Breaking News

শখের জামাই । পর্ব - ০৩



মিহি এবার সম্মুখে দাঁড়িয়ে দুই হাতে অলোকের জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো। 
নড়াচড়ায় মেয়েটার মাথার ঘোমটা খসে গেল; 
বড্ড আদুরে মুখখানি দেখে অলোকের দেহখানি বিনা নোটিশে কাঠ হয়ে গেল। 
অজানা কারণে অলোক কোনোরূপ বাঁধা দিলো না। 
চোখে চোখ রেখে কেবল উত্তরের অপেক্ষা করলো। 
মিহি বলতে শুরু করলো‚ “বউকে একটু বেশি ভালোবাসা ছেলেদের ‘বউ পাগল’ বলে‚ 
তাই না? আমিও তেমন‚ জামাই পাগ ল। আপনার ধারণাও নেই‚ সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমি জামাইয়ের জন্য কতটা পাগল ছিলাম। বিয়ে‚ জামাই‚ সংসার— 
এসব নিয়ে কত যে স্বপ্ন দেখতাম!” অলোক নির্বাক মনে মিহির কথা শুনে যাচ্ছে। 
কখনো ওর চোখ মনোযোগ দিয়ে দেখছে‚ 
কখনো হয়তো অধরের সুনিপুণ নৃত্যের তাণ্ড বে দিশেহারা হচ্ছে।
 
“আমার কাজিনদের থেকে জেনে নিবেন; ওরা আমার এসব পাগ লামি নিয়ে খুব ফোঁড়ন কাটতো। বলতো‚ ‘এত জামাই জামাই করিস না। বিয়ে হলে দেখবি‚ 
জামাই তোকে পর পর করছে।’ তাদের কথা সত্যি হবে ভাবিনি।
কথা শেষ করে মিহি হাসলো; বিষাদে থইথই করা সেই হাসি অলোকের বুকে গিয়ে বিঁধলো। 
মিইয়ে যাওয়া স্বরে জানতে জানতে চাইলো
তুমি..অলোকের কথার মাঝেই বন্ধ ঘরের দরজায় কারো হাতের ভারী স্পর্শ পড়লো সাথে একটা বয়স্ক কণ্ঠ ভেসে এলো‚ “মিহি‚ অ্যাই মিহি? দরজাটা খোল তো মা। সন্ধ্যা তো মরে যায় যায়।” মায়ের গলা শুনে মিহি দূরে সরে গেল। শাড়ির আঁচলে মাথা ঢেকে দরজা খুলে দিলো।
“বাবাজি কই?” মায়ের প্রশ্ন।
“ঘরেই।”

“বিকেলের নাস্তা দিয়েছিলি? আমি জান্নাতের বাসায় আটকে গেছিলাম। দুপুরে খেয়েদেয়ে গিয়েও আসতে দেরি হয়ে গেল। ওর মেয়ের জ্বরটা কমেছে। যাক‚ এখন আয় আমার সাথে। বাবাজির রাতের খাবারটা দিয়ে দিই।”
 
“তুমি যাও মা। আমি ওকে একবার বলে আসি।” শুনে মা চলে গেল। দরজা ভেজিয়ে মিহি ঘরে এলো। অলোক এখনো আগের জায়গা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে বলে মিহি হেসে উঠলো‚ “ডিভোর্স না দেওয়া অবধি এই বাড়িতে বুঝি বসবেন না?”
“না মানে...”

“হাত মুখ ধুয়ে আরাম করে বসুন। আর ফোন এনেছেন সাথে? এনে থাকলে বাসায় জানিয়ে দিন।” অলোক বুঝতে পারলো না। শুধালো‚ “কেন? কী জানাবো?”
“জানাবেন‚ আপনি আজ এখানে থাকবেন। মা বাবা আপনাকে যেতে দিবে না আর চলে যাওয়াটাও শোভন দেখাবে না।”

“কিন্তু...”
“রাতের খাবারটা আগে শেষ করে নিন। পুরো রাত তো পড়েই আছে। ইন শা আল্লাহ বোঝাপড়া সেরে নেওয়া যাবে।” মিহির কথাবার্তায় মেয়েলি নমনীয়তা সঞ্চালিত হলো না বরং ব্যক্তিসম্পন্ন মানুষের মতো করে সে বলে গেল৷ অলোক জিজ্ঞাসা না করে পারলো না‚ “যেই মানুষটা তোমায় ডিভোর্স দেওয়ার জন্যে পড়িমরি করছে‚ তার সাথে এত সহজ গলায় কীভাবে কথা বলছো? আর এমন স্বাভাবিকই বা থাকছো কীভাবে? বাঙালি নারী তো সংসার ভা ঙনের নাম শুনলেই মূর্ছা যায়। কিন্তু তোমার ঠোঁট থেকে হাসি...”

“সংসার ভাঙলে অবশ্যই মূর্ছা যেতাম। কেঁদে কেঁদে বাড়ি মাথায় তুলতাম‚ কিন্তু সেসব তো হবে না ইন শা আল্লাহ।”

“মানে? এত নিশ্চিত হয়ে এই কথা কীভাবে বলতে পারছো?” অলোক অবাক হলো। 
দুই কদম এগিয়ে এসে মিহির ডান বাহু চেপে কাছে টেনে শুধালো
তুমি আমার সাথে গেম খেলতে চাইছো?”
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাকে এতটা নিচে নামাবেন না যে‚ 
নিজের স্বামীর সংসার করার জন্যে আমাকে গেম খেলতে হবে। 
হ্যাঁ‚ আপনার মতো বাঁকা মানুষের সাথে আমায় একটু বাঁকা হতে হবে; হবো বাঁকা। 
কারণ সোজা আঙুলে তো ঘি উঠে না।” বলে মিহি হাসলো। 
অলোক আর কথা খুঁজে পেল না। চোখমুখ কুঁচকে অন্য দিকে তাকালো। 
মিহি তার কানের কাছে ফিসফিস করলো‚ “গেমটা তো আপনি খেলতে চেয়েছেন‚ কিন্তু ফায়দা হবে না। আমি কস্মিনকালেও আমার জামাইকে হাত ছাড়া করবো না। 
আমার এত বছরের চাওয়া-পাওয়া আমি এত সহজে শেষ করে দিবো নাকি? 
ভালোবাসি আপনাকে... আলহামদুলিল্লাহ। 
এতটাই ভালোবাসি যে‚ 
ভালোবাসার এই পবিত্রতায় আপনাকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে নিতেও এই মিহি দ্বিধা করবে না।”

ঝা মেলা থেকে মুক্ত হতে এসে এমন বাজেভাবে ঝা মেলায় জড়িয়ে পড়তে হবে তা অলোক ভাবেনি। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে তাকে শ্বশুরের সাথে ঘণ্টাখানেক গল্প করতে হয়। 
মিহির বাবা মেয়ের সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। 
তবে একটা জিনিস নিয়ে অলোক খুব অবাক হয় আর সেটাই এখন মিহির কাছে অলোক জানতে চাইলো‚ “তোমার বাবার সাথে অনেক কথা হলো। 
তিনি ধার্মিক মানুষ‚ কিন্তু আমাকে ধর্ম নিয়ে কোনো জ্ঞান দিলেন না কেন?”

ঘুমানোর জন্যে মিহি বিছানা গোছাতে ব্যস্ত। এখন ওর মাথার আঁচল কোমড়ে গুঁজে আছে। 
কর্মব্যস্ত বউয়ের বদন জুড়ে ঘামের বিন্দু আর খুচর চুলের বাহার দেখে অলোক থমকে গেল। 
মনে মনে একবার সম্মতও হলো‚ “মেয়েটা সত্যিই সুন্দর‚ 
মায়াবী; অপ্সরা বললেও হয়তো ভুল হবে না।”

“মানুষকে লেকচার দিয়ে ধর্মের পথে ঢাকা আমার বাবার স্বভাব নয়। 
উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে‚ কিন্তু কথা শুনিয়ে আর অপ মান করে যদি কাউকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পথে আনা হয় তাহলে সেটা জোরপূর্বক হবে। 
আমার বাবা কখনোই চান না‚ 
মানুষ তার জন্যে দ্বীনের পথে আসুক বরং তিনি চান‚ 
মানুষ যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্যে দ্বীনের পথে আসে। 
আপনাকে দ্বীনের পথে আনার দায়িত্ব তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পরে আমি নিয়েছি। 
তাহলে বাবা কেন শুধু শুধু আপনায় জ্ঞান দিতে যাবে?” 
মিহির কথা শুনে অলোক সোফা থেকে উঠে এলো। ওর সম্মুখে দাঁড়িয়ে শুধালো
তুমি দায়িত্ব নিবে? কিন্তু আমাদের তো ডি ভোর্স হবে।”

“হবে না।” বলতে বলতে মিহির বিছানা গোছানো শেষ হলো। 
সে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে অলোক ধরে ফেললো‚ “এমন নিশ্চিত করে কীভাবে বলছো?”
“যেমন নিশ্চিতভাবে আপনি আমার বাহু চেপে ধরলেন।” অলোক অপদস্ত হলো। ছেড়ে দিয়ে বললো‚ “আমায় লজ্জা দিচ্ছো?”
“মাফ করবেন‚ কিন্তু এটা বোধহয় আপনার নেই।”
“আমার লজ্জা নেই! কী যা তা বলছো তুমি?”

“লজ্জা থাকলে নিশ্চয়ই আশফিয়াকে আপনার সাথে প্রেম করার জন্যে পিছু পিছু ঘুরতেন না। 
বারবার আপনাকে রিজেক্ট করা সত্ত্বেও ওকে বিরক্ত করতেন না।” মিহি হাসলো।
“তুমি... তুমি আশফিয়াকে চেনো?”
“ও আমার বান্ধবীর চাচাতো বোন। 
প্রায়ই আপনার এসব পাগ লামি কথা বলে আমাদের সামনে হাসাহাসি করতো।
অলোক নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে দেখলো‚ মিহির চোখ এই এখন পানি জমছে।
“তুমি কাঁদছো কেন?”
 
না। আমি কাঁদবো কেন? যাকে পছন্দ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে হালাল ভাবে এতগুলো বছর চেয়ে মর লাম‚ তাকে নিয়ে কেউ আমার সামনে পরিহাস করেছে অথচ আমি একটা টুঁশব্দও করতে পারিনি। আপনি কোনো রিলেশনে ছিলেন না। 
কোনো মেয়ে আপনাকে পাত্তা দেয়নি। 
আপনার নায়ক মার্কা রূপটাকে আপনার এই অশিক্ষিত আর বেকারত্বে চাপা পড়ে যেত। 
এফে য়ার ছিল‚ পার্ক চষেছেন‚ হাত ধরেছেন‚ ঠোঁট... এসব ডাহামিথ্যে কথা। 

সব জানি আমি‚ সব জানি।” বলতে বলতে মিহির চোখ ভিজে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। মেয়েটা আহ ত বাঘিনীর মতো প্রতিবাদ করলো বটে। তবে চোখের পানি মোছার জন্যে কোনোরূপ চেষ্টা করলো‚ “এই আমি‚ এই আমি চোখ মাথা খেয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জানেন কেন দুই বছর আগে আপনাকে দেখে উ ন্মাদ হয়েছি। এরপর একটা দিনও যায়নি যে‚ আপনাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে হালাল ভাবে চাইনি। চেয়ে নিয়েছি আমি আপনাকে অথচ আপনি আমাকে এফে য়ারের মিথ্যা গল্প শুনিয়ে ডিভোর্স দিতে চাইছেন? আমার কষ্টের ফল আমায় তবে এভাবে পেতে হবে?”

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com