বখাটে ছেলের পর্দাশীল বউ । পর্ব - ০৭
আর চেপে রাখতে না পেরে মুখ হাত দিয়ে হেসে দিল।নূর এর হাসির শব্দে রাহাত পিছে তাকিয়ে দেখে নূর দাড়িয়ে মুখ চেপে হাসছে।রাহাত নূর এর হাসি মাখা চেহারার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর রাহাত নূরের উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,,,?
রাহাত: হাসির কি আছে,আমি এই প্রথম রান্না করছি।তাই,,,,(বাকি কথা বলতে না দিয়ে নূর বললো).
নূর: তাই রান্না করার চেস্টা করছিলেন,তাই তো??
রাহাত: হুমম!(মৃদ স্বুরে).
নূর: আপনি সরে যান আমি রান্না করছি।(মৃদ স্বুরে).
রাহাত আর কিছু বললো না পাসে চেপে গেল,নূর রান্না করতে শুরু করলো।রাহাত দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।নূর পিছনে তাকিয়ে দেখে রাহাত দাড়িয়ে আছে,,,,
নূর: এইখানে দাড়িয়ে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আসেন গিয়ে।(মৃদ স্বুরে বললো).
রাহাত নূরের কথায় উওর না দিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর নূর রান্নার কাজ শেষ করে রাহাত কে ডাক দিল,এক সাথে খাবার খেয়ে নিল।
নূর খাবার শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে রেখে দিয়ে রুমে চলে এলো।
রাহাত রুমে এসে দেখে নূর হাদিসের বই নিয়ে পড়ছে।
রাহাত: আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। তুমি কি একা থাকতে পারবে বাসায়?
নূর: হ্যাঁ পারবো?
রাহাত: ঠিক আছে,তুমি এই ফোনটা টা রাখো। যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে আমাকে কল দিও।
(একটা বাটন ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো).
নূর ফোনটা নিয়ে বিছানায় রেখে দিল।
রাহাত কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নূর এর দিকে তাকিয়ে থেকে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
নূর কিছুক্ষন হাদিসের বই পড়ে রান্না করতে চলে গেল।
রান্নার কাজ সেরে গোসল করে যোহরের নামাজ আদায় করে রাহাত এর জন্য বসে আছে খাবার নিয়ে।
রাহাত ২টার সময় বাসায় ফিরে আসলো।
রাহাত নূর এর জন্য সব যাবতিও জিনিস কিয়ে নিয়ে এসেছে।
রাহাত: স্যরি নূর একটু দেরি হয়ে গেল,,তোমার সব যাবতিও জিনিস নিয়ে এনেছি।
এগুলো কিনা-কাটা করতে করতে একটু দেরি হয়ে গেল?
নূর:আপনার কেনা জিনিস গুলো আমি নিতে পারবো না।(মৃদ স্বুরে বললো).
রাহাত: কেন??(ভ্রু কুঁচকে).
নূর: আপনার কেনা জিনিস গুলো হারাম টাকার।আমি সেগুলো নিতে পারবো না।
আপনি নিজের টাকা উপার্যন করে আমাকে যদি এক টকরো শোতোও কিনে দেন তারপর ও আমি সেটা আমি হাসি মুখে গ্রহন করবো।কিন্তু এই গুলো আমি নিতে পারবো না,(মৃদ স্বুরে).
রাহাত: ঠিক আছে,কাল থেকে আমি নতুন চাকরি খোঁজা শুরু করবো।
(নূর যদি তুমি আমার পাশে থাকো তাহলে আমি আমার জীবটাও তোমাকে খুশি খুশি দিয়ে দিবো,,
কতোটা ভালোবাসি সেটা আমি তোমাকে কিভাবে বোঝাবো-নূর এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো).
নূর: কি ভাবসেন??
রাহাত: না কিছু না।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি,,এই বিরানির প্যাকেট না নেও।
(২টা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো).
নূর: রান্না আমি করে রেখেছি,এই গুলোর দরকার ছিল না।(প্যাকেট ২টা নিয়ে বললো).
রাহাত: কি রান্না করেছো।নূর প্লিজ তুমি রান্না করো না।
দরকার হয় আমি রান্না করবো তারপরও তুমি রান্না করিও না প্লিজ!
নূর রাহাত এর কথার উওর না দিয়ে খাবার টেবিলে চলে গেন।
নূর এর ignore করার বিষয় টা রাহাত এর কাছে খারাপ লাগলো।রাহাত ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে খেতে বসলো।নূর ও রাহাত এর সাথে খাবার খেতে বসলো।
রাহাত আগে আগে খাবার খেয়ে রুমে চলে গেল।
নূর খাবার খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
নূর রুমে ঠোকার সাথে সাথে রাহাত এর হাতে থাকা হাদিসের বইটা বালিসের নিচে লুকিয়ে ফেলে।
নূর সেটা বুঝতে পেরেছে।রাহাত আস্তে করে ওঠে বালিস হাতে করে নিয়ে অন্য রুমে চলে যাচ্ছে,,,,,
নূর: কোথায় যাচ্ছেন??
রাহাত: পাসের রুমে যাচ্ছি ঘুমাতে, তুমি এই রুমে রেস্ট নেও নূর।(এই কথা বলে রাহাত আর দেরি করলো না পাশের রুমে চলে গেল).
নূর একটু অবাক হলো,,,,,
কিছুক্ষন পর নূর পাশের রুমে গিয়ে দেখে রাহাত বই মুখের উপর নিয়েই ঘুমিয়ে গেছে,,নূর আস্তে করে সেই রুমের ভিতরে গিয়ে রাহাত এর মুখের উপর থাকা বইটা সরিয়ে দেখে একটা হাদিসের বই, এটা দেখে নূর মুচকি হাসি দেয়,,,,,
নূর: এটা লুকানোর কি আছে,,পাগল একটা,,(এটা বলে বইটা পাশে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল).
রাহাত: নূর আমি যানতাম তুমি আসবেই,তারজন্যই ঘুমের ভান দরে ছিলাম,,হ্যাঁ পাগল তো,তোমার জন্যই পাগল হয়ে গেছি আমি!(বাঁকা হেসে মনে মনে বললো).
ক্রিং,,,,ক্রিং,,,,ক্রিং,,,,
রাহাত: হেল্লো,,,রকি হ্যাঁ বল?
রকি: রাহাত ভাই,,বস আপনাকে তার বাসায় আসতে বলেছে?
রাহাত: কেন! তোকে না বলেছি বস কে বলতে এখন আমি আর এই সব কাজ করবো না?
রকি: আমি বলেছি।তারপর ও বস আপনাকে আসতে বলেছে।আপনার সাথে কথা বলবে তাই?
রাহাত: ঠিক আছে আমি আসছি?
রকি: আচ্ছা ভাই?
টু,,,টু,,,,টু,,,,,
ফোন কেটে রাহাত একটু ভাবনাই মগ্ন্য হলো।তারপর নূর কে বলে বাহিরে চলে গেল।রাহাত আছরের নামাজ আদায় করে রকি কে সাথে নিয়ে বসের বাসায় গেল।
রাহাত: বস আমাকে ডেকেছেন?(গম্ভীর স্বুরে জিজ্ঞেস করলো).
বস: Congress রাহাত Congress! তুমি নাকি বিয়ে করেছো। তা আবার আমাকে না জানিয়ে,but why?
রাহাত: স্যরি বস। বিয়েটা অনেক জামেলার মধ্যে দিয়ে হয়েছে,তাই জানাতে পারি নি?
বস: ওহ,,,বাট কাজ কেন ছেড়ে দিয়েছো? তুমি তো এটা জানো এই লাইন থেকে কেউ বের হতে পারে না। এক মাএ মৃত্যু ছাড়া?(রাগি গলায়).
রাহাত: আমি জানি সেটা। আমি আপনার হয়ে অনেক কাজ করেছি হ্যাঁ তাতে আমি মোটা অংকের টাকাও পেয়েছি আপনার কাছ থেকে।আমি অনেক মানুষকে বিনা অপরাধ এ মেরেছি,জীবনটাও নষ্ট করে দিয়েছি,একবার ঐ নিরিহ মানুষের কথা ভেবে দেখে নি।
আমার এই সব খারাপ কাজে যে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে তাকেও পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। নিজের জীবনের কথা বা নিজের জীবনের কোন মূল্যই ছিল না আমার কাছে।আমি জানতাম একদিন না একদিন কুকুরের মতই রাস্তায় মরে থাকবো।আমার ভিতরে ছিলনে কোন ভয়,ছিল না কোন ভালোবাসা। জীবনের ভালোবাসা নামক জিনিসটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম । কিন্তু নূর কে দেখার পর থেকে আমার দুনিয়া বদলে গিয়েছে,নিজের জীবনের আসার আলো খুজে পেলাম মনে হয়েছে।নূর কে নিয়ে বেঁচে থাকার সপ্ন দেখতে শুরু করলাম।
আস্তে আস্তে নূর কে এতোটাই ভালোবেসে ফেলেছি যে নূর ছাড়া চলাটাই আমার দায়,তাই নূর কে জীবনের এক অংশ বানিয়ে নিলাম। বস আমাকে মাফ করবেন! আমি আর এই কাজ করতে পারবো না। এখন থেকে আমি আল্লাহর রাস্তায় চলবো।কোন খারাপ কাজে লিপ্ত হবো না।জীবনে যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন আল্লাহর ইবাদাত করবো।আমার কথায় যদি ভুল হয়ে থাকে বা খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন।(হাত জোর করে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল).(রাহাত এর সাথে রকিও চলে গেল)
বস:রাহাত তুমি যতই ভালো হও না কেন একদিন না একদিন আমার পথের কাল হয়ে দাড়াবেই। জিয়ান,রিমন,ডেনি রাহাত কে পথ থেকে সরিয়ে দেও,দরকার হলে রাহাত এর ভালোবাসার মানুষকে। Go,,,,(রাগি কন্ঠে বললো).
জিয়ান: জ্বী বস,,?
রকি: রাহাত ভাই?
রাহাত: এখন আর রাহার ভাই বলে ডাকার দরকার নেয় রকি?
রকি: তাতে কি হয়েছে,, ছোট কাল থেকে আপনে আমাকে আপনার সাথে রেখে বড় করেছেন।তাই আমি আপনাকে নিজের বড় ভাই মনে করি রাহাত ভাই!
রাহাত রকি কে জড়িয়ে দরলো,,,
রাহাত: ঠিক আছে তুই আমাকে রাহাত ভাই বলেই ডাকিস।(মৃদ হেসে বললো).
রকি: ঠিক আছে ভাই। রাহাত ভাই আপনারা দুই জন অন্য কোথাও চলে যান। বস আপনাদের ক্ষতি করতে পারে।
রাহাত: আমি কাপুরুষ নয় রকি। বস এর ভয়তে আমি পালিয়ে যাবো না।তবে তুই আমার সাথে আর দেখা করিস না,বস জানতে পারলে তোর সমস্যা হতে পারে।
রকি: ঠিক আছে ভাই। কিন্তু মাজে মাজে আপনার সাথে দেখা করতে পারি তো নাকি?
রাহাত: হ্যাঁ,,,আচ্ছা আমি এখন যায় বাসায় তোর ভাবি একা আছে!
রকি: আচ্ছা, ভালো থাকবেন ভাই,আর কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবেন?
রাহাত: ঠিক আছে।
রাহাত রকি কে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে গেল,,,
রাহাত আর নূরের জীনব ভালই চলতে লাগলো,রাহাত ছোট একটা চাকরিও পেয়েছে। ওদের খুব ভালো ভাবেই জীবন কাটতে লাগলো। রাহাত অনেকটাই ভালো পথে ফিরে এসেছে।নূর এর বাবা-মা এখন রাহাত কে মেনে নিয়েছে।একদিন রাত ১১টা বেজে গিয়েছে কিন্তু রাহাত বাসায় এখনো আসে নেই দেখে নূর খুব টেনশনে পড়ে যায়,নূর সারা রাত রাহাত এর জন্য না ঘুমিয়ে গেট এর দিকে তাকিয়ে আছে,কান্না করতে করতে নূর এর চোখ মুখ ফুলে যায়।আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে মোনাজাতে কাঁদতে থাকে নূর।
.
ফজরের নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসে কান্না করতে করতে নূর এর চোখটা লেগে যায় আর সেই সময় হঠাৎ করেই কলিং বেল বেজে ওঠে,নূর লাফ দিয়ে ওঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়,নূর দরজার খুলে অপর পাশে থাকা লোকটা কে দেখে চোখের পানি ছেড়ে দেয়,,,,,,,,?
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com