জয়া ও আদিত্য এর রোমান্টিক প্রেমের গল্প। পর্ব - ৬০
তারপর আদিত্য একা মিসেস মেহরাবের সাথে কথা বলার জন্য,,,
মিসেস মেহরাবের ঘরে উপরে চলে এলো...
আদিত্যকে দেখে মিসেস মেহরাব চলে যাওয়ার জন্য উঠলো,,,
আদিত্য বাঁধা দিয়ে বললো-আন্টি...???
প্লিজ যাবেন না,,,
আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে...
মিসেস মেহরাব-কিন্তু তোর সাথে আমার আর কোনো কথাই নেই বলার...
আদিত্য-প্লিজ আন্টি...???
আমার কথাগুলো একটু ঠান্ডা মাথায় শুনুন,,,
বসুন এখানে...
মিসেস মেহরাব বসার পরে আদিত্য বললো-আন্টি...???
আমি জানি যে,,,
আমি আগে অনেক ভুল করেছিলাম,,,
আপনাদের সবার সাথে অনেক অন্যায়ও করেছিলাম,,,
কিন্তু বিশ্বাস করুন,,,
আমি এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছি...
আমি জয়াকে সত্যিই খুব ভালোবাসি,,,
আর আমি আমার নিজের ভুলটাও এখন বুঝতে পেরেছি...
প্লিজ আন্টি...???
আগে যা হয়েছে সবকিছু ভুলে যান,,,
জয়া আর আমার সম্পর্কটাকে মেনে নিন...
দেখুন,,,
জয়া আপনার দোয়া ছাড়া এ বিয়েতে রাজি হতে পারছে না,,,
ও আপনাকে নিজের মায়ের মতই খুব বেশি ভালোবাসে,,,
তাহলে কেনো আপনি জয়াকে এইভাবে বারবার কষ্ট দিচ্ছেন...???
প্লিজ,আপনি জয়ার কথাটা ভেবে,,,
পেছনে যা হয়েছিলো তা সবকিছু ভুলে যান...
আর আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি যে,,,
আমি জয়াকে অনেক সুখে রাখবো,,,
জয়ার আর কোনো কষ্টই আমি হতে দেবো না...
মিসেস মেহরাব আদিত্যর সব কথা শুনে জবাবে বললেন-ঠিকাছে,,,
তুই সত্যিই যদি জয়াকে ভালোবাসিস,,,
তাহলে তার প্রমাণ দে...
আদিত্য-বলুন আন্টি...???
আমাকে কি করতে হবে...???
আপনি যা বলবেন,,,
আমি তাই করবো...
মিসেস মেহরাব-সত্যিই যদি তুই জয়াকে এতোটাই ভালোবেসে থাকিস,,,
তাহলে তোর যতো বাড়ি-গাড়ি,টাকা-পয়সা,বাংক-ব্যালেন্স আছে,,,
সবকিছু জয়ার নামে লিখে দে,,,
শুধু তাই নয়,,,
তোর যাবতীয় যা কিছু আছে,,,
এমনকি তোর ওই রেস্টুরেন্ট "হোটেল প্যারাডাইসও" জয়ার নামে লিখে দে...
মিসেস মেহরাবের কথা শুনে আদিত্য চমকে উঠলো,,,
মিসেস মেহরাব-কি হলো বল...???
তোর পরনের জামা-কাপড় ছাড়া,,,
বাকি সবকিছু তুই কি পারবি,,,
জয়ার নামে লিখে দিতে...???
পারবি সাধারণ ভাবে জীবন-যাপন করতে...???
আদিত্য-এসব আপনি কি বলছেন আন্টি...???
মিসেস মেহরাব-হে,,,
আমিই ঠিকই বলছি,,,
শোন...???
জয়া শুধুমাত্র আমার ভাগ্নিই নয়,,,
ও আমার নিজের মেয়েও বটে,,,
সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি জয়াকে,,,
কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি...
তাই আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই,,,
এই সবকিছু সিকিউরিটি হিসাবে চাইছি,,,
যাতে ভবিষ্যতে তুই কোনোদিন ওকে ছেড়ে দিতে না পারিস...
বলা তো যায় না,,,
ভবিষ্যতে হয়তো তোর মন আবারও বদলে যেতে পারে,,,
আর তুই আবারও জয়াকে ছেড়ে দিতে পারিস...
আদিত্য-আন্টি...???
যখন আমি বিজনেস করছিলাম,,,
তখন ঈমানদারের মতই শুধু বিজনেস করেছি...
যখন রাগ দেখিয়েছি আমি,,,
নিজের রাগের আগুনে,,,
নিজেও জ্বলেছি,,,
আর অন্যদেরকে জ্বালিয়েছি...
ঠিক তেমনি এখন যখন একবার প্রেম করবো ভেবেছি,,,
তখন সেটাও পাক্কা প্রেমিকের মতই করবো...
আর আমার প্রেমটা ঠিক কতটুকু খাঁটি,,,
তা আমি আপনাকে ঠিকই প্রমাণ করে দেবো...
মিসেস মেহরাব-তো যা,,,
নিজের সবকিছু জয়ার নামে পারলে লিখে নিয়ে আয়...
তাতে আমার একটু হলেও এই ভয়টা কমবে যে,,,
তুই আর জয়াকে ফেলে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবি না...
কথাটা বলে মিসেস মেহরাব চলে গেলেন,,,
আদিত্যও জয়ার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো...
এদিকে আদিত্যকে দেখতে না পেয়ে,,,
জয়া অস্থির হয়ে পরলো,,,
তাই জয়া ফোনটা হাতে নিয়ে,,,
আদিত্যকে অনেকবার ফোন করতে লাগলো...
কিন্তু আদিত্য ফোন রিসিভ করছিলো না,,,
অনেকক্ষণ পরে আদিত্য জয়ার কলটা রিসিভ করে বললো-হ্যালো...???
জয়া কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে বললো-আদিত্য...???
কোথায় তুমি...???
এভাবে না বলে হঠাৎ করে কোথায় চলে গেছো...???
আর ফোনই বা ধরছিলে না কেনো...???
জবাবে আদিত্য বললো-এইতো তুমিও আবার ভাবতে শুরু করেছো যে,,,
আমি আবারও হয়তো তোমাকে রেখে পালিয়ে গিয়েছি,,,
তাইনা...???
জয়া ইততস্ত করে বললো-না,,,
আমি কথাটা ওইভাবে বলিনি,,,
আর আমি এসব কিছুই ভাবিনি,,,
আমি শুধু এটাই জিজ্ঞেস করেছি যে,,,
তুমি না বলে হঠাৎ করে কোথায় চলে গেছো...???
আদিত্য-একটা জরুরী কাজ ছিলো,,,
ওটাই করতে গিয়ে ছিলাম আমি,,,
টেনশন করো না,,,
এইতো গাড়িতে উঠেছি,,,
এক্ষুনি তোমার কাছে চলে আসছি...
জয়ার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো,,,
আর জয়া বললো-ঠিকাছে তারাতারি এসো...
আদিত্য ফোনটা রেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো,,,
তারপর সোজা জয়ার বাড়িতে চলে এলো...
ড্রয়িং রুমে সবাই আদিত্যর জন্য অপেক্ষায় ছিলো,,,
আদিত্য আসামাত্রই তাকে দেখে খুশি বললো-দুলাভাই...???
আপনি কাউকে কিছু না বলে,,,
এভাবে হঠাৎ করে কোথায় চলে গিয়ে ছিলেন...???
আপনি জানেন,,,
দিদি আপনার জন্য কত্ত চিন্তা করছিলো...???
আদিত্য মুচকি হেসে বললো-তোমার বোনের জন্যই একটা গিফট আনতে গিয়ে ছিলাম...
খুশি-সত্যি...???
কই দেখি...দেখি...???
আদিত্য-উহু,,,
সবার আগে তোমার বোন দেখবে,,,
তারপর তোমরা দেখো কেমন...???
খুশি জয়াকে বললো-দেখেছিস দিদি...???
দুলাভাই তোকে কত্ত ভালোবাসে...???
এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো...???
দুলাভাই তোকে ডাকছে,,,
কি হলো যা...
জয়া আস্তে আস্তে আদিত্যর কাছে এসে বললো-কি হয়েছে হুম...???
আদিত্য-বলবো,,,
তবে তার আগে তুমি তোমার চোখ দুটো বন্ধ করো...
জয়া-চোখ বন্ধ করতে হবে কেনো...???
আদিত্য-উফফফ,,,
করোই না প্লিজ...
জয়া-ঠিকাছে,,,
এই আমি চোখ বন্ধ করছি...
জয়া চোখ দুটো বন্ধ করলো,,,
আদিত্য তারপর পেছন থেকে একটা গিফট বক্স এনে,,,
জয়ার হাতে দিয়ে বললো-চোখ খুলো এবার...
জয়া চোখ খুলে বললো-কি এটা...???
আদিত্য-খুলে দেখো...
জয়া আস্তে আস্তে গিফট বক্সটা খুলে দেখলো,,,
ওর ভেতরে আছে খুব সুন্দর একটা শোপিচ,,,
একটা গোল কাঁচের ভেতরে দুইটা পুতুল ডান্স করছে,,,
একটা আদিত্যর মতো স্যুট-বুট পরা ছেলে পুতুল,,,
আর একটা জয়ার মতো মিষ্টি মেয়ে পুতুল...!!!
জয়া ওটা দেখে খুব পছন্দ করলো,,,
আদিত্য-কি...???
গিফটটা কেমন হয়েছে হুম...???
জয়া-ভিষণ সুন্দর হয়েছে এটা,,,
আর আমার খুব পছন্দ হয়েছে...
খুশি-দিদি...???
একা একাই দেখবি...???
নাকি আমাদেরকেও একটু দেখাবি ওটা...
আদিত্য মুচকি হেসে জয়াকে বললো-তুমি যাও,,,
ওদের এটা দেখাও,,,
আর আমি এই ফাঁকে একটু উপরে গিয়ে,,,
তোমার বড় মামির সাথে কথা বলে আসছি...
জয়া চিন্তিত হয়ে বললো-বড় মামির কাছে গিয়ে কি বলবে তুমি আবার...???
এমনিতেই বড় মামি তোমার উপরে রেগে আছে...
আদিত্য-তুমি এত চিন্তা করো নাতো,,,
কিচ্ছু হবে না,,,
আমি এক্ষুনি কথা বলেই ফিরে আসছি...
আদিত্য উপরে মিসেস মেহরাবের কাছে চলে এলো,,,
তারপর স্যুটের ভেতর থেকে একটা ফাইল বের করে,,,
মিসেস মেহরাবের হাতে তুলে দিয়ে বললো-নিন আন্টি...
মিসেস মেহরাব কিছুটা অবাক হয়ে বললো-কি এটা...???
আদিত্য-এই ফাইলের ভেতরে রেজিস্ট্রি করা কিছু ডকুমেন্টস আছে...
মিসেস মেহরাব-কিসের ডকুমেন্টস এগুলো...???
আদিত্য-আপনি যা যা চেয়ে ছিলেন,,,
এগুলো সেটাই,,,
এতে লেখা আছে যে,,,
আমি আমার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি,,,
আমার বাড়ি-গাড়ি,ব্যাংক ব্যালেন্স,,,
এমন কি আমার রেস্টুরেন্ট "হোটেল প্যারাডাইস" সহ সবকিছুই,,,
জয়ার নামে স্ব-ইচ্ছায় লিখে দিয়েছি...!!!
মিসেস মেহরাব ফাইলটা খুলে দেখলো,,,
আদিত্য সত্যি সত্যিই জয়ার নামে সবকিছু লিখে দিয়েছে...
এটা দেখে মিসেস মেহরাব চমকে উঠলেন,,,
সেটা দেখে আদিত্য বললো-বলে ছিলাম না আন্টি...???
আমি যা করি,,,
একদম মন থেকে করি,,,
ঈমানদারী নিয়ে করি,,,
কোনো দুই নাম্বারি করি না আমি...
এদিকে নীচে জয়া,,,
আদিত্য বড় মামির সাথে এত কি কথা বলছে,,,
এটা ভেবে চিন্তায় পরে গেলো...
চিন্তায় জয়া পায়চারি করতে শুরু করলো,,,
মিষ্টার মেহরাব সেটা দেখে বললেন-কি রে জয়া...???
তুই এইভাবে পায়চারি করছিস কেনো...???
জয়া-বড় মামা...???
আদিত্য উপরে বড় মামির সাথে এত কি কথা বলছে,,,
সেটাই ভেবে আমার টেনশন হচ্ছে খুব...
কথাটা শেষ হতে না হতেই,,,
মিসেস মেহরাব,আদিত্যকে নিয়ে নীচে নেমে এলেন...
মিসেস মেহরাব তারপর জয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন-কি রে জয়া...???
তোর এত চিন্তা করার কি হলো...???
আমি কি আমার মেয়ের জামাইয়ের সাথে,,,
একান্তে দুই মিনিট কথাও বলতে পারি না...???
জয়া-তা নয় বড় মামি,,,
কিন্তু তুমি কি বললে এটা...???
মেয়ের জামাই...???
মিসেস মেহরাব-তোর বর তো আমার মেয়ের জামাই হবে নাকি...???
জয়া সহ সবাই অবাক হয়ে গেলো,,,
মিষ্টার মেহরাব তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন-কি গো...???
তোমার শরীর ঠিক আছে তো...???
কি বলছো তুমি এসব...???
আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে...???
মিসেস মেহরাব জবাবে বললেন-আমার শরীর মন দুটোই ঠিক আছে,,,
এতদিন আমি আদিত্য আর জয়ার সাথে অনেক অন্যায় করেছি,,,
ওদের দুজনের মধ্যে বাঁধা হয়ে ভুল করেছি,,,
কিন্তু এখন সব ভুল শোধরানোর সময় এসে গেছে,,,
আমি আজ সত্যি সত্যি নিজের মন থেকে,,,
আদিত্য আর জয়ার সম্পর্কটা মেনে নিলাম...
এ কথাগুলো শুনে,,,
জয়ার পরিবারের সবাই খুব আনন্দিত হলো,,,
সবাই আদিত্য আর জয়াকে একা ছেড়ে দিয়ে উপরে চলে গেলো...
জয়া আনন্দে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো-আদিত্য...???
তুমি নিজেও জানো না যে,,,
তুমি আজ আমার জন্য কি করেছো,,,
আজ তুমি আমার মন থেকে,,,
অনেক বড় একটা বোঝা দূর করে দিলে...
i love you আদিত্য...!!!
জবাবে আদিত্য বললো-i love you too জয়া...
আমি সব সময় তোমার মুখের এই হাসিটাই দেখতে চাই......
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com