Breaking News

ইন্ধুবালা । পর্ব - ০৩



কখনও মানুষের মাংস খেয়েছেন?খুব সুস্বাদু! তাজা লাল টকটকে মাংস।সেই স্বাদ! একবার খেলে মুখে লেগে থাকে।আর রান্নাটা করাটাও অমায়িক। অবশ্য আমার প্রসাদে প্রতি সপ্তাহে একবার রান্না হয়।আজও রান্না হয়েছে খেয়ে যাবেন কিন্তু।আমার আমার মানুষের মাংসের চেয়ে মানুষের নরম তুলতুলে মস্তিষ্ক বেশি পছন্দ কথাটা বলে চাপা হাসলেন জমিদার প্রয়ল।"

তার মূখ্য বাক্য শুনে ততক্ষণে ভয়ে উপস্থিত ব্যাক্তিদের মধ্যে মৃদু কম্পন দিয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল।মুখশ্রীতে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ।দৃষ্টি অবিশ্বাস্য এলোমেলো।
সাদা চামড়ার ভীনদেশী দু'জন ভীতিগ্রস্ত হয়ে আড় চোখে দু'জনে দু'জনের দিকে তাকাল।
একজন টম অপরজন জনি।
তারা এসেছে ইতালি থেকে।জমিদারের সাথে নীলচাষ নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন।
উদ্দেশ্য এখান থেকে কম দরদাম করে নীল নিয়ে বাহিরের
অন্যান্য দেশগুলিতে দ্বিগুন চওড়া দামে বিক্রি করবে।
এতে তারা দ্বিগুন লাভবানও হবে।অথচ জমিদারের দামের সাথে তাদের দাম মিলছে না।
নিজেকে শান্ত রেখে এক বুক সাহস সঞ্চয় করে জনি বলল,
আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন জমিদার প্রলয়।মানুষের মাংস আবার মানুষ খায় নাকি।
তার কথা শুনে পৈশাচিক আনন্দ পেল সে।ক্ষানিকটা মৃদু হেসে নিল।রয়ে সয়ে বলল,
আপনি টেষ্ট করবেন।এক প্লেট এনে দিবো নাকি।
নাক মুখ কুচকে দু'কদম দুরে সরে বসল জনি।মানুষের মাংস খেতে কেমন বিঁদঘুটে স্বাদ হব ভাবতেই তার ভিষণ বমি পাচ্ছে ।তবে মুখটা বড্ড চিন্তান্বিত।সংকীর্ণ মনে ভাবুক রইল।বুকটা হালকা মোচড় দিয়ে উঠল।কম্পিত নয়নে কয়েক পলক ঝাপটায়। বলল,
আপনি মজা করছেন, না।
মজা আপনার সাথে করাই যায় বলে হাসল সে।
হুট করে কোমর থেকে টান মেরে চকচকে ধাড়াল তরবারি বের করল।
কোন প্রকার কথা বলার সুযোগটি দিল না।
মুহূর্তে জনি নামের ভীনদেশীর ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলল।
ছটবট করতে লাগল মাথাবিহিন দেহখানা।দুরে পরে আছে মাথাটি।
তা দিয়ে পানি সেচের মতন রক্ত ছুটছে।তা দেখে উপস্থিত টম নির্বাক হয়ে গেল।
ভিতু মুখখানা নিয়ে বলল,

দুঃখীত জমিদার প্রলয়।ক্ষমা করবেন আমায়।আসি।
দাঁড়ান টম।মানুষের মাংস খাবেন না।আপনি অন্তত একটু টেষ্ট করুন।ভিষণ সুস্বাদু।
জমিদারের রসিকতাপূর্ণ হিংস্র চাহনি দেখে মুহূর্তে তার হৃদয় কম্পন তুলে ঝড় নেমে এল।
সে আমতা আমতা করে বলল,
অন্য একদিন।
আচ্ছা আসুন তাইলে।
অর্ধেক পথ যেতেই টমের আর্তনাদ শোনা গেল।
ধাড়াল বিশ মাখা তীর নিক্ষেপ করা হল তার বুক বরাবর।
তার আর্তনাদ শুনে মৃদু হাসল জমিদার বীর প্রলয়।
রক্ত মাখা তীরটা বুকের ওপর পাড়া দিয়ে টেনে বের করে বলল,
আমার সাথে তর্ক করার মতন দুঃসাহসিকতা আর কেউ দেখাবে না।
আজকের ঘটনা তার সাক্ষি।ভাল থেকো বন্ধু ওপারে।
হুট করে মন থেকে ভেসে এল সত্যি জমিদার প্রলয় তোমার সাথে যে তর্ক করে তাকে তুমি শাস্তি দেও।
অথচ সেইদিনের অজানা মেয়েটিকে তুমি কিছুই বলনি।

কথাটা মনে উঠতেই সে হিংস্র হয়ে উঠল। মুহূর্তে মুখশ্রী রক্তজবার ন্যায় রং ধারন করল।
সেই রাতে সে এক ফোটাও ঘুমাতে পারলো না।
দু'জন নারী নিয়েই তার নির্ঘুম রজনী কেটে গেল।
পরদির খুব ভোরবেলা পঙ্গিরাজকে নিয়ে সে বেড়িয়ে পড়ল।
সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো রঙের মসলিনের চাদরটি গায়ে জড়ানো।
বাতাসের বেগে পঙ্গিরাজ ছুটে চলেছে।
জঙ্গলের মাঝামাঝি আসতেই সে একটি শিকার খুঁজে পেল।
সেটাকে তীর নিক্ষেপ করতেই হাওয়ার বেগে ছুটে চলল।
মুহূর্তে তার মেজাজ খারাপ হল।সে শিকারটির পিছন পিছন পঙ্গিরাজকে নিয়ে ছুটল।
কিছুদুর যেতেই বুঝল সে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে।
এখানে পথ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ব্যপার।কিছুটা সামনে আগাল পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য।
তখন সামনে বিশাল আকারে একটি পদ্মদিঘি দেখা গেল।
শেওলা পড়া দিঘির জলে।পানি স্বচ্ছ কিছুটা বলা চলে।
সে কিঞ্চিৎ আরও এগিয়ে চললো।তখন ভেসে এল একটি মিষ্টি সুরের গলা।

সে কি গান! আহা! কি মিস্টি সুর তার।অপূর্ব! অপূর্ব! জবাব হয় না।
সে গানের সুরে মোহিত হয়ে ধীরে ধীরে তীব্র নেশাখোরের মতন এগিয়ে চলল সুরের মালিককে খুঁজতে।
কুয়াশার কারনে সামনে দেখা দুষ্কর।
তারপরেও সে কস্ট করে সামনে আগাল।
কিছুদুর পর দেখা গেল একটি রূপসি কণ্যাকে।
যে খুব মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে শিউলি ফুলের মালা গাঁথছে।
মাথার পিছনে রয়েছে শিউলি ফুলের গাছ।
সেখান থেকে ঝড়ে অসংখ্য ফুল তার মাথার ওপর দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে পড়ছে।
দৃশ্যটা মনমুগ্ধকর।বিশেষ করে মোহনীয়।
যদি কোন রকম সুযোগ হত সেই মুহূর্তটা বন্ধি করে রাখত।
আবছুস তেমন প্রযুক্তি নেই।তবে মেয়েটা উল্টো দিকে ঘুরে থাকায় মুখশ্রীভাব ঠিক দেখা যাচ্ছে না।
মেয়েটার হাঁটু সমান দিঘল ঘনো কেশগুলি গাছের শিকরের ওপর সৌভা পাচ্ছে।
সে ভাবল,মেয়েটার চুল বুঝি অনেক লম্বা।
তাই হয়ত চুল গুলি গাছের শিকরের ওপর রেখে দিয়েছে।
চুলের ওপর কয়েকটি ফুল সৌন্দর্য বাড়াতে হামাগুড়ি দিয়ে যেন বসে পড়ল।
সে খানিকটা সামনে আগাল।হুট করে তার পঙ্গিরাজ শব্দ তুলে ডেকে উঠল।
তৎক্ষনাৎ মেয়েটি তড়িঘড়ি করে ঘোমটা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিল।
জমিদার প্রলয় তাকিয়ে রইলেন।এই মুহূর্তে সে চরম বিরক্ত পঙ্গিরাজের ওপর।
মেয়েটার মুখ দেখাটা যেন তার অত্যন্ত জরুরি ছিল।
মেয়েটা কয়েক পলক তাকিয়ে দৌড়ে পালাতে যাচ্ছিল।
জমিদার প্রলয় তখন পিছন থেকে ডেকে উঠল।বলল,
দাঁড়াও ।
মুহূর্তে থেমে পড়ল সে।
প্রলয় পঙ্গিরাজ থেকে ততক্ষণে নেমে এসেছে।
সে মেয়েটার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াল।বলল,
এই গহিন অরন্যে তুমি একা কি করছো?
মালা গাঁথছিলাম।
বেশ ভাল।তা নাম কি তোমার?
আশ্চর্যতম লোক তো।আমার নাম আপনাকে কেন বলতে যাব?
আমি কে সেটা জানো তুমি?
প্রচন্ড রাগল মেয়েটা।বলল,
যেমন করে বলছেন যেন আপনি ঐ নিষ্ঠুর জমিদার প্রলয়।
অদ্ভুর দৃষ্টিতে তাকাল প্রলয়।
তুমি জমিদার প্রলয়কে চিনো।
না।আর চিনতোও চাইনা ও নিষ্ঠুর,নির্দয় জমিদারকে।যে মানুষকে মানুষ মনে করে না।
নারী লোভি কোথাকার।ওর মুখ দেখলেও পাপ হবে পাপ।খুবই জগন্য পাপ।আসি।
পথিমধ্যে খেঁজুরের কাটায় মেয়েটার শাড়ির আঁচল আটকে পড়ল।
সেটা দেখে জমিদার প্রলয় ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকাল।
মেয়েটা আপ্রাণ চেস্টা করে যাচ্ছে আঁচলটি ছুটাবার জন্য।
জমিদার প্রলয় ভাবল,তার কি সাহায্য করা উচিত।ভেতর সত্তা থেকে উওর এল।
ছিঃ তুমি না জমিদার প্রলয়।তুমি কেন সাহায্য করবে?তুমি তো নিষ্ঠুর,নির্দয়।
তোমার দ্বারা কাউকে সাহায্য করা মানায় না।বরং তোমাকে হিংস্রতায় স্বার্থপরতায় মানায়।
সে বুক ফুলিয়ে এক বুক দম্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

মেয়েটা কাটা থেকে আঁচলটি ছাড়াতে না পেরে রেগে জোরে টান মারল।
সাথে সাথে মাথা থেকে আঁচলটি ঝড়ে পড়ে গেল।কিছুটা আঁচল ছিড়ে গেল।
জমিদার প্রলয় চোখের পলক ফেলতে কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলে বসল।
মানুষ চিনতে সে ভুল করে না।এটা সেদিনের মেয়েটা।
যার চোখ দু'টি ছিল হালকা নীল।
তার উচিত এখন প্রতিশোধ নেওয়া।
তবে সে কেন যাচ্ছে না মেয়েটাকে আঘাত করতে।অদ্ভুত তো।
মানছি মেয়েটা ভয়ংকর সুন্দরী।
তার ওপর মুগ্ধ করার মতন কেশ।দু'টো মিলিয়ে কোন দুনিয়াবি পরি বলা জায়েজ।
সেখানে সে কিনা শএুকে ছেড়ে দিবে মানা যাচ্ছে না।না এটা মানা যাচ্ছে না।
মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে যেন ভয়ংকর পাপ হয়ে যাবে।
মেয়েটা ততক্ষণে চলে যেতে লাগাল।
সে পুণরায় ডাকল।
দাঁড়াও। অন্তত নামটা বলে যাও।
মিহি স্বরে ভেসে এল,
ইন্ধু.... আমি ইন্ধুবালা।
নামটা শুনে চমৎকার হাসল জমিদার প্রলয়।বোকা মেয়ে।
জমিদারের সামনে বসে জমিদারকে অপমান করা চাট্টিখানি কথা নয়।
নেহাৎ তোমাকে মাফ করা যায়।অবলা নারী বলে কথা ।
তবে দু'বারের অন্যায়ের জন্য সাধারন শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।
আমি জমিদার প্রলয় কোন মোহতে আটকে পড়ি না।যতই সুন্দরী রূপসি হও না কেন?
এসবে জমিদার প্রলয় গলবে না।তোমার শাস্তি তোলা রইল মেয়ে।
দেখা যাক তুমি জমিদার প্রলয়কে না দেখে কোথায় লুকাও।

পিছনের দরজার ফটক দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঢুকে পড়ল সে।
ঝটপট গা থেকে বাসন্তী রঙের শাড়িটা খুলে ঘাগড়া পড়ে নিল।
চুলগুলি আধখোঁপা করে এমন ভাব নিল সে যেন সবে ঘুম থেকে উঠল ।
হাতে করে কয়লা নিয়ে দাঁত ঘর্ষণ করতে করতে পুকুর পাড়ের দিকে যেতে লাগল।
তখন মিষ্টি সুরে ভেসে এল।
এই ইন্ধু দাঁড়া।
পিছন ফিরে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল ।রুক্ষ মেজাজে বলল,
কি??
আশ্চর্য হয়ে তাকাল ঊর্মি।মেয়েটা সকাল সকাল এমন জলদস্যুর মতন আচারন করছে কেন?
অতশত ভাবতে হলো না।তার মধ্যে ইন্ধু বলল,
ডাকলি কেন?
আমার সাথে মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন?
বুবুকে বলে দিবনি তুই যে সকাল সকাল লুকিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিস।
চোখ রাঙিয়ে তাকাল সে।ক্ষোপে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরল।নিজেকে তটস্হ করে বলল,
তুই দেখলি কি করে?
আপনি পাতায় পাতায় চললে আমিও ডালে ডালে চলি বুঝেছেন মেরি বোন হে।চলেন এখন মুখ ধুব।

দু'বোন মুখ ধুয়ে বিছনার ওপর গিয়ে বসল।ষার্টের কাছাকাছি একজন পৌঢ়া ঢুকল তন্মধ্যে।
মুড়ির চারটা মোয়া দু'বোনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মুখে পান চিপলো।
বলল,বড় নাতিটা সকাল সকালে গেল এখনও আসল না।
বুড়ি মানুষ বয়স হয়েছে এখন আর আগের মতন হাঁটতে পারি না।
কোমর ব্যথা করে।মেয়েটার তোরা একটু খোঁজ খবর নিবি না লো।
ইন্ধু আশ্চর্যতম ভঙ্গিমায় তাকাল।মুড়ির মোয়ায় পুণরায় কামড় বসিয়ে বলল,
সেকি কথা বুবু কোথায় গিয়েছে?
বলল তো প্রাইভেট পড়াতে।
ঊর্মি কাচুমাচু করে বলল,
"ও দাদি তুমি আমাদের তিন বোনের মধ্যে বড় বু্বুরে সবচেয়ে বেশি ভালবাসো ।
আর বড় বুবু আমাদের দু'জনের মধ্যে ইন্ধুরে বেশি ভালোবাসে।আমারে তো কেউই ভালোবাসে না।
কেন আমি কি পালক?না আমাকে পালতে এনেছো তোমরা।

পৌঢ়ার মনটা নিমিষে পুলকিত হল।সে রশিকতা করে বলল, হে লো ছেড়ি তোরে এত ভাল বাসলে তোর স্বামী কি বাসবো শুনি।স্বামীর জন্যে কিছু ভালোবাসা তুলে রাখ ছেড়ি।স্বামীরা হল নারীর অলংকার বুঝলি। স্বামী ছাড়া নারী অলংকারহীন।
পৌঢ়ার কথায় ইন্ধু কান দিলো না।সে চোখ কুচকে রইল।বুড়ি অত্যাত্মিক স্বামী ভক্ত।স্বামিকে অধিক সম্মান ও শ্রদ্ধা করে।তার স্বামী সৈয়দ উল্লাহ একজন পাঠশালার শিক্ষকগুরু।গ্রামের আর দশেক জন তাকে সম্মানের চোখে দেখে।তা নিয়ে যেন বুড়ির গর্বের শেষ নেই।

ইন্ধুর অতিরিক্ত কোন কিছুই পছন্দ নয়।ছোট বেলা থেকে সে স্পষ্টভাষী।তিন বোনের মধ্যে কিরন বড়।
সে আর ঊর্মি সমবয়সী।
বড় বোন কিরণ শক্তধাচের মেয়ে।মা বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট বোন দু'টিকে আগলে রেখেছে।
আদর সোহাগের পাশাপাশি কড়া শাসনে বড় করল।ধীরে ধীরে স্কুলে ভর্তি করল।
এখন দু'টো দশম শ্রেণীতে পড়ছে।
তিন বোনের মধ্যে নরম ও কোমল,সরল সোজা বলা চলে ঊর্মিকে।
সে অল্পতেই মানুষকে বিশ্বাস করে নেয়।
মানুষের কস্টের কথা শুনলে তার হৃদয় বড়ই ব্যথিত হয়।আবার অল্পতেই ঘাবরে যায়।
ভিষণ ভিতু প্রকৃতির। বড় বোন কিরণ ছোট খাট একটি স্কুলে মাস্টারি করে।
সাথে পাশাপাশি দু'টো প্রোইভেট পড়ায়।নিয়ম কানুনের ব্যপারে সে অত্যন্ত সচেতন।
জমের মতন ভয় পায় তাকে ছোট সদস্যগণের মধ্যে ঊর্মি।ইন্ধু অবশ্য ভয় পায় না।
তবে যথেস্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করে।অধিক ভালো ও বাসে।তিন বোনের মধ্যে একগুয়েমি, ঘাড় ত্যাড়ামি,বদমেজাজি হল সে।সে কখনও কার শাসন বাঁধা মানে না।
সে তার মর্জি মতন চলতে ওস্তাত।

বড় বোন কিরণ তাকে বারংবার নিষেধ করেছিল সে যেন ঘর থেকে বের না হয়।
যদিও জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হয় তাহলে যেন সে বোরকা পরিধান করে বের হয়।
কেননা,তার কারনে গ্রামে বহুত বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।
সকলের ধারনা এ মেয়ে দেখলে পাএপক্ষের মাথা ঠিক থাকে না।
তাদের মেয়েকে পছন্দ করবে না।
গ্রামে এ নিয়ে কয়েকজনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।
তার মূল কারন একটি মেয়েকে সবাই বিয়ে করতে চায়।
এটা কিরে সম্ভব হয়।সৌন্দর্য সৃষ্টিকর্তার দেওয়া নেয়ামত।
সুন্দর জিনিস দেখলে সকলের ভাল লাগবেই এটা সবারই জানার কথা।
তার ওপর মেয়েটা দেখতে মাসআল্লাহ বলা চলে।
যেহেতু তাকে নিয়ে এত সমস্যা তাই এর মধ্যে গ্রামের একজন যুবক রটে দিল।
এই মেয়েটিকে তারা কেউ বিয়ে করবে না।
এতে কারও আবছুস থাকবে না।
তবে গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ সদস্যগণ মিলে তাদের এক ঘর করে দিলো।বলা হল,
মেয়েটা যেন তার নিদিষ্ট কুঠিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
এতে যুবকরা তাকে দেখবেও না মনের মধ্যে জ্বালা বাড়বেও না।

হুট করে অতিতের কিছু বাক্য মনে পড়ে গেল ।
কোন একদিন এক রাতে একটি গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল তাদের।
ছোটবেলা থেকে সে বেশ সুন্দরী ছিল।তার রূপের প্রসংশায় সকলে পঞ্চমুখ ছিল।
চোখের মনির রং হালকা নীল রঙের ছিল।এ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্নের শেষ ছিল না।
তাকে নাকি ভীনদেশীদের মতন দেখতে লাগত।মাঝে মধ্যে তারও ভিষণ হাসি পায় এসব শুনে।
যাইহোক সেই অনিন্দ্যপুর গ্রামের দু'টো ছেলে পছন্দ করত তাকে।
দু'জনই চাইত ওকে বিয়ে করতে।অসংখ্য বার প্রস্তাবও পেয়েছিল।
বারংবার কিরণ বারন করেছিল।
শেষে ছেলে দু'টোর মধ্যে একবার ভয়ংকর মারামারি ঘটে গেল।
ঘটনা স্হানে ছেলে দু'জনে গভির জগম হয়ে মারা গেল।
সেখানে সালিশের মাধ্যমে তাদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
গ্রামের মাতব্বরের মতে, ভয়ংকর সুন্দরী মেয়ে থাকলে গ্রামের আরো ছেলেরা বিগড়ে যাবে।
পরবর্তী আবার নতুন করে খুনাখুনি সৃষ্টি হতে পারে।কার আগে কে পেতে পারে তা নিয়ে ।
সবকিছু বিবেচনা করে মাতব্বর এই সিন্ধান্ত নিয়েছে।

ঐদিন ঐগ্রাম তাদের ছাড়তে হয়েছিল।তার পরে অচিনপুর গ্রামে আশ্রয় পাওয়া চাট্টিখানি কথা ছিল না।অনেক কাঠখড় পৌঁহাতে হয়েছিল।এখানে এসেও নিস্তার মেলেনি।
একের পর এক সমালোচনা তাকে নিয়ে উঠে এসেছে।
গ্রামের কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে নেওয়া হত না।
কারন তার সৌন্দর্য দেখে যদি বর কনের বদলে তাকে পছন্দ করে ফেলে তখন।
নানা সমস্যার মধ্যে এভাবে সে বেঁচে আছে।ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।
পৌঢ়া নারী শিউলি বানু সম্পর্কে ইন্ধুর দাদির কথায় তার সৎবিৎশক্তি ফিরল।
ততক্ষণে বাড়ির আঙিনায় কিরণের গলার স্বর পাওয়া গেল।ইন্ধু দৌঁড়ে উঠনে নামল।
সৌজন্যমূলক মিস্টি হাসল।বলল,
এই শীতের মধ্যে সকাল সকাল প্রাইভেট না পড়ালে হয়না বুবু।দেও না আমি একটা পড়াই।
তোমার ওপর চাপ পড়ে যাচ্ছে তো।
কিরণ ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকাল।গা থেকে বোরকা খুলতে খুলতে বলল,
"হ তোরে প্রাইভেট পড়াতে পাঠাই।তারপরে জমিদারপুএরা রাস্তা থেকে তোকে তুলে নিয়ে যাক বাইজিগৃহে। কোন দরকার নেই বাপু।যেমন আছিস তেমন থাক।"

মুহূর্তে মুখটা কাঠিন্যভাব চলে আসল তার।মনে মনে ভেবে পেল না সে।
তার বুবুর মতন শক্তধাচের মহিলা কিনা জমিদারদের ভয় পায়।
সে মনে মনে সংকল্প করল।
কখনও যদি সুযোগ হয় সে সবার আগে জমিদারের দ্বিতীয় পুএের মন্ডু কেটে সারা
এলাকার মানুষকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে।নিন দেখে নিন।
এই হচ্ছে সেই অত্যাচারিত,নির্যাতিত, নিষ্ঠুর,নারী লোভি জমিদার প্রলয়।
আজ আপনাদের যত আক্রোস, রাগ,ক্ষোভ আছে মিটান ওর মন্ডুর ওপর।
এই ইন্ধু...ইন্ধু..ইন্ধুবালা কথা বল।কোথায় হারালি?
চোখের সামনে তুরি বাজাতে দেখে থতমত খেয়ে বসল সে।
কি বলছিলে বুবু?
সেকি! কিছু শুনিসনি তুই।
না তো।

আচ্ছা বাদ দে।এখন বল সকাল সকাল কেন বের হয়েছিলি?
কিরনের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলল সে।আড়চোখে ইন্ধু ঊর্মির দিকে তাকাল।
ঊর্মি ইশারায় বুঝাল সে বলেনি।ভাবল,তাহলে বুবু জানল কি করে?
বেতের বাড়ি পায়ের পাতার ওপর পড়তেই সে লাফিয়ে উঠল।মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এল।
উহ! বড্ড লেগেছে বুবু।আর দিও না।ব্যাথা পাচ্ছি।
আরো কয়েক ঘা পড়বে।সত্যিটা ঝটপট বলে ফেল।সকাল সকাল শাড়ি পড়ে বেরিয়েছিলি কোথায়?
শিউলি ফুলে মালা গাঁথতে উত্তরের জঙ্গলে গিয়েছিলাম।
আঁতকে উঠল কিরন।রাগে ফোসফাস করছে সে।উত্তরের জঙ্গল জমিদারদের দখলে।সেখানে তারা যে কোন সময় শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে।তাছাড়া জঙ্গলটিতে হিংস্র পশুর আনাগোনা বেশি চলে।তার চেয়ে বড় হিংস্র পশু জমিদার প্রলয়।তার সামনে পড়লে সোজা বিছানার সঙ্গি হিসেবে তুলে নিয়ে নিবে।বিনিময়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হবে।তার শয্যাসঙ্গি হওয়া মানে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা।এই মেয়েটা মাথায় কি সুবুদ্ধি হবে না।ওর খামখেয়ালি কবে কমবে।নিজের ভাল এখনও না বুঝলে কবে বুঝবে।সে একটু কোমল হল।বলল,

কতবার তোকে নিষেধ করেছি ঘর থেকে বের হবি না।তারপরেও বের হলি কেন?
কিছুটা চটে গেল ইন্ধু। কতকাল আর সে ঘরের চৌকাঠে বন্ধি থাকবে।ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
কেন বের হবো না বুবু?আমি কি দোষ করেছি?আমার সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগে না।দম বন্ধ হয়ে আসে।বিরক্ত রাগে।তাছাড়া আমি বড় হয়েছি।এখন নিজের ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছি।
এই বয়সে ভাল মন্দের কি বুছিস তুই?খুব বড় হয়েছিস না?চল আজ তোর বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। ঘরের ভিতরে ইন্ধুকে রেখে সে ঘর তালাবদ্ধ করে দিল।ইন্ধু চুপচাপ বসে রইল।চিৎকার চেঁচামেচি করল না কোন।
দিন ফুরিয়ে ধরনীর বুকে রাত আসল।ইন্ধু খাবার খেতে আসল না।তাকে দুপুরের পর তালা খুলে দেওয়া হয়েছে।তারপরেও সে রাগ নিয়ে বসে আছে।কিরনও রাগ করে আজ আসল না।সে জানে মেয়েটা বড্ড রাগি।ঘাড়ত্যাড়াও বলা চলে।দিন দিন চরম লেবেলের বেয়াদব হচ্ছে।যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে। অযথা তাই ডাকল না।ক্ষুধা পেলে এমনি এসে খেয়ে যাবে।

রাত তখন ক'টা আন্দাজ করা যাইনি।কুকুরের ঘেউ ঘেউ ধ্বর্ণিতে চারপাশ ভয়ংকর মনে হচ্ছে।তার ভিতরে শীতের রাত।পা চেপে চেপে একজন আগুন্তক কিরনের জানলায় দু'বার টোকা দিল।ফিসফিস স্বরে ডাকল,কিরণ।

কানটা সজাগ হতেই কিরণ বসে পড়ল।চটিজোড়া পড়ে সোজা দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।
ইন্ধু এসেছিল রান্নাঘরে খাবার খেতে।হুট করে কিরণকে জঙ্গের দিকে যেতে দেখে সে স্তব্ধ হয়ে গেল।
খাবার রেখে পিছন পিছন সে হাঁটা ধরল।
মিনিট দুই হাঁটতে হাঁটতে এক আগুন্তক এর সাথে তার বোনকে কথা বলতে দেখল।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বুবু ভিষণ রেগে আছে।হুট করে সে আগুন্তকের গালে চড় মেরে দিল।
ঘটনাটা অতি দ্রুত ঘটে গেল।কিরণ লোকটাকে শাসিয়ে ভিতরে চলে গেল।
কেবল সবটা নিরবে নির্বিঘ্নে পর্যবেক্ষণ করে গেল সে।
তার বুবুর ব্যপারটা তার কাছে কেমন অদ্ভুত ও রহস্যময় লাগল।

চলমান...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com