Breaking News

শখের জামাই । পর্ব - ০১



আমার আগে এফে য়ার ছিল।” খুব সহজ গলায় চারটে শব্দ উচ্চারণ করলেও অলোকের কাছে বিষয়টা বড়ো কঠিন ছিল। যত যাইহোক‚ অন্তত বিয়ে করা বউকে বিয়ের তিন দিনের মাথায় কোনো পুরুষই তার পূর্ব প্রেমের কথা জানাতে সচারাচর সাহস করবে না। কিন্তু অলোক তার শক্ত বলিষ্ঠ বুকে সাহস জমিয়ে আজ কথাটা বলেই ফেললো তাও আবার কিনা শ্বশুর বাড়ির সবচেয়ে গোছানো ঘরে দাঁড়িয়ে।
 
“সমস্যা নেই আলহামদুলিল্লাহ।” বলেই নববধূ অলোককে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। নত চোখের পাতায় মেয়েটা এমন করে লজ্জা টেনে আনলো যেন অলোক তাকে মিষ্টিমধুর প্রেমের গল্প শোনাচ্ছে।
“প্রেমটা খুব গাঢ় ছিল। আসলে ওকেই বিয়ে করবো এমনটা ভেবেছিলাম। তাই আমরা প্রায়ই রিকশা করে ঘুরে বেড়াতাম‚ রেস্টুরেন্টে খেতে যেতাম‚ হাত ধরে পার্ক চষে বেড়াতাম...” এতটুকুতে এসে অলোক থেমে গেল। সর্তক চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ভাবলো তার বউ হয়তো এবার অনন্ত রেগে যাবে। রেগে গিয়ে বাড়ি মাথায় তোলার মতোন একটা চিৎ কার দিয়ে বলবে‚ “হারা মজাদা ই-ত-র‚ ওই ছেমড়ির লগেই যহন পিরিত করলি‚ তহন আমারে ক্যান বিয়া করতে গেলি? ওই ছেমরিরে গিয়া নতুন কইরা বিয়া কর শা লা।” কিন্তু এসব কিছুই হলো না। মেয়েটা পূর্বের মতোই মিষ্টি করে একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি করলো‚ “সমস্যা নেই আলহামদুলিল্লাহ।”

“আমি... আমি প্রায়ই ওর কপালে হাতে...” অলোক বাক্য সম্পূর্ণ করার আগেই তার বউ চোখ তুলে তাকিয়ে প্রশ্ন রাখলো‚ “অধর বসিয়ে দিতেন‚ তাই তো?” মেয়েটা খুব স্বাভাবিক গলায় শুধালো‚ কিন্তু ওর স্বাভাবিক গলা অলোকের মাঝে কেমন অস্বস্তি তৈরি করলো। এগুলো বলার সময় অলোকের মনে একবারও চিন্তা আসেনি‚ “মেয়েটাকে এসব বলা অন্য হবে।” কিন্তু এখন যখন মেয়েটা পাল্টে প্রশ্নে নিজেকে কেমন স্থির রাখলো‚ তখন এসব দেখে অলোকের মনে পাপের জন্ম হলো।
অস্বস্তি আর ছটফটিয়ে উঠে অলোক কিছু একটা বলতে চাইলো‚ “না মানে...”

“আপনি যদি এখন বলেন যে‚ আপনার পূর্ব প্রেমিকা সাথে আপনার বিয়ে হয়নি তা সত্ত্বেও সে আপনার বাচ্চা মা হয়েছে। আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নাম করে বলছি‚ এতেও আমার আপত্তি নেই আলহামদুলিল্লাহ।” এই কথা শুনে অলোক হতভম্ব হয়ে গেল। মেয়েটা পাগল নাকি!

“মানে?” বিস্ময়ে অলোকের মুখ ছিটকে স্রেফ এইটুকু কথাই বের হলো। এতে মেয়েটা দুই কদম এগিয়ে এসে শান্ত চোখে বললো‚ “আপনি অন্য মেয়ের প্রেমিক ছিলেন নাকি প্রাক্তন স্বামী— এসব নিয়ে এখন অন্তত আমার কোনো সমস্যা নেই। পুরুষ মানুষের চরিত্র এমন কলু ষিতই থাকে। তারা যদি মেয়েদের মতো পবিত্র হতো তবে ছেলেদের জন্যে চার বিয়ের বিধান না রেখে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মেয়েদের জন্যে এই ব্যবস্থা করতেন।” মেয়েটা একটু থেমে আবার বলতে লাগলো‚ “ছেলেরা যেখানে ভালোবাসা পায় না‚ সেখানে এক মূহুর্তও থাকে না— এই কথা ছোটোবেলা থেকে জেনেশুনেই বড়ো হয়েছি। আর এই কথা জানার পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে বলেছি‚ আমার স্বামী যেমনই হোক আমি মেনে নিবো। তবে আমি তার জীবনে আসার পর সে যেন আমার মতোই হয়ে যায়; সাচ্চা মুমিন বান্দা।”

“এক মিনিট... তুমি কি আমাকে নিজের স্বভাব চরিত্র বদল করতে বলছো?” অলোক কপাল কুঁচকে এই কথা শুধাতেই মেয়েটা কেমন রহ স্যময় হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তুললো। বললো‚ “না‚ কারণ আমার জন্যে আপনি যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পথে আসেন। তবে সেটা শুধুই আমার জন্যে হবে। আমি চাই আপনি আল্লার জন্যেই দুনিয়াবি মায়া আর নে শা ছেড়ে হালালের পথে চলতে শুরু করেন।”

“তুমি ভাবলে কী করে আমি এসব করবো? জীবনেও নামাজ পড়িনি। আমি মুসলমান— এটা মানি। কিন্তু যেই আল্লাহ আমাকে সারাজীবন শুধু কষ্টই দিয়ে গেল‚ সেই আল্লার প্রতি আমি অভি যোগ করবো না?” অলোক কেমন বিরূপ কথাবার্তা শুরু করলো। মেয়েটার অন্তর ভয়ে কুঁকড়ে উঠে মনে মনে তওবা পাঠ করলো। কিন্তু বাইরে সে নির্জীব থেকে এক দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো। ওকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে অলোক জানতে চাইলো‚ “এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

“কোনো কারণ নেই।” এমন সাধারণ জবাবে অলোকের মন ভরলো না। সে কথা বাড়াতে চাইলো‚ “আমার মায়ের কাছে জেনে নিয়ো‚ আমি মনের বিরুদ্ধে কিছু করি না।”
“এই মিথ্যা কথাটা আমি আম্মার মুখে অযথা শুনতে চাই না।”
“মিথ্যা কথা!” আঁত কে উঠলো অলোক।

“নয়তো কী? আপনি যদি মনের কথা এতই শুনে থাকেন তবে আমাকে কি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন?” ধাক্কা খেলো যেন অলোক। নিজেকে সামলে নিতে গিয়ে তার চোখের দৃষ্টি চঞ্চল হলো। বললো‚ “আজেবাজে কথায় সময় নষ্ট করতে চাই না। বিয়ের তিন দিন পরই বাপের বাড়ি চলে এলে কেন? কাউকে কিছু না বলে এমন ধুম করে চলে আসার মানা কী?”

“বাসর ঘরে যেই স্বামী দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়তে রাজি হয় না‚ ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্যে ডাকলে ধ মকে উঠে; তার সংসারে...” মেয়েটার কথার মধ্যেই অলোক জানতে চাইলো‚ “সংসার করতে চাও না‚ তাই তো? ডি ভোর্স দিতে চাও?” প্রশ্ন শুনে মেয়েটা পূর্ণ চোখে তার স্বামীকে দেখলো। ডিভো র্সের কথা বলতে গিয়ে অলোকের চোখ কেমন চিকচিক করে উঠছে। আনন্দের মহাসমুদ্রে যেন ভাসছে সে।

“সেসব বিষয় আপনি ভাববেন।”
“শোনো‚ এত ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা না বলে আমরা একটা ফয়সালায় আসি। সত্যি বলতে আমি তোমাকে মনের জোরেই বিয়ে করেছি। আগের প্রেম ভুলতে মা আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করলো। কিন্তু বিশ্বাস করো‚ বিয়ের পর ওই মেয়ের... সে যাক‚ তুমি একবার ‘হ্যাঁ’ বললে ডিভো র্সের বিষয় আমিই সামলে নিবো। তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি নিজেই তোমাকে ডি ভোর্স দিবো।” এই কথা শুনে মেয়েটা নিঃশব্দে হেসে উঠলো। ফর্সা ত্বক শব্দহীন হাসিতে অলোক আরও একবার রহস্য খুঁজে পেল‚ “হাসছো কেন?”

এক পা‚ দুই পা করে অলোকের খুব কাছে এসে মেয়েটা দাঁড়ালো। এত কাছ থেকে সুশ্রী রূপ দেখে পুরুষমানুষের মনটা যেন একটু থমকে গেল। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে অলোক গাঢ় গলায় শুনতে পেল‚ “আমার হালাল ভালোবাসার উষ্ণতা ভুলে এমন সাততাড়াতাড়ি আমায় ডি ভোর্স দিতে পারবেন?” অলোকের বলিষ্ঠ বুকের মধ্যকার কম্পন যেন এক কি দুইটা মিস হয়ে গেল। ভয় পাওয়া শুকনো মুখে সে নিজের বউয়ের দিকে তাকাতেই গতকাল রাতেই কথা মনে পড়লো।
গতরাতে...

সারাদিন বাড়ির সবার থেকে নজর বাঁচিয়ে রাত দশটা নাগাদ নিজের ঘরে ঢুকলো অলোক। ফাঁকা ঘরে বউকে দেখতে না পেরে সে ভাবলো‚ “বাসর ঘরে রাগারাগি করায় নিশ্চয়ই মেয়েটা বাপের বাড়ি চলে গেছে। সকালেও তো কত ঝা ড়ি দিলাম।” বলেই বিছানায় গা এলিয়ে অলোক হাসছিল; বিষাদের হাসি। হঠাৎ ঘরের ভেতরের ওয়াশরুম থেকে শব্দ হলো। দরজা খুলে কেউ বের হতেই অলোক ধুরমুর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো‚ “তুমি!”
 
মাথায় পেঁচানো গামছা খুলে একটু হাসি-হাসি মুখ আর ঈষৎ অপ রাধী গলায় রমণী জানালো‚ “সারাদিন কারেন্ট ছিল না। টাঙ্কিতে এক ফোঁটা পানি নেই। গরমে আমার এলার্জি বেড়ে গেছে। না পেরে এখন গোসল করলাম।” আজব সব জবাব! অলোক কি এসব জানতে চেয়েছে? চোয়াল শক্ত হলো তার‚ “তুমি এখনো এখানে কেন?” বিয়ে করা বউকে কেউ এমন প্রশ্ন করে? অলোক করলো।

“তো কোথায় থাকবো?” অবাক চোখে প্রশ্ন করেই ভেজা গামছা নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মেয়েটা। গামছা ফেলে এবার চিরুনি নিয়ে ব্যস্ত হলো। মনোযোগ দিয়ে অলোক সবটা দেখতে গিয়ে তার কথা আর রাগের তাল সে ধরে রাখতে পারলো না। কিন্তু আচমকা একটা জিনিস দেখে তার চোখ গিয়ে কপালে উঠলো‚ “এসব কী? না বলেকয়ে তুমি আমার টিশার্ট পরলে কেন?”

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com