Breaking News

শখের জামাই । পর্ব - ০২



আবারও একটু হাসি ছড়িয়ে মেয়েটা আয়নাতে অলোককে দেখে বললো‚ “বিয়ের পর ছেলেদের আর নিজের বলতে কিছু থাকে না। সবকিছু মেয়েদের দখলে চলে যায়।”
অলোক বিছানা থেকে চটপট উঠে এসে বউয়ের পিছনে দাঁড়ালো। মেয়েটার নাম মনে করার চেষ্টা করলো সে‚ কী যেন একটা অদ্ভুত নাম! তবে ডাকনামটা মনে আছে‚ মিহি। কিন্তু এই নামে ডাকতে মেয়েটা বারণ করেছে। বলেছে‚ “মিহি নামে ডাকবেন না। আপনার মুখে আমার আসল নামটাই শুনতে চাই আলহামদুলিল্লাহ।”

ভাবনার মাঝে অলোক মিহিকে পিছন থেকে আপাদমস্তক দেখলো। গায়ে সব অদ্ভুত পোশাকআশাক জড়ানো; ঢলঢলে একটা টিশার্ট‚ সুতি ওড়না আর লেগিন্স্ না কী যেন সব... গায়ে সেঁদিয়ে থাকা পায়জামার নামটাও অলোক এই মূহুর্তে ঠিকঠাক মনে করতে পারলো না। আজকাল কীসব হাবিজাবি পোশাক বের হচ্ছে মেয়েদের! কিন্তু এই ধরনের পায়জামা তো এমন ধার্মিক মেয়ের পরার কথা নয়। অলোক অবাক হলো‚ “এমন অদ্ভুত পোশাক তুমি পরো?”

চুল আঁচড়ানো শেষে মেয়েটা এবার ঘুরে দাঁড়ালো। মিষ্টি করে বললো‚ “শখ হলে পরি। তবে টিশার্ট পরি না। এলার্জি বেড়েছিল বলে আম্মা এটা দিয়ে পরতে বললো।”

“আমি টিশার্টের কথা বলিনি।” কথাটা অলোক মিহির পায়ের উপর দৃষ্টি রেখেই বললো। এখন অবধি মেয়েটাকে ভালো করে দেখেনি সে এমনকি এই মূহুর্তেও সে ঠিক করে বলতে পারবে না তার বউয়ের রূপে ঠিক কোনকোন জিনিস আছে। তবে মেয়েটার পা দুটো খুব সুন্দর। হাঁটু থেকে পায়ের পাতা অবধি যেন নিপুণ কারুকার্য শোভিত; অলোকের চোখ টানছে।
 
স্বামীকে এমন মোহিত হতে দেখে মেয়েটা অন্তরের হাসি গোপন করলো। আধো ভেজা চুলে ঘোমটা টেনে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। ওর পায়ের নড়াচড়ায় অলোকের ধ্যান ভাঙলো‚ কিন্তু বোকা গলায় সে ফট করে বলে উঠলো‚ “নড়লে কেন?” স্বামীকে সে লজ্জিত করতে চায় না৷ তাই সর্বদা হাসি ছড়িয়ে রাখা মুখে বললো‚ “রাত হয়েছে। আমার ঘুমের প্রয়োজন।”

নিজেকে ধাতস্থ করতে অলোকের সময় লাগলো। সারাদিনের ময়লা জামাকাপড়ে তার এমনিতেই গা পিত্তি জ্বলছে তারপর আবার নিজের বিছানায় গতকালের মতো মেয়েটার শুয়ে পড়া দেখতে হবে— এটা ভাবতেই অলোকের রাগ দ্বিগুণ হলো।
 
বালিশ রেখে মেয়েটা সবে বিছানায় উঠতে যাবে এর আগে অলোক এসে হাত ধরে বিছানা থেকে সরিয়ে আনলো‚ “তুমি কি বুঝো না‚ আমি তোমাকে একটুও পছন্দ করছি না?” প্রতিত্তোরে মেয়েটা লজ্জায় আরক্ত মুখে হাসলো। নত চোখের শুভ্র মুখের হাসিতে কী যেন একটা ছিল। অলোক কড়া একটা কথা বলতে গিয়েও নিজেকে সংযত করলো‚ “আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। মনের বিরু দ্ধে...” এতটুকু বলতেই মেয়েটা অদ্ভুত এক কাণ্ড করে বসলো। অলোকের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পলকে সে অলোককে আলিঙ্গন করলো। জীবনের প্রথম পবিত্র আর হালাল স্পর্শে অলোকের সমস্ত শরীর হিম গেল। নির্বাক আর পাথর হয়ে থাকা এই পুরুষের বলিষ্ঠ বুকে মাথা রেখে মেয়েটা কীসের তৃপ্তিতে হেসে উঠলো‚ কিন্তু তার এই হাসি অলোক দেখতে পেল না।
 
প্রায় মিনিট দুয়েক নিঃশব্দে অলোককে জড়িয়ে রেখে মেয়েটা হাতের শক্ত বাঁধন ছেড়ে দিলো। মাথা তুলে অলোকের চোখে চোখ রাখতেই অলোকও নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো। স্বামীর দুই চোখ ফেটে যে বিস্ময় উপচে পড়ছে তার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে মেয়েটা পরম যত্নে অলোকে কপালে প্রগাঢ় ভালোবাসা এঁকে দিলো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে কীসের ভাবনায় মেয়েটা একটুখানি মলিন হলো‚ কিন্তু নিজেকে চট করে সামলে নিলো। পুরোটা সময় অলোক পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। না বাঁধা দিলো আর না মেয়েটার এমন পবিত্র ভালোবাসায় সাড়া দিলো।

সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিহি তার মিহি গলায় জানালো‚ “আমি আপনার ‘পছন্দ’ হতে চাই না। বউ তো পছন্দের জিনিস নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার হুকুমে আমি আপনার দেহের অর্ধ অংশ হতে চাই। বউ তো অর্ধাঙ্গিনী হয়‚ তাই না?” অলোক জবাব দেয় না; সেই পরিস্থিতি তার নেই। মিহি অপেক্ষা করে না। মুচকি হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
 
পাথর হয়ে কতক্ষণ এই অবস্থায় অলোক দাঁড়িয়ে ছিল‚ তা এখনো অলোকের মনে আসছে না। তবে সকালে ঘুম ভাঙার পর সে নিজেকে সোফায় আবিষ্কার করে আর তার বউয়ের কোনো খবর পায় না। এরপর খোঁজ চালিয়ে যখন জানতে পারে‚ বউ বাপের বাড়ি চলে এসেছে‚ তখন অলোক খুশি হওয়ার পরিবর্তে মন খারাপ নিয়ে মিহির সামনে হাজির হয়।

“কী হলো? চুপ করে আছেন কেন?” মিহির প্রশ্ন শুনে অলোকের ভাবনায় ছেদ পড়লো। বউ তার বিস্তর হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে; দেখে অলোকের রাগ হলো‚ পুরুষালি রাগ। কিন্তু বুকের ভেতর অজানা এক ভয়ও চাপলো। সে শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে মিহিকে জানালো‚ “আমি তোমাকে ডি ভোর্স দিবো।” শুনে মিহি নিঃশব্দে হেসে উঠলো। এই হাসি সাধারণ নয়‚ গভীর রহ স্য মাখা এই হাসি দেখে অলোকের আত ঙ্কে গলা বুক শুকিয়ে এলো তবুও সে বউয়ের দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করলো‚ “আমার স্বামী হয়তো দেনমোহরের কথা ভুলে যাচ্ছে। 

১০ লাখ টাকা শোধ করার ক্ষমতা যদি থাকে তো ডি ভোর্স দিয়ে দিতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি। থাকবেই বা কেন? আজকালকার যুগে ১০ লাখ টাকা পেলে মেয়েদের আর কিছু লাগে নাকি? চিন্তা করে দেখুন‚ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের কত সুবিধা দিয়েছেন। কোনো কাজকর্ম না করে‚ জামাই ছেড়ে দিলেও আমরা কত্ত টাকা পাবো। ১০ লাখ যদি পাই। তবে মৃ ত্যুর আগে ইন শা আল্লাহ আমার কোনো ভাবনা নেই।”

“তুমি আমাকে ডি ভোর্স দিলে তো আমাকে আর টাকা দিতে হবে না।” কথাটা বলতে গিয়ে এবার অলোকের মুখে হাসি ফুটলো। অলোক ভাবছে‚ মিহি হয়তো তার এসব কথা শুনে দমে যাবে‚ কিন্তু সেরকম কিছু হলো না। মেয়েটা সহজ গলায় শুধালো‚ “তাই নাকি? আমার জানা ছিল না‚ কিন্তু আমি কেন দিবো?”

“আমি যদি ফূর্তি আমোদ‚ মেয়েবা জি...” অলোক এতটুকু বলতেই মিহি মৃদু হেসে বলে উঠলো‚ “উঁহু উঁহু‚ তা তো হচ্ছে না। বিয়ের আগে ফূর্তি যা করার করে নিয়েছেন। এখন করলে...”
“করলে কী?” অলোক চোয়াল শক্ত করে‚ কিন্তু মিহি দায়সারা গোছের জবাব দেয়‚ “আম্মা বলেছেন তাকে জানাতে। এরপর তিনি আব্বাকে বলে আপনাকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন। পড়াশোনা ঠিক মতো করেননি। কাজকর্মও কিছু জানেন না। ত্যাজ্যপুত্র করলে আপনাকে না খেয়ে ম রতে হবে।”
“তুমি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছো?”

“না। আমি তো পুরো আপনাকেই ভাগিয়ে নিচ্ছি।”
“আমায় একটা কথা বলো তো। আমি অশিক্ষিত বেকার। আজকে আবার জানলে আমার এফে য়ার ছিল। আমার মতো এমন ছেলের সংসার কেন জোর করে করতে চাইছো?”
“আমি তো জোর করে সংসার করছি না। আপনার সংসার করবো না বলেই তো আজকে বাপের বাড়ি চলে এলাম।” কী স্পষ্টবাদী মেয়েরে বাবা! অলোক সংগোপনে চমকে উঠলো‚ কিন্তু প্রশ্ন করলো সাধারণ গলায়‚ “বিয়ে কেন করলে?”

“কেন করলাম জানতে চান?” জানতে চেয়ে আর অপেক্ষা করলো না মিহি। অলোকের হাত ধরে টেনে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। স্বামীর বাম কাঁধে নিজের হাত এরপর চিবুক রেখে নরম গলায় বলে উঠলো‚ “এমন হ্যান্ডসাম ছেলেকে কোন মেয়ে বিয়ে করতে মানা করবে?” কথাটা শুনে অলোকের মন নিজের অজান্তেই হেসে উঠলো। হাসি আড়াল করতে গিয়ে অলোক অন্য দিকে মুখ ফেরালো। নিজেকে সামলে শুধালো‚ “শুধু আমার চেহারার জন্যে আমাকে বিয়ে করেছো? তুমি কি পাগ ল নাকি?”

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com