Breaking News

ইন্ধুবালা । পর্ব - ০২



ঘুটঘুটে অন্ধকার।হাড় কাঁপানো মাঘের শীত।
টপটপ শব্দের আলোড়ন সৃষ্টি করে সবুজ বৃক্ষরাজের ওপর ঝড়ে চুয়ে চুয়ে পড়ছে শিশিরকনা।
ঘোর তিমির ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্নে জঙ্গলে পেঁচা ভায়ার সাথে তাল মিলিয়ে 
একাধিক ভাবে ডেকে চলেছে কালাচাঁদ ভায়া কাকপক্ষীও ।
আজ যেন তারা পণ করেছে সারারাত না ডেকে ক্ষ্যান্তই হবে না।
অথচ তাদের ডাক শুনে মনু্ষ্যকূলের মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র উত্তেজনা।
মানুষকে ভয় দেখিয়ে তারা যেন পৈশাচিক আনন্দ উদযাপন করে।
ছনের ঘরের সামনে শুকনো পাতার ওপর কয়েক জোরা পায়ের মচমচ শব্দের আলোড়ন সৃষ্টি হল। তন্মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক বাড়ির আঙিনায় এসে নিঃশব্দে দাঁড়াল।
উপস্থিত সকলের হাতে ধারালো চকচকে অস্ত্র। 

এতক্ষণে তাদের যে কেউ দেখলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাত।ঘরে থাকা ব্যাক্তিগন বুঝি কিছু টের পেল।
তৎক্ষনাৎ নারপিশাচগুলি ঘরে ঢোকার আগেই তারা সর্তক হল।
প্রিয় সন্তানগুলিকে দুরে সরিয়ে ফেলল।ঘরে ঢুকে কেবল দু'জন নর-নারীকে পাওয়া গেল।
তৎক্ষনাৎ তাদের কালসিটে অধরে পৈশাচিক হাসির আন্দোলন ফুটল।
তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিঁদঘুটে চাপা হাসল।
তারা তো এই দু'জনকেই খুঁজছিল।ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেল। 
বিঁদঘুটে হেসে দলের নেতা বলল,

"তোদের সুখের দিন শেষ এবার নরকে গিয়ে মর।তোদের স্পর্ধা দেখে ভাড়ি অবাক হচ্ছি। 
জমিদারের বিরুদ্ধে প্রমাণ তুলিস।এত বড় স্পার্ধা, এত সাহস।কত বড় মাপের কলিজা!
একবারও মৃত্যুর চিন্তা করছিস তোরা। কি দেখছিস এভাবে?
ভাবছিস আমরা কারা?মুহূর্তে লোকটা বিঁদঘুটে হাসিতে পুরো ঘরময় কাঁপিয়ে তুলল।
বলল,আমরা জমিদারের লোক।সে তোদের মারতে লোক পাঠিয়েছে বুঝেছিস।
যা এবার উপরে গিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমা তো।আর কতকাল জ্বালাবি। 
দাঁড়িয়ে দেখছিস কি তোরা?তরোয়াল চালা ওদের গলায়।"
মুহূর্তে রক্তের বন্যা বয়ে গেল।

পুরো ঘর রক্তে মাখামাখি।দু'টো দেহ মাথাবিহিন ছটফট করতে করতে স্হির ও শান্ত হয়ে গেল।
দরজার পিছনে লুকিয়ে নৈঃশব্দ্যে ফুপাচ্ছে কেউ।
নিজেদের বাঁচাতে আড়ালে লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা । 
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক বালিকার সাথে দু'টো অর্ধবাচ্চা।
প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েটি বাচ্চা দু'টির মুখ তন্মধ্যে চেপে ধরল।বলল,
"চিৎকার করে কাঁদিস না সোনারা।ওরা দেখলে নির্ঘাত মৃত্যু অনিবার্য। 
আমাদেরও খুন করে ফেলবে তখন। "

"হাঁট বলছি।কি হল কানে যাচ্ছে?"
মনে মনে প্রহরি অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে ভয়ংকর কয়েকটা গালি দিল।
শুভ্র সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় শব্দ বিহীন ধীর স্হির পায়ে এগিয়ে এল জমিদার প্রলয়।
পুরো নাম জমিদার বীর প্রলয়।ডাক নাম প্রলয়।দাম্ভিকে ভরা তার হৃদয়।
কঠিনতম মুখশ্রী।ভ্রুক্ষেপহীনভাবে পলক ঝাপটাল।
ভাবশীলভাবে রুক্ষ মেজাজে জিজ্ঞেস করল।
"কি হচ্ছে এখানে?

জমিদার প্রলয়ের কন্ঠস্বর শোনার সাথে সাধে প্রহরী দৃষ্টি নত করল।মাথা নিচু করে বলল,
"সালাম জমিদার সাহেব।"
"ওদের এভাবে টানছো কেন?"
"এই বৃদ্ধ ভিক্ষুক জমিদার বাড়ির দিকে তাকিয়েছিল।
শুধু তাকানোতে'ই সীমাবদ্ধ ছিল না সাহেব। থুথু নিক্ষেপ করেছে জমিদার বাড়ির প্রাচীরে।"
"আর দ্বিতীয়জন?"জানতে চাইল জমিদার বীর প্রলয়।বেশ কৌতূহল তার দৃষ্টিতে।
''জমিদার সাহেব এই কিশোর জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পড়ে হেঁটে গিয়েছে।দেখছেন কত বড় স্পর্ধা!"

প্রহরির কথা শুনে ক্রুটির হাসল জমিদার বীর প্রলয়।আয়েশি ভক্তিতে নিজের আসনে পা তুলে বসল।হাতে তামাক।তামাকের হুকা টানে বাতাসের সঙ্গে ধোঁয়া উড়ায়।উপস্থিত ব্যক্তির কাছে যেটা সবচেয়ে জগন্যতম ঘৃণিত লাগল।সে পা ঝুলাতে ঝুলাতে দু'জনের দিকে তীক্ষ্ণ ধারালো দৃষ্টিতে কয়েকবার দেখল।

তৎপর সিংহের ন্যায় গর্জন তুলে উঠে দাঁড়াল।মুহূর্তে মধ্যে পরিবেশ থমথমে নির্জীব হয়ে গেল।উপস্থিত বৃদ্ধ ও কিশোর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। 
ক্ষণে ক্ষণে তাদের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির তড়িৎ গতিতে বেড়ে চলছে।

জমিদার প্রলয় ক্রোধ মিশ্রিত স্বরে বলল,
"এই অপদার্থ নির্বোধ ভিক্ষুকের চক্ষুযূগল তুলে ফেল প্রহরি।আর এই বোকা কিশোরকে একশ চাবুক মেরে নাকে খড় দিতে বল।
দ্বিতীয়বার জমিদার বাড়ির দিকে জুতা পড়ে কেন চোখ তুলেও তাকাতে যেন হৃদয় কাঁপে ওদের।"

"জি জমিদার সাহেব আপনার কথা মতন হবে সব।"
তন্মধ্যে কিশোরটি চিৎকার করে উঠল।
করুন দৃষ্টিতে তাকাল।বলল,
"ক্ষমা করুন জমিদার সাহেব। ভুল হয়ে গিয়েছে।
আর কখনও এমন ভুল হবে না।"
কিশোরের কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠল জমিদার বীর প্রলয়।
যেটা সকলের কাছে ঘৃণ্য পৈশাচিক হাসি বলে পরিচিত।
কিশোরটির দিকে ফিরে তিনি রুক্ষচিত্তে বললেন,
"জমিদার বীর প্রলয় দ্বিতীয়বার সুযোগ কেন?দ্বিতীয় বার কাউকে ক্ষমা করে না ।
সেটা নিজের পিতা কিংবা বাহিরের অন্য কোন ব্যাক্তি হোক।প্রহরী নিয়ে যাও একে।
জি জমিদার সাহেব।
বৃদ্ধ ভিক্ষুক ঘৃণা মিশ্রিত দৃষ্টিতে জমিদারের দিকে তাকাতে তাকাতে প্রস্হান ত্যাগ করল।
তা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পেল জমিদার প্রলয় ।

অচিনপুর (কাল্পনিক) একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামের প্রভাবশালী দাপটে ভরপুরে বংশ হল জমিদার বংশ।তাদের নাম শুনলেও যেন বাঘ সিংহ এক ঘাটে পানি খায়। 
বাবা দাদা থেকে এদের ইতিহাস শুনেনি এমন কোন মানুষ নেই।
এরা বন্য হিংস্রতম প্রাণী থেকেও হিংস্র। 
বন্য প্রানির থাবা থেকে বাঁচতে পারলেও এদের হিংস্র শকুনের দৃষ্টির থাবা থেকে বাঁচা দুষ্কর ।
বিশাল বড় রাজ বাড়িটি তাদের।পাশেই বিশাল বড় বাইজিগৃহ।
এই গৃহ নিমার্ণ করেছে জমিদার বংশের লোকেরা।

তারা গ্রামের অসহায় সুন্দরী মেয়েদের মনকামনা পুরন করার জন্য বাইজিগৃহে এনে রাখত।
এ রকম কয়েক শত নারীকে আটকে রেখেছিল তারা।
তাদের ক্ষমতা আর হিংস্রতার কারনে মানুষ তাদের বিরুদ্ধচারন প্রতিবাদ করতে গেলেও কলিজা কাঁপত।তাই তারা আর প্রতিবাদ করত না।
আর তাদের এই অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে জমিদাররা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে সৈচারি,অত্যাচারি,নিষ্ঠুর।দিনে দিনে এদের হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা, শোষকতার ক্ষমতা বেড়েই চলেছে।দাম্ভিকতায় যেন এদের মাটিতে পা'ই পড়ে না।
অসহায় কৃষক,দিন মজুমদার শ্রমিক ভাইয়েরা তাদের খাঁজনা সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে না পারলে তাদের ওপর চলে নির্মম অত্যাচার ও অবিচার।
আর তাদের ঘরে সুন্দরী রমনী থাকলে খাজনার বিনিময়ে বাইজি গৃহে দিতে হত।
তাছাড়া জমিদার বাড়ির দিকে যে তাকায় তার চোখ তুলে ফেলা হয়।
কেউ জুতা পায়ে দিয়ে জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে তাকে ১০০ চাবুক মেরে নাকে 
খড় দিতে হয়।

এ রকম অদ্ভুত অদ্ভুত নিয়ম কানুম তৈরি করেছে তাদের বংশদূতরা।
তাদের মধ্যে একজন জমিদার বীর প্রলয়।চার ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয় স্হানে ।
বড় ভাই বিয়ে করেছে।অথচ সে এখন করেনি।
করার মতন অবশ্য প্রয়োজনবোধও করেনি।
আর ছোট দু'টো রয়েছে।সবচেয়ে ছোট যেটি সেটি দশম শ্রেণীতে পড়ে।
বড় ভাই পলাশ বড্ড নারীর প্রতি আসক্তি ।
সারাক্ষণ বাইজিগৃহে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে নারীদের সাথে পরে থাকে।
অথচ ঘরে তার দুই দু'টি সুন্দরী কচি বউ রয়েছে।
তার দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
অচিনপুর ও রূপনগর দু'টো এক সাথে সামলাতে হিমশিম খায় জমিদার প্রলয়।
কেনন,রূপনগরও অচিনপুর দু'টোই বিশাল বড়।
যার কারনে দু'টো একসাথে সামলানো দুষ্কর।
আপাতত জমিদার বংশের সেজ ছেলেকে রূপনগরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই রূপনগর নিয়ে আছে এক বিশাল কাহিনী।

যা অনেকের অজানা ও রহস্য বলা চলে।আগে রূপনগর তাদের ছিল না।
কোন এক সময় অন্যায় যুদ্ধের মাধ্যমে তারা প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল রূপনগর ।
যেটা বর্তমানে জমিদার বাড়ির সেজ ছেলে জমিদার প্রহর সামলাচ্ছে।
সে বর্তমানে রূপনগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত।রূপনগর ছিল অমায়িক সৌন্দর্যের পটভূমি।
 ত দেখতে বেশ সুন্দর।সেখানের ফলনও ভাল।তবে এই রূপনগর তাদের অচিনপুর গ্রাম থেকে কয়েকশত মাইল দুরে অবস্হিত।যেখানে যেতেই লাগেই সপ্তাহ খানিক।জমিদারদের নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের বড় ছেলে জমিদার হয়।সেই দিক পালাশ ছিল বড়।

অথচ সে ছিল নারী লোভি,নির্বোধ, মাথা ভর্তি গোবর ঠাসা।বাকি রইল বীর প্রলয়।তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা,দারুন সাহসিকতা,অত্যন্ত মেধাবিকতা সবটা তার মধ্যে ছিল বিদ্যামান।সবদিক দিয়ে বিবেচনা করে তাকে জমিদার হিসেবে ভূষিত করা হল।জমিদার হওয়ার পর তার মধ্যে এসেছে এক আমূল পরিবর্তন। বেড়েছে হিংস্রতা,নিষ্ঠুরতা,কঠোরতা।অসহায় প্রজাদের প্রতি নৃশংসতা,নিষ্ঠুরতা,হিংস্রতা, অত্যাচার দিন দিন বৃদ্ধি পেতে লাগল।

খাজনা দিতে দেরি হলে'ই তাকে তুলে আনা হত।বিনিময়ে জখম করা হত তার দেহের অঙ্গগুলি।দিন দিন অসহায় কৃষকরা প্রতিদান জানাতে যেন ভুলে বসল।কীভাবেই বা প্রতিবাদ করবে।কে চায় অকালে প্রাণ দিতে?তাই যেচে কেউ আর করেনি প্রতিবাদ।এমন ছোট খাট অন্যায় থেকে ধীরে ধীরে তাকে হিংস্র পশুতে রূপান্তরিত করেছে।আজ যে সকলেন কাছে হিংস্র পশু,অমানুষ হিসেবে পরিচিত।তার নাম শুনলেই লোকেদের মধ্যে তিব্র ভয়াতুর উত্তেজনা শুরু হয়।সে সকলের কাছে আতষ্ক নামে অখ্যায়িত।সে যে রাস্তা দিয়ে হাঁটে সে রাস্তায় একটা মানুষ কেন একটা কুকুরও হাঁটে না।অথচ এ নিয়ে তার মধ্যে নেই কোন সংশয়, নেই কোন অনুতাপ।বরং সে সন্তুষ্ট।তা নিয়ে দম্ভের শেষ নেই তার।

অচিনপুর থেকে দুই মাইল দুরে বিশাল বড় অট্টালিকালিকা।যেটা নব জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিত।বিশাল বড় প্রসাদটিতে জমিদার প্রলয় একা বসবাস করেন।পুরনো প্রসাদটিতে রয়েছে তার পরিবার।কেবল সে ছন্নছাড়া হিসেবে এখানে পরে থাকে।তার সাথে রয়েছে অসংখ্য দাস-দাসি, প্রহরি।পরিবার ছেড়ে এখানে একাকিত্ব কাটাতে সে বেশ আগ্রহ পায়।

কোন কালেই পরিবারের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠেনি।যার কারনে নিজেকে সবার থেকে সে আলাদা করে রেখেছে।এমন দম্ভ,অমানুষ জমিদারকে মানুষ কখনও চায়নি।অথচ নিত্যদিন জমিদারের অত্যাচার থেকে কেউ রেহাই পায় না।কেবল ধৈর্য ধরে তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছে কবে হবে এই অত্যাচারিত জালিমের পতন।কবে তাদের মতন মানুষ শান্তি বাস করতে পারবে।দু'মুঠো ভাত শান্তিতে পেটে পড়বে।তা কি আধও সম্ভব। সত্যিই কি তাদের পতন হবে?দেখা যাক।

গভীর রাত।রাত জাগা নিশাচ পাখিরা কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কনারের কক্ষ থেকে দুইজন নর নারী কুরুচিপূর্ণ আওয়াজ ভেসে আসছে।
কেউ সুখে আত্মনাৎ করছে, কেউ মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
শারীরিক চাদিহা পূরন হতেই তরোয়াল দিয়ে নগ্ন নারীর দেহটি থেকে মাথা আলাদা করে
তৃপ্তির পৈশাচিক হাসল সে।প্রহরি ডেকে বলল,
"রক্তগুলি একটি পাএে রাখো।
আজ স্নান করবো দুধ গোলাপের সাথে রক্ত নদীর স্রোতে।
জলদি গোসলের ব্যবস্হা করো।"

তার হুংকারে কেঁপে উঠল উপস্হিত প্রহরি দু'জন।থরথর করে কাঁপছে তাদের হস্তদ্বয় ।
প্রহরিরা তড়িঘড়ি করে রক্ত পাএে রেখে লাশটা সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলল।
তা দেখে হাসল জমিদার বীর প্রলয়।
প্রতিদিন একজন করে রমনী তার রাএি যাবন করতে আনা হয় আর সকলকে মনের 
কামনা মেটানোর পরে এভাবে প্রাণ দিতে হয় আর তাদের রক্ত দিয়ে স্নান করে সে 
অদ্ভুত রকমের তৃপ্তি পায়।যেটা সে দৈহিক মিলনেও পায় না কথাটা ভাবতে সেই ঘর 
কাঁপিয়ে হেসে উঠল।তার হাসির শব্দ শুনে প্রহরীদের মধ্যে এক প্রকার তীব্র 
উত্তেজনা শুরু হল।তাদের মধ্যে তৎক্ষনাৎ থরথর করে কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেল।
কয়েকজন তো ভয়ে জুবুথুবু হয়ে রইল।

শিউলি ফুলের সুভাস তীব্র আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।এত সুন্দর সুভাস।।
জমিদার বীর প্রলয় নাক টেনে তার সুভাস নিল।খুব পছন্দের ফুল তার।
শিকারে প্রস্তুতি নিয়ে আজ বের হল সে।
সঙ্গে রয়েছে প্রিয় ঘোড়া পঙ্গিরাজ।
নামটা অবশ্য তার দেওয়া।
তার ধারনা মতে,তারা ঘোড়া পঙ্গিরাজের মতন দৌড়াতে পারে যার কারনে সে পঙ্গিরাজ নামে পরিচিত।
জমিদার বন্ধু সুভাস একজন ভবঘুরের লোক।
বেশিরভাগ সময় সে ভবঘুরে কাটাতে পছন্দ করে।
অনেকদিন পর আজ আসবে বলল।দুই বন্ধু মিলে তাই মনস্হির করল শিকারে বের হবে।
ঐ তো সুবাস এসে পড়ল।

মুচকি হেসে সুভাস রসিকতা করে বলল,
কি রে ব্যাটা এত তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলি।
আমি তো ভাবলাম এখনও শয্যাসঙ্গিনীদের সাথে নিদ্রায় সুখময় রজনী যাপন করছিস।
তোমার ভাবনারা অধিক বন্ধু।একটু কম কম ভাবো।
এখন ঘোড়াশালা থেকে ঘোড়া নিয়ে আয় জলদি।
কে আমি?অসম্ভব। তোর প্রহরিদের ডাক না।
এই তুই না আমার বন্ধু।এমন নিষ্ঠুর হচ্ছিস কেন দিন দিন?
--আমি নিষ্ঠুর এই কথা তুই দু'টো দিন পর হলেও বুঝলি এতেই আমি সন্তুষ্ট।
চল পঙ্গিরাজ।পঙ্গিরাজকে চাবুক মারতেই সে বাতাসের বেগে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে চলল।
আট মাইল দুরে উত্তরের নিবিড় জঙ্গল।
এখানে রয়েছে হরিন, বাঘ,সিংহ, খরগোশ, মহিষ আর অসংখ্য প্রাণী।
জমিদার বংশের কমবেশি সকলে এই জঙ্গলে শিকারি করতে আসত।
সে ক্ষেএে তার মধ্যে সে একজন।
দু'টো শিকার করে তার মুখে তৃপ্তির হাসি।
বন্ধু সুভাস একটিও শিকার করতে না পেরে মুখটাকে ভুতুম পেঁচার ন্যায় করে ফেলল।
পেঁচার মতন মুখখানা দেখে প্রলয় ক্রুটির হাসল।
মেজাজ খারাপ করে চোখ রাঙাল সুভাস।

"একদম হাসবি না।"
উপহাস করে সে বলল,
"দেখলি জমিদার বীর প্রলয়ের ক্ষমতা।এসেই দু'টো শিকার করে ফেললাম।
থাক তুই এখানে। শিকার কর।আমি থাকলে তোর ভাগে শূণ্য যোগ হবে।
তার চেয়ে বরং আমি অন্য কোথায় যাচ্ছি।তুই এখানে শিকার কর।
শিকার করা শেষ হলে তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়াস।
আমি চলে আসব কথাটা বলেই সে পঙারাজকে নিয়ে 
চোখের পলকের মধ্যে হাওয়ার বেগে মিলিয়ে গেল।
পথিমধ্যে ফুটফুটে একটি খরগোশ ছানা দেখতে পেল।
এত সুন্দর ছানাটিকে দেখলে যে কার মায়া হবে।
হাত বাড়িয়ে আদর করতে মন চাইবে।নরম কমল পশমে হাত রাখতে মন চাইবে।
অথচ সেখানে অত্যাচারি নিষ্ঠুর জমিদার সাহেবের মনে বিন্দু মাএ দয়া হল না।
বরং হুট করে খরগোশ ছানাটির গায়ে তীর ছুড়ে মারল।
তীরটি তেমন লাগেনি বললে ভুল হবে।এক পায়ের পাশে কিছুটা লাগল।
ক্ষত পা নিয়ে ঝোপের মধ্যে দৌড় দিল খরগোশ ছানাটি।

প্রলয় আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল।তার নিশানা তো ভুল হওয়ার কথা নয়।
সে দ্রুত গতিতে পুনরায় ছুটল খরগোশ ছানাটিকে আক্রমন করতে।
মুহূর্তের মধ্যে লাপাত্তা হয়ে গেল ছানাটি।মেজাজ তার খিটমিট আকাশচুম্বী হয়ে উঠল।
ইচ্ছে করল খরগোশ ছানাটিকে পেলে হাতের মুঠো নিয়ে চেপে মেরে ফেলতে।
এত বড় সাহস তার হাত থেকে পালায়।সামন্য একটা পশু।
তার আগেই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল।
তার পঙ্গিরাজের পায়ে কোথা থেকে এসে একটি তীর গাঁথল। 
তৎক্ষনাৎ সে আশ্চর্য হয়ে গেল।বিমুঢ় ধূসর নয়নে সামনে তাকাল।
ততক্ষণে ঘোড়াটি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল।

দেখল, একজন রমনী। 
তার হাতে রক্তাক্ত অবস্থায় খরগোশ ছানাটি ঘাপটি মেরে বসে আছে।
খরগোশ ছানাকিকে দেখে তড়তড় করে তার আগত মেজাজটা বেড়ে গেল।
সে মেয়েটার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি ফেলে । 
শুভ্র সাদা নিকাপের আড়ালে মুখশ্রী ঢাকা।হাতে বিশাল বড় তীর।
হালকা নীল বর্ণের চোখের মণি।পড়নে মসৃণ কাপড়ের ঘাগড়া।
মেয়েটার চোখের মনিটা তার কাছে বেশ অদ্ভুত রকমের ঠেকল।
কেমন জানি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।যেন চোখ ঝলসে যায়। 
সে ভাবল, এটা তার চেখের দোষ কিংবা একটা রোগ।তাই সে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
হুট করে তার মনে পড়ল তার পঙ্গিরাজের পায়ে তীর।
ঠিক তখনি সে রাগে ফোসফাস করতে লাগল।
সামান্য একজন মেয়ের এত বড় স্পর্ধা দেখে মুহূর্তে গর্জন তুলে উঠল ।
হিংস্র বাঘের ন্যায় হুংকার তুলে উঠল। বলল,

"এত বড় স্পর্ধা তোমার।
সামান্য একজন অবলা নারী হয়ে আমার পঙ্গিরাজের পায়ে তীর নিক্ষেপ করলে।
এর শাস্তি কতটা ভয়াবহ কঠিনতম হতে পারে ভাবতে পারছো নির্বোধ বোকা মেয়ে।
প্রলয়ের কথা শুনে মেয়েটা শরির দুলিয়ে হেসে উঠল।
মুহূর্তে প্রলয়ের মেজাজ তড়তড় করে বেড়ে গেল।ক্রোধ ও দ্বিগুন চওড়া হল।
সে তীর নিক্ষেপ করল মেয়েটার গায়ে।
তৎক্ষনাৎ মেয়েটা ঝড়ের বেগে সরে গেল।
তীরটা গিয়ে বিধল একটি গাছে।তন্মধ্যে মেয়েটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল।
তড়িৎ মরুৎ গতীতে সে প্রলয়ের হাতে তার ধাড়াল তীর নিক্ষেপ করল ।
আলত স্বরে তিনি আর্তনাদ করে উঠলেন।
""আহ।"
তার আর্তনাদ শুনে হাসল মেয়েটা।
তাজা রক্তের স্রোতে প্রলয়ের হাত মেখে যাচ্ছে।সেটা পরখ করে দেখছিলেন তিনি।
তখন মিহি স্বরে ভেসে এল।

কেমন লাগল তীরের আঘাত?অসহায় প্রাণীদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করলে
ওরাও ঠিক একই ভাবে কস্ট পায়।ওরা বোবা প্রাণী কথা বলতে পারে না। 
তাই কাউকে ওদের কষ্টের কথা বোঝাতে পারে না।
ফের যেন আপনি এখানে শিকার করতে না আসেন।
এবার তো বেঁচে ফিরলেন।এর পরের বার আর ফিরে যেতে দিব না।
এবার তো তীর হাতে নিক্ষেপ করেছি।
এর পরের বার সোজা আপনার বুকে গিয়ে তীর মারব।
কথাটা বলে মেয়েটা ঝড়ের গতিতে জঙ্গলের মধ্যে মিলিয়ে গেল।
আহম্মকের মতন চেয়ে রইল কেবল সে।রাগে ক্ষোপে সে থরথর করে কাঁপছে। 
তার চোখ দু'টি রক্তজবার ন্যায় আকার ধারন করল বোধহয়।
এক হাত দিয়ে ঘোরার চাবুক ছুড়ল।
অপর হাত দিয়ে অবিরাম রক্ত ঝড়ছে।তাতে যেন তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
সে ব্যস্ত অজানা মেয়েটাকে নিয়ে।
কত বড় স্পর্ধা জমিদার প্রলয়কে হুমকি দেয়।
এর রক্ত দিয়ে আমি গোসল না করা পর্যন্ত শান্ত হব না।

চলমান...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com