Breaking News

নুরজাহান রাহাত এর বিয়ের গল্প । পর্ব - ০৪



রাহাত এর পা বেশি ভালো না হলেও অনেকটায় ভালো হয়েছে ,লাঠি বর দিয়ে হাটে রাহাত,,,একদিন নূর হঠাৎ করেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়,,সবাই এটা দেখে খুব চিন্তিত হয়ে যায়,,মাছুম খান ডাক্তার কে খবর দেয়,,সেদিন রাহাত বাসায় ছিল না ক্লাব এ গিয়ে ছিল,,ডাক্তার নূর কে দেখে বলে..??

ডাক্তার: মিসেস খান মিষ্টি নিয়ে আসুন আপনে দাদি হবেন??
রুনা বেগম: আলহাদুলিলাহ,,,ওগো সুনেছো তুমি দাদা হতে চলেছো,,(জোরে মাছুম খান কে বললো)..
মাছুম খান: আলহাদুলিলাহ,,,??
রিনা: ভাবি তোমাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ দিবো,,আমাদের ঘরে নতুন অতিথী আসছে,,??
ডাক্তার: মিসেস খান আমি তাহলে যায়,আর হ্যাঁ আপনার বউ মার শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন??
রুনা বেগম: ঠিক আছে??

এটা বলে ডাক্তার চলে গেল,,সবাই এই কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছে,,নুরজাহানের পরিবারের সবাইকে এই খবর জানিয়ে দেয়,,তারাও অনেক খুশি হয়েছে,, নুরজাহান মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছে,,,
রিনা: ভাবি তুমি বসো আমি মিষ্টি নিয়ে আসছি এখনি??(এটা বলে রিনা নিচে চলে গেল).
রুনা বেগম: জানো বৌমা আমরা আজ অনেক খুশি ,,আমি তো ভাবছিলাম আমরা নাতি-পুতির মুখ দেখতেই পাবো না,,তার আগেই মরে যাবো,,(কান্না জড়িত কন্ঠে বললো).
নুরজাহান: মা এসব কথা বলবেন না,, দয়া করে কাঁদবেন না,,আল্লাহ আপনার মনের আশা পুরন করেছে??(রুনা বেগমের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো).
রুনা বেগম: হ্যাঁ রে মা ,,তার জন্য আল্লাহর কাছে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া,,?
রিনা: এইজে এসে পড়েছি এই নেও মিষ্টি খাও ভাবি,,??
ওরা মিষ্টি খাওয়ে দিচ্ছে তিন জন তিন জনকে,,এর মধ্যেই রাহাত রুমে চলে আসে,,আর এই সব কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়,,,

রাহাত: আজ কি হয়েছে তোমাদের,,নিচে ড্যাড খুশিতে মনে হচ্ছে এখনি ডান্স করবে,,আর তোমরা এখানে বসে মিষ্টি নিয়ে মেতে আছো,,ব্যপারটা কি বলো তো 😡??
রিনা: নেকা শষ্টি দেখাচ্ছে ,,মনে হচ্ছে কিছুই জানে না 😏??
রাহাত: রিনা...😡??
রুনা বেগম: রাহাত আজ আমি অনেক খুশি,,(এটা বলে নুরজাহান ও রাহাত এর কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়)..
রাহাত বোকার মতো চেয়ে থাকে ,,,
রাহাত: কি হয়েছে বুঝতেছি না,,আমাকে একটু বল তো রিনা??
রিনা রাহাত এর কানে কানে বলে দিলো দৌড়,,আর রাহাত হা হয়ে আছে এটা শুনে,,নুরজাহান লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে,,,

রিনা রাহাত এর কানে কানে বলেছে,,,,
রিনা: তোকে কেলানোর জন্য তোর ছেলে-মেয়ে আসছে,,সাবধানে থাকিস 😜??
রাহাত: এটা আমি কি শুনলাম,,তার মানে আমি বাবা হবো,,এই কেমন অনুভূতি,,(মনে মনে )..
নুরজাহান রাহাত কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করে বিছানা থেকে নেমে বলতে থাকে,,,
নুরজাহান: মাফ করবেন প্রিয় স্বামী,,আমি ভুল করে আপনার বিছানায় বসে পড়েছি,,আপনে বিছানায় বসে রেস্ট নেন,,??(মাথা নিচু করে মৃদ স্বুরে বললো)..
রাহাত নুরজানের কথায় একটু খারাপ লাগলো,কারন রাহাত ওর বিছানায় বসতে ও শোতে না করেছে তার জন্য,,,

নুরজাহান : প্রিয় স্বামী আপনে কি খুশি হন নি?(মৃদ কন্ঠে).
রাহাত কিছু বলছে না চুপ করে আছে,,রাহাত এর চুপ করে থাকতে দেখে নুরজাহান এর মুখ কালো হয়ে গেল,,নুরজাহান আস্তে করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়,,,আর রাহাত বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে ভাবতে থাকে.

রাহাত: আমার এমন কেন লাগছে,,এটা কেমন অনুভূতি,,এই আনুভূতি তো কখনই হয় নি,,এখন আমি কি করবো,,আমার ভুলের জন্যই এটা হয়েছে,, আমি তো নূর কে এখনো মেনেই নেই নি,,তাহলে এখন কি করবো আমি??(মনে মনে).
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমাতে যায়,,রাহাত নুরজাহান এর সাথে আর কোন কথা বলে নি,,নুরজাহান শোফায় ঘুমিয়েছে,,,,
রাহাত: নূর এই বাচ্চা তুই নষ্ট করে দিবি,,আমি চাই না এই বাচ্চা,,(রাগি কন্ঠে)..
নুরজাহান: প্রিয় স্বামী,, দয়া করে এই কথা বলবেন না,,আমি কিছুতেই এটা করতে পারবো না,,এটা যে বড় পাপ,(কান্না করতে করতে বললো).
রাহাত: আমি তোর কোন কথা শুনতে চাই না,,তুই কাল কেই আমার সাথে হাতপাতালে গিয়ে abortion করে আসবি,,(নুরজাহান এর দু গাল চেপে ধরে বললো).

নুরজাহান: প্রিয় স্বামী আমি মা হয়ে আমার বাচ্চা কে মেরে ফেলতে পারবো না,,দয়া করেন একটু,,দয়া করেন ,(রাহাত এর পায়ে পড়ে কান্না করে বলতে লাগলো).
রাহাত এর এটা শুনে আরো রাগ ওঠে গেল,,রাহাত নুরজাহান এর পেটে জোরে লাথি দিল,,,,
(নুরজাহান লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে গেল)..
নুরজাহান: আমি এতোক্ষন সপ্ন দেখছিলাম তাহলে।খুব ভয়ংকর সপ্ন ছিল এটা,,আমার মতে ফজরের আজান দেয় নি,,তাই তাড়াতারি ওঠে গিয়ে তাহাজুদের নামাজ টা পড়ে নেয়,, ,(লাফ দিয়ে ওঠে বসে মনে মনে বললো)..
নুরজাহান ওজু করে এসে নামাজ পড়তে দাড়িয়ে গেল,,নুরজাহান এই সপ্নটা দেখে খুব ভয় পেয়ে যায়,,নামাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো,,,

হে আল্লাহ্,,,
জানি না কেন আমি এই সপ্নটা দেখলাম,তবে এই সপ্নটা যেনো সত্যি না হয় আল্লাহ্।তুমি আমার স্বামী কে সুস্থ করে দিয়েছো তার জন্য তোমার দরবারে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া জানায়। হে আল্লাহ্ দয়া করে আমার এই বাচ্চার যেতো কোন ক্ষতি না হয়। আমার স্বামীর মন তুমি নরম করে দেও এই বাচ্চার ওছিলায়,,সে যেনো একদম ভালো হয়ে যায়। আমি আজ পর্যন্ত তোমার কাছে যা যা চেয়েছি তুমি আমাকে তাই দিয়েছো,আর যেটা না দিয়েছো তাতেও আমার কোন আপছুস ছিল না,,

কিন্ত আজ আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো,,তুমি আমার হায়াত নিয়ে গিয়ে আমার বাচ্চার হায়াত দান কর আল্লাহ,,আমি চাই আমার বাচ্চা এই দুনিয়ার মুখ দেখুক,,ওর যেনো কোন ক্ষতি না হয় আল্লাহ্,,ওর যেনো কোন ক্ষতি না হয়। তুমি তো দেখেছো সবাই কত খুশি এই বাচ্চাটার জন্য,,তুমি তাদের মুখের হাসি টুকু কেড়ে নিও না আল্লাহ,,তুমি আমার বাচ্চাটাকে সুস্থ ভাবে এই দুনিয়াতে পাঠাও আল্লাহ্,,

এটাই তোমার কাছে আমার চাওয়া,,,দয়া কর আল্লাহ্,,রহম কর আল্লাহ্,,আমার প্রিয় স্বামী টা যেনো খারাপ পথ থেকে ভালো পথে ফিরে আসে,,তুমি তাকে বেশি করে হেদায়েত দান কর আল্লাহ্,,হেদায়েত দান করো,,সবাই কে তুমি সুস্থ রেখো ভালো রেখো আল্লাহ্,,,,(আল্লাহ হুম্মা আমিন).(মনাজাত শেষ করে জায়নামাজে বসেই কান্না করতে লাগলো)..

এদিকে রাহাত এর কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়,,আজ নুরজাহান মোনাজাত একটু জোরে জোরে বলেছে,,তাই রাহাত বিছানায় শুয়েই সব শুনতে পেয়েছে,,,,
রাহাত: ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ করেই আমার কানে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো,,আমি চার দিক তাকিয়ে দেখলাম সারা রুম অন্ধকার তো কান্না কে করছে,,শুয়ে থাকার পর কারো কন্ঠের স্বর আমার কানে ভেসে আসতে লাগলো,,আমি চুপ করে শুনতে লাগলাম,,কিছুক্ষন শুনার পর আমি বুঝে গেছি এটা কার কন্ঠ,,হালকা ডিমলাইটের আলোতে বোঝা যাচ্ছে যে নূর জায়নামাজে বসে আছে আর মোনাজাত ধরে কান্না করছে।,তাই আমি চুপটি করে ওর সব কথা শুনতে লাগলাম,,,

নূর এর কথা গুলা শুনে আমার চোখ পানি চলে এসেছে,,কেন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তা আমি জানি না,,নূর এর মোনাজাতের সব কথাই আমি শুনতে পেয়েছি,,আমি এটুই বুঝতে পেরেছি নূর আমার জন্য ও বাচ্চার জন্য বেশি কান্না করছে। নূর মোনাজাত শেষ করে আরো কান্না করতে লাগলো,,ওর কান্না দেখে আমার বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা হতে লাগলো,,আমার কাছে প্রচুন্ড খারাপ লাগছে। হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে মাফ কর,,আমি এতো দিন অনেক অন্যায় করেছি নূর এর ওপর,,ওর মতো একটা ফুলের মতো মেয়েকে আমি অনেক মেরেছি,,আমি বড় ভুল করে ফেলেছি আল্লাহ,,আজ থেকে আমি তোমাকে আর কোন কষ্ট দেবো না নূর,,তোমাকে আমি কখনই কান্না করতে দেবো না,,

নূর তোমাকে আমি স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে আমার মনের রানী বানিয়ে রাখবো,,আর সব খারাপ কাজ আমি ছেড়ে দিবো,,এটা আমার ওয়াদা,,,(মনে মনে বললো)..
নুরজাহান কিছুক্ষন কান্না করে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে,,আমি বিছানা থেকে ওঠে নূর এর কাছে গেলাম,,হালকা আলোতে ওর চেহারা আল্প আল্প দেখা যাচ্ছে,,চেহারা কান্নার কারনে লাল হয়ে গেছে চোখ ফুলে গেছে,,আমি নূর কে কোন রকম কোলে ওঠিয়ে নিলাম,,তার জন্য ভাঙা পা টায় একটু ব্যাথা পেলাম,,

সেটাকে পাত্তা না দিয়ে কোলে করে বিছানায় শুয়িয়ে দিলাম আর আমিও শোয়ে নূর কে আমার বুকের মাজে জড়িয়ে ধরলাম,,নূর এর কপালে চুমু দিয়ে আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।
নুরজাহান আজ বেশিই ঘুমিয়ে ছিল তাই ফজরের আজান শুনতে পায় নি,,সকালে নুরজাহান এর ঘুম ভেঙে যায়,,নুরজাহান চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ও রাহাত এর বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে,,

আর রাহাত ওকে পরম যন্তে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,,নুরজাহান কিছু ক্ষন রাহাতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রয়লো,,ঘুম অবস্তায় রাহাত কে নিশপাপ বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে,,নুরজাহান চোখ সরিয়ে নিয়ে ওঠতে যাবে তখন রাহাত বললো,,,,
রাহাত: নূর এতো নড়াচড়া করছো কেন,,একটু ঘুমাতে দেও নূর পাখি??(ঘুম জড়িত কন্ঠে আস্তে চোখ বন্ধ করে বললো).
নুরজাহান এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায়,,নূর পাখি ডাকটা শুনে আরো বেশি আবাক হয় ।নুরজাহান এর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো,,রাহাত এর বুকের মধ্যে গরম কিছু অনুভব করতে লাগলো,,তাই চোখ মেতে তাকিয়ে দেখে নুরজাহান কান্না করছে,,রাহাত চিন্তিত হয়ে বললো,,,
রাহাত: নুর পাখি কি হয়েছে তোমার,,,, কোথায় ব্যাথা করছে বলো,,বলো আমাকে,,(চিন্তিত হয়ে নূর গালে- গায়ে হাত দিয়ে বললো)..
নূর কিছুই করছে না শুধু কেঁদেই যাচ্চে,,এটা দেখে রাহাত আরো ঘাবড়ে যায়,,,,
রাহাত: কি হয়েছে বলো নূর পাখি কান্না করছো কেন,(চিন্তিত স্বুরে)..
নূর মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছে আর কাঁদছে,,আল্লাহ্ ওর ডাকে সাড়া দিয়েছে ওর মনের আশা পুরন করেছে,,,,

নূর: কিছু হয় নি প্রিয় স্বামী,,,(আমি তো খুশিতে কাঁদছি সেটা আমি আপনাকে কিভাবে বুঝাবো- মনে মনে)..
রাহাত: তাহলে কান্না করছো কেন,,আবার যদি কান্না করতে দেখেছি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না কথাটা মনে রেখো,,(রাগি কন্ঠে বলে নূর কে জড়িয়ে দরে)..
নূর আজ খুশি।নূর ও রাহাত কে জড়িয়ে দরে,,,,
নূর: প্রিয় স্বামী আপনে এবার ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিন,,আমি আপনার খাবার নিয়ে আসছি,, (মৃদ স্বুরে).
রাহাত: তার আর দরকার নেই আমি নিচে গিয়ে সবার সাথে খাবার খাবো,,তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে সোজা চেহারে বসে খাবার খেতে শুরু কর,,আর হ্যাঁ রান্না ঘরে গিয়েছো তো আমি তোমার পা ভেঙে রেখে দিব,,(রাগি গলায় বলে ওঠে বাতরুমে চলে যায়)..

নূর বিছানা থেকে ওঠে পাশের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে,,
রিনা: বা বা আজ দেখি বলার আগেই খেতে বসে গেছো ভাবি,,তা তোমার ওগান্ডা বরটা কই সে কি নিচে আসবে নাকি খাবার উপরে দিয়ে আসতে হবে,,??
রাহাত: আমি এসে গেছি আজ থেকে এখানেই বসে খাবার খাবো সবার সাথে,,আর চুন্নি তুই বেশি কথা বলবি না??(রাগি স্বুরে রিনা কে বললো)..

রাহাত এর এই কথা শুনে রিনা জুস খাচ্ছিলো সাথে সাথে বিষুম গেল,,,আর রুনা বেগম মাছুম খান আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাহাত এর দিকে,,,,
রাহাত: আস্তে খা,,তোর খাবার কেউ নিয়ে যাচ্ছে না,,(রিনার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে)..
রিনা রাহাত এর পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানি ঢকঢক করে খেয়ে দাড়িয়ে গেল আর বাহিরের দিকে হাটা ধরল,,,

রাহাত: এর রিনা কোথায় যাচ্ছিস খাবার ছেড়ে,,(চেয়ারে বসতে বসতে বললো)..
রিনা: দাড়া দেখে আসি আজ সূর্য টা কোন দিক দিয়া ওঠেছে,,,???
রাহাত: রিনা বেশি কথা না বলে খেতে বস 😡??
রিনা দৌড়িয়ে বাহিরে গিয়ে এসে ফট করেই চেয়ারে বসে পড়লো,,,,
রিনা: মম সূর্য তো ঠিক মতোই ওঠেছে তাহলে সব কিছু উল্টা-পাল্টা হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না,,(আবাক হয়ে রাহাত এর দিকে আর চোখে তাকিয়ে বললো)
রাহাত: মম রিনা কে কিছু বলো,,না হলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি 😡??
ওরা তিন জন কিছু বলছে না মিটমিটিয়ে হাসছে,,,
রুনা বেগম: রিনা চুপ কর,,খেয়ে নে??
রিনা: হুমম 😕?
রাহাত: নূর খাচ্ছো না কেন তাড়াতারি খাওয়া শুরু কর,,??
নূর: হুমম?

রাহাত: ড্যাড আজ থেকে আমি তোমার অফিসের সব দায়িত্ব নেবো,,সব কিছু আজ আমাকে বুঝিয়ে দিবে,,??
এবার মাছুম খান ছোটখাটু একটা বিষুম খেলো,,মাথায় হাত দিয়ে থাপ্পর দিতে দিতে পানি খাচ্ছে,,,
রাহাত: কি হয়েছে বুঝতে পারছি না,,তোমারা আজ আমাকে এবাবে দেখছো কেন আর এসব ভিহীব কেন করছো,,আমি কি ওলিয়েন নাকি??
মাছুম খান: রাহাত তোমার শরীর ঠিক আছে তো বাবা?(আবাক হয়ে বললো)
রাহাত: হুমম অবশ্যই ঠিক আছে কেন??
মাছুম খান: না মানে এমনি??

রাহাত আর কিছু বললো না,,সবার খাওয়া হয়ে গেছে,,রাহাত চেয়ার থেকে ওঠে বললো,,,,
রাহাত: ড্যাড তুমি রেডি হও আমি রেডি হয়ে আসছি এখনি,,আর নূর পাখি উপরে আসো তাড়াতাড়ি,??(এটা বলেই উপরে চলে গেল)..
রাহাত যাওয়ার পর রুনা বেগম ও মাছুম খান কান্না ধরে রাখতে পারলো কেঁদেই দিল,,,,
নূর: বাবা-মা আপনারা কাঁদছেন কেন,,রিনা তুমিও কাঁদছো??
রুনা বেগম: মা রে তোকে যে কিভাবে বলে বোঝাবো,,তার ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না,,?(কান্না কন্ঠে বললো)..
মাছুম খান: এটা যে খুশির কান্না মা ??

রিনা: যানো ভাবি আজ থেকে ৩বছর আগে আমরা এবাবেই হাসি-ঠাট্টা করে সকালের নাস্তা সারতাম।কিন্তু যখন থেকে ভাইয়া নেশা করা শুরু করেছে তখন থেকেই আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলতো না,,আমাদের সাথে খেতে বসতো না,সব সময় ভাহিরেই খেতো,,কিন্তু আজ আমার ভাইয়াটা আবার আগের মতো হয়ে গেছে,,সবি তোমার জন্য ভাবি,,??

নূর: এবাবে বলো না রিনা,, আল্লাহর রহমতে তোমার ভাই আজ ভালো পথে ফিরে এসেছে,,!!
রুমা বেগম: হ্যাঁ রে মা,,আল্লাহর দরবারে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া আদায় করি,,??(চোখ মুছে বললো).
রাহাত: নূর,,,,,,,এই নূর পাখি,,,কি হলো আসছো না কেন??(জোরে ডাক দিয়ে)..
নূর উপরে চলে গেল,,আজ সবাই অনেক খুশি,, এক তো নতুন মেহমার আসছে তার উপর রাহাত পুরাপুরি ভালো হয়ে গেছে।নূর উপরে গিয়ে দেখে রাহাত কালো প্যান্ট,সাদা শার্ট পড়েছে,,দেখতে ভালই লাগছে রাহাত কে।রাহাত হাতে টাই নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বাঁধার চেস্টা করছে,,,,
রাহাত: এতোক্ষন লাগে নাকি নিচ থেকে উপরে আসতে,,যাই হোক এখানে এসো নূর পাখি আমার টাইটা বেঁধে দেও??

নূর: প্রিয় স্বামী আমি তো এটা বাঁধতে পারি না,(মৃদ স্বুরে).
রাহাত: এদিকে এসো আমি তোমাকে শিক্ষিয়ে দিচ্ছি।আর কাল থেকে তুমিই সব সময় টাই বেধে দিবে,,?
নূর রাহাত এর কাছে গেল ,রাহাত নূর কে টাই বাঁধা শিক্ষিয়ে দিল,,তারপর যাওয়ার আগে নূর এর কপালে চুমু দিয়ে গেল আর বলে গেছে কোন কাজ না করতে।

নূর ও লক্ষি মেয়ের মতো রাহাত এর কথা মতো কোন কাজ করলো না। রাহাত অফিসে থাকা অবস্তায় ওর বন্ধরা ওকে অনেক বার কল দিয়েছিল কিন্তু রাহাত কল রিছিব করে নাই। রাহাত অফিস থেকে এসে দেখে নূর নামাজ পড়ছে,,তাই রাহাত ফ্রেশ হয়ে এসে নূর এর জন্য বসে আছে,নূর নামাজ শেষ করে ওঠে এসে রাহাত এর গায়ে ফু দিল। রাহাত নূর এর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,,,,

রাহাত: নূর তুমি সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে দোয়া পড়ে ফু দিতে তাই না??(নূর এর গাড়ে মাথা রেখে বললো).
নূর: হুমম প্রিয় স্বামী,, আপনে কি তা টের পেতেন??
রাহাত: হুম পেতার কিন্তু ওতো বেশি পাওা দিতাম না,আজ যখন তুমি আমার সামনে এসে ফু দিয়ে তখনি আমি বুঝে গেছি যে তুমিই আমার গায়ে ফু দিয়ে,,??
নূর: ও,,আচ্ছা একটা কথা বলি,,(ভয় ভয় বললো).
রাহাত: হুমম বল নূর পাখি,??
নূর: না মানে আপনে কি নামাজ পড়তে পারেন,,(মৃদ স্বুরে).
রাহাত: হুমম পারি তো কেন??
নূর: তাহলে আজ থেকে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাবেন কি??
রাহাত: অবশ্যই যাবো,,তুমি যখন বলেছো আমি যাবো মসজিদে নামাজ পড়তে,,এখন চলো নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে আসি,??

নূর: হুমম চলেন প্রিয় স্বামী??
ওরা নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে ওপরে চলে আসে,,রাহাত নূর কে বলেছে হাদিসের বই পড়ে শুনাতে তাই নূর হাদিসের বই পড়ে রাহাত কে শুনাতে লাগলো‌,,রাহাত নূর এর কোলে মাথা দিয়ে পরম যন্তে শুনতে লাগলো,,,রাহাত শুনতে শুনতে এক পর্যায় ঘুমিয়ে পড়ে,,নূর তাকিয়ে দেখে রাহাত ঘুমিয়ে গেছে,,তাই বই বন্ধ করে রাহাত কে বালিশে শুয়িয়ে দিয়ে কপালে চুমু একে দেয়।

এবাবেই ওদের সময় গুলা কাটতে লাগলো। রাহাত প্রতিদিন নুরজাহান এর কোরআন তিলোয়াত শুনে ঘুম ভাঙতো।আর মাজে মাজে কিছু কিছু বিষয়ের হাদিস রাহাত কে শুনাতো। রাহাত তো এখন পোরা পুরি ভালো হয়ে গেছে।এখন আর নেশা করে না ক্লাবেও যায় না। রাহাত নামাজ পরতো কিন্তু ফজরের নামজ পড়তে একটু কষ্ট হতো। রাহাত সারা দিন অফিসের কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন বাসায় ফিরতো তখন নূর এর চেহারা দেখে ওর মুখে প্রিয় স্বামী ডাকটা শুনে ওর সব ক্লান্ত দুর হয়ে যেতো।

রাহাত নূর কে অনেক ভালোবাসতো এক মিনিট ও না দেখলে পাগল হয়ে যেতো। নূর ও রাহাত কে তার দিগুন ভালোবাসতো। এবাবেই দিন দিনের পর দিন মাসের পর মাস ওদের ভালো সময় গুলু কেটে যেতে লাগলো। কিন্তু কথায় আছে না মানুষের ভালো সময় বেশি দিন থাকে না।ঠিক এইরকম ওদের সাথেও হয়েছে। হঠাৎ করেই নূর এর পেইন ওঠলো ওরা নূর কে হাতপাতালে নিয়ে গেল,,,,

চলবে.....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com