Breaking News

রাগী বসের অভিমানী বউ। পর্ব - ০১



চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে আকাশ আমার ঠোঁট অসম্ভব জোরে কামড়ে ধরে। দু’হাতে তাকে সরাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু একহাতে সে আমার কোমরে ধরে রেখেছে। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে। তবু্ও আকাশ ছাড়ছে না।একটু পরে ছেড়ে দিয়ে একহাতে আমার গালে চেপে ধরে বলে -‘ আকাশ চৌধুরী চাইলে তোর মতো দশটা মেয়ে পায়ের কাছে পড়ে থাকবে। 

এক ঝাটকায় আমাকে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। 
একদিকে এতো জোরে গালে চেপে ধরায় আমার গাল অসম্ভব ব্যথা করছে অন্যদিকে ঠোঁটে জ্বালা করছে,
মনে হয় কেটেই গেছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে, রাগী বসের অভিমানী বউ।

আমার জীবনে এটা দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। 
আজ যদি আমার বাবা-মা বেঁচে থাকতো তবে এই দিন আসতো না।
এসব ভেবে চোখের জলে নিজেকে ভাসাচ্ছি।
ফোনে কথা বলতে বলতে আকাশ ঘরে প্রবেশ করে। 
ফোন টা রেখে বললো – ‘এসব ন্যাকামি এখানে চলবে না। 
তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস, তার মাশুল সারাজীবন তোকেই দিতে হবে। ‘
সত্যিই বড় ভুল করেছি আমি। বাবা-মার মৃত্যুর পরে মামার অভাবের সংসারে ঠাঁই মেলে আমার। 
তখন আমাদের কিছুই নেই।নদী ভাঙ্গনে বাড়িঘর- জমিজমা সব হারিয়ে 
বাবা-মার সাথে শহরের ছোট একটা বাসায় উঠেছিলাম। 
সবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছি তখন।
কত স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো,কিন্তু ডাক্তারি পড়ার আর সামর্থ্য নেই তখন।
বাবা খুব কষ্ট পেতেন কারণ ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ডাক্তারি পড়তে পারলাম না। 

আমি বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাই। 
আমার সান্ত্বনা মাথার উপর বটের ছায়া বাবা- মা আছে আমার। 
ভাগ্য আমাকে নিয়ে খেলতে শুরু করে। 
একদিন এক্সিডেন্টে আমার বটের ছায়ারা চলে যায় 
না ফেরার দেশে। তারপর মামা উনার বাসায় নিয়ে আসে।
মামা এক অফিসের কর্মচারী ছিলেন। কোনোরকমে সংসার চলে যেত।
দুই ছেলেমেয়ের খরচ চালিয়ে আমি তাদের উপর বাড়তি চাপ হয়ে যাই।
মামা কখনো কিছু বলতেন না। কিন্তু মামী কেন চুপ করে থাকবেন?
ছুটা কাজের মহিলা বিদায় হলো। 

ঘরঝাড়ু,কাপড় ধোয়া,রান্না করা,বাজার করা সব একএক করে আমার উপর পড়ে। 
তার মধ্যে কয়েকটি টিউশনি জোগাড় করে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করি।
ক্লাসে তো যেতেই পারিনি। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়ে আসি। মামি সেটাতেও আপত্তি। 
যতটা সম্ভব নিজের খরচ কমিয়ে টিউশনির টাকা কিছু মামির হাতে তুলে দেই।
মামা সব বুঝতেন কিন্তু মামির উপর কথা বলতে পারতেন না।ঝাড়ি খেয়ে মুখ কালো করে বসে থাকতেন। এভাবেই মামির সংসারে গায়ে খেটে পড়াশোনা শেষ করি। 
মামাতো ভাই – বোন সাইফ আর সুমনা, মামিকে লুকিয়ে আমার কাজে অনেক সাহায্য করতো।
কিন্তু কথায় বলে না,অভাগী যে দিকে চায় সাগর ও শুকিয়ে যায়।
আমার বেলায় ও ব্যতিক্রম হয়নি।
মামার অফিস থেকে একদিন ফোন আসে মামা অসম্ভব অসুস্থ, হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। 
মামিকে নিয়ে ছুটে গেলাম। রাগী বসের অভিমানী বউ
সপ্তাহ খানেক পরে মামা বাসায় ফেরেন ঠিকই, কিন্তু প্যারালাইজড হয়ে গেছে। 
দুই পা অসার। মামার অফিসের কয়েকজন এসেছিলেন দেখতে। 
মামা অনেক বলেকয়ে মামার কাজটা আমাকে দিতে অনুরোধ করেন। 
ভাগ্য বুঝি মুখ তুলে চাইলো।কি দয়া হলো উনাদের, আমাকে চাকরি টা দিয়ে দিলো।
সেই অফিসের বস আকাশ।আমি মামার পোস্টেই জয়েন করি।
একদিন একটা ফাইল নিয়ে হুট করেই আকাশের কেবিনে ঢুকে পড়ি।
যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। 
এই অফিসের একটা মেয়ে আকাশের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায়!
আমি দেখেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
– হাউ ডেয়ার ইউ?!! নক না করে আমার কেবিনে ঢুকার সাহস হয় কি করে তোমার?
রাগে গরগর করতে থাকে আকাশ।রাগী বসের অভিমানী বউ
– আই এম সরি, স্যার।ভুল হয়ে গেছে।
আসলেই আমি অন্যমনস্ক ভাবেই নক করতে ভুলে গেছি।
– কোথা থেকে এসব জুটেছে কে জানে! এই মেয়ে বাবা-মা ভদ্রতা শেখায়নি? 
ডেইজি নামের মেয়েটি এগিয়ে এসে বললো।
এই মেয়ের মুখে ভদ্রতার কথা শুনে গা রি রি করছে আমার।
আমার ভুল আমাকে আরও কিছু বললেও মেনে নিতাম, 
কিন্তু আমার বাবা-মাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারি না।
– এক্সকিউজ মি মেম, আমার ভুল হয়েছে আমি স্বীকার করছি।
কিন্তু তাই বলে আপনি আমার মা- বাবাকে তুলে কথা বলতে পারেন না।
আর ভদ্রতা কাকে শেখাতে হবে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি!
– ইউ ইডিয়ট!

ডেইজি আমাকে চড় মারার জন্য হাত তুলতেই ওর হাত ধরে ফেলি।
– Don’t dare you! এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে দেই।আমার ব্যবহার ডেইজি বোকা হয়ে গেছে। 
ভাবতেও পারেনি এমন টা করতে পারবো।
আকাশ এতো সময় শুনছিলো।এবার এগিয়ে আসে –
‘ এই মেয়ে তোমার তো খুব সাহস দেখছি!’
– স্যার আপনার মিটিং এর ফাইল রেডি।এক্সকিউজ মি!
ফাইল টা ডেস্কে রেখে আমি বেরিয়ে আসি।রাগী বসের অভিমানী বউ
মাস খানেক কেটে যায়। ডেইজি আমার পেছনে লেগেই আছে। 
আমি সতর্ক থাকি যাতে আমার ভুল ধরতে না পারে।
আকাশ সেদিনের পর আমাকে কিছু বলেনি।
কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার পোস্ট পরিবর্তন করা হয়।
আগে মামার পোস্টে থাকলেও এখন আমি আকাশের পি.এ.।
আকাশের পাশের কেবিন টা আমার।
এদিকে মাসের শেষে অফিসে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়। 
পার্টি চলাকালীন আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকি।এসবে আমি অভ্যস্ত নই।
হঠাৎ খেয়াল করলাম সকলের মধ্যমণি আকাশ নেই।
কিছুক্ষণ পরেই আকাশের ফোন। একটা জরুরি ফাইল নিয়ে কেবিনে যেতে বলে।
নক করে কেবিনে ঢুকে দেখি আকাশ চেয়ারে নেই।
কেবিন টার একপাশে বসার জন্য আলাদা যায়গা আছে। 
তার পাশের জানালার কাছে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
– স্যার, ফাইল।
– টেবিলে রাখো।রাগী বসের অভিমানী বউ
রেখে চলে যাচ্ছি তখন আকাশ পেছন থেকে হাত টেনে ধরে। 
আমি ভয় পেয়ে ঘুরে দাঁড়াই।আকাশ একদম কাছে চলে এসেছে আমার।
তার চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে গেছে। পার্টিতে অসম্ভব ড্রিংকস করেছে অনেক। 
হাত ছাড়াতে পারছি না।

স্যার! হাত ছাড়ুন।
কোথায় যাচ্ছো? এতো তাড়া কিসের?
আকাশের ব্যবহার আমার ভালো লাগছেনা। অস্বস্তি বোধ করছি।
আমার কাজ আছে। হাত ছাড়ুন।
তুমি আমার পি.এ। আমি যা বলবো তুমি তা-ই করবে। সবাই আকাশ চৌধুরীর কাছে ভিড়তে চায় আর তুমি কেন দূরে থাকো?
আকাশ আমার সামনের এলোমেলো চুল আঙুল দিয়ে ঠিক করে দেয়।
আকাশ স্বাভাবিক নয় মাতলামি করছে বেশ বুঝতে পারছি।
হাত ছাড়ুন বলছি!
আমি আরও জোর করতে থাকি।

এবার আকাশও হাত ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে আমাকে। ভয়ে আমার হাত-পা জমে আসে। আকাশ ক্রমশ তার মুখ এগিয়ে আনে।কি করবো বুঝতে না পেয়ে আচকা একটা ধাক্কা দিয়ে আকাশের হাত সরিয়ে দেই। ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেই আকাশের গালে।
আকাশ প্রথমে বুঝতে পারেনি ঠিক কি ঘটেছে। একটু সময় নিয়ে বললো – এই মেয়ে! তুই আকাশ চৌধুরীর গালে চড় দিয়েছিস!! আকাশ চৌধুরীর!?
এর মাশুল তোকে দিতে হবে। অনেক বেশি ভারী পড়ে যাবে!

আমি বের হতে যাই কেবিন থেকে, কিন্তু আকাশ আমার হাত ধরে একটানে দেয়ালের চেপে ধরে আমার ঠোঁটে অসম্ভব রকমের বন্য হয়ে কিস করে। রাগী বসের অভিমানী বউ অনেক ধস্তাধস্তির পর ধাক্কা সামলাতে না পেরে আকাশ তার ডেক্সের উপর পড়ে যায়। সাউন্ড-প্রুফ কেবিন হওয়ায় বাইরের কারো কানে আমার আওয়াজ পৌছায়নি। আর এমনিতেই সবাই পার্টিতে ব্যস্ত!

আমি দৌড়ে বেরিয়ে আসি কেবিন থেকে। অফিসে আর এক মুহূর্ত ও থাকিনি।
সরাসরি বাসায় ফিরে আসি। সারাটা রাস্তা কেঁদে চোখ ফুলে গেছে।
মামার এই অবস্থা! চাকরি টা চলে গেলে সংসার কিভাবে চলবে? আর আকাশের অফিসে কাজ করাও সম্ভব না। কি করবো চিন্তা করতে পারছি না। 
এদিকে সাইফ – সুমনার কলেজের বেতন দিতে হবে।
ভাগ্য আমার দিকে মুখ তুলে তাকায় নি, বরং জমের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
আকাশ চৌধুরীর অনেক ক্ষমতা। 
দেশের নামী শিল্পপতির মধ্যে অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি।উনার যা ইচ্ছে তা ই করতে পারেন।
পরের দিন অফিসে যাইনি। এরপরদিন যেতে ইচ্ছে না করলেও যেতে হলো। 
ভাগ্য ভালো সেদিন আকাশ অফিসে ছিলো না। আমাকেও ফোন দেয়নি।
বিকেলবেলায় তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরি। বাসায় ঢুকতেই সুমনা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
– কি রে কি হয়েছে?

– আপু আগে হা করো, মিষ্টি খাও তারপর বলছি।
জোর করে মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়।
মিষ্টি খেতে খেতে বললাম – কিসের মিষ্টি? 
তোর তো আজকে কোনো রেজাল্ট দেবার কথা নয়,তবে ?
– একটা অসম্ভব সুখবর আছে। আমরা সবাই অনেক অনেক খুশি।
– কি সুখবর?
– আপু,তোমার রাজ কপাল! এতো বড় ঘরে তোমার বিয়ে হবে! 
ইস! আমার যে কি খুশি লাগছে।।
– বিয়ে? আমার? কি বলছিস এসব?
– হুমম। এটা তো সারপ্রাইজ তোমার জন্য।
তুমি ভাবতেও পারবে না কোথায় বিয়ে হচ্ছে।
– তোর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। মামি কোথায়?
মামি… মামি…
আমি মামির ঘরে গেলাম।
– কাজল, আয় ভেতরে আয়।
মামির মোলায়েম কণ্ঠস্বর কোন আগাম ঝড়ের সংকেত দিচ্ছে বুঝতে পারছি না।
– কি হয়েছে মামি?

– তোর কি ভাগ্য! নইলে এমন ঘরের বউ হবি কল্পনা করা যায়??
মামির সামনে ছোট-বড় অনেক গুলো গিফট বক্স আর একটা চেক পড়ে আছে।
– কে এনেছে ওগুলো?
– তোর হবু বর নিয়ে এসেছে। ছেলেটা খুবই ভালো।
– কে এসেছিলো বলবে তো?
– আকাশ,তোর অফিসের বস।তোকে বিয়ে করতে চায়।
– কি বলছো এসব মামি? এটা কি করে সম্ভব?
– অসম্ভবের কি আছে? তোকে ভালো লেগেছে তাই বিয়ে করতে চায়।
– মামি,এ বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। 
আর মামার এই অবস্থায় আমি না থাকলে সংসার চলবে কিভাবে?
– সে চিন্তা তোকে করতে হবে না। আকাশ সব ব্যবস্থা করে দিবে।
– ব্যবস্থা করে দিবে মানে?

– সাইফ, সুমনার পড়ার খরচ, সংসার খরচ,তোর মামার চিকিৎসার সব খরচ আকাশ দিবে।
– আর তুমি রাজি হয়ে গেলে? 
মামি,আমাদের কি আত্মসম্মানবোধ নেই? 
আকাশ চৌধুরীর টাকায় কেন আমাদের চলতে হবে?
এটা কিছুতেই সম্ভব না। রাগী বসের অভিমানী বউ
– আত্মসম্মানের…. ( মামি গালিগালাজ করেন), 
বিছানায় পড়ে একজন কাতরায়,এতো মানুষের খরচ কোথা থেকে আসবে? 
তোর বাপ এসে দিয়ে যাবে?
– মামি,কতবার বলেছি বাবা-মা তুলে কথা বলবে না। সংসার আমি চালাবো। 
তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
মামিকে আর কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে চেক নিয়ে বেরিয়ে আসি।

আমি বুঝতে পারছি না আকাশ কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছে। 
লোকটার প্রতি ঘৃণা ছাড়া কিছু আসেনা। 
হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। এদিকে মামি আমার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছেন। 
আমি চুপচাপ শুনছি।মামির সাথে কথা বললেই ঝামেলা বাড়বে।
পরদিন অফিসে যাই।আকাশের কেবিনে গিয়ে দেখি ফোনে কথা বলছে।
আমাকে দেখে ফোন রেখে দিলো।
– আরে কাজল এসো, এসো।

চেকটা সামনে রেখে বললাম – এসব কি?
– কেন? তোমার মামি তোমাকে কিছু বলেনি?
– সেইজন্যই জিজ্ঞেস করছি এসবের মানে কি?
– মানে খুবই সিম্পল! তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
– কেন চাইছেন জানতে পারি?
– তোমাকে ভালো লাগে তাই।
– এটা যে আসল উদ্দেশ্য নয় সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি।
– স্মার্ট গার্ল!

– দেখুন, এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
– বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে। আর সেটাও এক সপ্তাহের মধ্যে।
– অসম্ভব। কিছুতেই না। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিবো।
– গ্রান্টেড হবে না। সো গেট রেডি।
আকাশ কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। রাগী বসের অভিমানী বউ
আর যাই হোক এই লোকটাকে বিয়ে করা সম্ভব না। চেক টা টেবিলে রেখেই চলে আসি।
স্যালারির তুলতে হবে। মামার অসুস্থতায় বেশ কিছু টাকা ধার করতে হয়েছে। 
এদিকে সাইফ – সুমনার কলেজের বেতন, টিউশন ফি দিতে হবে, মামার ঔষধ ফুরিয়ে গেছে প্রায়।
বিল তুলতে গিয়ে দেখি আমার স্যালারি আসেনি। আমার বিল পেপারে সাইন করা হয়নি।
জিজ্ঞেস করতে তারা জানায় – ‘ 
স্যারের নিষেধ আছে, অনুমোদন করতে হলে স্যারের অনুমতি লাগবে। ‘
রাগে দুঃখে চোখে পানি চলে আসছে। সারা মাস খেটে বেতন টাও পেলাম না।
আবার গেলাম আকাশের কেবিনে। আকাশ নেই।আমি আকাশের পি.এ. হলেও গত দুই-তিন দিন আমাকে তেমন কোনো কাজ করতে দেয়া হয়নি।আকাশ একাই বের হয়ে যায়।
বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর আকাশ আসলো।

– স্যার
– হুম, বলো।কি সিদ্ধান্ত নিলে?
– স্যার, আমার বেতন আটকে আছে। আপনি অনুমতি না দিলে অনুমোদন দিবে না।
– হবে না। যতক্ষণ আমার প্রস্তাবে রাজি না হচ্ছো, বেতন আটকে থাকবে।
– আপনি এটা করতে পারেন না স্যার! এটা আমার প্রাপ্য।
– সো হোয়াট?আকাশ চৌধুরী চাইলে পাবে, নইলে পাবে না।
– এভাবে আমার স্যালারি আটকে রাখলে আমি আইনি ব্যবস্থায় যাবো।
– হাহাহা…. জোকস টা,ভালো ছিলো!
– স্যার, আমি কোনো জোকস বলিনি!আপনারা আমার স্যালারি বিনা কারণে আটকে রাখতে পারেন না!
– আমি আটকে রাখবো। আইনি ব্যবস্থা নাও!
মুখে বললেও আমি জানি আইনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবো না। 
উনাদের টাকার কাছে সব বিকিয়ে যায়!

– প্লিজ স্যার, এমন টা করবেন না। আমার মামা খুব অসুস্থ।
– সেই জন্যই তো বলছি রাজি হয়ে যাও।।
আমি আকাশের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসি। হাত-পা ভেঙে আসছে। বেতন পেলাম না। 
বাসায় এসে দেখি টেবিলে কারেন্ট বিলের,পেপার বিলের,ডিসের বিলের কাগজ রাখা। 
মামি এসে বললেন – তোর মামার ঔষধ আনতে হবে, আজ খাওয়ালেই শেষ হয়ে যাবে।
সুমনা এসে বললো – আপু পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের জন্য টাকা লাগবে।
– কত লাগবে?

– পাঁচ হাজার আর সাথে বেতন, টিউশন ফি। সব মিলিয়ে এগারো হাজার।
৭ তারিখের মধ্যে দিতে হবে।
– আচ্ছা দিয়ে দিবো।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কিভাবে দিবো এতো টাকা!
কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে। 
অনেক যায়গায় গেলাম কিন্তু কেউ ধারও দিলো না। 
সবার কাছে তো ধার চাইতেও পারিনা। রাগী বসের অভিমানী বউ
যাদের কাছে পারি তারা আগেই দিয়েছে, সেগুলোই শোধ হয়নি।
তাও একজন কিছু দেয়ায় মামার এক সপ্তাহের ঔষধ নিয়ে বাসায় ফিরি।
কিন্তু… সারারাত চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম আকাশ কে বিয়ে করবো। 
যা আছে আমার কপালে! আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।
‘ স্যার, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি!’ পরদিন অফিসে গিয়েই আকাশকে বলে দিলাম।
-That’s like a good girl !! আমি জানতাম তুমি রাজি হবেই।
যাইহোক তুমি প্রিপারেশন নাও।আমি আজই তোমাদের বাসায় যাবো।
আকাশের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উপায় নেই আমার। 
সাইফ-সুমনার পড়াশোনা, মামার চিকিৎসা সব বন্ধ হয়ে যাবে।

আমি জানিও না কেন আকাশ আমাকে বিয়ে করতে চাইছে! কি উদ্দেশ্য তার? 
আকাশের মতো ক্ষমতাবান কোটিপতি লোক যখন আমার মতো অতি সাধারণ একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তার পিছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এক-ভালবাসা, দুই- অন্য কোনো উদ্দেশ্য!
এক নাম্বার টা হবার কোনো চান্সই নেই সেটাও আমি ভালো করে জানি। দুই নাম্বার টাই ঠিক।কিন্তু কি উদ্দেশ্য সেটাই বুঝতে পারছি না।

উদ্দেশ্য যাইহোক আমার উদ্দেশ্য ঠিক থাকলেই হবে। 
আমার শর্তগুলো পূরণ করতে হবে, তবেই বিয়ে করবো।
সন্ধ্যায় আকাশ বাসায় আসে, সাথে অনেক কিছু নিয়ে আসে। 
সবার জন্য কাপড়-চোপড়,মিষ্টি আরও অনেক কিছু।
মামার জন্য হুইলচেয়ার। মামাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ড্রয়িং রুমে আনা হয়। 
খুশিতে আমার চোখে পানি চলে আসে।কতদিন মামা বিছানা থেকে উঠেনি। 
হুইলচেয়ার কেনার মতো অবস্থা ছিলো না,অন্যান্য খরচ চালাতেই হিমসিম খেয়েছি।
তার উপর টিউশনি ছেড়ে চাকরিতে ঢুকেছি,কিন্তু সারামাস হাতে কিছুই ছিলো না।
আকাশ মামা-মামীর সাথে কথা বলে। মামার একাউন্টে এখানে বসেই অনেকগুলো টাকা ট্রান্সফার করে দেয়, যাতে মামার চিকিৎসার আর সংসার খরচ ভালো ভাবেই চলে। সাইফ- সুমনার হাতে একটা চেক তুলে দেয় তাদের পড়াশোনা খরচ। মামা আপত্তি করলেও মামীর চোখ রাঙানিতে চুপ হয়ে যায়।
কিন্তু আমার তো কিছু বলার আছে।

– স্যার,অনেক কিছুই তো দিলেন। কিন্তু দুদিন পরে? কে দেখবে সংসার? সাইফের পড়াশোনা শেষ হতে সব মিলিয়ে বছর খানেক লাগবে।ততদিন? ‘
আমি নির্লজ্জের মতো বলে ফেললাম। লজ্জা করে কি হবে? সেইতো উনাদের জন্য বিয়ে করবো, তবে উনাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে কেন নয়?
 কাজল,সে সব তোমাকে ভাবতে হবে না। সাইফের পড়াশোনা শেষ হবার আগ-পর্যন্ত আমি সব দায়িত্ব নিলাম।এই নাও এগ্রিমেন্ট পেপার।

আর ওর পড়া শেষ হলে চাকরি আমি ওকে দিবো।
আকাশ আমার হাতে এগ্রিমেন্ট পেপার তুলে দেয়।
মামার চোখে পানি- স্যার আপনি এতো কিছু করলেন, আবার এগ্রিমেন্ট পেপার কি প্রয়োজন? আপনার উপর আমাদের বিশ্বাস আছে।
– আপনার থাকতে পারে, আপনার ভাগ্নির তো নাও থাকতে পারে।
তো মিস. কাজল আপনার আর কোনো আপত্তি আছে?
– জি না।আর কোনো আপত্তি নেই।

ঠিক হলো দুদিন পরেই বিয়ে,তবে সেটা ঘরোয়া আয়োজনে করতে চায়।মামা-মামী তাতেও রাজি হয়ে গেলেন।ভাবলেন আমাদের খরচ বাড়তে চায় না, তাই এভাবে বিয়ে করতে চাইছেন।
পরদিন আমার গায়ে হলুদ দিলো।আকাশ বিয়ের শাড়ি-গয়নাসহ যাবতীয় জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিলো।
তারপর দিন বিয়ে হয়ে গেলো। কাজি,ইমাম আর আকাশ ছাড়া কেউ আসেনি।আমার পরিবারের কয়েক জন আর আমার কাছের বান্ধবী ইরা ছাড়া কাউকে কিছু বলা হয়নি।
আকাশের বিয়ে অথচ ৫-৬ জন মানুষ ছাড়া কেউ জানলো না!

বিয়ের পর আকাশ আমাকে ওর বাসায় নিয়ে আসে। আমি জানি না আকাশের বাড়ি কেমন। কে কে আছে বাড়িতে। উনার বিয়ের বিষয়ে কেউ কিছু জানে কিনা।জানলে বিয়েতে যায়নি কেন।আর যদি না জানে তবে কিভাবে রিয়েক্ট করবে??

হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।
ভাবতে ভাবতে এক বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়ি হর্ন দেয়।
গাড়ির হর্নে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ে। বিশাল গেইট খুলে যায় আর গাড়ি ভেতরে ঢুকে। 
ভেতরে দেখে আমার চোখ কপালে!
এতো বিশাল এরিয়া জুড়ে অনেক বড় দুইটা বাগান। 
বাগানের দুপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছ- গাছালি। 
বেশ ভিতরে বাড়িটা যেন রাজ- প্রাসাদ!
আকাশ গাড়ি থেকে নেমে বলে – বেরিয়ে এসো।
আমি ভয়ে ভয়ে বের হয়ে এলাম গাড়ি থেকে। 
একজন লোক এসে গাড়ি থেকে আকাশের ব্রিফকেস নিয়ে যায়।

বাড়ির ভেতরে ঢুকতে গিয়ে আমার হাত-পা কাঁপছে।
আকাশ দরজায় পা দিতেই সব কাজের লোকেরা দুপাশে ভাগ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যায়।
এটা হলরুম না ড্রয়িং রুম! এযে রাজ প্রাসাদ!
একজন ছুটে গিয়ে একটা ট্রেতে করে ঠান্ডা পানি,কয়েক ধরনের জুস নিয়ে আসে।
আকাশ পানির গ্লাস টা নিয়ে শুধু পানি টুকু খায়।
এদিকে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। অথচ কেউ আমাকে পানিও দিলো না!
– এসো আমার সাথে।
আকাশ আমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
রুমে গিয়েই
চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে এই কান্ড ঘটনায়! 
বাড়িতে এসেই এতো দিনের জমানো ঝাল আমার উপর ঝাড়লো।
বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে মানুষের। স্বপ্ন দেখে একটা মানুষকে নিজের করে পাওয়ার,
একটা মানুষের কাছে নিজেকে সপে দেয়ার! আমি এসবের কিছু করছি না। 
আমি নিজেকে আকাশের হাতে সপে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে আসিনি।
আকাশের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি।
এই পৃথিবীতে আমার কাছের বলতে যে মানুষগুলো আছে, 
তাদের সুখের জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি!
এসব ভাবনা ফেলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। 
একটু পরেই আমার জন্য রুমে খাবার আসলো। 
নানা ধরনের খাবার, অনেকগুলোর নামই জানি না। 
আমি শুধু একটু পানি খেয়েছি। গলা দিয়ে খাবার আমার নামবে না।
এমন সময় আকাশও এসে দেখে কিছুই খাইনি।
– খাওনি কেন?

– খিদে নেই।
– খিদে না থাকলেও খেতে হবে। না খেয়ে অসুস্থতার বাহানায় অফিস কামাই করা যাবে না!
আমি আগে জানতাম না বিয়ের পর আকাশ চাকরি টা করতে দিবে কিনা,
তবে এবার তার কথা শুনে নিশ্চিত হলাম যে চাকরি করতে পারবো।
– খেয়ে নাও।
– খাবার তো আমার ইচ্ছেতে খাবো, সেটাতেও কি আপনার অর্ডার মানতে হবে?
– অবশ্যই হবে। কাগজে এমনটাই লেখা আছে,?
– কিসের কাগজ?
– কাবিননামা! সেখানে কি লেখা আছে জানো না?
কাবিননামায় লেখা আছে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে, 
সজ্ঞানে আগামী ২ বছর আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে এবং আমার প্রত্যেক আদেশ মানতে বাধ্য থাকবে।’
– কি বলছেন এসব? কাবিননামায় এসব লেখা থাকে নাকি? আর কালিমা পড়ে তো বিয়ে করেছেন।
– হা করেছি আর সাথে কাগজেও উল্লেখ আছে, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে পারবো। তুমি পারবেনা।তবে বিয়ে তো হয়েছে!

আকাশের কথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে। কন্ট্রাক্ট মেরিজ! এইভাবেই শোধ নিলো! একটা চড়ের?
– কেন করছেন আমার সাথে এসব? কি এমন ক্ষতি করেছিলাম আপনার!?
– তুমি আকাশকে এখনো চেনোনি।চিনবে ধীরে ধীরে! দুই বছর অনেক সময়। এরমধ্যে ভালো করেই চিনবে।
এইবার খেয়ে নাও।
– খিদে নেই, খাবো না।
আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।
– এক্ষুণি খেতে বলেছি, তো খাবে।
– না!

– কি!! আমাকে না করিস? তুই খাবিনা তোর ঘাড় খাবে।
আকাশ একটা পাউরুটি নিয়ে জোর করে আমার মুখে ঠেসে দেয়!
এতো  অসম্ভব বদমেজাজি মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। তার চেয়ে আমার মামি হাজার গুণ ভালো।
রাতে আকাশের সাথে একই বিছানায় শুতে আমি বেশ ইতস্তত বোধ করছি।এই খাটাশ বেটা তো একটা লুইচ্চা! আমি খাটে বসে আছি। শুবো? নাকি বসে থাকবো? ভাবছি….
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আকাশ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে সোজা বিছানায়!!
– আরে কি করছেন? ছাড়ুন বলছি! ছাড়ুন!
– ছাড়ার জন্য তোমাকে এনেছি?

তারপর চারদেয়ালে বন্দি এই ঘরে যা ঘটে গেল তা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। মানুষের জীবনের অনেক কাঙ্ক্ষিত একটা সময় হচ্ছে বাসর।নারী- পুরুষের  অসম্ভব মিলন এটা প্রকৃতি বেঁধে দিয়েছে। বিবাহ নামক শব্দে যার বৈধতা নিশ্চিত করা হয়। বিবাহের বাইরে ও অনেক ভাবেই সেটা হয়ে থাকে। কখনো ইচ্ছাকৃত, কখনো অনিচ্ছাকৃত। অনিচ্ছাকৃত ভাবে জোর করে যেটা হয় সেটারও একটা নাম আছে – ধর্ষণ।কিন্তু আমাদের সমাজে কখনো এটা শেখানো হয়নি যে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করাও ধর্ষণ! তাই শতকরা ৯৯% মহিলারাই এটা জানে না। তারা এটাকে স্বামীর অধিকার হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু আমি?

আমি কি করবো? ২ বছরের জন্য বিয়ে করা হয়েছে। বউয়ের স্বীকৃতি কি পেয়েছি? এই সমাজ কি আমাকে বউ বলে মানবে? আমিতো নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি।তাই আকাশের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচানোর সবচেষ্টা ব্যর্থ হলে, রাগে,দুঃখে,আর শারীরিক যন্ত্রণায় চোখ ভাসিয়েছি। সেসব কিছুই আকাশকে স্পর্শ করেনি।

কোনোরকমে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেই। শাওয়ার ছেড়ে ভিজতে থাকি প্রতিটি স্পর্শ মুছে দিতে। আমার কান্না এই চার দেয়ালে আটকে আছে। কত সময় ভিজেছি জানি না।দরজায় একটার একটা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে আকাশ।

আরও বেশ কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসি। আকাশ অপলক চেয়ে আছে আমার দিকে। তার চোখে কিছু একটা আছে – তা আমার চোখ এড়ায় নি। কিন্তু কি আছে আমি বোঝার চেষ্টা করছি না। তবে এই দৃষ্টিতে এখন কাম নেই, সেটা বুঝতে না চাইলেও নারীর চোখ এড়ায় না।কি আছে আকাশের চোখে? প্রেম? নাকি অপরাধ বোধ?
আকাশের চোখে যাই থাকুক না কেন, আমার চোখে আছে একরআশ ঘৃণা!
– সরি।

খুব ক্ষীণস্বরে বললো আকাশ।
‘সরি’ তোর সরির গোষ্ঠী কিলাই! বজ্জাত! লুইচ্চা! খাটাশ!
আমি কোনো কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। মুখফুটে গালিও না। চুপচাপ শুয়ে পড়ি।
আকাশ বসে আছে। কিছু সময় বসে থেকে আকাশও শুয়ে পড়লো। আমি নীরবে কেঁদেই যাচ্ছি।
পরদিন সুমনা আর আমার বান্ধবী ইরা আসে।ওদের দেখে আমি খুব খুশি হই।সুমনা তো ভীষন খুশি। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলো।
– আপু,এ দেখছি রাজপ্রাসাদ!আসলেই তোমার রাজ কপাল।সেজন্যই আকাশ ভাইয়ের মতো স্বামী পেয়েছো,একেবারে রাজপুত্র।

সুমনার কথা শুনে আমি মৃদু হাসি।কি করে সুমনা বলি এ আমার প্রাসাদ না,এ আমার জন্য নরক।
তখন ইরা বললো – কিরে, কেমন কাটলো বাসর?
– ধুর!
– ধুর কি? তোর জামাই খুব রোমান্টিক তাইনা?
– কিসব যাতা বলছিস।
– হুমম। যা দেখছি তাই বলছি।
– মানে? কি দেখছিস?
ইরা মুখটিপে হাসছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
– কি দেখেছিস?
– অইযে তোর গলায় রোমান্সের চিহ্ন!

বলেই ইরা, সুমনা একসাথে ফিক করে হেসে উঠে। লজ্জায় আমি কাচুমাচু করে গলায় হাত দিলাম। নেকলেসের ঘসা লেগে ছিলে গেছে। কাল বুঝতে না পারলেও সকাল থেকে জ্বালা করছে। কিন্তু সেটা যে ইরার চোখে পড়বে কে জানতো!
আমি বললাম – ধ্যাৎ, এটা নেকলেসের ঘষা খেয়ে ছিলে গেছে। কিন্তু ইরা… তোর জামাই খুবই…ই রোমান্টিক হবে।
– ওমা তাই? ইসস.. হাউ সুইট! ইরা খুবই আহ্লাদিত।
– তবে একটা কি জানিস? বিয়ের আগে যারা লুইচ্চা থাকে, অই বেটারাই বিয়ের রোমান্টিক নাম নেয়!
বলে আমি মুখটিপে হাসছি।

ইরা চোখ পাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই আকাশ হাজির।
– আরে আমরা শ্যালিকারা দেখি হাজির।
– জি আমরা হাজির। আমার বান্ধবীকে নিয়ে আসছেন। এখন আপনাদের ধরে নিতে আসছি।
– হুম। বুঝলাম।কিন্তু সমস্যা একটা আছে।
– কি সমস্যা?
– আসলে অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। আজকে তো যেতে পারবো না।কাল শুক্রবার। তোমরা আজকে থাকবে, কাল একসঙ্গে যাবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে।

ইরা আর সুমনা থেকে গেল। আজ আকাশ খুবই স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। ওদের সাথে অনেক গল্প করলো। আমি আগের আকাশ আর আজকের আকাশের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। কত রূপ এই মানুষটার??

পরদিন মামার বাসায় গেলাম। আকাশও সারাদিন আমাদের সাথেই ছিলো। মামার সাথে আলাদা কথা বলবো সেই উপায় নেই। আকাশ ভাবছে হয়তো আমি কিছু জানিয়ে দিবো।তাই কিছুতেই একা ছাড়ছে না।

আমি তো এমনিতেই কিছু বলবো না। সবাই ভালো থাকুক।বলে কি হবে? সবাই অযথা চিন্তা করবে, মামা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি তখন আকাশকে বললাম – চিন্তা নেই। কাউকেই কিছু বলবো না।
একটু হেসে আকাশ বললো – আমি জানি তুমি বলবে না। কিন্তু সবাই বুঝুক আমি কত  অসম্ভব বউ পাগল!
আমি অবাক চোখে দেখছি।

– আপনি আসলে কি আমি বুঝতে পারিনা।  অসম্ভব অদ্ভুত মানুষ!
আমার রুম আকাশ খুব মনোযোগ দিয়ে ঘুরে দেখে।আমার প্রতিটি শখের জিনিস দেখে।
আমার অনেক শখের একটা ছোট্ট লাইব্রেরী আছে। টিউশনির টাকা থেকে প্রতি মাসে কিছু বই কিনতাম। আকাশ আমার বইগুলো দেখছে।
– শেক্সপিয়র থেকে শুরু করে নজরুল, হুমায়ুন… বাহ! বেশ ভালো তো! তুমি তো অনেক বই পড়তে পছন্দ করো দেখছি!
আবার কবিতার বইও দেখছি!
এই,তুমি কি কবিতাও পড়ো নাকি?
– হা পড়ি।কেন?

আকাশ কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
– তুমি… সিরিয়াসলি তুমি কবিতা পড়ো?
– হা,বললাম তো পড়ি। কেন কি হয়েছে তাতে?
– এ যুগের মেয়ে হয়েও তুমি কবিতা পছন্দ করো সেটাই অবাক লাগছে।
– অবাক হবার কি আছে? সবার পছন্দ তো এক রকম হয় না।আমি শেক্সপিয়র পড়েছি,ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি,জন ডন,ফ্রস্ট পড়েছি ; উনাদের পড়ে যত মুগ্ধ হয়েছি; রবীন্দ্র- নজরুল, শরৎচন্দ্র পড়ে মোহিত হয়েছি।

ওসব আপনি বুঝবেন না। কারণ আপনার আমার পৃথিবী আলাদা।আমাদের দুই পৃথিবী।
আকাশ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো আমার কথা।
অফিসের ব্যস্ততা দেখিয়ে বিকেলেই আকাশ আমাকে নিয়ে ফিরে আসে।
আকাশে আজ মেঘ করেছে,তার সাথে বেশ  অসম্ভব শীতল করা বাতাস।
শেষ বিকালে আমি ছাদে চলে আসি।হাতের মোবাইলে পছন্দের একটা গান প্লে করে পাশে রেখে আকাশে মেঘ দেখছি।
“মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর
মন খারাপের দিস্তা
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়,
ব্যাকুল হলে তিস্তা।
মন খারাপের খবর আসে
মন খারাপের খবর আসে
রাগী বসের অভিমানী বউ
বন পাহাড়ের দেশে
চৌকোনো সব বাক্সে
যেথায় যেমন থাকসে
মন খারাপের খবর পড়ে দাড়ুন ভালবেসে।
মেঘের ব্যাগের ভেতর ম্যাপ রয়েছে মেঘ পিওনের পাড়ি
পাকদন্ডী পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ী।
বাগান শেষে সদর দুয়ার,
বারান্দাতে আরাম চেয়ার

গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি
সেথায় এসে মেঘ পিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি”

আকাশ এসে পাশে দাঁড়িয়েছে।ওকে দেখেও কিছু বললাম না।
– খুব সুন্দর তো!
– কি?
– কি সুন্দর বাতাস মেঘ কেটে কেটে যাচ্ছে, তার সঙ্গে এমন একটা গান! বেশ অন্যরকম।
– আগে কখনো মেঘ দেখেননি বুঝ?
– দেখবো না কেন? তবে এভাবেও দেখা যায় জানতাম না।
– হুম। আমি দেখি।আকাশে মেঘ করলে বেশ আয়োজন করে মেঘ দেখি।
এমন সময় আকাশে একটা ফোন আসে।
– হ্যালো
কি কথা হলো বুঝতে পারলাম না। আকাশ ফোন টা রেখে দিলো। 
কিন্তু ওর চোখমুখে  অসম্ভব ভয়ংকর একটা কিছু দেখতে পাচ্ছি। 
আকাশ এখানে দু’মিনিটের বেশি আর দাঁড়িয়নি।চোখমুখ  অসম্ভব লাল করে চলে যায়। 
আমি হঠাৎ ওর এমন চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেছি।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com