না,,,
আমি সব দিকে খেয়াল রাখবো...
মিসেস মেহরাব চলে গেলেন,,,

পরেরদিন...
জয়া তার ফুড ট্রাক নিয়ে আদিত্যর রেস্টুরেন্টের ঠিক অপজিটে সামনেই রাখলো,,,
প্রচুর কেনাবেচা হচ্ছে জয়ার...
কাস্টমারও প্রচুর আসছে,,,
কিন্তু আদিত্য দেখলো তার রেস্টুরেন্ট "হোটেল প্যারাডাইসের" কাস্টমার কমে গেছে...
উল্টো আদিত্যর সব কাস্টমার,,,
জয়ার ফুড ট্রাকের দিকে যাচ্ছে বেশি করে,,,
সারাদিন জয়া পরিবারের সবার সাথে ফুড ট্রাক নিয়ে ব্যস্ত ছিলো,,,
তাই আদিত্য,জয়ার সাথে কথা বলার কোনো সুযোগই পেলো না...
সন্ধ্যায় জয়া আর তার পরিবার বাড়িতে ফিরে গেলো,,,
আদিত্যও তার রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়িতে চলে গেলো......
রাতে বাড়ি ফিরে এসে খুশির সাথে জয়া ঘুমাতে গেলো...
কিন্তু হঠাৎ করে জয়ার ফোনটা বেজে উঠলো,,,
জয়া দেখলো,আদিত্য ফোন করেছে...
জয়া বারবার ফোন কেটে দিলো,,,
কিন্তু আদিত্য বারবার জয়াকে কল করতে লাগলো...
জয়া না পেরে তাই ফোন রিসিভ করে বললো-এত রাতে বারবার ফোন দিচ্ছো কেনো

কি হয়েছে...
আদিত্য-বাইরে আসো কথা আছে...
জয়া-কিইইইহ...???
রাত ১০টা বাজে এখন,,,
এত রাতে আমি বাইরে আসতে পারবো না...
আদিত্য-ঠিকাছে,,,
তুমি না আসলে,,,
আমিই তাহলে দেয়াল টপকে,,,
তোমার বাড়িতে ঢুকে চলে আসছি...
জয়া ভয় পেয়ে বললো-না,না,,,
তোমার এখানে আসতে হবে না...
আমি নিজেই আসছি,,,
তুমি এখন কোথায় আছো বলো...???
আদিত্য-তোমার বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছি আমি...
জয়া ফোনটা কেটে বললো-ও আল্লাহ,,,

এই ছেলেটা তো আমাকে পুরো পাগল বানিয়ে ফেলবে,,,
রাত ১০টা বাজে আসছে দেখা করতে ধ্যাত...!!!
জয়া চুপিচুপি বাড়ির বাইরে আদিত্যর সাথে দেখা করতে এসে বললো-কি হয়েছে...???
এত রাতে তুমি কেনো এখানে এসেছো...???
আদিত্য-তুমি তো সারাদিন তোমার ফুড ট্রাক নিয়ে বিজি থাকো,,,
আর তোমার ফ্যামিলি তো সারাদিন তোমার আশেপাশেই বডিগার্ড হয়ে থাকে,,,
তাই আমাকে তোমার সাথে কথা বলার জন্য,,,
এতো রাতেই এখানে আসতে হলো...
জয়া-যা বলার তারাতারি বলে ফেলো,,,
আমাকে যেতে হবে...

আদিত্য-দুনিয়াতে এত জায়গা থাকতে,,,
তুমি কেনো আমার রেস্টুরেন্টের সামনে এই ফুড ট্রাকের বিজনেস খুলেছো...???
আমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে চাও তাইনা...???
জয়া-তোমার মত বড়লোকদের সাথে,,,
আমাদের মত গরীব লোকদের কি প্রতিযোগিতা করলে মানায় বলো...???
আর এই ফুড ট্রাক,এটা শুধু বিজনেস না,,,
এটা আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন...
আদিত্য-তোমার এই ফুড ট্রাকের জন্য,,,
আমার রেস্টুরেন্টে কাস্টমার কমে গেছে...
তাই এটা বন্ধ করে দাও,,,
বা এটা নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও...
জয়া-কক্ষনো না,,,
আমি এখানেই এটা,তোমার চোখের সামনেই রাখবো ব্যস...
আদিত্য-সারাদিনে কত টাকা পাও এই ফুড ট্রাক থেকে...???
১০ হাজার...???
২০ হাজার...???

সারাজীবন এটা চালালেও না,,,
আমার রেস্টুরেন্টের সমকক্ষ তোমাদের এই ফুড ট্রাক হতে পারবে না...
জয়া-সব সময় এত বড় বড় কথা বলার,,,
এত গর্ব নিয়ে,এত অহংকার করে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই...
আর যেই রেস্টুরেন্ট নিয়ে তুমি এত অহংকার করে কথা বলছো,,,
ভুলে যেওনা যে,সেই রেস্টুরেন্টের প্রায় সব মেন্যুই,,,
আমার মায়ের রেসিপি বই থেকেই তোমার চুরি করা...
আদিত্য জয়াকে দুই হাত ধরে টেনে কাছে এনে বললো-এই এক কথা বারবার বলার কোনো দরকার নেই,,,
তোমার মায়ের রেসিপি চুরি করার জন্য,,,
আমি তোমাকে তার দাম দিতে চেয়ে ছিলাম...
কিন্তু তুমি নাওনি,সেটা তোমার প্রব্লেম,,,
আমার প্রব্লেম না...

এদিকে মিসেস কবিতা আর তার ছেলে আরমান,,,
জয়া আর আদিত্যকে এত রাতে একসাথে এইভাবে দেখে নিলো...
আরমান নিজের ফোন থেকে আদিত্য আর জয়ার কিছু ছবি তুলে নিলো,,,
জয়া,আদিত্যকে বললো-আপনার ধমকে সত্যি কখনো মিথ্যে হয়ে যাবে না,,,
দয়া করে আপনি এখন বাড়ি চলে যান...
জয়া এটা বলে দৌড়ে নিজের বাড়িতে চলে এলো...
পরেরদিন,,,
মিসেস মেহরাব খুশিকে নিয়ে মহল্লার বাজারে বাজার করতে এলেন...
মিসেস কবিতা আর ওনার ছেলে আরমান,সাথে মিলনও মহল্লার বাজারে এলো,,,
এই সুযোগে মিসেস মেহরাবকে শুনিয়ে শুনিয়ে আরমান,মিলনকে বললো-আর বলিস না মিলন,,,
জয়ার মত মেয়েকে বিয়ে না করে,,,
আমি বড় বাঁচা বেঁচে গেছি...

মিলন-কেনো রে কি হইছে...???
আরমান-আরেহ জয়ার তো চরিত্র খারাপ,,,
কাল রাতে দেখলাম,,,
ওই আদিত্যর সাথে আমাদের মহল্লার ভেতরেই,,,
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোমান্স করছে...
মিলন-না জানি আদিত্যর মত আরো কত বড়লোকদের ফাঁসিয়েছে এই জয়া...
আরমান-তার জন্যেই তো ওদের দোকানটা ভেঙে যাবার পরও,,,
নতুন ব্যবসা শুরু করেছে আবার...
মিলন-শুধু কি এই ব্যবসাই চলে..

নাকি আদিত্যর সাথে অন্য কোনো ব্যবসাও চলে হা হা হা...
কথাগুলো শুনে মিসেস মেহরাব গিয়ে ঠাস ঠাস করে আরমান আর মিলনকে দুটো থাপ্পর মারলেন,,,
মিসেস কবিতা রেগে গিয়ে বললো-এইইই আপনি ওদের মারলেন কেনো এইভাবে...???
মিসেস মেহরাব-খবরদার,,,
জয়ার নামে আর একটা বাজে কথা বললে,,,
এরপরে জুতাপেটা করবো ওদের...
মিসেস কবিতা-চুপ করুন,,,
ওরা ভুল কি বলেছে হে...???
আপনাদের ভাগ্নি রাত-বিরাতে আমাদের মহল্লায়,,,
ওই আদিত্যর সাথে ঢলাঢলি করতে পারবে,,,
আর ওরা সেটা বলতেও পারবে না...???
মিসেস মেহরাব-কি প্রমাণ আছে যে,,,

জয়া কাল রাতে আদিত্যর সাথে মহল্লায় দাঁড়িয়ে কথা বলেছে...???
আরমান-জানতাম,,,
আপনি এটাই বলবেন,,,
তাই তো প্রমাণ হিসাবে ছবি তুলে রেখেছি মোবাইলে,,,
এই দেখুন আপনাদের ভাগ্নির কৃর্তি...
আরমানের মোবাইলে মিসেস মেহরাব আর খুশি,,,
আদিত্য আর জয়ার কাল রাতের তোলা ছবিগুলো দেখলো...
এসব দেখে বাজার না করেই,,,
মিসেস মেহরাব খুশিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলেন...
কাউকে এ ব্যাপারে কিছু না বলে,,,
মিসেস মেহরাব নিজের ঘরে চলে এলেন,,,
কিছুক্ষণ পর,,,

ফুড ট্রাক খোলার জন্য বাড়ির সবাই বের হবে,,,
জয়াও বের হওয়ার জন্য এলো...
মিসেস মেহরাব তার স্বামীকে ডেকে বললেন-শোনো...???
আজ তুমি,খুশির বাবা আর জয়া বাড়িতে থাকো,,,
বাকি সবাই ফুড ট্রাক খোলার জন্য চলে যাক...
মিষ্টার সোরাব-কেনো ভাবি...???
কি হয়েছে...???
আমরা আজ বাড়িতে থাকবো কেনো...???
আর জয়া ফুড ট্রাক ওটার প্রধান রাধুনি,,,
ও না গেলে ওখানে,কি করে চলবে...???
মিসেস মেহরাব-আমি জয়ার বিয়ে দিতে চাই,,,
আজ জয়াকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ,,,
এজন্যই তোমাদের বাড়িতে থাকতে বলছি...
এটা শুনে জয়া সহ সবাই চমকে উঠলো,,,

মিষ্টার মেহরাব-কদিন আগেই জয়ার জীবনে এত বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো,,,
আমাদের দোকানও ভেঙে গেছে,,,
দুদিন হলো,সবেমাত্র ফুড ট্রাক এটা খুলেছি,,,
আর তুমি এখনই আবার জয়ার জন্য সমন্ধ দেখছো...???
মিষ্টার সোরাব-ভাবি...???
মেয়েটাকে কটা দিন সময় দাও নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য...???
মিসেস মেহরাব-আমি জানতাম,,,
তোমরা সবাই এগুলোই বলবে,,,
কিন্তু এটাও জেনে রাখো তোমরা,,,
আমি জয়ার ভালো চাই...
আর এজন্যই আমি এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি,,,
দয়া করে তোমরা আর বাঁধা দিও না...
জয়া কেঁদে বললো-বড় মামি...???
আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না,,,

আমি এখন ফুড ট্রাক ওটার দিকেই মনোনিবেশ করতে চাই...
মিসেস মেহরাব-খুশি...???
তুই সিহাব আর বাকিদের নিয়ে ফুড ট্রাকের ওখানে চলে যা...
আর জয়া...???
তুই ঘরে আয় আমার সাথে,,,
খুশি,সিহাব,নীলা আর মিসেস খুশবু ফুড ট্রাক খুলতে চলে গেলো...
এদিকে জয়াকে নিয়ে মিসেস মেহরাব ঘরের ভেতর এসে বললেন-জয়া...???
তোর কি মনেহয় আমরা তোর খারাপ চাই...???
জয়া-না বড় মামি,,,
আমি এ কথা বলিনি কখনো,,,
আমি শুধু বলতে চেয়েছি এটাই যে...

মিসেস মেহরাব,জয়ার হাত নিজের মাথায় দিয়ে বললেন-কোনো প্রশ্ন না,,,
আমার মাথায় হাত রেখে বল,,,
আমি যা বলবো,তুই তাই করবি...???
জয়া-কিন্তু বড় মামি...???
মিসেস মেহরাব-আমি জানি তুই কি বলবি,,,
তুই ওই আদিত্যর কথাই বলবি তাইতো...???
কিন্তু ওই আদিত্য তো তোকে ছেড়েই দিয়েছে,,,
ভুলে গেছিস যে ও তোকে বিয়ের আসরে একা ফেলে চলে গিয়ে ছিলো...???
দেখ জয়া,,,
আদিত্য একটা ছেলে মানুষ,,,
আর ও বড়লোক,,,
তাই ও যা ইচ্ছা সেটাই করতে পারে...
কিন্তু আমরা গরীব আর তুই একটা মেয়ে,,,
সমাজে আমাদের একটা মান-সম্মান আছে,,,

আর এই মান-সম্মান টুকুও যদি চলে যায়,,,
তাহলে আমাদের মরা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না...
প্রতিদিন নতুন নতুন তামাশা করা ছাড়া,,,
ওই আদিত্য আর তোকে নিয়ে কিছুই করবে না...
আমরা তো চেয়ে ছিলাম আদিত্যর সাথে তোর বিয়েটা দিতে,,,
কিন্তু আদিত্য তো তোকে বিয়ে করবে না বলেই,,,
বিয়ের আসর থেকে ওইদিন ওইভাবে পালিয়ে গিয়ে ছিলো...
আর এখনও ও যা করছে,,,
সবটাই ওর একটা নতুন চাল,,,
কদিন পরেই ও গিরগিটির মত নিজের রঙ পালটে ফেলবে,,,
তুই ওকে বিশ্বাস করে ঠকিস না মা...
তাই আমি বলি কি,,,

তুই আদিত্যর সাথে যা হয়েছে,,,
সবকিছু ভুলে যা,,,
আর আমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে,নতুন করে জীবনটাকে সাজা...
এতে তোরও ভালো,আর আমাদেরও ভালো হবে...
কথাগুলো বলে মিসেস মেহরাব চলে গেলেন,,,
জয়ার চোখের সামনে বিয়ের দিন যা যা ঘটেছিলো,,,
সবকিছু ভেসে উঠলো...
জয়া বসে বসে অনেকক্ষণ কাঁদলো আর ভাবলো যে,,,
তার মামি আদিত্যকে নিয়ে যা যা বলেছেন,,,
তা সবটাই ঠিক বলেছেন...

এদিকে রেস্টুরেন্ট থেকে আজ আদিত্য,,,
অনেকক্ষণ খেয়াল করেও ফুড ট্রাকে জয়াকে দেখতে পেলো না,,,
তাই আদিত্য রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে এসে ফুড ট্রাকের কাছে এলো...
তারপর খুশিকে বললো-কি তোমার বোন আজ আসেনি...???
দুদিনেই এত লেট করে আসা শুরু করেছে...???
ব্যবসা চলবে কিভাবে...???
খুশি আদিত্যকে সব বলতে যাচ্ছিলো,,,
কিন্তু মিসেস খুশবু ইশারায় বলতে মানা করলেন...
জয়াকে না দেখতে পেয়ে,,,
আদিত্যর মনটা আজ কেমন যেনো খচখচ করছে,,,
তাই আদিত্য জয়াকে কয়েকবার ফোন করলো,,,
কিন্তু জয়া,আদিত্যর কল রিসিভ করলো না...
এদিকে একটু পরেই ছেলে পক্ষ জয়াকে দেখতে এলো,,,
মিসেস মেহরাব জয়াকে সাজিয়ে নিয়ে এলেন...
জয়াকে দেখে ছেলে আর তার মায়ের খুব পছন্দ হলো,,,
ছেলের নাম মনির,,,

মনির জয়াকে অনেক প্রশ্ন করলো...
কিন্তু জয়া চুপচাপ বসে রইলো,,,
কোনো কথারই তেমন উত্তর দিলো না...
মনির-টিভিতে তোমাকে অনেকবার দেখেছি,,,
তুমার ফুড ট্রাকের ব্যবসা সম্পর্কেও শুনেছি আমি...
বিয়ের পর আমার আর চাকরি করতে হবে না,কি বলো...???
হা..হা...হা..
জয়া কিছুই উত্তরে বললো না...
মিসেস মেহরাব কথা ঘুরানোর জন্য বললেন-জয়া আমাদের লাজুক স্বভাবের মেয়ে,,,
একটু কম কথা বলে ও...
মনিরের মা বললো-এক কাজ করুক,,,
ওরা দুজন মিলে কফি খেতে যাক,,,
কফিও খাওয়া হবে,,,

আর দুজন দুজনকে চেনা-জানাও হবে...
কি বলেন...???
মিসেস মেহরাব-হে ঠিকই বলেছেন,,,
জয়া...???
তুই যা ওর সাথে একটু ঘুরে আয়...
মনিরের গাড়ি চড়ে জয়া কফি খেতে বেড়িয়ে পরলো...
কিন্তু পথে মনির জয়ার ফুড ট্রাক দেখতে চায় বলে,,,
জয়ার ফুড ট্রাকের সামনে গেলো...
মনির গাড়িটা পার্ক করতে গিয়ে,,,

হঠাৎ করে আদিত্যর গাড়ির সাথে ধাক্কা মারলো,,,
আদিত্য ছুটে এসে দূর থেকে বললো-ওই কার এত বড় সাহস যে,আমার গাড়িতে ধাক্কা মারে...???
মনির গাড়িটা থামালো,,,
তারপর জয়াকে বললো-আমি শুনে ছিলাম তোমার আগে একটা বয়ফ্রেন্ড ছিলো,,,
এই আদিত্যই তাহলে তোমার সেই বয়ফ্রেন্ড তাইনা...???
তোমার সাথে ওর এখনো কোনো রিলেশন আছে নাকি...???
জয়া-না না কিচ্ছু নেই...

আদিত্য এসে,গাড়ির ভেতর থেকে মনিরকে টেনে বের করলো,,,
তারপর আদিত্য,মনিরের কলার চেপে ধরে মারার জন্য হাত উঠালো...
জয়ার পরিবারের সবাই এসে আদিত্যকে থামিয়ে দিলো,,,
আদিত্য তারপর জিজ্ঞেস করলো জয়াকে-কে এই ছেলে...???
কি হয় ও তোমাদের...???
মনির-আরেহ আমি ওনাদের জামাই হই,,,
আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে...
কথাটা শুনে আদিত্য চমকে উঠলো,,,

মনির,জয়াকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলো...
কফিশপে গাড়িটা থামিয়ে,মনির আর জয়া গাড়ি থেকে নামলো,,,
কিন্তু মনিরের একটা ফোন আসায়,,,
সে কথা বলতে বলতে একটু দূরে চলে গেলো...
এদিকে আদিত্যও মনিরের গাড়িটা ফলো করতে করতে,,,
সেই কফিশপে এসে পরলো,,,
আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে,,,
জয়ার হাত ধরে টেনে নিজের গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসালো...
জয়া-কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে...???
তারপর আদিত্য গাড়ি ফুল স্পিডে চালাতে লাগলো,,,
জয়া ভয় পেয়ে বললো-কি হচ্ছে এসব...???
আস্তে চালাও,,,

গাড়ি এক্সিডেন্ট করবে তো...
কিন্তু আদিত্য কোনো কথাই শুনলো না,,,
সে আরও স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো...
হঠাৎ করে আদিত্যর গাড়ির সামনে একটা ট্রাক এসে পরলো,,,
আদিত্য তারাতারি করে ব্রেক করে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিলো...
অল্পের জন্য আদিত্যর গাড়িটা এক্সিডেন্ট করা থেকে বেঁচে গেলো,,,
আদিত্য গাড়িটা থামিয়ে দিলো...
জয়া গাড়ি থেকে আদিত্যকে টেনে নামিয়ে বললো-তুমি কি পাগল হয়ে গেছো...???
যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো...???
আদিত্য রাগী ভাবে বললো-আর তুমি কি শুরু করেছো হে...???
আমার সাথে কদিন মিথ্যে প্রেমের,মিথ্যে বিয়ের নাটক করে,,,
এখন আবার আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছো...???
এক মাসও হয়নি আমার হাত ছেড়ে দিয়েছো,,,

এখনই আবার অন্য ছেলেদের সাথে লাইন লাগিয়ে দিয়েছো...???
তোমাদের মতো মেয়েদের না,আসলে চরিত্রটাই খারাপ...
জয়া-মুখ সামলে কথা বলো...
আদিত্য-কেনো উচিৎ কথা শুনতে খারাপ লাগছে...???
জয়া-চুপ করো তুমি,,,
তোমার মুখে আর এইসব উচিৎ অনুচিত কথা মানায় না...
কি করে ছিলে তুমি আমার সাথে,সেটা মনে নেই...???
বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়ে ছিলে, আমাকে একা ফেলে...
সেইসব কথা এত তারাতারি ভুলে গেছো..

তারপর তো সেদিন আমাকে ডিভোর্স পেপারেও সাইন করিয়েছো,,,
আমি যাকে ইচ্ছা,তাকেই বিয়ে করতে পারি এখন...
এরপর আর আমাকে এসব বলার কোনো অধিকার নেই তোমার,,,
তাই দয়া করে বারবার আমার সামনে এসো না...
কথা গুলো বলতে গিয়ে জয়ার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিলো,,,
তবুও নিজেকে শক্ত করে বড় মামির কথা গুলো ভেবে,,,
জয়া আদিত্যকে এসব বলে দিলো...
তারপর জয়া বাড়িতে চলে এলো,,,
এদিকে ফোন করা শেষে,,,
মনির জয়াকে দেখতে না পেয়ে,জয়ার বাড়িতে ফোন করে জানালো...
মিসেস মেহরাব,খুশিকে জিজ্ঞেস করলেন-খুশি...???
জয়া কোথায় গেছে,তুই জানিস...???
খুশি-ইয়ে মানে...

মিসেস মেহরাব-সত্যি করে বল জয়া কোথায়...???
খুশি ভয়ে ভয়ে বললো-আমার মনেহয় দিদি,দুলাভাই মানে আদিত্যর কাছেই গিয়েছে...
কথাটা বলামাত্রই জয়া বাড়িতে এসে ঢুকলো,,,
মিসেস মেহরাব,জয়াকে দেখে বললেন-কি রে কোথায় গিয়ে ছিলি তুই...???
জয়া চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ...
মিসেস মেহরাব-কি রে চুপ করে আছিস কেনো...???
মনিরকে ফেলে তুই কোথায় চলে গিয়ে ছিলি

বল...
জয়া,তারপর বড় মামিকে আদিত্য যা যা করেছে,সেই সব কথা খুলে বললো...
কথাটা শুনে মিসেস মেহরাব রেগে গিয়ে,,,
সোজা আদিত্যর বাড়িতে রওনা দিলেন...
এদিকে আদিত্যও সবেমাত্র বাড়িতে ঢুকতেই,মিসেস খাঁন জিজ্ঞেস করলো-কি রে বাবুই...???
আজকাল কোথায় কোথায় থাকিস তুই...???
মিসেস জলি শুনে বললেন-আজকাল তো তোমার ছেলে নিজের রেস্টুরেন্টের সামনেই বেশি থাকে...
কারন,ওখানে জয়ার একটা নতুন ফুড ট্রাক এসেছে...
কথাটা বলতে বলতেই জয়ার মামি আদিত্যর বাড়িতে ঢুকে,,,
সবার সামনে আদিত্যর গালে কষে একটা থাপ্পড় মারলেন...
মিসেস খাঁন চমকে গিয়ে বললো-কি হয়েছে...???
আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে,,,

আমার ছেলের গায়ে হাত তুললেন কিভাবে...???
মিসেস মেহরাব-এই থাপ্পড়টা যদি ছোট বেলায়,আপনি নিজেই আপনার ছেলেকে মারতেন,,,
তাহলে আজ আর আপনার ছেলে এতটা খারাপ হতো না...
মিসেস খাঁন-কি হয়েছে খুলে বলবেন তো...???
মিসেস মেহরাব-জয়াকে নিয়ে জয়ার হবু বর একটু ঘুরতে গিয়ে ছিলো,,,
কিন্তু সেখান থেকে আপনার এই গুণধর ছেলে,,,
জয়াকে জোর করে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে...
মিসেস মেহরাব,আদিত্যর মাকে সবকিছু খুলে বলার পর বললেন-শুনুন মিসেস খাঁন...???
আপনি আপনার ছেলেকে সাবধান করে দেবেন,,,
আর একবারও ও যেনো এভাবে জয়াকে ডিস্টার্ব না করে...
তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না,,,
এটা বলে আদিত্যর বাড়ি থেকে মিসেস মেহরাব চলে গেলেন

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com