ইন্ধুবালা । পর্ব - ০৪
মস্ত বড় শিমুল গাছ।সবুজ রঙের দূর্বাঘাসের ওপর বেশ দম্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে।শিশিরে ভিজে একাকার হয়ে কয়েকগুচ্ছ পুষ্পকলি নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রইল।ভাল দেখে একটি ফুল তুলে নিল ইন্ধু।খুব যত্নে হাতের মুঠোয় তা বন্ধি করল।খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে তার।প্রভাতটা কেটেছে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে।সকাল আটটা বাজতেই তাদের রওনা হতে হল পাটশালার উদ্দেশ্য।
এক গ্রাম রেখেই তাদের পাঠশালা।সকাল সকাল রওনা দিতে হয়।তিন ক্রোস পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় পাঠশালায়।শিক্ষা গুরু আবুল কাশেম স্যার বলেন,সকাল সকাল হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।তোমরা সকলে অন্তত পক্ষে প্রতিদিন এক মাইল পথ করে হলেও হাঁটবে। এতে শরির মন দু'টোয় সতেজ থাকবে।
আনমনে হাঁটছিল সে।তখন ঘোড়ার পায়ের তীব্র শব্দের আলোড়ন কর্ণকুহরে অবিরাম বাজতে শুরু করল।
ভিতু মুখখানা নিয়ে ঊর্মি ইন্ধুকে ডাকল।বলল,
"ইন্ধুরে রাস্তার পাশে ঝটপট নেমে পড়।
জমিদারদের ঘোড়ার শব্দ ভেসে আসছে।তাদের রাস্তায় কাঁটা হলে নির্ঘাত আমাদের মন্ডু যাবে।"
ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকাল ইন্ধু।মুহূর্তে চোখ মুখ কুঁচকে নিল।
এ মেয়ে আসলেই একটা ভিতু ও সাথে নির্বোধও।সে বিরক্তিমাখা গলায় বলল,
"এত ভিতু কেন তুই?রাস্তা জমিদারের চৌদ্দগুষ্টির নাকি।এটা সাধারন জনগণের রাস্তা।
সমস্যা হলে তারা রাস্তা থেকে নেমে যাবে আমরা নয়।"
"অতিরিক্ত বুঝিস।চল ইন্ধু ঘাড় ত্যাড়ামি করিস না।"
চোখ রাঙিয়ে তাকাল সে।কাঠকাঠ গলায় বলল,
"অসম্ভব। "
ততক্ষণে ঘোড়ার শব্দ আরও কাছে মনে হল।ইন্ধুকে রেখেই ঊর্মি রাস্তা থেকে নেমে জঙ্গলের ঝোপের আড়ালে লুকাল।
ধীরে ধীরে জমিদার প্রলয়ের পঙ্গিরাজ ইন্ধুর সামনে এসে থামল।তীব্র ক্ষোভ নিয়ে নামল জমিদার প্রলয়।মুখটা তার কালো কাপড়ে বাঁধা। ইন্ধুর দিকে তাকিয়ে রহস্যময় পৈশাচিক হাসির আন্দোলন সৃষ্টি করল।যেটা কাপড়ের আড়ালেই থেকে গেল।কিছুটা ঝুঁকে পড়ল ইন্ধুর দিকে।দু'কদম দুরে সরে দাঁড়া তৎক্ষনাৎ ইন্ধু। রাগে ফোসফোস করছে সে।হাত মুঠি বদ্ধ করে রাগ সংযত রাখার চেষ্টা চালাল।তন্মধ্যে একটা অঘটন ঘটে গেল।হুট করে নিকাবটি টান মেরে খুলে নিল জমিদার প্রলয়।ভিতু মুখখানা নিয়ে আঁতকে উঠল ঊর্মি।ঝোপের আড়ালে তার ভিতু মুখানা আল্লাহ আল্লাহ জবছে।
জমিদারের হাতে ইন্ধুর নিকাপখানা।রাগে ক্ষোপে চোখ দু'টি দিয়ে যেন তার আগুন ঝরছে।অথচ জমিদার প্রলয় মুখে ক্রুটির হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।ইন্ধু নিকাপটি নিতে গেলে সেটা গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিল জমিদার প্রলয়।তড়তড় করে তৎক্ষনাৎ তার আগত মেজাজটি দ্বিগুন বেড়ে গেল।রয়ে সয়ে ডান হস্তদ্বয় দিয়ে জমিদারের বাম গালে কসিয়ে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিল।ঘটনাটি অতি দ্রুত ঘটে গেল।কিছু বোঝার আগেই ইন্ধু ডাল থেকে লাফ মেরে নিকাপটি নিয়ে ঝড়ের বেগে প্রস্হান ত্যাগ করল।রেখে গেল এক হিংস্র পশুকে।যার রাগ দ্বিগুন করে শিরায় উপশিরায় তৎক্ষনাৎ ছড়িয়ে পড়ছে।
দ্বিগুন ক্ষোভে তাকে পরিণত করছে এক হিংস্র সিংহে।ক্রোধে সে গর্জন তুলে উঠল।তার গর্জনে কেঁপে উঠল পুরো রাস্তাময়।রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেল প্রতিশোধে তীব্র উত্তাপের লেনিশিখা।আবাদি জমিতে চাষ করা কিছু সংখ্যক চাষারা কেমন ভয়ে জড়সড় হয়ে পড়ল।কেউ তো ভয়ে ইতিমধ্যে পালাতে শুরু করে দিয়েছে।মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করল সে।এত সাহস!এত বড় স্পর্ধা! জমিদার প্রলয়ের দেহে তোমার হস্তদ্বয়ের আঘাত করলে।এর ফলাফল মোটেও ভাল হবে না।খুব খারাপ হবে।অত্যন্ত জগন্য হবে।তোমার শান্তির দিনগুলি নস্ট করার সময় এসে পড়েছে।এরপরে প্রতিটা দিন তোমার নরকে পরিণত হবে মেয়ে।আমি জমিদার প্রলয় কথা দিচ্ছি তোমাকে যদি এর উচিত জবাব ও শাস্তি না দিচ্ছি তাহলে আমি এক বাপের সন্তান নই।
বিশাল বড় মহল।এটাকে পুরনো জমিদার মহল বলা চলে।হাতের ডান পাশে রয়েছে বাইজিগৃহ।গেটের সাথে লাকোতোয়া পুষ্পবৃক্ষ। ইন্ধু সবটা পর্যবেক্ষণ করে সামনে আগাচ্ছে।তার বোরকার সামন্য অংশটুকু ধরে ধীরে ধীরে পিপীলিকার ন্যায় এগিয়ে চলছে ঊর্মি।খুব ভীতসন্ত্রস্ত সে।বারংবার ভিতু মুখখানা নিয়ে আশপাশে তাকাচ্ছে।ইন্ধু একটা ধমক দিল।
"ছাড় আমাকে।"
ঊর্মি ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে রইল।তবুও ছাড়ল না।ইন্ধু আশপাশটা তাকিয়ে দোতলার দিকে তাকাল।তখন নজর পড়ল এক অতি সুন্দর সুদর্শন কিশোরের দিকে।ওদের দেখে সৌজন্যেতামূলক হাসল কিশোর।তাড়াহুড়ো করে সিড়ি বেয়ে চটি জোড়া পড়ে নেমে এল।গায়ে তার কালো রঙের ফতুয়া সাথে সাদা পাজামা পড়া।নাম প্রণয়।জমিদার বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে।ইন্ধুর সাথে একই পাঠশালায় পড়াশোনা করে। একই শ্রেণীতে দু'জন রয়েছে।খুব ভাল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে।ইন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার আগে সে কখনও বলেনি সে জমিদার বাড়ির পুএ।অবশ্য এব্যপারে ইন্ধু একদমই অজ্ঞাত ছিল।যখন জানল ততক্ষণে তাদের মধ্যে ভাল এক সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে।যার নাম বন্ধুত্ব।এর জন্য প্রণয়ের বহুত ক্ষেসারত দিতে হয়েছে।।বেচারা চোখ পিটপিট করে তাকাল।ইন্ধুর পাশে ঊর্মিকে দেখে বলল,
--এই ছিদ কাঁদুনেকে নিয়ে আসলি কেন?
চোখ রাঙাল ঊর্মি।তর্জনী আঙুল উঠিয়ে শাষাল।
--হুস আরেকবার যদিও বলেছো ছিদ কাঁদুনে তাহলে কিন্তু খুব খরাপ হবে বলে দিলাম।
অধরখানা চেপে হাসল প্রণয়।বলল,
--তা তোরা এই দুপুর বেলা এখানে কেন?
ইন্ধু উওর দিল।
--তোর দেখা পেলাম না দু'দিন।এমনিতে একদিনও ক্লাস ফাঁকি দিস না।তাই ভাবলাম হঠাৎ কি হল তোর?কোন রকম অসুখ বিসুখ হল নাকি।তাইতো জমিদার মহলের উদ্দেশ্য আসা।নয়ত,এই পাপকৃত নরকে মোর চরনদ্বয় ইহজনমেও পরত না।
পাপকৃত নরক কথাটা ভিষণ রকমের গায়ে পড়ল তার।ছেলেটা স্বল্প ভাষী।বড্ড সরলও।খুব কমই লোকালয়ে দেখা যায় তাকে।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে তেমন একটা কথা বলে না।যত কথার ঝুলি সব তার বন্ধু ইন্ধুর কাছে আসলে উঠে পড়ে।তেমন কারও সাথে মিশেও না।তার বাপ দাদা ও ভাইদের প্রতি তার চরম রাগ,ক্ষোভ।তাদের কারনে গ্রামের লোকদের কাছে এমনকি পাঠশালার শ্রেণী কক্ষেও নিজেকে জমিদার বাড়ির পুএ বলতে তার ভিষণ লজ্জাবোধ করে।কেননা,এদের বর্বরতা, নৃশংসতা জানেনা এমন মানুষের আনাগোনা খুবই কম।যে কারনে সে সকলের কাছে নিজের আত্মপরিচয় গোপন করে চলে।
--এই প্রণয় কোথায় হাড়ালি?
ইন্ধুর ডাকে তার ভাবনাচ্যুত ঘটল।তৎকালীন সংবিৎশক্তি ফিরে পেল।
--আসলে দু'দিন জ্বর ছিল তাই পাঠশালায় যাইনি।চল অন্ধরমহলে। তোরা এসেছিস আম্মা জানলে খুব খুশি হবে।
নাক কুঁচকে রইল ইন্ধু।
--আজ সম্ভব নয়।অন্য একদিন যাব।জানিস তো বুবু ইদানীং খুব কঠোর হয়েছে।
সেই মুহূর্তে একজোড়া বুটের শব্দ পাওয়া গেল।তড়িৎ গতিতে পরশ ইন্ধু আর ঊর্মির হাত ধরে মহলেন এক কোনে এনে দাঁড় করাল।হাত উঠিয়ে শব্দ করতে নিষেধ করল।বলল,"এখানে থাক।কোন শব্দ করবি না। আমি একটু পরেই আসছি।"
বুট পরিহিত পুরুষ লোকটি প্রণয়কে দেখে মুচকি হাসল।উপহাসের স্বরে বলল,
"কি ব্যপার জমিদার বংশের ছোট সদস্য এখানে কেন?তাকে এমনিতেই তো মহল ব্যতিত কোথাও আজকাল দেখা যায় না।তা মহলের বাহিরে কি?যাবি নাকি আমার সাথে বাইজি গৃহে।আজ সুন্দরী কয়েকজন বাইজি আনা হয়েছে।গেলে যেতে পারিস।আমি মানা করবো না।"
কথাটা বলে দাঁড়াল না প্রহর।হাসতে হাসতে প্রস্হান ত্যাগ করল।বড্ড পিপাসা পেয়েছে তার।এই পিপাসা যে নারীর দেহের স্বাদের।
ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল ।থু থু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রইর তার বড় ভাই প্রহরের পথ চিহ্নের দিকে।ইন্ধু প্রহরকে দেখে ঠিক চিনতে পারল না।পারবে বা কি করে।সে শুধু প্রহর কেন জমিদার বংশের লোকদের বেশি একটা চিনে না।অচিনপুর গ্রামে এসেছে বছর দুয়েক হতে চলল।অথচ এদের চেনার কথা থাকলেও সে চিনতে ইচ্ছুক নয়।
প্রণয় ওদের আড়াল থেকে বের করে আনল।বলল,
"আর কখনও তোরা আমাকে না জানিয়ে জমিদার মহলে আসবি না।জানিস তো জমিদার মহলে ক্ষুধার্ত শকুনের অভাব নেই।এরা মানুষ খেকো শকুন।"
ইন্ধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।সচরাচর এই ছেলেটা তার পরিবার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়।আজ কি হল তার?অসুখে আবার মাথা খারাপ হল নাকি।
প্রণয় বলল,"চল তোদের এগিয়ে দেই।"
ইন্ধু মাথা নাড়াল।গেটের কাছাকাছি আসতেই জমিদার প্রলয়ের পঙ্গিরাজের শব্দের উৎস পাওয়া গেল।আঁতকে উঠল সকলে।সবচেয়ে রাগি,জিদ্দি,গম্ভীর হল জমিদার প্রলয়।ভাই হয়েও তাকে ও বড্ড ভয় পায়।অথচ কখনও প্রলয় তার সাথে রাগী কন্ঠে কিংবা উচ্চ স্বরে কথা বলেনি।তার পরও সে ভিষণ ভয় পায়।সব কয়টা ভাইয়ের মধ্যে তার এই ভাই সবচেয়ে হিংস্র,নিষ্ঠুরতম ।শকুনের ন্যায় দৃষ্টি তার।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে এই বুঝি তার চক্ষুদ্বয় তুলে নিবে।অথচ এমনটা কখনও তার সাথে ঘটেনি।সে আর পথ আগায়নি।ওদের বিদায় দিয়ে সে জমিদার বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে রইল।শুনতে পেল জমিদার প্রলয়ের গলা।
এখানে কি করছিস তুই?
তোমার জন অপেক্ষা করছিলাম।
কথা বলার মধ্যে পরশের নজর বিদ্ধ হল তার মেঝ ভাইয়ের বাম গালে।সেখানে স্পষ্ট পাঁচ আঙুলের ছাপ।মুহূর্তে সে চিন্তান্বিত হয়ে পড়ল।কিঞ্চিৎ আগাল।গালে হাত রেখে স্পষ্ট করে বলল,মেজ ভাইয়া তোমার গালে এটা কিসের দাগ।তোমাকে কি কেউ আঘাত করেছে?
কথাটা পুণরায় মনে উঠতেই জমিদার প্রলয়ের চোখের সাদা অংশটি পুনরায় রক্তের ন্যায় লাল আকার ধারন করল।নিজের আগত ক্রোধটুকুকে নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
এত বড় স্পর্ধা কারও হয়েছে নাকি আজকাল।
ভিতর সত্তা থেকে উওর এল।ছিঃ জমিদার প্রলয়! ছোট ভাইয়ের সামনে তোমার মান যাবে বলে অপকটে মিথ্যে বলছো।অথচ তোমাকে নিরহ অবলা একজন নারী আঘাত করছে।সেটা বলতে লজ্জাবোধ করছো।
এই মুহূর্তে তার ভিষণ ইচ্ছে হল।ভিতর সত্তাকে টেনে হিঁচরে বের করে তার গর্দান নিতে।কত স্পর্ধা! তার সাথে বেয়াদবি করে।
বড় আম্মা কি অন্ধরমহলে আছে?
--জি।
বড় বড় চরণের কদম ফেলে প্রস্হান ত্যাগ করল জমিদার প্রলয়।
নিরবে নির্বিঘ্নে তা দেখল ও।তার যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে তার মেজ ভাইকে নিয়ে।মেজ ভাই তার যথেস্ট আত্নসম্মানবোধ ওয়ালা।নিজে কুড়ে কুড়ে মরে যাবে। তার পরেও নিজের অসহায়ত্ববোধ কারও কাছে তুলে ধরবে না।
মেয়ে দু'টো কে প্রণয়?
প্রহরের প্রথম বউ চৈতি কথাটা বলল।আশ্চর্য হয়ে তাকাল প্রণয়।
--আপনি কি করে দেখলেন ভাবিজান?
--আমি বারান্দায় কাজ করছিলাম তখন দেখলাম।
--ওহ।ওরা আমার বন্ধু
শুধু বন্ধু। জানতে চাইল চৈতি।
হাসল ও।
আপনি দেখি ইদানীং গোয়েন্দাগিড়ি শুরু করছেন।ভর্তি করে দিব নাকি গোয়েন্দা সংস্থায়।
কথা এড়িয়েও না ।ওরা তোমার কেবল বন্ধু নয় এর চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।
প্রণয় মাথা নাড়াল।বলল,
ইন্ধু নামক মেয়েটাকে ভিষণ পছন্দ আমার।ভাল লাগে।কিন্তু ওকে বলার মতন সাহস নেই।যেদিন ও সত্যিটা জানবে সেদিন বন্ধুত্ব নষ্ট করে তো দিবে।সাথে দেখা যাবে রাগের বশে ও আমাকে খুন করে দিবে।মানতে হবে সেই রকম সাহস আছে মেয়েটির।ও কেবল আমাকে একজন ভাল বন্ধু ভাবে এর বেশি কিছু নয়।সবচেয়ে মজার ব্যপার কি জানেন?ওর সাথে যখন আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে তখন ও জানত না আমি সাবেক জমিদারের পুএ তাহলে ও আমার সাথে বন্ধুত্ব করত না।
চৈতি বলল,
--তোমাদের বন্ধুত্বটা দেখছি খুব সুন্দর।তোমাকে যে মেয়ে পাবে সে খুব ভাগ্যবান গো।
চৈতির কথা শুনে হেসে ফেলল সে।
ডাক নাম ইন্ধু।পুরো নাম ইন্ধুবালা।তিন বোনের মধ্যে সে ছোট বলে গণ্য করা হয়।বড় বোন কিরণ। পাশের গ্রামে মাস্টারি করে।দু'টো প্রাইভেটও পড়ায়।মেঝবোন আর সে একই শ্রেণীতে পড়ে।বলাবাহুল্য তারা সমবয়সী বলা চলে। দাদা সৈয়দ উল্লাহ্ জমিদার মহলের পাঠশালার শিক্ষাগুরু।
হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিল প্রলয়।বলল,"আর বলার প্রয়োজন নেই।যাও এই মুহূর্তে সৈয়দ উল্লাহ্কে ডেকে নিয়ে আসবে।আসতে না চাইলে চেংদোলা করে তুলে নিয়ে আসবে।আর বলবে জমিদার প্রলয় তাকে জরুরি তলফ করেছে।"
প্রহরি মাথা নেড়ে সায় জানাল।
ঘন্টার দুয়েক পর দেখা মিললো পাঠশালার শিক্ষাগুরু সৈয়দ উল্লাহে্র।বরাবরই লোকটা বড্ড সরল।খুব নিষ্ঠাবানও বলা চলে।সে চিন্তান্বিত সংকীর্ণ মনে অতিথি কক্ষের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে রইল।যখনি শুনল জমিদার প্রলয় তাকে জরুরি তলবে ডেকেছে। ঠিক তখন থেকে তার মুখশ্রী শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গিয়েছে।
তোমার নাম সৈয়দ উল্লাহ্ ঠিক।
দৃষ্টি ঘুরিয়ে সৈয়দ উল্লাহ্ সোজা সামনে তাকালেন।তার সামনে একজন সুঠাম দেহের অধিকারনি সুদর্শন যুবক বসে আছে।অধরে তার হাসি বিরাজমান।পায়ের উপরে পা তুলা।হাতের মদের গ্লাস।
মদ খাবে সৈয়দ।
দাদার বয়সী একজন লোককে নাম তুলে ডাকাতে সৈয়দ উল্লাহ্ সন্তুষ্টি হতে পারলেন না।চরম বেয়াদব ছেলেটা!মিনিমাম ভদ্রতার ছিটেফোঁটাও নেই।পরবর্তীতে মনে হল এটা তো জমিদার প্রলয়। তার দ্বারা সম্মান পাওয়া সেটা কি হাস্যকর নয়?
সে মাথা নাড়িয়ে না করল।সে খাবে না।
হাসল জমিদার প্রলয়। বলল,
--চল এবার আসল কথায় আসা যাক।তোমার নাতি ইন্ধুবালাকে আমার চাই।যে করে হোক তাকে আমার কাছে পাঠাবে তুমি।সময় দু'দিন।সিন্ধান্ত যা নেওয়ার নিয়ে ফেল ঝটপট ।রাজি হলে তো ভালই।আর রাজি না হলে তোমার তো গর্দান যাবেই সাথে তোমার নাতিকে বাড়ি থেকে তুলে আনব।বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি?এতদিনে অন্ততপক্ষে এত টুকু অবশ্যই বুঝেছো জমিদার প্রলয় কেমন?
জমিদান প্রলয়ের মূখ্য বাক্য শুনে সে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল ।মতিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল।ইন্ধু তার খুব আদরের।সে মেয়েটার ওপর এই নরঘাতক শকুনের নজর পরেছে ভাবতেই তার কস্ট হচ্ছে।ভিষণ কস্ট হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছে না সে।তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াল। বুকে ইতিমধ্যে মরন যন্ত্রণা হতে শুরু করে গিয়েছে।হার্টের সমস্যা রয়েছে তার।বুকের বাম পাশে হাত চেপে ধরে সে প্রস্হান ত্যাগ করল।
সেই দিকে তাকিয়ে জমিদার প্রলয় ক্রুটির হাসল।জমিদার বীর প্রলয়ের গায়ে হাত তোলা চাট্টিখানি সাহস নয়।এবার তুমি তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে মেয়ে। জমিদার প্রলয় এমন অবস্থা করবে তোমার।কেঁদেও কূল পাবে না।সেই যন্ত্রণা, কস্ট সহ্য করতে না পেরে তুমি মৃত্যু কামনা করবে।পায়ে পরে ভিক্ষা চাইবে মৃত্যু। অথচ তোমাকে মৃত্যু দিব না।ধীরে ধীরে মৃত্যু যন্ত্রণায় কি? পৃথিবী বেঁচে থাকতে তোমাকে বোঝাব আমি।তৈরি হও।খুব শীর্ঘই সেই সময়টা আসছে।
চলমান...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com