একজন সফল গ্যাস বিক্রেতার গল্প
ছুটিতে আমি একদিন গ্রামের বাড়ি যাই তখন আমার মা বলে বাসার গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। আমি বলিলাম আমি বাজার থেকে গ্যাস এনে দিচ্ছি। মা বলে উঠল গ্যাস আনতে যেতে হবে না এই নাম্বারে কল কর গ্যাস ওয়ালাই গ্যাস দিয়ে যাবে।
আমি মায়ের হাত থেকে কার্ডটি নিয়ে গ্যাসের দোকানে ফোন দিলাম আপর পাশ থেকে খুব সুন্দর ভাষায় সালাম দিয়ে বললেন সালাম স্টোর থেকে আমি মোঃ রাজিব বলছিলাম, কিভাবে আপনাকে সাহায্যে করতে পারি। আপনার কি কোন গ্যাস প্রয়োজন স্যার, আমি তো অবাক!!! গ্রামের ব্যাবসায়ি এত সুন্দর ব্যবসায়িক পলিসি? ভাবতেই অবাক লাগে। তার কথার উত্তর না দিয়ে বলিলাম ভাই আপনার উপস্থাপন তো অনেক সুন্দর কোথা থেকে শিখলেন? তখন তিনি বললেন সালাম স্টোরের সালাম সাহেব এগুলো শিখিয়েছেন।
তখন আমি আমার বাসার ঠিকানা দিয়ে বলিলাম এক বোতল বসুন্ধরা গ্যাস দিয়ে যাবেন। ঠিকানা পেয়ে উত্তরে বলিলেন ধন্যবাদ স্যার আমাদের ডেলিভারি ম্যান ডেলিভারি তে গেছে আসতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগবে আসলেই আপনার বাসায় পাঠিয়ে দিব স্যার।
তখন থেকে আমার মনের ভিতরে কৌতুহল তৈরি হলো যে আমি সালাম সাহেবের সাথে কথা বলবো। তার ডেলিভারি ম্যানের কাছথেকে তথ্য নিলাম সালাম সাহেব কখন ফ্রি থাকেন । তাকে কোথায় গেলে পাওয়া যাবে ইত্যাদি।
ঠিক সন্ধার পর সালাম সাহেবের চায়ের আড্ডায় যোগ দিলাম । আমার পরিচয় দিয়ে আমি তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম। প্রথম কথাই ছিল আপনার ব্যাবসা শুরু কত টাকা দিয়ে। আর কিভাবে শুরু করলেন?
জবাবে মিঃ সালাম স্টোরের সালাম সাহেব বললেন...
আমি গরিব ঘরের সন্তান আমার বাবা একজন দিন মজুর ছিলেন। আমাদের সংসার ছিল দিন আনি দিন খাই এমন পরিবার। আমি তখন এইচ এস সিতে লেখাপড়া করি। লেখা পড়ার পাশা পাশি আমার মাথায় আসল যে কিছু একটা করা দরকার যা হবে পার্ট-টাইম কাজের মত এবং নিজের স্বাধিনতা থাকবে। তখন মাথায় আসল যে বাজারে তো গ্যাস বিক্রয় করে সেই গ্যাস-ই তো আমি মানুষের বাসায় পৌছে দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারি। হক না খুবই কম তবে আমার লেখা পড়ার খরচ উঠলেই তো হয়।
এভাবে শুরু বাবার একটি পুরাতন বাইসাইকেল ছিল বাই সাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়লাম গ্রামে বাড়ির মোবাইল নাম্বারটা কয়েকটি সাদা কাগজে লিখে সবার বাড়ি বাড়ি দিয়ে বেড়িয়েছি আর তাদের বুঝিয়েছি যে গ্যাস আনাতে গেলে যাওয়া খরচ ও আসা খরচ দুইটাই আপনার লাগবে আর আমার কাছে ফোন করলে শুধু আনা খরচ দিলেই হবে। আর গ্যাসের দামও রাখব দোকানের দামে। এভাবে শুরু প্রথম সপ্তাহে হয়েছিল মাত্র ২টা গ্যাস বিক্রয় আমার আয় ছিল মাত্র ২০ টাকা। পরবর্তী সপ্তাহে বেড়ে হলো ৫ টি পরবর্তী সপ্তাহে আমার আয় হলো ৫০ টাকা। এভাবে ৫টি গ্রামে প্রচার করার পর আমার আয়ও বাড়তে শুরু হয়। প্রচুর সারা পাই সবার কাছ থেকে
কিন্তু আমার ক্লাসের সময় বাদ দিয়ে যতটুক সময় পাই ঠিক ততটুক সময় ডেলিভারি করি প্রায় ৫ মাস। কিছু টাকা জমে তাও প্রায় ৫ হাজার টাকা। আর সেই সময় আমাকে অনেক গ্যাগের দোকানদার বেতন ভুক্ত রাখার জন্য অফার করে কিন্তু আমি করি নি কারণ আমার ব্যাক্তি স্বাধীনতা থাকত না। এবাবে চললো আরও এক মাস তার পর আমার মা গ্রামিন ব্যাংকের কিস্তিতে নাম লেখায় এবং সেখান থেকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার ) টাকা লোন তোলেন আর আমার ৫ ( পাঁঁচ হাজার) টাকা আর মায়ের জমানো ৫ ( পাঁঁচ হাজার ) টাকা এই মোট ৬০,০০০ (ষাট) হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু। তবে আমার কোন দোকান ছিল না তাই আমার বাসায়ই গ্যাসের বোতল রাখতাম প্রায় ৬ মাস। তার পর দোকান ভাড়া নিয়ে বাজারে ব্যবসা শুরু করি। তার পর আর ফিছে ফিরে তাকাতে হয় নাই। ব্যবসায়ের পাশাপাশি অনার্স, মাস্টার্স শেষ করি তার একে একে ব্যবসা বাড়াতে থাকি। এখন আমার ৩-৪ রকমের ব্যবসা আছে যেমন, একটি মোবাইলের , একটি ডেকরেটরের, একটি জুতার দোকান এবং গ্যাসের দোকান তো আছেই।
বিঃ দ্রঃ গল্পটি তুলে ধরার কারণ হলো অনেকে বলেন বাবার টাকা নেই ব্যবসা করবো কি করে? আমি তো গরিব মানুষ আপনার ইচ্ছা কতটুক আছে আর আপনার যোগ্যতা কতটুক আছে সেইট মুল বিষয়।
(ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com