Breaking News

মুনতাসীর ও উপমার বিচ্ছেদ । পর্ব - ০৪



মুনতাসীর এর বাবা উপমার বিষয়ে কি কিছু ভেবেছেন?
-"কোন বিষয়ে?"
কবির ভূঁইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালেন মোর্শেদা বেগমের দিকে। মোর্শেদা বেগম বলেন,,
-"ওই যে আপনার বিজনেস পার্টনারের ছেলেকে দিয়ে যে উপমার কথা বললেন।
বললেন উপমার জন্য পারফেক্ট হবে।"
-"হুম মনে পড়েছে।তাদের তো উপমাকে দেখে পছন্দও হয়েছে।
আমাকে বলেছে যে তারা যত দ্রুত সম্ভব মেয়ে দেখতে আসবে ঘটা করে।
আচ্ছা আরেকবার কি উপমাকে জিজ্ঞাস করবো?
-""কিন্তু ও তো সেদিন বলল যে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিবো সেটাই ও মেনে নিবে।
এখন আর জিজ্ঞাস করার কি প্রয়োজন?

-"সেটা তো বহু দিন আগের কথা।এখন জিজ্ঞাস করলে তো মনে হয় ভালো হতো।"
- "আচ্ছা সে সব আমি দেখে নিবো।"
-"আমিও দেখি ছেলে পক্ষের সাথে কথা বলি।"
কবির ভূঁইয়া এবার নাস্তা খাওয়াতে মন দিলেন। মোর্শেদা বেগম আর কিছু বললেন না।
তাদের সাথে এসে যোগ দিলেন আয়শা খাতুন।তিনি খাবার খেতে খেতে বললেন,,
-"অনেক বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছো কবির।
একবার উপমাকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে পারলে আমিও শান্তি।
তবে বুঝে শুনে। বিয়ের ব্যাপার কিন্তু খুব কঠিন।"
-"হুম আম্মা। ছেলেকে তো আপনি দেখেছেন আম্মা।
ওই যে সেদিন মিতির জন্ম দিলে এলো যে।আপনার কাছে কেমন লেগেছে?"
-"ভালো তো লেগেছে।তাও তুমি একটু যাচাই বাছাই করে নিও।"
-"হুম আম্মা দোয়া করবেন।আমি আসি তাহলে।"
বলেই কবির ভুঁইয়া চলে গেলেন।

আয়শা খাতুন খাবার খেতে খেতে মোর্শেদা বেগমকে উদ্যেশ্য করে বললেন,,
-"বউ মা। উপমাকে তোমার কেমন লাগে?"
-"মেয়ে হিসেবে ভালো।তবে অন্য কোনো নজরে তাকে আমি দেখি নি। 
এবং দেখার ইচ্ছা ও নেই আমার।"
আয়শা খাতুন চুপ হয়ে গেলেন।মোর্শেদা বেগম কি বলতে চেয়েছেন তাও বুঝতে সক্ষম হলেন।
যেখানে তিনি মা হয়ে ছেলের জন্য রাজি না সেখানে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
আর উপমা বা মুনতাসীর এর মাঝেও কোনো কিছু বোঝা যায় না।
শুধু শুধু আগ বেরিয়ে এই প্রসঙ্গ উঠালে হয়তো বাড়িতে আরো অশান্তি হবে। 
থাক এই কথা এখানেই সমাপ্তি হোক।
আয়শা খাতুন আর বেশি কথা বললেন না।
খাবার খেয়ে চলে গেলেন বসার রূমে।

-"কাল তোমায় দেখতে আসবে উপমা।"
মামীর এহেন কথায় তড়াক করে মামীর দিকে চোখ তুলে তাকায় উপমা। 
দুপুরের খাবার শেষ করে রূমে বসে নিজের পড়ার টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছিল সে।
কি করবে?দুপুরে খাবার শেষ করে রুমে আসার পর কেমন যেন লাগছিল।
তাই পড়ার টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছিল। 
হঠাৎ মামীর আগমন যতটা না অবাক হয়ে তার চেয়েও বেশি অবাক হয়ে মামীর কথা শুনে।
উপমা মিন মিন করে বলে,,
-”কালকেই?”

-”হুম। কেন ?কোন সমস্যা?”
বুকের ভেতর ঝড় উঠলো উপমার।কান্না পেলো ভীষণ করে। 
গোলায় কথা আটকে গেলো।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,
-”কোনো সমস্যা নেই মামী।”
মোর্শেদ বেগম চলে গেলো।বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো উপমা। 
চোখে জল গুলো এসে ভিড় জমালো।টুপ করে জল গাল গড়িয়ে পড়লো।
মুহূর্তেই ফোন বেজে উঠলো। রিনি কল দিয়েছে।
মেয়েটা কি করে বোঝে যে উপমার তাকে প্রয়োজন।
তবে এবার উপমা কল কেটে দিলো।
বেশ কয়েকবার কল রিং হওয়ার পর উপমা ফোন কানের কাছে ধরলো।
কিছু বলল না।ওপাশ থেকে শোনা গেলো,,
-”তুই ঠিক আছিস উপমা? এতোবার কল করার পর রিসিভ করলি।”
নাহ উপমা তো ভালো নেই।তার ভেতর তো শেষ হয়ে যাচ্ছে।
উপমা মিন মিন করে বলল
 
-”কাল আমাকে দেখতে আসবে।”
-”তো?তুই এই জন্য কান্না করছিস?আরে বাবা কান্না থামা।
দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যাবে নাকি?
-”যদি হয়ে যায়?”
-”তবে এখনই মুনতাসীর ভাইয়ের কাছে যেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ কর।”
-”সম্ভব না”
-”তাহলে তুই কি চাস?মুনতাসীর ভাইকে ভালোবাসিস।
কিন্তু মুখে বলবি না।আবার দেখতে আসবে বলে কেঁদে যাচ্ছিস।
তুই কি চাস আমাকে ক্লিয়ার ভাবে বল।”
-”আমি যে বলবো ,বলবো টা কি করে? 

উনার কর্ম কান্ডে তো কোনো কিছুই প্রকাশ পায় না।”
-’তো?তুই নিজে থেকে তোর অনুভুতি প্রকাশ করলে প্রবলেম কোথায়?”
-”মেয়ে হয়ে আমি? আর যদি সে রিজেক্ট করে দেয়।
আর সব চেয়ে বড় কথা সে যদি আমাকে পছন্দ না করে 
তবে ভেবে দেখেছিস কি ভাববে আমার ব্যাপারে।”
-”তো? তাই বলে অনুভূতি নিজের মাঝে রাখতে রাখতে ম*রে যাবি নাকি?
আর মেয়ে হয়েছিস বলে কি আগ বাড়িয়ে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করা যাবে না এটা কোথায় লিখা?”
-”আমি পারবো না।”

-”আচ্ছা বলতো তদের মত এই ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষের সমস্যা কি? 
একে তো নিজে থেকে কোনো কিছু বলবি না, 
শেয়ার করবি না,নিজের সেলফ রিসপেক্ট আগে দেখবি ,,
তারপর আবার কেঁদে কেটে অস্থির হবি।”
-”আমি,,
আর কোনো কথা বলতে পারলো না উপমা।ওপাশ থেকে কল কেটে দিয়েছে রিনি।
আচ্ছা মেয়েটা বুঝে না কেনো যে সব কিছু এতো সহজ?
মেয়ে হয়ে কি করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবে?
যদি লোকটা তাকে অপমান করে? যদি তাকে রিজেক্ট করে দেয়?
তখন?তখন তো কি একটা বিশ্রী ব্যাপার হবে।
তখন তো কখনও উপমা মুনতাসীর ভাইয়ের চোখে চোখ মিলিয়ে তাকাতে পারবে না।
আচ্ছা সেই লোকের মনে কি একটুও উপমার জন্য ফিলিংস নেই?
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে উপমা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
তার রুম টায় কোনো বারান্দা নেই।আছে এই পশ্চিম পাশে একটা জানালা।
এই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সে নিজের মন খারাপ উপভোগ করে।অনেক কিছু ভাবে।
উপমার এখনো মনে আছে যে কিভাবে মুনতাসীর ভাই মিতি ও তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতো, 
কখনো মেলায় তো কখনও রেস্টুরেন্টে ঘুরতে নিয়ে যেতো। 
পড়ার যে কোনো বিষয়ে হেল্প করতো।
মাঝে মাঝে তো উপমা ও মিতির পছন্দ মতো খাবার বানিয়ে খাইয়াতো।
কি সুন্দর দিন ছিল। সবাইকে বলে বেড়াতো তার দুটো বোন। 
একটা মিতি ও একটা উপমা। উপমাও তাকে ভাই মেনে নিয়েছিল।
কিন্তু কি হলো এর পর?তারপর,, তারপর তো ভাইয়া বাহিরে চলে গেলো।
পড়াশোনার জন্য।কয়েক বছর পর সে দেশে এলো।
লোকটার মাঝে তখন খুব বেশি পরিবর্তন চলে এসেছিল।
আগের তুলনায় আরো সুদর্শন হয়ে উঠেছিল।আবার এক বাড়িতে থাকা শুরু হলো।
উপমার মনের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতি এসে জমা হলো।
কিন্তু আজ অব্দি সেই লোকের ভাবনা উপমা জানতে পারলো না।
লোক কি আগের মত তাকে বোন ই ভাবে নাকি তার মাঝেও উপমার জন্য অন্যরকম অনুভূতি আছে? 
তা আর জানতে সক্ষম হলো না উপমা।
বেশ কয়েকবার তো কয়েক ঘটনা ঘটলো তাও তো কিছু বোঝা গেলো না।
যেমন এই তো বেশ কয়েক দিন আগে,উপমা রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলে। 
লোকটা একবার শুধু একটা ওয়েনমেন্ট দিয়ে গেলে আর কোনো খবর নিলো না।
একবার জিজ্ঞেস ও করলো না যে কেমন আছে।
সেই ঘটনার ও আগে একবার টনসিল অপারেশন হয়েছিল উপমার 
সেখানেও দু তিন বারের বেশি উপমার খোজ নেয় নি।
সেই কথা তো বাদ ই এই যে সেদিন রাত জেগে আসিন্মেন্ট করলো,
সেদিন তো কাজের ব্যতীত কোনো কথা বলে নি।
প্রয়োজন ছাড়া উপমার দিকে তাকায় নি।
আচ্ছা এই সে এতো সব ঘটনা তারপর উপমা কিভাবে নিজে আগ বাড়িয়ে অনুভূতি প্রকাশ করবে?
একটু বেশি সস্তা হয়ে যাবে না সে?
আর বেশি কিছু ভাবলো না উপমা। গায়ে ওড়না জড়িয়ে চলে গেলো মিতির রুমে।

ঘড়ির কাটা তখন বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট।মুনতাসীর কেউকে কল দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে কাল রিসিভ হলো। শোনা গেলো,
-”এতো রাতে ফোন দিলি?”
-”হুম। তোকে একটা খুশির খবর দেই।”
-”কি?উপমাকে নিজের মনের কথা বলেছিস নাকি?নাকি বিয়ে করে নিলি?
অবশ্য বিয়ে করলে বাসর ঘর থেকে কল,,,,
আর কিছু বলতে পারলো না নাঈম।মুনতাসীর বলল,,
-”চুপ কর তুই।আসলে,,
-”ভাই ক্লিয়ার করে বল।মাঝ রাতে আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে এখন আসলে নকল করিস না।”
-”আসলে আমি উপমাকে নিজের মনের কথা বলতে চাই।
এবং সেটা কালকে।কারণ পরশু তার জন্ম দিন।
তাই কালকে রাত বারোটায় তাকে নিজের মনে কথা বলবো।”
-”তাহলে তুই সঠিক সময় পেয়ে গেছিস?”
-”বলতে পারিস।”

-”যাহ বাবা এবার তাহলে তোর বিয়েটা খাওয়া হবে।”
আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো দুজনের।কথা বলা শেষে ফোন টা বেড সাইড টেবিলে রেখে দিলো মুনতাসীর।বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় কিছু ভাবতে শুরু করলো।
আচ্ছা মানুষ কি হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে?নাকি মানুষটার সাথে থাকতে থাকতে তার আচরণে,কর্মে তার হাসিতে আটকে যায়? মুনতাসীর কিভাবে উপমার প্রেমে পড়লো?
প্রেম থেকে সেটা কিভাবে উপমার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হলো?
নাহ এতো কঠিন প্রশ্নের উত্তর মুনতাসীর কাছে নেই।এতো জটিলতা সে আটকাতে চায় না।
সে শুধু জানে মেয়েটাকে না দেখলে তার ভালো লাগে না।কেমন অস্থির অস্থির লাগে।
কোনো কিছুতে মন বসে না। 

মেয়েটার একটু কিছু হলে ভেতর ভেতর সে ছটফট করে অস্থির হয়ে যায়।
আচ্ছা মেয়েটাকি এতো কিছু বোঝে?নাহ হয়তো বোঝে না। 
বুঝবে কি করে? মুনতাসীর তো তার সামনে এমন কোনো আচরণ ই করে না।
একদম স্বাভাবিক থাকে।এই যে সেদিন মেয়েটার হাত পুড়ল,,
সেদিন তো মুনতাসীর এর ভেতর পুড়েছে।কেমন অস্থির হয়ে উঠেছিল সে।
কিন্তু একবার জিজ্ঞাস করার পর আর খোঁজ নেয়া হয় ওঠে নি।তো কি হয়েছে ?
গভীর রাতে একবার হলেও মেয়েটার রুমে গিয়ে মেয়েটার হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতো।
মন ভরে তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখতো।

আবার যখন টনসিল অপারেশন হলো তখন যে কত রাত মেয়েটার রুমে সোফায় বসে ঘুমিয়েছে 
তার তো হিসেব নেই।কেমন সে নিজের বাড়িতে চুপি চুপি চলতো তবে বলতে হবে 
মেয়েটা বড্ড ঘুম কাতুরে। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে আসে পাশে কি হচ্ছে তা আর টের পায় না। 
এর সেই সাথ তো হাই পাওয়ারের এন্টিবেটিক খেতো বলে বেশ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতো।
তবে হুম এটা ঠিক যে রাতের বেলা 

কারো রুমে যাওয়া ঠিক না বিশেষ করে মেয়েদের রুমে।
কিন্তু কি করবে সে?মনের কাছে তো আর এতো কিছু চলে না।
কি করবে সে? ইন্ট্রোভার্ট বলে কথা।সে তো আর সরাসরি কিছু জিজ্ঞাস করতে পারতো না। 
এতে যেমন সে ভালোবাসার মানুষকে দেখে নিজের চোখের শান্তি অনুভব করতো,
সেই সাথে সোফায় ঘুমানোর ফল হিসেবে এমন ঘাড় ব্যাথা হলো যে এখন পর্যন্ত থেকে গেলো।
সব চেয়ে বড় বিষয় এগুলো কেউ জানে না। ব্যাপারটা আসলেই অন্যরকম তাই না?

কথা গুলো ভেবে হেসে উঠলো মুনতাসীর।কি সব পাগলামো সে করেছে।
কিন্তু একবার উপমাকে মনের কথা বলে ফেললে ,,
উপমার মনের কথা জেনে নিলে হয়তো এমন কাজ আর করতে হবে না। 
চুপি চুপি মেয়েটাকে দেখতে হবে না।আড়ালে আবডালে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে না।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই উপমা যদি ব্যাপারটা অন্য ভাবে নেই।নাহ বেশি ভাবে যাবে না।
বেশি ভাবতে গেলে দেখা যাবে আম ও যাবে আটিও যাবে। 
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে মুনতাসীর মিন মিন করে বলল
-”আড়ালে আবডালে তুমি থেকে যাবে আজীবন নিভৃতে।
একবার তোমায় আমার করে পাই,
রাখবো তোমায় হৃদয় কোঠারে
সযত্নে!""

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com