Breaking News

জয়া ও আদিত্য এর রোমান্টিক প্রেমের গল্প। পর্ব - ৫৮



মিসেস মেহরাবের ভাই,,,
জয়াকে নিয়ে তার হোটেলের সামনে চলে এলেন...
তারপর তিনি জয়াকে তার হোটেলটা দেখিয়ে বললেন-এই যে জয়া মা,,,
এটাই হচ্ছে আমার "নবাবী হোটেল"
আর পাশেই দুটো ঘর আছে,,,
যেখানে আমি আমার বউ আর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকি...
যদিও আমার ছোট-খাটো হোটেল এটা,,,
কিন্তু লোকজন কম আসে না এখানে,,,
মাজারে আসা অনেক লোকই,,,
আমার এই হোটেলে খানাপিনা করতে আসে,,,
বুঝলি...???

জয়া-রান্নার ঘরটা কোথায়...???
মিসেস মেহরাবের ভাই-কেনো রে...???
রান্নাঘর দিয়ে তুই কি করবি...???
এক্ষুনি আবার রান্নাবান্না শুরু করে দিবি নাকি...???
জয়া-তুমি ঠিকই ধরেছো...
মিসেস মেহরাবের ভাই-না না,,,
তুই কতদূর থেকে এসেছিস,,,
আজ একটু জিরিয়ে নে,,,
রান্নাবান্না ওসব কাল থেকে নাহয় করবি...
জয়া-তুমিই তো বললে,,,
এখানে মাজারে আসা কত লোকজন খেতে আসে,,,
তাদের জন্য রান্না করতে পারলে,,,
আমারও ভালোই লাগবে...
মিসেস মেহরাবের ভাই-সে কি করে হয়...???
তুই এখন কত ক্লান্ত,,,
এসেই আবার রান্নাবান্নার কাজ শুরু করবি...???
জয়া-রান্না করাটা আমার শখ,,,
তাই এতে আমার কোনো ক্লান্তি আসে না,,,
বরং রান্না করলেই আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়...
মিসেস মেহরাবের ভাই-ঠিকাছে,,,
তুই যখন এতো করে চাইছিস,,,
চল তাহলে...

জয়া আসলে নিজের মনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার জন্যই,,,
রান্নায় ডুবে থাকতে চাইছে...
মিসেস মেহরাবের ভাই,,,
জয়াকে নিয়ে তার হোটেলের রান্না ঘরে গেলেন,,,
তারপর সেখানকার সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন...
জয়া মন দিয়ে রান্না করতে শুরু করলো,,,
জয়া তার মায়ের রেসিপি অনুযায়ী,,,
কয়েকটা আইটেম রান্না করে ফেললো...
খাবারের আইটেম গুলো বেশ ভালো হয়েছে,,,
জয়ার একটা পুরনো অভ্যেস আছে...
নতুন কোনো আইটেম রান্না করলেই,,,
জয়া নিজের মোবাইলে সেগুলোর ছবি তুলে রাখে...
আজও এর ব্যাতিক্রম হলো না,,,
জয়া তার রান্না করা খাবারের আইটেম গুলোর,,,
কিছু ছবি নিজের মোবাইলে তুলে নিলো...
তারপর কি মনে করে যেনো সেগুলো, নিজের ফেইসবুকে পোষ্ট করলো,,,
এদিকে আদিত্য নীরব-নিথর হয়ে এখনও মাজারেই বসে আছে...
কেনো জানি আদিত্যর এখান থেকে,,,
অন্য কোথাওই যেতে ইচ্ছে করছে না...
বরং এখানে আসার পর,,,

আদিত্যর অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেছে...
আদিত্য বসে বসে এটাই শুধু ভাবছিলো যে,,,
সিলেটের মত এত বড় একটা শহরে,,,
ঠিকানাহীন কোথায় সে জয়াকে খুঁজবে...
আদিত্য তাই মনে মনে পার্থনা করে বললো-প্লিজ...???
জয়াকে খুঁজে পাইয়ে দাও,,,
কোনো না কোনো একটা উপায় করে দাও...!!!
কথাটা বলামাত্রই,,,
আদিত্যর ফোনে একটা,,,
ফেইসবুক নোটিফিকেশন সাউন্ড বেঁজে উঠলো...
আদিত্য ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো,,,
কয়েকটা খাবারের রেসিপির পিক...
আদিত্য ভেবে ছিলো জয়ার কোনো খবর এসেছে,,,
কিন্তু এসব ছবি দেখে আদিত্য হতাশ হয়ে মোবাইলটা রেখে দিলো...
আদিত্য অন্যদিকে তাঁকাতেই,,,
হঠাৎ করে আদিত্যর চোখে আবারও
রেসিপির ছবি গুলো ভেসে উঠলো...
আদিত্যর মনে পরে গেলো,,,
রেসিপি গুলো কেনো জানি আদিত্যর কাছে চেনা চেনা মনে হলো...
আদিত্য তারাতারি করে আবারও ফোনটা হাতে নিয়ে,,,
ভালো করে ছবি গুলো দেখতে লাগলো...
আদিত্যর মনে পরে গেলো,,,

এক রকম রেসিপি তো জয়ার মায়ের রেসিপি বইয়েও ছিলো,,,
আর এ ধরনের রান্না তো শুধুমাত্র জয়াই করতে পারে...
তাহলে কি এগুলো জয়ার রান্নাই...???
এটা ভাবা মাত্রই,,,
জয়ার নামটা আদিত্যর চোখে পরলো...
আদিত্য মনে মনে বললো-কিন্তু জয়া এই রান্না গুলো কোথায় করেছে...???
এখানে তো কোনো জায়গার নাম দেওয়া নেই...
আদিত্য রেসিপির ছবি গুলো আবারও ভালো করে দেখতে লাগলো,,,
কোনো ঠিকানা পাওয়া যায় কি না...
হঠাৎ করে আদিত্য,,,
একটা রেসিপির ছবির মধ্যে

খাবারের পাশেই লেখা "নবাবী হোটেল" এই নামটা দেখতে পেলো...
আদিত্য সাথে সাথে মাজারের এক খাদেমকে জিজ্ঞেস করে বললো-ভাই...???
এখানে "নবাবী হোটেল" এই নামে কোনো হোটেল আছে...???
মাজারের খাদেম-"নবাবী হোটেল"...???
হে আছে তো,,,
কেনো কিছু খাবেন বুঝি...???
আদিত্য-জি,,,
এটা কোথায় বলতে পারবেন...???
আমি তো ঠিক ঠিকানাটা জানি না...
মাজারের খাদেম-কেনো...???
এই মাজারের পাশেই তো এটা,,,
বেশি দূরে নয়,,,
একটু ডান দিকের পথ ধরে এগিয়ে গেলেই পাবেন...
আদিত্য-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...
আদিত্য তারাতারি করে সেই প্রাইভেট কারটার কাছে গিয়ে,,,
ড্রাইভারকে বললো-আচ্ছা শোনো...???
তুমি কি এখানকার "নবাবী হোটেলটা" চেনো...???
ড্রাইভার-"নবাবী হোটেল"...???
হে হে,চিনি তো,,,

গাড়িতে উঠুন,,,
আমি এক্ষুনি আপনাকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছি...
আদিত্য গাড়িতে করে "নবাবী হোটেলের" উদ্দেশ্যে রওনা দিলো,,,
এদিকে জয়ার হাতের তৈরি রান্নার গন্ধে আর স্বাদে,,,
"নবাবী হোটেলের" বেচাকেনা বেড়ে গেলো,,,
আর কাষ্টমারও হুড়মুড়িয়ে আসতে লাগলো...
মিসেস মেহরাবের ভাই তাই দেখে এসে জয়াকে বললেন-আরেহ জয়া মা...???
তোর হাতে তো সত্যিই জাদু আছে রে মা,,,
তোর হাতের ছোঁয়ায় আমার পুরো "নবাবী হোটেলটার" চেহারাই বদলে গেছে...
কাষ্টমারও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে,,,
জয়া মুচকি হেসে উঠলো...
হঠাৎ করে হোটেল বয় এসে বললো-মালিক...???
আমি আর পারছি না কাষ্টমারদের সামলাতে...
মিসেস মেহরাবের ভাই-কেনো রে...???
কি হয়েছে...???

কাষ্টমার কি খুব বেশি পরিমাণে আসছে নাকি...???
হোটেল বয়-হে,তাতো আসছেই,,,
কিন্তু সমস্যা এটা নয়,,,
সমস্যাটা অন্য জায়গায়...
মিসেস মেহরাবের ভাই-আবার নতুন করে কি সমস্যা হলো...???
হোটেল বয়-আপনি তো জানেনই কাষ্টমারদের মধ্যে ভালো খারাপ দুটোই হয়...???
সবাই ঠিকঠাক মতই খাচ্ছে,,,
কিন্তু এক কাষ্টমার খাবার খেয়ে বলছে,,,
খাবারে নাকি নুন বেশি হয়েছে...
মিসেস মেহরাবের ভাই-কিইইইহ...???
এত লোক খাবার খাচ্ছে,,,
কেউ বললো না এটা,,,
অথচ ওই কাষ্টমার বলছে,,,
খাবারে নুন বেশি হয়েছে...???
হোটেল বয়-শুধু কি তাই...???
আরও কি বলেছে জানেন...???
বলেছে কে এই খাবার বানিয়েছে...???
তাকে এক্ষুনি আমার সামনে নিয়ে এসো...
মিসেস মেহরাবের ভাই-কিইইইহ...???
কোন কাষ্টমার এত বড় কথা বলেছে...???
কই চল তো দেখি...

জয়া-না না,,,
তুমি কেনো যাবে মামা...???
আমার রান্না নিয়ে যখন প্রশ্ন তুলেছে,,,
তখন আমিই বরং যাই...
মিসেস মেহরাবের ভাই-না মা,,,
তোর রান্না একদম ঠিক আছে,,,
এতে তোর কোনো দোষ নেই...
জয়া-আমি দেখছি গিয়ে,,,
রান্নায় কি কম-বেশি হয়েছে...
জয়া তারপর হোটেল বয়কে বললো-কোথায় ওই কাষ্টমার...???
চলো,ওনাকে দেখিয়ে দেবে...
হোটেল বয় জয়াকে সাথে করে নিয়ে গেলো,,,
তারপর ওই কাষ্টমারকে দেখিয়ে দিলো...
জয়া দেখলো,,,

মাথায় ক্যাপ পরে কেউ একজন বসে আছে,,,
জয়া তার পেছন থেকে ডেকে বললো-রান্নায় কি কম-বেশি হয়েছে...???
লোকটা বললো-কম বেশি নয়,,,
কিছু একটার অভাব আছে...
জয়া-কিসের অভাব আছে বলুন...???
লোকটা আসলে আর কেউ নয়,,,
সয়ং আদিত্য নিজেই...
আদিত্য মাথা থেকে ক্যাপটা খুলে জয়ার সামনে এসে বললো-
আমার সবকিছুতেই তোমার অভাব আছে...!!!
জয়া,আদিত্যকে দেখে চমকে উঠলো,,,
তারপর জয়া আদিত্যর কাছে গিয়ে,,,
আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো...

আদিত্য জয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো-এই তো আমি এসে পরেছি,,,
তাহলে আবার কাঁদছো কেনো তুমি...???
জয়া,আদিত্যর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো-আমি তো এটাই ভেবে ছিলাম যে,,,
তোমার সাথে আমার আর কখনোই দেখা হবে না...
কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে এলে...???
আর আমার খোঁজই বা কিভাবে পেলে...???
আদিত্য মুচকি হেসে বললো-যখন তুমি কিছু মন থেকে চাইবে,,,
তখন পুরো দুনিয়া সেটা তোমার কাছে এনে দেবে...!!!
আর তোমাকে ছাড়া আমি থাকবোই বা কিভাবে...???
কিন্তু তুমি আমাকে এটা বলো যে,,,
তুমি আমাকে না বলে এখানে কেনো এসেছো...???
জয়া মুখটা মলিন করে বললো-তোমাকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য,,,
এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায়ই ছিলো না...
আদিত্য-থাক এসব কথা,,,
যা হবার তা হয়ে গেছে,,,

এখন তুমি চলো আমার সাথে,,,
আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি...
জয়ার মনে পরে গেলো,,,
তার বড় মামির বলা কথা গুলো...
জয়া তাই আদিত্যকে বললো-তা আর হয় না আদিত্য,,,
আমি বড় মামিকে কথা দিয়েই এখানে এসেছি,,,
তুমিই বরং এখান থেকে চলে যাও প্লিজ...
আদিত্য-আমি তোমাকে না নিয়ে এখান থেকে কোথাও যাবো না জয়া...
জয়া-অবুঝের মত কথা বলো না,,,
দেখো,,,
আমরা দুজনে যতই কাছে আসতে চাই না কেনো,,,
নিয়তি বারবার আমাদের দুজনের মাঝখানে,,,
একটা অদৃশ্য দেয়াল ঠিকই তুলে দেয়,,,
তাই বলছি যে,তুমি প্লিজ ফিরে যাও...
আদিত্য-নিয়তির নিয়মে কি লেখা আছে,,,
তা হয়তো আমি জানি না...
কিন্তু আমি এত কষ্ট করে,,,
যখন একবার তোমাকে খুঁজে পেয়েছি,,,
তখন আর তোমাকে কিছুতেই হারাতে পারবো না...
জয়া-তুমি প্লিজ এখান থেকে চলে যাও...
এটা বলে জয়া ভেতরে দৌড়ে চলে গেলো,,,
আড়াল থেকে মিসেস মেহরাবের ভাই সব শুনলেন...
এদিকে আদিত্যর ফোনে হঠাৎ করে,,,
রাজনের কল এলো...

তাই আদিত্য ফোনে কথা বলতে বলতে,,,
"নবাবী হোটেল"থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো...
আদিত্য গাড়ির কাছে আসতেই,,,
দুম করে গাড়িতে আগুন লেগে গেলো...
চারিদিকে আগুন আগুন বলে হৈ চৈ শোনা গেলো,,,
মিসেস মেহরাবের ভাই আর জয়া,,,
সেটা শুনে দৌড়ে বাইরে এসে দেখলো,,,
দাও দাও করে গাড়িতে আগুন জ্বলছে...
হোটেল বয় সেটা দেখে বলে উঠলো-আরে এটায় করে তো ওই লোকটাই এসে ছিলো,,,
যে বলে ছিলো খাবারে নুন বেশি হয়েছে...
কথাটা শোনামাত্রই জয়ার আদিত্যর কথা মনে পরলো,,,
জয়া দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে,,, আদিত্যকে টেনে বের করলো...
জয়া দেখলো,আদিত্য অজ্ঞান হয়ে গেছে,,,
তাই জয়া আদিত্যকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে,,,
আদিত্যর মুখটা ধরে চিৎকার করে আদিত্য আদিত্য বলে ডাকতে লাগলো...
জয়া তারপর কেঁদে কেঁদে বললো-
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না আদিত্য,,,
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি,,,
প্লিজ চোখ খুলো,,,

কথা বলো আমার সাথে...!!!
মিসেস মেহরাবের ভাই একটা স্থানীয় ডাক্তার ডেকে আনলেন,,,
ডাক্তার আদিত্যকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করলেন,,,
তারপর এক বোতল পানি আনতে বললেন...
এরপর ডাক্তার আদিত্যর মুখে পানির ঝাপটা দিলেন,,,
আদিত্যর জ্ঞান ফিরে এলো...
ডাক্তার আদিত্যকে দেখে বললেন-আপনি সত্যিই খুব লাকি,,,
এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে কোনো ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই বেঁচে উঠা,,,
সত্যিই মিরাকল...!!!
আদিত্য,জয়াকে দেখিয়ে জবাবে বললো-ডক্টর...???
যখন আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেনটাই আমার সাথে আছে,,,
তখন আর আমার কিচ্ছু হবে না...
জয়া কাঁদতে কাঁদতে সবার সামনে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com