Breaking News

মুনতাসীর ও উপমার বিচ্ছেদ । পর্ব - ০৫



কি করছো উপমা আপু
মিতির প্রশ্নে চোখ তুলে তাকায় মিতির দিকে। 
হাতে থাকা ফোন টা বিছানায় রেখে আধ শোয়া অবস্থায় বলে,,
-”তেমন কিছুই না।তুই কলেজে যাস নি?”
-”উহু”
-”কেনো?”
-”তোমায় দেখতে আসবে এই খুশিতে।”
-”তুই খুব খুশি বুঝি?’
-”খুশি হবো না কেনো?তুমি আমার বড় বোন।
সে হিসেবে যদি তোমার বিয়ে ঠিক হয় তখন তো আমি সেই লেভেলের মিজা করতে পারবো।”
-”হুম।”

মিতি দেখলো আজ কেমন যেনো একটু মন মরা হয়ে আছে উপমা।
তাই উপমার গালে হাত রেখে বলল,,
-”তোমার মন খারাপ কেনো?”
-”বিয়ে হয়ে গেলে তো তোদের সাথে আর থাকা হবে না।”
-”অনেক বেশি ভালোবাস বুঝি আমাদের?”
-”নিজের থেকেও বেশি।”
-”আচ্ছা মন খারাপ করবে না একদম।
তুমি মন খারাপ করলে আমার ভালো লাগে না।তুমি কি ড্রেস পড়বে তা ঠিক করেছো?”
-”উহু। পরে করবো।”
-”আচ্ছা আমি নিচে যাই।”
-”হুম।”

মিতি চলে গেলো। 
উপমা নিজেকে সামলে নেয়ার বৃথা চেষ্টা করলো।
আচ্ছা আজ যদি তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় অথবা বিয়ে হয়ে যায়?? 
নাহ এটা তো সম্ভব না।দেখতে আসলেই কি বিয়ে ঠিক হয় নাকি?
কিন্তু দাদুর কাছ থেকে তো শুনেছে দাদুর বিয়ে হয়েছে দেখতে আসার দিন।
আজ যদি তাঁর ও বিয়ে হয়ে যায়?নাহ আর কিছু ভাবলো না উপমা।
নিজের মনকে শক্ত করলো। তবুও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কাপ কাপা কণ্ঠে বলল,,
-" এ কেমন ব্যাথা হচ্ছে আমার হৃদয়ে মুনতাসীর ভাই?
মনে হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে আপনাকে হারিয়ে ফেলছি আমি।
আদো কি আপনাকে পাবো আমি নাকি আপনার ছায়াও নিষিদ্ধ হবে আমার জন্য?"

তুমি আকাশের বুকে....
বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে..
সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি..
ভেঙে চুরে শতবার
রয়েছ তুমি বহুদূরে....
মুহূর্তেই থেমে গেলো মুনতাসীর।এই তো গোধূলির বেলা। 
আকাশ লাল হয়ে আছে।সুর্য অস্ত যাবে যাবে ভাব।
তবে আজ একটু বেশি লাল হয়ে আছে আকাশ
হয়তো রাতে বৃষ্টি হবে।তবে বলতে হবে আজ আকাশ এই অন্যরকমের সাজে সজ্জিত হয়েছে।
এই সময়ে উপমা পাশে হলে হয়তো এতো সুন্দর সিন উপভোগ করা যেতো দারুন ভাবে।
কিন্তু সাথে নেই। উহু আছে
আছে মুনতাসীর এর মনে,হৃদয়ে।

তাই তো মেয়েটার কথা ভেবে দু লাইন গান ধরেছিল মুনতাসীর।
কিন্তু রুমে কারো উপস্থিতি পেয়ে চুপ হয়ে গেলো সে। পিছন থেকে শুনতে পেলো,,
-"চমৎকার!তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
ওয়াহ কেয়া সিন হে,,গান আর তুই?মেয়েটা কিন্তু বড্ড বাজে ভাবে তোকে তার মায়ায় ফেলেছে।"
মুনতাসীর কিছু বলল না।মুচকি হাসলো। নাঈম মুনতাসীরকে খোঁচা দিয়ে বলল,,
-”বন্ধু দেখি মুচকি মুচকি হাসছে।ব্যাপার কি?”
-”তুই বুঝি জানিস না?আমাকে খোচাচ্ছিস যে?”
-”তোর মুখ থেকে শুনতে চাই।"
-”কি শুনতে চাস তুই?”
-”তোর নষ্ট থিংকিং।”
-”চুপ করবি তুই?”

খানিকটা গম্ভীর কণ্ঠে বলল মুনতাসীর।কিন্তু নাঈম থামার নাম তো নিলোই না। 
উল্টো দাঁত কেলিয়ে বলল,,
-’তুই এমন ভাবে হাসছিস,
এই হাসি থেকে যে কেউ বলে দিবে তোর মাথায় উল্টো পাল্টা কিছু ঘুরছে।”
-”ফালতু কথা।”
-”উচিত কথা সবার কাছেই ফালতু লাগে।আর তুই যে কি সেটা তো আমি জানি। 
তোর মনে যে লাড্ডু ফুটছে তা কিন্তু আমি জানি।”
-”কি জানিস তুই?”
ভ্রু কুচে বলল মুনতাসীর।নাঈম খানিকটা ভাব নিয়ে বলল,,
-’এই যে ,,তুই বিয়ে না হতেই বাসর রাতের চিন্তা করছিস।”
-”-’তুমি কি ভালো হবে না মাসুদ?”

-”আমি একটা মাসুম বাচ্চা।আমি কি এতো কিছু বুঝি নাকি?
আমাকে এমন ভাবে বলতে তোমার একটুও বিবেকে বাধে নাই?”
-”নাটক কম কর পিও।”
-”লজ্জা দিচ্ছিস কেনো?
-”আগে তুই শুরু করেছিস।”
-’তুই লজ্জা পাচ্ছিস বলেই লজ্জা দিয়েছি।
-”আর কিছু বলার আছে?”
-”হুম।তো কিভাবে প্রপোজ করবি?”
-’সেটা তো আমি তোর থেকে জানতে চাই।আমার তো এগুলা সম্পর্কে কোনো আইডিয়া নেই।সে জন্যইতো তোকে অফিসে ডেকেছি।”
-”তোর নিজের বুদ্ধি নাই?”

-’তুই জানিস আমি এগুলো তে ভীষণ কাঁচা।”
-’আচ্ছা শুধু তোকে বেসিক কিছু আইডিয়া দেই।
কিন্তু মনের ভাব তুই নিজের মতো প্রকাশ করবি।”
-”আচ্ছা যদি হিতে বিপরীত হয়?”
-’আগেই নেগেটিভ চিন্তা কেনো করিস?কিছু হবে না।
আর পড়ে দেখবি তোর এই হিতে বিপরীত করতে করতে সে তোকে তার বাচ্চার মামা বানিয়ে ফেলেছে।তুই বাবা হওয়ার বদলে মামা হয়ে যাবি।”
-”রাবিশ কথা বলবেন না।”
-”আপনি দয়া করে উত্তেজিত হবেন না।”
-”এভাবে বলিস না।”
-”আই এম জাস্ট কিডিং।”
-”হুম।”
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল দুজনে।
নাঈম বেরিয়ে গেলো মুনতাসীর এর কেবিন থেকে।
মুনতাসীর বেশ কিছুক্ষণ কাজ করে রওনা হলো বাড়ির পথে।

ছেলে পক্ষ চলে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।দু পক্ষের বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়েছে।
ছেলে ভার্সিটির টিচার।বেশ ভালো। আর্থিক অবস্থা ও বেশ ভালো। 
খোঁজ খবর নিয়ে পরিবারের সম্পর্কেও ভালো রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।
এই তো কিছুক্ষন আগে উপমা ও ছেলে কে আলাদা ঘরে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
উপমা তো ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।এতো টা পরিমাণ নার্ভাস আগে কখনই লাগে নি। 
উপমাকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে সেই যুবক বলল,,

-"আপনি কি অসস্তি ফিল করছেন উপমা?দেখুন রিল্যাক্স হোন। ইজি হওয়ার ট্রায় করুন"
উপমা কিছু বলল না।সেই লোক আবার বলল,,
-"উপমা আপনার চোখ কিন্তু ভীষণ সুন্দর।"
উপমা অবাক হলো। চোখ তুলে তাকালো।লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ডিসেন্ট।
কিন্তু লোকটার কথা একটুও ভালো লাগলো না উপমার।
দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো সে।সেই লোক আবার বলল,,
-'আপনি কিন্তু বড্ড চুপ চাপ স্বভাবের।"

উপমা এবারও কিছু বলল না। সেই লোক আরও কিছু কথা বলল। 
উপমা শুধু হু হা করলো।সেই লোক চলে গেলো নিচে।
এই যে এখন উপমা তার রুমে বসে মনে মনে দোয়া করছে যেনো তারা দ্রুত চলে যায় 
এবং সকল কাহিনী এখানেই শেষ হয়।কিন্তু মুহুর্তেই দরজা খোলার শব্দ কানে আসে। 
উপমা সেদিক তাকায়।মোর্শেদা বেগম এসেছেন।হাতে যেনো কিসের প্যাকেট।
উপমা কিছু বলে না।মোর্শেদা বেগম সেই প্যাকেট উপমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,

-”এটার ভেতর শাড়ি আছি।তুমি তৈরি হয়ে নাও।
তোমার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে আজ।কাজী সাহেব যে কোনো মুহূর্তে চলে আসবেন।”
উপমা যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না।
বেশ বড় একটা ধাক্কা খায় সে।মামীর কথা বুঝার চেষ্টা চালায়।
নিজের মনকে শান্ত করতে আমতা আমতা করে বলে,,
আমার বিয়ে?

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com